RSS

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

07 মে

———————————————-

বঙ্গভারতী পঁচিশে বৈশাখ স্মারক রচনা, ১৪১৯ (২০১২)

———————————————–

অর্ণব দত্ত

এই রচনার সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের বিনা অনুমতিতে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি।

প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর

উত্তর কলকাতার পাদপ্রান্তে অবস্থিত জোড়াসাঁকো অঞ্চলের আদি নাম ছিল ‘মেছুয়াবাজার’। আড়াইশো বছর আগেকার এই মৎস্যজীবী-প্রধান অঞ্চল কালক্রমে কিভাবে হয়ে উঠল ‘বাংলার নবজাগরণের শিশুশয্যা’, সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। ১৭৮৫ সালে কলকাতা শহরকে প্রথম যে ৩১টি থানায় ভাগ করা হয়েছিল, তার একটি ছিল এই জোড়াসাঁকো থানা। ক্রমে ক্রমে এই অঞ্চলে গড়ে ওঠে আদি ব্রাহ্মসমাজ, ভারতীয় নাট্যসমাজ, কলিকাতা হরিভক্তিপ্রদায়িনী সভা, মিনার্ভা লাইব্রেরি এবং কলকাতার প্রথম বেসরকারি স্কুল গৌরমোহন আঢ্যের ওরিয়েন্টাল সেমিনারি। জোড়াসাঁকোয় বসবাসকারী দু-টি পরিবারের সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের নাম জড়িয়ে রয়েছে ওতোপ্রতোভাবে। একটি হল সিংহ পরিবার–যে পরিবারের সন্তান ছিলেন হুতোম পেঁচার নকশা-খ্যাত মহাভারত-অনুবাদক কালীপ্রসন্ন সিংহ। অপর পরিবারটি, বলাই বাহুল্য, বঙ্গদেশের সুবিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের জোড়াসাঁকো শাখা। জোড়াসাঁকো থানা-গঠনের ঠিক এক বছর আগে ১৭৮৪ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা নীলমণি ঠাকুর পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে আসেন জোড়াসাঁকো অঞ্চলে। যে জমির উপর আজকের জোড়সাঁকো ঠাকুরবাড়ি তথা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে, সেই জমিটি নীলমণি ঠাকুর গৃহদেবতা লক্ষ্মীজনার্দন জিউয়ের নামে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে লাভ করেছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ধনী বৈষ্ণবচরণ শেঠের কাছ থেকে। এরপর অবস্থা আরও একটু স্বচ্ছল হলে নীলমণি সেই জমিতে বিরাট এক ইমারত তোলেন। জোড়াসাঁকো তখনও পর্যন্ত মেছুয়াবাজার নামেই পরিচিত ছিল। নীলমণি থেকে তাঁর নাতি দ্বারকানাথ পর্যন্ত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ছিল এক বিরাট জমিদারি ও ব্যবসাদারির কেন্দ্রস্থল। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আমলে ব্রাহ্মধর্মের প্রসার বঙ্গ-সংস্কৃতির মুকুটে ঠাকুরবাড়ির এক নতুন পালক সংযোজন। তবে জমিদারি-কেন্দ্র থেকে ঠাকুরবাড়িকে যথাযথরূপে সাংস্কৃতিক পীঠস্থানে পরিণত করেছিলেন দেবেন্দ্রনাথের সন্তানসন্ততিগণ; যাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। রবীন্দ্রনাথের জন্ম, কাব্যরচনা, সাহিত্যচর্চা, নাট্যাভিনয়, নোবেল-প্রাপ্তি, নাইটহুড-ত্যাগ, রাজনীতিদর্শন ও মহাপ্রয়াণের সঙ্গে এই বাড়ির নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর দাদা, বৌদি ও দিদিদের সুবাদে তৎকালীন ভারত ও বহির্ভারতের অনেক নামিদামি মানুষের পায়ের ধুলো পড়েছিল এই বাড়িতে। তাই বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় পাদে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রবীন্দ্র-নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন এই বাড়িটিকেই। যার ফলস্রুতি, আজকের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর থেকেই ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা একে একে জোড়াসাঁকোর বাস তুলে অন্যত্র চলে যান। বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব অংশের মালিকানা থেকে যায় গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে। কালক্রমে দেশভাগ ও স্বাধীনতা অর্জনের ডামাডোলে বাড়ির একটি বড়ো অংশই চলে যায় বহিরাগতদের হাতে। উনিশশো পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির তরফে সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার পনেরো লক্ষ টাকা দিয়ে বাড়িটি কিনে নেন। পরে বাড়ির তদনীন্তন মালিক হাইকোর্টে মামলা করে আরও তিন লক্ষ টাকা দাবি আদায় করে। এর ফলে সুরেশচন্দ্র বেশ অর্থসংকটে পড়েন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানান। এরপর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। সরকারি অনুদানের শর্ত হিসেবে ঠাকুরবাড়িতে সংগীত, নৃত্য ও নাটক শিক্ষার একটি আকাদেমি স্থাপনের প্রস্তাব রাখা হয়। এরপর ১৯৫৫ সালে স্থাপিত হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য, নাটক, সংগীত ও চারুকলা আকাদেমি। উদয় শংকর, অহীন্দ্র চৌধুরী ও রমেশ বন্দ্যোপাধ্যায় যথাক্রমে নৃত্য, নাটক ও সংগীতের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে অবশ্য উদয় শংকর তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। ১৯৫৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আসন্ন রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেন। রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পশ্চাতে সরকারের মূল উদ্দেশ্যটির সঙ্গে নিজেদের উদ্দেশ্যের সাদৃশ্য লক্ষ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কবি-পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার সমগ্র ঠাকুরবাড়ির দখল নেন। বিচিত্রা ভবন থেকে সেই সময় বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগের কাজকর্ম চলত। বিশ্বভারতী বিচিত্রা ভবন খালি করে দেয়। জোড়াসাঁকোর পাশাপাশি বরানগর অঞ্চলে বি টি রোডের ধারে ১৮২০-এর দশকে নির্মিত মরকত কুঞ্জটিকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষাপ্রাঙ্গনে পরিণত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাস হওয়া রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আইন রাষ্ট্রপতির সম্মতি পায় ১৯৬২ সালের ১০ জানুয়ারি। সেই বছরই পঁচিশে বৈশাখ যাত্রা শুরু হয় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের।

রবীন্দ্রভারতী প্রদর্শশালা

১৯৬১ সালের ৮ মে (পঁচিশে বৈশাখ) ভারতের তদনীন্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির যে ভবনে রবীন্দ্রনাথ থাকতেন, সেইখানে একটি প্রদর্শশালার উদ্বোধন করেন। পরে এই প্রদর্শশালাটি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত হয়। বর্তমানে সংগ্রহশালাটি ছড়িয়ে পড়েছে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রবীন্দ্র-স্মৃতিধন্য তিনটি ভবনেই। এই তিনটি ভবন হল∑সর্বদক্ষিণে অবস্থিত ঠাকুরবাড়ির প্রাচীনতম অংশ, মহর্ষি ভবন ও সবশেষে নির্মিত বিচিত্রা ভবন। তিনটি ভবনের মোট আয়তন প্রায় ৩০,০০০ বর্গফুট। প্রদর্শশালায় শুধু রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত সামগ্রীই রাখা নেই, আছে ঠাকুর পরিবার ও বাংলা নবজাগরণের সাক্ষ্যবহনকারী অনেক স্মারক, অসংখ্য শিল্পকীর্তি, বিভিন্ন শিল্পীদের হাতে আঁকা ছবি এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুষ্প্রাপ্য নথিপত্র। প্রদর্শশালার একটি নিজস্ব প্রকাশনা বিভাগও রয়েছে। এই প্রকাশনা বিভাগ থেকে বই, ছবির অ্যালবাম, পিকচার পোস্টকার্ড ইত্যাদি প্রকাশিত হয়।

ঠাকুরবাড়ির প্রবেশপথ

 

ঠাকুরবাড়ির প্রবেশপথ

রবীন্দ্র সরণি ও বিবেকানন্দ রোডের সংযোগস্থল থেকে সামান্য দক্ষিণে এগোলে পাওয়া যাবে দ্বারকানাথ ঠাকুর লেন। এই লেনের মধ্যেই সবুজ বাগান-ঘেরা লাল রঙের কয়েকটি বাড়ির সারি। গলিপথটি সরু। বাইরে থেকে দেখে চট করে এটিকে আলাদা করা যায় না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ রবীন্দ্র সরণি ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-এর উপর এখন দুটি প্রকাণ্ড ‘গেটওয়ে’ নির্মাণ করেছেন। এই ফটকদুটি সাধারণ দর্শনার্থীকে ঠাকুরবাড়ির পথ চিনিয়ে দেয়।

মহর্ষি ভবন

 

রবীন্দ্র-প্রয়াণকক্ষ

মহর্ষি ভবনের দ্বিতীয় তল থেকেই রবীন্দ্রভারতী প্রদর্শশালার শুরু। এই ভবনের প্রধান দর্শনীয় ঘরটির নাম ‘রবীন্দ্র-প্রয়াণকক্ষ’। এই ঘরেই ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের বাইশে শ্রাবণ (ইংরেজি ১৯৪১ সালের ৭ অগস্ট) শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ। সেই থেকে প্রতি বছর বাইশে শ্রাবণে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কবিকে স্মরণ করার প্রথা চলে আসছে এই ঘরটিতে। ওই দিন অগণিত রবীন্দ্রানুরাগী ও সাধারণ মানুষ এই ঘরে আসেন কবিকে শ্রদ্ধা জানাতে। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর এই ঘরটিতে সামান্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। ঠিক যে জায়গাটিতে রবীন্দ্রনাথ মারা গিয়েছিলেন, সেই জায়গাটি ঘিরে দেওয়া হয়েছে কাঠের বেষ্টনী দিয়ে।

এই ভবনেই রয়েছে কবি ও কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর ব্যবহৃত দুটি কামরা। প্রয়াণকক্ষের পাশের ঘরে আছে একটি অনুচ্চ গদিযুক্ত লম্বা পালঙ্ক, বই রাখার তাক, কাঁচের বাক্সে রাখা পান খাওয়ার রুপোর সরঞ্জাম ও একটি বেতের চেয়ার। আছে বেশ কিছু আলোকচিত্র। তার মধ্যে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের ক্লাস নেওয়ার একটি ফটোও রয়েছে। পরের ঘরটিতে রাখা আছে কবির ব্যবহৃত পোষাক ও তাঁর নানা বয়সের ছবি।

এর অদূরে ঠাকুরবাড়ির রান্নাঘর, খাওয়ার ঘর ও ভাঁড়ার। রান্নাঘরের মেঝেতে উনুন এবং দেওয়ালে আটকানো তাকে দেড়শো বছরের পুরনো চিনাপাটির পাত্র আর পাথরের বাসনকোসন এখনও রাখা আছে। খাওয়ার ঘরে গেলে যে অনুচ্চ টেবিল ও হেলানদেওয়া চেয়ারে বসে ঠাকুরবাড়ির সদস্যরা খেতেন সেগুলি দেখতে পাওয়া যাবে।

মহর্ষি ভবনের দোতলাতেই জীবনস্মৃতি গ্রন্থের স্মরণীয় সেই দক্ষিণের বারান্দা। এই প্রশস্ত বারান্দাটির সঙ্গে বালক রবীন্দ্রনাথের জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। দোতলার পূর্বদিকের ঘরটিকে বলে ‘বংশপঞ্জি কক্ষ’। এখানে কবি পরিবারের বংশপঞ্জি, পরিবারের সদস্যদের তৈলচিত্র ও কিছু বইয়ের প্রথম সংস্করণ রক্ষিত আছে।

মহর্ষি ভবনের তিন তলায় একটি প্রকোষ্ঠে আছে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন, স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের তৈলচিত্র। এই ঘরেই রাখা আছে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। এই তলার অন্য তিনটি ঘরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কবির ঠাকুরদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর, বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভাইপো শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানান স্মৃতি।

 

বিচিত্রা ভবন

 

কবির ব্যবহৃত ঘর

মহর্ষি ভবনের পাশেই বিচিত্রা ভবন। এটি তৈরি হয়েছে ১৮৮৭ সালে। কবির বহু সাহিত্যকীর্তির জন্মস্থল এই বিচিত্রা ভবন। রবীন্দ্রনাথ এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সাহিত্যসভাও বসাতেন। ১৯১৭ সালে এখানে ডাকঘর নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। রবীন্দ্র-অভিনীত এই মঞ্চায়নের একটি আলোকচিত্রও রক্ষিত আছে।

বিচিত্রা কক্ষের পাশের ঘরটিতে থাকতেন মৃণালিনী দেবী। ১৯০২ সালেই এই ঘরটিতেই তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এখানে তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সংরক্ষিত আছে।

বিচিত্রা ভবনেই আছে কবির অধ্যয়ন কক্ষ। এখানেই কবি তাঁর বন্ধুবান্ধব ও অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। এখন এখানে কবির বিভিন্ন গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ ও বিভিন্ন ভাষায় কবির অনূদিত গ্রন্থাবলি রক্ষিত আছে।

তিনটি চিত্রভাণ্ডার

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির রবীন্দ্রভারতী প্রদর্শশালার অন্যতম শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ তিনটি চিত্রভাণ্ডার বা আর্ট গ্যালারি। একটি গ্যালারিতে নির্ধারিত বাংলা শৈলীর চিত্রকলার জন্য। এখানে অবনীন্দ্রনাথ ও তাঁর ছাত্র-অনুগামীদের ছবির পাশাপাশি রাখা আছে ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের আঁকা ছবি। দ্বিতীয় গ্যালারিটি রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবির। তৃতীয় গ্যালারিটিতে আছে কয়েকজন বিদেশি চিত্রকরের আঁকা ছবি এবং জোড়াসাঁকো ও পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ির বিভিন্ন ব্যক্তিদের তৈলচিত্র।

 

প্রাচীনতম অংশ

 

ঠাকুরদালান

ঠাকুরবাড়ির প্রাচীনতম অংশটি নির্মিত হয় ১৭৮৪ সালে। এইখানেই রয়েছে ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক আঁতুরঘর। উল্লেখ্য, হিন্দু পরিবারে স্থায়ী আঁতুরঘর নির্মাণের দৃষ্টান্ত নেই। ঠাকুর পরিবার ছিল এই ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রম। এই আঁতুরেই দেবেন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রনাথ সহ ঠাকুরবাড়ির অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্ম। পঁচিশে বৈশাখ তারিখে তাই এই কক্ষের দ্বার জনগণের কাছে অবারিত করে দেওয়া হয়।

বাড়ির পুরনো অংশের কেন্দ্রস্থলে আছে ঠাকুরদালান। অতীতে এখানে দুর্গাপূজা হত। পরে দেবেন্দ্রনাথ ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করার পর এই স্থানটি নিরাকার ব্রহ্মের প্রতি উৎসর্গ করেন। সেই থেকে এখানে ব্রাহ্ম উপাসনা ও উৎসব অনুষ্ঠান শুরু হয়। ঠাকুরদালানের বেদির বিপরীতে আছে একটি স্থায়ী মঞ্চ। রবীন্দ্রনাথের একাধিক নাটক এখানে মঞ্চস্থ হয়েছে। এই মঞ্চেই বাল্মীকি-প্রতিভা নাটকে রবীন্দ্রনাথের নট-নাট্যকার হিসেবে প্রথম আবির্ভাব ঘটে।

উপসংহার

 

সপ্তাহে মঙ্গলবার থেকে রবিবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রবীন্দ্রভারতী প্রদর্শশালা খোলা থাকে। বন্ধ থাকে সোমবার ও অন্যান্য ছুটির দিন। জুন-জুলাই মাস ছাড়া সারাবছরই সন্ধ্যাবেলা আলোক-ধ্বনির প্রদর্শনীর মাধ্যমে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে চল্লিশ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। বাংলার ইতিহাস ও ভারতের সংস্কৃতি সম্পর্কে যাঁরা জানতে ইচ্ছুক, রবীন্দ্রতীর্থ জোড়াসাঁকো না দেখলে তাঁদের জানা অপূর্ণই থেকে যায়।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার:

কবিতীর্থ জোড়াসাঁকো, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রদর্শশালা কর্তৃক প্রকাশিত গাইড-পুস্তিকা

ছবি: উইকিপিডিয়া

 

ট্যাগ সমুহঃ

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান