RSS

Monthly Archives: সেপ্টেম্বর 2011

কাত্যায়নী

চতুর্ভুজা কাত্যায়নী

চন্দ্রহাসোজ্জ্বলকরা শার্দূলবরবাহনা।

কাত্যায়নী শুভং দদ্যাদ্দেবী দানবঘাতিনী।।

নবদুর্গার ষষ্ঠ রূপ কাত্যায়নী। নবরাত্রি উৎসবের ষষ্ঠ দিনে তাঁর পূজা করা হয়। তিনি আজ্ঞা চক্রের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। প্রাচীন কিংবদন্তি অনুযায়ী, কাত্যবংশীয় ঋষি কাত্যায়ন দেবী দুর্গাকে কন্যারূপে লাভ করার জন্য তপস্যা করেছিলেন। তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে দুর্গা কাত্যায়নের কন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করে ‘কাত্যায়নী’ নামে পরিচিতা হন। অন্য মতে, ঋষি কাত্যায়ন প্রথম দুর্গাকে পূজা করেছিলেন বলে তাঁর নাম হয় ‘কাত্যায়নী’।

দেবী কাত্যায়নী চতুর্ভুজা–তাঁর ডানদিকের দুটি হাত বর ও অভয়মুদ্রা প্রদর্শন করে, বাঁ দিকের দুই হাতে পদ্ম ও খড়্গ। দেবী সিংহবাহিনী। তাঁর গায়ের রং সোনার মতো উজ্জ্বল। তন্ত্রসার-এর ধ্যানমন্ত্রে তাঁকে বর্ণনা করা হয়েছে দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী রূপে। আবার হরিবংশ গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি অষ্টাদশভুজা।

পতঞ্জলির মহাভাষ্য ও কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয় আরণ্যক-এ কাত্যায়নীর উল্লেখ রয়েছে। তাঁর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর অন্তর্গত শ্রীশ্রীচণ্ডী, দেবীভাগবত পুরাণ, কালিকা পুরাণবামন পুরাণ-এ। এই কাহিনিটিই দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের কাহিনি। কাত্যায়নীই দুর্গা। একটি মতে বলে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীর দিন দেবী কাত্যায়নীর জন্ম। তারপর শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিন ঋষি কাত্যায়নের পূজা গ্রহণ করে দশমীর দিন তিনি মহিষাসুর বধ করেছিলেন।

দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী কাত্যায়নী

দেবী কাত্যায়নীর পূজা করলে ভক্ত ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ–এই চার ফল লাভ করে; তার সমস্ত রোগ-শোক-ভয় দূর হয়; দূর হয় জন্ম-জন্মান্তরের পাপও। ভাগবত পুরাণ-এ আছে, বৃন্দাবনের গোপীগণ কৃষ্ণকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য সারা মাঘ মাস জুড়ে কাত্যায়নী ব্রত পালন করেছিলেন। তাই মনোমত স্বামী প্রার্থনায় এক মাস ধরে কাত্যায়নী ব্রত পালনেরও প্রথা রয়েছে।

কাশীর আত্মাবীরেশ্বর মন্দিরের গর্ভগৃহের একটি কুলুঙ্গিতে দেবী কাত্যায়নীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। এটি অষ্টভূজা মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তি। মূর্তিটি কষ্টিপাথরে নির্মিত, উচ্চতা এক হাত। উল্লেখ্য, স্বামী বিবেকানন্দের মা ভুবনেশ্বরী দেবী এই আত্মাবীরেশ্বর মন্দিরে মানত করেই স্বামীজিকে পুত্ররূপে লাভ করেছিলেন। আত্মাবীরেশ্বর শিবই দেবী কাত্যায়নীর ভৈরব। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে এখানে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়।

(সঙ্গের ছবিটি ২০১০ সালে তোলা দক্ষিণ কলকাতার সংঘশ্রী ক্লাবের দুর্গাপূজা মণ্ডপে পূজিতা চতুর্ভুজা কাত্যায়নীর মৃন্ময়ী প্রতিমার। দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী কাত্যায়নীর মূর্তিটি ওই বছরই দেশপ্রিয় পার্কে তোলা। আলোকচিত্রী: অর্ণব দত্ত।)

দেবী কাত্যায়নীর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার এই উইকি-নিবন্ধটি পড়ুন: http://bn.wikipedia.org/wiki/কাত্যায়নী

সতর্কীকরণ: এই লেখা ও ছবির যাবতীয় স্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। লেখকের বিনা অনুমতিতে এই লেখা বা ছবি যে কোনো উপায়ে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি। 

 

ট্যাগ সমুহঃ

স্কন্দমাতা

দেবী স্কন্দমাতা

 

সতর্কীকরণ: এই লেখা ও ছবির যাবতীয় স্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। লেখকের বিনা অনুমতিতে এই লেখা বা ছবি যে কোনো উপায়ে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি। 

সিংহাসনগতা নিত্যং পদ্মাশ্রিতকরদ্বয়া।

শুভদাস্তু সদা দেবী স্কন্দমাতা যশস্বিনী।।

নবদুর্গার পঞ্চম রূপ স্কন্দমাতা। নবরাত্রি উৎসবের পঞ্চম দিনে তাঁর পূজা করা হয়। দেবসেনাপতি কার্তিকের অপর নাম স্কন্দ। দেবী দুর্গা কার্তিকের মা। তাই তিনি পরিচিতা ‘স্কন্দমাতা’ নামে।

কার্তিক-জননী বেশে দুর্গার রূপটি একটু আলাদা। এই রূপে তিনি চতুর্ভুজা; উপরের দুই হাতে দুটি পদ্মফুল; নিচের এক হাতে ধরে থাকেন স্কন্দ অর্থাৎ কার্তিককে, অপর হাতে দেখান বরমুদ্রা। দেবী পদ্মাসনা, তবে দেবীর বাহন সিংহ। দেবীর কোলে স্কন্দের যে মূর্তিটি দেখা যায়, সেটি আমাদের বাংলায় সচরাচর দেখা কার্তিক মূর্তির চেয়ে একটু আলাদা। ইনি হাতে তীর-ধনুক থাকে বটে, কিন্তু এঁর ছয়টি মস্তক। ষড়ানন কার্তিকের এই শিশুমূর্তিটিই শোভা পায় দেবী স্কন্দমাতার কোলে।

দেবী স্কন্দমাতার কথা জানা যায় স্কন্দ পুরাণ থেকে। অসুররাজ তারক বরলাভ করেছিল, কেবল শিব ও দুর্গার পুত্রই তার প্রাণবধে সক্ষম হবে। তাই দেবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সে সহজেই দেবতাদের কাছ থেকে স্বর্গরাজ্য কেড়ে নিতে পেরেছিল। এই ঘটনার ঠিক আগেই সতী দেহত্যাগ করেছিলেন, শিবও হয়েছিলেন ধ্যানমগ্ন। তাই দেবতারা দুর্গাকে পুনরায় জন্মগ্রহণ করার অনুরোধ করলেন। দুর্গা শৈলপুত্রী রূপে গিরিরাজ হিমালয়ের গৃহে জন্ম নিলেন। তারপর ব্রহ্মচারিণী রূপে শিবকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য করলেন কঠোর তপস্যা। শেষে শিবের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হল। তারপর যথাসময়ে জন্ম হল শিব ও দুর্গার পুত্র কার্তিকের। কার্তিকের জন্মের বিবরণ নানা পুরাণে নানাভাবে বর্ণিত হয়েছে। সে সবের উল্লেখ এখানে না করলেও চলবে–শুধু এটুকু বলে রাখি, কার্তিকের ছিল ছয়টি মাথা। তাই তিনি পরিচিত হয়েছিলেন ষড়ানন নামে। এই ষড়ানন স্কন্দই তারককে যুদ্ধে পরাজিত করে দেবতাদের স্বর্গরাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। স্কন্দ ও স্কন্দমাতা উভয়েই তারকাসুর বধে দেবতাদের সাহায্য করেছিলেন বলে, মাতাপুত্রের পূজা একসঙ্গে করাই নিয়ম।

দেবী স্কন্দমাতার পূজা করলে ভক্তের সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়; তাঁর জীবন সুখ ও শান্তিময় হয়ে ওঠে এবং তাঁর মোক্ষের পথ সহজতর হয়। এছাড়া স্কন্দমাতার পূজা করলে, সেই সঙ্গে কার্তিকের পূজাও হয়ে যায়।

কাশীর নাগকুরার কাছে দেবী স্কন্দমাতা ও বাগেশ্বরীর মন্দির অবস্থিত। মন্দিরটি দোতলা, গর্ভমন্দিরটি ছোটো। সেখানে প্রমাণ আকারের স্কন্দমাতার মূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত। বাগেশ্বরী সরস্বতীর মন্দিরটি স্কন্দমাতার মন্দিরের ঠিক পাশেই অবস্থিত। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রি উৎসবের পঞ্চমীর দিন এই মন্দিরে প্রচুর জনসমাগম হয়।

(সঙ্গের ছবিটি ২০১০ সালে তোলা দক্ষিণ কলকাতার সংঘশ্রী ক্লাবের দুর্গাপূজা মণ্ডপে পূজিতা স্কন্দমাতার মৃন্ময়ী প্রতিমার। আলোকচিত্রী: অর্ণব দত্ত।)

 

ট্যাগ সমুহঃ

কুষ্মাণ্ডা

দেবী কুষ্মাণ্ডা

সুরাসম্পূর্ণকলসং রুধিরাপ্লুতমেব চ। দধানা পদ্মহস্তাভ্যাং কুষ্মাণ্ডা শুভদাস্তু মে।।

লেখা ও ছবি: অর্ণব দত্ত

সতর্কীকরণ: এই লেখা ও ছবির যাবতীয় স্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। লেখকের বিনা অনুমতিতে এই লেখা বা ছবি যে কোনো উপায়ে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি। 

নবদুর্গার চতুর্থ রূপ কুষ্মাণ্ডা। নবরাত্রি উৎসবের চতুর্থ দিনে তাঁর পূজা করা হয়। দেবীর এইরকম অদ্ভুত নাম কেন? ‘কু’ শব্দের অর্থ কুৎসিত এবং ‘উষ্মা’ শব্দের অর্থ ‘তাপ’; ‘কুষ্মা’ শব্দের অর্থ তাই ত্রিতাপ বা দুঃখ–দেবী জগতের দুঃখ গ্রাস করে নিজের উদরে ধারণ করেন, তাই তাঁর নাম ‘কুষ্মাণ্ডা’। স্বামী অচ্যুতানন্দের ভাষায়, “যেমন মহাদেব সমুদ্রমন্থনের সময় সমস্ত হলাহল পান করে নীলকণ্ঠ হয়েছেন, তেমনি জগজ্জননী দুর্গা আদ্যাশক্তি জগতের সর্বপ্রকার জ্বালা-যন্ত্রণার হাত থেকে সন্তানদের সর্বদা রক্ষা করতে করুণায় দ্রবীভূত হয়ে স্বেচ্ছায় সব তাপ নিজের শরীরে গ্রহণ করেন। দূরিতবারিণী–‘ত্রিতাপহারিণী’ মায়ের নাম তাই কুষ্মাণ্ডা।”

দেবী কুষ্মাণ্ডা অষ্টভূজা–তাঁর ডান দিকের চার হাতে থাকে যথাক্রমে পদ্ম, বান, ধনুক ও কমণ্ডলু; এবং বাঁদিকের চার হাতে থাকে যথাক্রমে চক্র, গদা, অমৃতপূর্ণ কলস জপমালা। তাঁর বাহন সিংহ (কাশীতে বাঘ)।

নবরাত্রির চতুর্থ দিনে সাধক তাঁর মনকে অনাহত চক্রে রেখে দেবী কুষ্মাণ্ডার পূজা করেন। তাঁর পূজায় রোগশোক দূরীভূত হয়; ভক্ত আয়ু, যশ, বল ও আরোগ্য লাভ করেন। মনে করা হয়, দেবী কুষ্মাণ্ডা অল্প পূজাতেই সন্তুষ্ট হন। তাঁর পূজায় কুষ্মাণ্ড (কুমড়ো) বলি দেওয়ার রীতি আছে।

কাশীতে দেবী কুষ্মাণ্ডার মন্দির বিখ্যাত। কাশীতে তিনি দুর্গা নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি কাশীর দক্ষিণ দিকের রক্ষয়িত্রী। কাশীখণ্ড-এ রয়েছে, অসি নদীর সঙ্গমস্থলে কুষ্মাণ্ডার অধিষ্ঠান। দেবীর মন্দিরটি বেশ বড়ো ও বহুচূড়াবিশিষ্ট। লাল পাথরের তৈরি সুদৃশ্য এই মন্দিরের কাছেই কাশীর বিখ্যাত তীর্থ দুর্গাকুণ্ড। এই মন্দিরে হিন্দুধর্মে অবিশ্বাসীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে দেবী কুষ্মাণ্ডার পশ্চিমমুখী দুই হাত উঁচু বিগ্রহটি অবস্থিত। কাশীতে একমাত্র এই মন্দিরেই নিয়মিত বলিদান হয় (এছাড়া কালরাত্রি মন্দিরে বছরে একবার বলি হয়)। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রির চতুর্থীর দিন এই মন্দিরে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়।

(সঙ্গের ছবিটি ২০১০ সালে তোলা দক্ষিণ কলকাতার সংঘশ্রী ক্লাবের দুর্গাপূজা মণ্ডপে পূজিতা কুষ্মাণ্ডার মৃন্ময়ী প্রতিমার।)

 

ট্যাগ সমুহঃ

চন্দ্রঘণ্টা

দেবী চন্দ্রঘণ্টা

সতর্কীকরণ: এই লেখা ও ছবির যাবতীয় স্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। লেখকের বিনা অনুমতিতে এই লেখা বা ছবি যে কোনো উপায়ে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি। 

চন্দ্রঘণ্টা

অর্ণব দত্ত

পিণ্ডজপ্রবরারূঢ়া চণ্ডকোপাস্ত্রকৈর্যুতা।

প্রসাদং তনুতে মহ্যং চন্দ্রঘণ্টেতি বিশ্রুতা।।

নবদুর্গার তৃতীয় রূপ চন্দ্রঘণ্টা। নবরাত্রি উৎসবের তৃতীয় দিনে তাঁর পূজা করা হয়। দেবীর মস্তকে ঘণ্টার আকারবিশিষ্ট একটি অর্ধ্বচন্দ্র শোভা পায়, তাই দেবীর নাম ‘চন্দ্রঘণ্টা’। অবশ্য তিনি ‘চণ্ডঘণ্টা’ বা ‘চিত্রঘণ্টা’ নামেও পরিচিতা।

দেবী চন্দ্রঘণ্টা সিংহবাহিনী (কাশীর মন্দিরে অবশ্য তিনি ব্যাঘ্রবাহিনী), দশভুজা, দশপ্রহরণধারিনী। তাঁর গায়ের রং সোনার মতো উজ্জ্বল; পরনে লাল শাড়ি, গায়ে নানাবিধ অলংকার।

মহিষাসুর বধের আগে দেবতাদের সম্মিলিত জ্যোতি থেকে যখন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটল, তখন দেবতারা তাঁকে সজ্জিত করলেন নিজ নিজ অস্ত্রে। ইন্দ্র সেই সময় তাঁর বাহন ঐরাবত হস্তীর গলা থেকে ঘণ্টাটি খুলে নিয়ে তা থেকে আর একটি ঘণ্টা সৃষ্টি করে দিলেন দেবীকে। যুদ্ধকালে দেবী যখন এই ঘণ্টা বাজালেন, তখন অসুরসৈন্যগণ হয়ে পড়ল নিস্তেজ। চণ্ডী-র স্তবে আছে:

হিনস্তি দৈত্যতেজাংসি স্বনেনাপূর্য যা জগৎ।

সা ঘণ্টা পাতু নো দেবি পাপেভ্যোঽনঃ সুতানিব।। (১১।২৭)

(হে দেবী, তোমার যে ঘণ্টার শব্দে দৈত্যেরা নিস্তেজ হয়ে পড়ে, সেই ঘণ্টার শব্দে, মা যেমন করে ছোটো ছেলেদের রক্ষা করেন, তেমনি আমাদের পাপ থেকে রক্ষা করুন।)

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

ব্রহ্মচারিণী

দেবী ব্রহ্মচারিণী

সতর্কীকরণ: এই লেখা ও ছবির যাবতীয় স্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। লেখকের বিনা অনুমতিতে এই লেখা বা ছবি যে কোনো উপায়ে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি। 

ব্রহ্মচারিণী

অর্ণব দত্ত

দধানা করপদ্মাভ্যামক্ষমালাকমণ্ডলু। দেবী প্রসীদতু ময়ি ব্রহ্মচারিণ্যনুত্তমা।।

নবদুর্গার দ্বিতীয় রূপ ব্রহ্মচারিণী। নবরাত্রি উৎসবের দ্বিতীয় দিনে তাঁর পূজা করা হয়। ‘ব্রহ্মচারিণী’ নামের অর্থ ‘ব্রহ্মচর্য ব্রত অবলম্বনকারিণী’। তিনিই উমা।

দেবী ব্রহ্মচারিণী দ্বিভুজা; একহাতে তাঁর জপমালা, অপর হাতে কমণ্ডলু। দেবী জ্যোতির্ময়ী মূর্তিতে আবির্ভূতা; তাঁর ভৈরব চন্দ্রমৌলীশ্বর।

দেবী ব্রহ্মচারিণীর সম্পর্কে যে পৌরাণিক উপাখ্যানটি প্রচলিত, সেটি গিরিরাজ হিমালয়ের গৃহে জাত দেবী পার্বতীর শিবকে পতিরূপে লাভ করার নেপথ্য-কাহিনি। সতীর দেহত্যাগের পর শিব ধ্যানমগ্ন হয়েছিলেন। তাই সতী যে পুনরায় পার্বতীরূপে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেদিকে খেয়াল ছিল না তাঁর। এদিকে তারকাসুরের অত্যাচারে দেবতারা জর্জরিত। সে বর পেয়েছিল, শিবের পুত্র ভিন্ন অপর কেউই তাকে যুদ্ধে পরাস্ত করতে পারবে। কিন্তু শিব বিবাহের নামটি করছিলেন না। তখন উপায়? অগত্যা নারদ পার্বতীকে তপস্যা করার পরামর্শ দিলেন। নারদের উপদেশ মতো প্রথমে এক হাজার বছর শুধুমাত্র ফলমূল খেয়ে, তারপর একশো বছর শুধু শাক খেয়ে, তারপর কিছুকাল উপবাস করে, তারপর তিন হাজার বছর শুধুমাত্র একটি করে বেলপাতা খেয়ে এবং শেষে কয়েক হাজার বছর নির্জলা উপবাস করে পার্বতী করলেন কঠোর তপস্যা। মা মেনকা দুর্গার তপস্যাক্লিষ্ট শরীর দেখে দুঃখিত হয়ে কন্যাকে নিরস্ত করার জন্য বললেন, “উ মা” (আর না!) সেই থেকে দেবী ব্রহ্মচারিণীর অপর নাম হল ‘উমা’। তাঁর কঠোর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে ব্রহ্মা এসে তাঁকে বর দিলেন, “যাঁকে তুমি কামনা করো, সেই শিবকেই পতিরূপে পাবে।“ মহামায়া দুর্গার সেই তপস্বিনী রূপই দেবী ব্রহ্মচারিণী। দেবীপুরাণ মতে, সর্ববেদে বিচরণ করেন বলে দেবী পার্বতীর অপর নাম ‘ব্রহ্মচারিণী’। কাশীতে তাঁকে ‘ছোটি দুর্গাজি’ও (ছোটো দুর্গা) বলা হয়।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

শৈলপুত্রী

দেবী শৈলপুত্রী

সতর্কীকরণ: এই লেখা ও ছবির যাবতীয় স্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। লেখকের বিনা অনুমতিতে এই লেখা বা ছবি যে কোনো উপায়ে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি। 

বন্দে বাঞ্ছিতলাভায় চন্দ্রার্ধ্বকৃতশেখরাম্। বৃষারূঢ়াং শূলধরাং শৈলপুত্রীং যশস্বিনীম্।।

আশ্বিন মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে (সর্বপিতৃ অমাবস্যা বা মহালয়ার পরদিন) দেবী শৈলপুত্রীর পূজার মাধ্যমে শুরু হয় নবরাত্রি উৎসব। ‘শৈলপুত্রী’ নামের অর্থ ‘পর্বতের কন্যা’; সেই অর্থে ‘পার্বতী’ ও ‘শৈলপুত্রী’ সমার্থক। ইনিই দেবীকবচোক্ত নবদুর্গার প্রথম রূপ।

দেবী শৈলপুত্রী দ্বিভুজা–তাঁর এক হাতে পদ্ম, অপর হাতে ত্রিশূল। দেবীর মস্তকে অর্ধ্বচন্দ্র; বাহন বৃষ; ভৈরব শৈলেশ্বর।

শৈলপুত্রী সম্পর্কে যে পৌরাণিক কাহিনিটি প্রচলিত, সেটি সতীর দেহত্যাগ ও হিমালয়ের গৃহে দুর্গার জন্মগ্রহণের বৃত্তান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। এই কাহিনিটি আমাদের সকলেরই জানা–সতীর পিতা দক্ষ এক শিবহীন যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। এই যজ্ঞে বিনানিমন্ত্রণে উপস্থিত হওয়ায় পিতৃমুখে সতীকে শুনতে হল শিবনিন্দা। তৎক্ষণাৎ যজ্ঞস্থলেই দেহত্যাগ করলেন শিবপ্রিয়া সতী। শিব ও তাঁর অনুচরবৃন্দ দক্ষযজ্ঞ পণ্ড করলেন। তারপর সতীবিরহে কাতর শিব বসলেন ধ্যানে। এদিকে তারকাসুরের অত্যাচারে দেবতারা অস্থির হয়ে উঠলেন। তারকাসুর বর পেয়েছিল, শিবের পুত্র ভিন্ন কারো হাতে সে মরবে না। কিন্তু শিব বসেছেন ধ্যানে, সতী করেছেন দেহত্যাগ। শিব-দুর্গার পুত্র এখন আসবে কোত্থেকে? দেবতারা কাতর হয়ে মহামায়া দুর্গার নিকট প্রার্থনা জানাতে লাগলেন পরিত্রাণের জন্য। এদিকে গিরিরাজ হিমালয় ও তাঁর পত্নী মেনকা অনেক দিন ধরে দুর্গাকে কন্যারূপে লাভ করার জন্য করছিলেন তপস্যা। তাঁদের ভক্তিতে তুষ্ট হয়ে সতী দেবতাদের পরিত্রাণের জন্য হিমালয়ের গৃহেই পুনর্জন্ম গ্রহণ করলেন। শৈলরাজের পুত্রীরূপে মহামায়া দুর্গা হলেন শৈলপুত্রী। সতীর অপর নাম ‘হৈমবতী’–হিমবৎ (হিমালয়) পর্বতের কন্যা।

Read the rest of this entry »

 
10 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 27, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

মহালয়া ও পিতৃতর্পণ

সতর্কীকরণ: এই লেখার যাবতীয় স্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। লেখকের বিনা অনুমতিতে এই লেখা যে কোনো উপায়ে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি। 

মহাভারতে আছে, মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হল শুধুই সোনা আর ধনরত্ন। ‘ব্যাপার কী?’ কর্ণ জিজ্ঞাসা করলেন ইন্দ্রকে (মতান্তরে যমকে)। ইন্দ্র বললেন, ‘তুমি, বাপু, সারাজীবন সোনাদানাই বিলিয়েছো, পিতৃপুরুষকে জল দাওনি; তাই তোমার জন্যে এই ব্যবস্থা।’ কর্ণ বললেন, ‘আমার কী দোষ? আমার পিতৃপুরুষের কথা তো আমি জানতে পারলাম এই সেদিন। যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে মা কুন্তী আমাকে এসে বললেন, আমি নাকি তাঁর ছেলে। তারপর যুদ্ধে ভাইয়ের হাতেই মরতে হল। পিতৃতর্পণের সময় পেলুম কই?’ ইন্দ্র বুঝলেন, কর্ণের দোষ নেই। তাই তিনি কর্ণকে পনেরো দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দিলেন। ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করে পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন। তাঁর পাপস্খালন হল। এবং যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দিলেন সেই পক্ষটি পরিচিত হল পিতৃপক্ষ নামে।

Read the rest of this entry »

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 27, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

দুর্গা

মূল রচনা: ডব্লিউ. জে. উইলকিনস (হিন্দু মিথোলজি: বৈদিক অ্যান্ড পৌরাণিক থেকে)

অনুবাদ: অর্ণব দত্ত

শিবজায়া এইবারে সম্পূর্ণ নতুন একটি রূপ ধারণ করলেন–এমন রূপ তিনি আগে কখনও ধরেননি। আগেও তিনি ছিলেন শিবের পত্নী; তবে তিনি আচরণ করতেন সাধারণ নারীর মতো; বলা যায়, তিনি ছিলেন নারীসুলভ গুণাবলির মূর্ত প্রতীক। দুর্গা রূপে তিনি হলেন এক সর্বশক্তিময়ী বীরাঙ্গনা। দেবতা ও মানুষের ত্রাস অসুরদের নির্মূল করতে পৃথিবীতে তিনি আবির্ভূতা হলেন নানা নামে।

দুর্গ নামে এক অসুরকে বধ করে দেবী দুর্গা নামে পরিচিতা হয়েছিলেন। ”স্কন্দপুরাণ”-এ এই ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। ঋষি অগ্যস্ত একবার কার্তিকেয়কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তাঁর মায়ের নাম দুর্গা কেন? কার্তিকেয় বললেন, “রুরু দৈত্যের পুত্র ছিল দুর্গ। ব্রহ্মার বরলাভের আশায় সে একবার কঠোর তপস্যা করেছিল। তারপর ব্রহ্মার পর পেয়ে সে হয়ে উঠেছিল দুর্জেয়। ত্রিভুবন জয় করে সে ইন্দ্রকে করল সিংহাসনচ্যুত। মুনিঋষিদের বাধ্য করতে লাগল তার জয় গাইতে। দেবতাদের সে পাঠিয়ে দিল বনে; শুধু তাই নয়, তাঁদের করে রাখল নিজের আজ্ঞাবহ। ধর্মানুষ্ঠান যা ছিল, সে সব সে নিষিদ্ধ করে দিল। তার ভয়ে ব্রাহ্মণরা বেদপাঠ ছেড়ে দিল; নদীর গতিপথ গেল ঘুরে; আগুন হারাল তার তেজ; সন্ত্রস্ত নক্ষত্ররাজি করল আত্মগোপন। দুর্গ মেঘের রূপ ধারণ করে যেখানে খুশি সেখানে বৃষ্টিপাত ঘটাতে লাগল। ভয় পেয়ে পৃথিবী মাত্রাতিরিক্ত শস্য উৎপাদন করতে লাগলেন; ঋতুচক্রের তোয়াক্কা না করেই গাছে ফুটতে লাগল ফলফুল।”

দুঃখী দেবগণ এলেন শিবের কাছে। দেবরাজ ইন্দ্র বললেন, “সে আমাকে সিংহাসনচ্যুত করেছে!” সূর্য বললেন, “সে আমার রাজ্য কেড়ে নিয়েছে!” শিবের দয়া হল। তিনি পার্বতীকে অনুরোধ করলেন গিয়ে দৈত্যটিকে বধ করে আসতে। পার্বতী সানন্দে রাজি হলেন। তিনি দেবতাদের শান্ত করে প্রথমে কালরাত্রিকে পাঠালেন। কালরাত্রি তাঁর রূপে ত্রিভুবনকে করলেন মোহিত; দৈত্যদের আদেশ করলেন পৃথিবীর পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে দিতে। দুর্গ শুনে উঠল ক্ষেপে; কালরাত্রিকে ধরার জন্য পাঠাল সেনা। কিন্তু দেবী এক নিঃশ্বাসে তাদের ভষ্ম করে দিলেন। দুর্গ তখন ৩০,০০০ দৈত্য পাঠাল। এই দৈত্যরা আকারে এতই বড়ো ছিল যে পৃথিবীতল শুধু দৈত্যদেহেই ঢাকা পড়ে গেল। দৈত্যদের দেখে কালরাত্রি দুর্গার কাছে পালিয়ে এলেন। দুর্গ তখন ১০০,০০০,০০০ রথ, ১২০,০০০,০০০,০০০ হাতি, ১০,০০০,০০০ দ্রুতগামী ঘোড়া ও অসংখ্য সৈন্য নিয়ে চলল বিন্ধ্যপর্বতে পার্বতীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে। তাকে দেখেই পার্বতী সহস্রভুজা মূর্তি ধারণ করলেন। উপদেবতাদের নিয়ে গঠন করলেন নিজের বাহিনী। নিজের শরীর থেকে বহু অস্ত্র সৃষ্টি করলেন (পুরাণে সেসবের একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে)। পার্বতী বিন্ধ্যপর্বতে উপবেশন করতেই দৈত্যরা তাঁকে লক্ষ্য করে তীর ছুঁড়তে লাগল। দৈত্যদের ছোঁড়া তীর ঝোড়ো বৃষ্টির ধারার মতো দেবীর দিকে ছুটে এল। শুধু তাই নয়, গাছ, পাথর যা কিছু পেল সবই উপড়ে দেবীর দিকে ছুঁড়ে দিল দৈত্যের দল। প্রত্যুত্তরে দেবী একটিমাত্র অস্ত্র ছুঁড়ে তাদের ছোঁড়া সবকিছু হটিয়ে দিলেন। দুর্গ তখন নিজে একটা আগুনের গোলা ছুঁড়ে দিল দেবীর দিকে। দেবী সেটি দূরে সরিয়ে দিলেন। তখন দুর্গ ছুঁড়ল আরও একটি আগুনের গোলা। দেবী একশো তীর ছুঁড়ে থামিয়ে দিলেন সেটি। দুর্গ তখন দেবীর বক্ষদেশ লক্ষ্য করে তীর ছুঁড়ল। দেবী সেটিও থামিয়ে দিলেন। তারপর থামিয়ে দিলেন দুর্গের ছোঁড়া গদা আর শূলও। তারপর দেবী ও দৈত্য পরস্পরের কাছাকাছি এসে পড়লেন। পার্বতী দুর্গকে ধরে তার বুকে নিজের বাঁ পা-টি চাপিয়ে দিলেন। তবে দুর্গ কোনো ক্রমে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হল। তারপর নতুন করে ঝাঁপিয়ে পড়ল যুদ্ধে।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

ভগবতী-গীতা :: ৪র্থ ও ৫ম অধ্যায়

চতুর্থ অধ্যায়

হিমালয় বললেন,

হে দেবী, তোমাকে আশ্রয় না করলে যদি জীবের মুক্তি অসম্ভব হয়, তাহলে আমাকে বলে দাও, কিভাবে তোমাকে আশ্রয় করতে হবে।।১।।

মা, মুক্তিপিপাসুরা তোমার কোন রূপটি ধ্যান করবে? যদি দেহের বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে হয়, তাহলে তোমার প্রতিই যে পরাভক্তি রাখতে হবে।।২।।

পার্বতী বললেন,

এক হাজার মানুষের মধ্যে এক জন যদি সিদ্ধিলাভ করতে ইচ্ছুক হয়, তাহলে এমন এক হাজার সিদ্ধিলাভে ইচ্ছুক মানুষের মধ্যে এক জনই মাত্র আমার স্বরূপ জানতে পারে।।৩।।

বাবা, মুক্তিপিপাসুরা দেহের বন্ধন থেকে মুক্তিলাভের জন্য আমাকে সূক্ষ্ম, বাক্যের অতীত, নিষ্কলুষ, নির্গুণ, পরম জ্যোতির স্বরূপ, সর্বব্যাপী, একমাত্র কারণ, নির্বিকল্প, নিরালম্ব ও সচ্চিদানন্দ রূপে কল্পনা করবে।।৪।।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসবের সভাপতি ছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষ

বাগবাজার সর্বজনীনের দুর্গাপ্রতিমা।

বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও মেলা কলকাতার দুর্গাপুজোর একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। উত্তর কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে গিরিশ পার্কের কাছে একটি বিশাল মাঠে এই পূজা ও মেলার আয়োজন করা হয়।

বাগবাজার সর্বজনীনের পুজো কলকাতার সবচেয়ে পুরনো সর্বজনীন দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে একটি। ১৯১৯ সালে বাগবাজারের বাসিন্দারা প্রথম এই পুজোর আয়োজন করেছিলেন। প্রথম বার পুজো হয়েছিল নেবুবাগান লেন ও বাগবাজার স্ট্রিটের সংযোগস্থলে সরকার হাউসে। সেই সময় এই পুজোর নাম ছিল “নেবুবাগান বারোয়ারি দুর্গাপূজা”। তারপর তিন বছর সরকার হাউসেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল পুজো। ১৯২৪ সালে পুজো সরে আসে বাগবাজার স্ট্রিট ও পশুপতি বসু লেনের সংযোগস্থলে। তার পরের বছর পুজো হয় কাঁটাপুকুরে। ১৯২৬ সালে সমাজকর্মী নগেন্দ্রনাথ ঘোষাল ও আরও কয়েক জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ভার নেন এই পুজোর। তাঁদের প্রচেষ্টায় সুষ্ঠভাবে পুজো করার জন্য গড়ে ওঠে একটি সংগঠন। ১৯২৭ সালে পুজো হয় বাগবাজার কালীমন্দিরে। ১৯২৯ সালে প্রথম এই পুজো উপলক্ষ্যে মেলা বসে।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

কালীঘাট মন্দিরের দুর্গাপূজা

কালীঘাট মন্দিরের প্রধান উৎসব আটটি–রক্ষাকালী পূজা, স্নানযাত্রা, জন্মাষ্টমী, মনসাপূজা, শীতলাপূজা, চড়ক-গাজন ও রামনবমী। এছাড়া কালীপূজার রাতে হয় শ্যামা লক্ষ্মীপূজা। দুর্গাপূজার সময় মন্দিরে অধিষ্ঠিতা কালীকেই চামুণ্ডা দুর্গারূপে পূজা করা হয়। পূজা হয় কালিকাপুরাণ মতে। তবে এই পূজায় রয়েছে বিশেষ কয়েকটি আচারবিধিও। দুর্গাপূজার পাশাপাশি কালীর নিত্যপূজাও চলে।

 

দুর্গাপূজার কল্পারম্ভের বিধি রয়েছে সাতটি কল্পে–কৃষ্ণানবমী, প্রতিপদ, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, কেবল মহাষ্টমী ও কেবল মহানবমী। কালীঘাটে পূজা হয় সাতটি কল্পেই। কালীঘাট মন্দির চত্বরে যে মনসাতলা রয়েছে, সেখানেই একটি বেলগাছ পুঁতে তার তলায় হয় দেবীর বোধন। গঙ্গাস্নানের পর নবপত্রিকা প্রবেশ। সাধারণত দুর্গাপূজায় একটি নবপত্রিকা পূজা হলেও, কালীঘাট মন্দিরে দুটি নবপত্রিকা পূজা হয়। কালীমূর্তির ডানদিকে সেবায়েতদের কল্যাণে বসে একটি পত্রিকা; আবার বাঁদিকে সেবায়েতদের গুরুর পক্ষ থেকে বসে আর একটি পত্রিকা। কালীঘাট মন্দিরে কোনো পূজাতেই ঘটস্থাপন হয় না। কারণ, মা এখানে স্বয়ং বিরাজ করেন; তাই ঘটপ্রতীক এখানে নিষ্প্রয়োজন। অষ্টমী ও নবমী উভয় তিথিতেই কুমারীপূজা হয়। বলি হয় মহানবমীতে। মহানবমীর বলিতে কুচকুচে কালো রঙের ছাগল বলি দেওয়া হয়। এই দিন তিনটি বলি হয় একসঙ্গে। বলির সময় বাইরের কাউকে মন্দিরে থাকতে দেওয়া হয় না। মহানবমীর বলি দেখেন কেবল কালীই।

 

দুর্গাপূজার কয়েকদিন কালীঘাট মন্দিরে দেবীকে মহাভোগ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে চলে নিত্যভোগও (অর্থাৎ, রোজ যা দেওয়া হয়)। সকালবেলা মায়ের ঘুম ভাঙানোর পর দেওয়া হয় রাজভোগ। দুপুরের অন্নভোগে থাকে শুক্তো, পোলাও, মাছ, মাংস, নানারকম তরকারি, পায়েস। সন্ধ্যায় শীতলভোগে থাকে লুচি, মিষ্টি, রসগোল্লা। মাছের বিরিয়ানিও খান মা। নবমীর রাতে মা খান পান্তাভোগ। কারণ, পরদিন তিনি চলে যাবেন শ্বশুরবাড়ি; তাই মন সবার ভার থাকে, রান্নাঘরে হাঁড়ি চড়ে না।

 

দশমীর দিন মন্দিরে পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। এই দিন সধবারা মন্দিরে সিঁদুর খেলেন। তারপর সন্ধ্যা নামলে নবপত্রিকা বিসর্জন দিয়ে পূজার শেষ হয়।

 

(সুমন গুপ্তের কালীক্ষেত্র কালীঘাট বইতে পড়লাম এই সব বিবরণ; ভাবলাম শেয়ার করি।)

 

ট্যাগ সমুহঃ

অকালবোধন: দুর্গাপূজার কিছু অজানা কথা

ছেলেবেলায় বাবার সঙ্গে যেতুম খিদিরপুরের ভেনাস ক্লাবের ঠাকুর দেখতে। ওটা কলকাতা শহরের কোনো কেষ্ট-বিষ্টু পুজো নয়–কিন্তু আজও যাই সেই পুজো দেখতে। কারণ, কলকাতা শহরের এই একটি ক্লাবে গেলেই ফি বছর রামচন্দ্রের অকালবোধন চাক্ষুষ করার সুযোগ মেলে। মা দুর্গা সেখানে ‘সায়ূধবাহনা’ হলেও ‘সপরিবারা’ নন। তাঁর চারপাশে থাকেন লক্ষ্মণ, বিভীষণ, হনুমান–পদতলে অসুরের বদলে বসে থাকেন স্বচক্ষু উৎপাটনে উদ্যত রামচন্দ্র স্বয়ং।

দুর্গাপূজায় রামচন্দ্রের পূজার কোনো বিধান নেই। তাই সম্ভবত বাংলায় অকালবোধন থিমের আকাল। তবে অকালবোধনের গল্প বাঙালিরা শিশুকাল থেকে শুনে আসছে। সৌজন্যে কৃত্তিবাস ওঝা। পনেরো শতকের এই বাঙালি রামায়ণ অনুবাদক বেশ ফলাও করেই রামচন্দ্রের দুর্গাপুজোর গল্প শুনিয়েছেন। তবে গল্পটা সবিস্তারে খুব কম লোকই জানেন। তাই একবার বলে রাখা ভাল।

যুদ্ধে একে একে মারা পড়েছেন লঙ্কার সব বড়ো বড়ো বীর। রাবণ তখন একা কুম্ভের মতো রক্ষা করছেন লঙ্কাপুরী। তিনিও শ্রান্ত, বিধ্বস্ত। এমনকি একবার তো হনুমানের হাতে প্রচুর মার খেয়ে অজ্ঞানই হয়ে গেলেন। বেগতিক বুঝে রাবণ অম্বিকার স্তব করলেন:

আর কেহ নাহি মোর ভরসা সংসারে।

শঙ্কর ত্যজিল তেঁই ডাকি মা তোমারে।।

রাবণে কাতর স্তবে হৈমবতীর হৃদয় টলল। তিনি কালী রূপে রাবণকে কোলে তুলে নিয়ে তাঁকে দিলেন অভয়। এই খবর রামের কানে যেতেই তিনি গুণলেন প্রমাদ। দেবতাদের ঘুম উড়ে যাওয়ার জোগাড় হল। ইন্দ্র ব্রহ্মার কাছে গিয়ে কাকুতি-মিনতি করে একটা কিছু করার অনুরোধ জানালেন। বুড়ো ঠাকুরদাদা ব্রহ্মা এসে রামকে পরামর্শ দিলেন, “দুর্গাপূজা করো। আর কোনো উপায় নেই।” রাম বললেন, “তা কেমন করে হয়? দুর্গাপূজার প্রশস্ত সময় বসন্তকাল। শরৎকাল তো অকাল। তাছাড়া বিধান রয়েছে, অকালবোধনে নিদ্রা ভাঙাতে হবে কৃষ্ণানবমীতে। সুরথ রাজা প্রতিপদে পূজারম্ভ করেছিলেন। কিন্তু সেকাল তো আর নেই। পূজা করি কিভাবে?” ব্রহ্মা বললেন, “আমি ব্রহ্মা, বিধান দিচ্ছি, শুক্লাষষ্ঠীতে বোধন করো।” শুনে রাম মহাখুশি হলেন।

চণ্ডীপাঠ করি রাম করিল উৎসব।

গীত নাট করে জয় দেয় কপি সব।।

রাম চণ্ডীপাঠ করে উৎসব করলেন। সেই সুযোগে বাঁদরের দল খানিকটা নাচগান করে নিল (আহা, কৃত্তিবাস যেন আমাদের পাড়ার কথাই লিখেছেন গো!)।

সে কথা যাক, রামচন্দ্র কিভাবে দুর্গাপূজা করেছিলেন; তার একটু বর্ণনা দেবো। চণ্ডী-তে আছে, সুরথ রাজা দুর্গার মাটির মূর্তি গড়ে পূজা করেছিলেন (‘তৌ তস্মিন্ পুলিনে দেব্যাঃ কৃত্বা মূর্ত্তিং মহীময়ীম্।’ চণ্ডী, ১৩।১০)। রামচন্দ্রও পূজা করেছিলেন নিজের হাতে তৈরি মাটির প্রতিমায় (‘আপনি গড়িলা রাম প্রতিমা মৃন্ময়ী’)। ষষ্ঠীর সন্ধায় বেল গাছের তলায় হল দেবীর বোধন। অধিবাসের সময় রাম স্বহস্তে বাঁধলেন নবপত্রিকা।

সায়াহ্নকালেতে রাম করিল বোধন।

আমন্ত্রণ অভয়ার বিল্বাধিবাসন।। …

আচারেতে আরতি করিলা অধিবাস।

বান্ধিলা পত্রিকা নব বৃক্ষের বিলাস।।

Read the rest of this entry »

 
9 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 23, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

বাঙালির দুর্গাপূজা ঠিক কতটা প্রাচীন?

এই লেখাটি একাধিক ওয়েবসাইটে বেআইনিভাবে চুরি করা হয়েছে। একমাত্র এই ব্লগই লেখাটি প্রকাশের আইনত স্বত্বাধিকারী।

বাংলায় দুর্গোৎসবের প্রবর্তনা কে কবে করেছিল, সে সম্পর্কে কিছুই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। সাধারণভাবে মনে করা হয়, অধুনা বাংলাদেশের তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ নাকি প্রথম দুর্গাপূজা করেন। যদিও বাংলায় দুর্গোৎসবের ইতিহাস যে কংসনারায়ণের সময়কাল থেকে শুরু হয় না, তা প্রায় হলপ করেই বলা যায়। কংসনারায়ণ দুর্গোৎসব করেছিলেন ষোড়শ শতাব্দীর শেষলগ্নে কিংবা সপ্তদশ শতাব্দীর সূচনায়। কিন্তু তারও আগেকার সাহিত্যে ও অন্যান্য সূত্রে বাংলায় দুর্গাপূজার উল্লেখ পাওয়া যায়। খুব সম্ভবত, যে বিপুল ব্যয়ে কংসনারায়ণ দুর্গোৎসব করেন, তা-ই সেযুগের জনমানসে দুর্গাপূজার সংজ্ঞা দিয়েছিল বদলে। আর সেই থেকেই কংসনারায়ণী মিথের উৎপত্তি।

শরৎকালের দুর্গাপূজার একটি প্রাচীন গল্প প্রচলিত আছে হিউয়েন সাংকে নিয়ে। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ কোনো এক সময়ে শরৎকালে গঙ্গাপথে চলেছিলেন এই চীনা পর্যটক। পথে পড়লেন দস্যুর কবলে। দস্যুরা তাকে দেবী দুর্গার সামনে বলি দেওয়ার জন্য ধরে নিয়ে চলল। বলির আয়োজন সারা। এমন সময় খ্যাপা শ্রাবণ ছুটে এল আশ্বিনের আঙিনায়। লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল সব আয়োজন। দস্যুরা মাথা বাঁচাতে যে যেদিকে পারল দিল ছুট। সেই সুযোগে নিজেকে মুক্ত করে পালালেন হিউয়েন সাং।

এই গল্প সত্য কি মিথ্যা বলা যায় না। তবে একথা সত্যি যে দুর্গাপূজার ইতিহাস একেবারেই অর্বাচীন নয়। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি বলেছেন, ‘দুর্গাপূজা বৈদিক যজ্ঞের রূপান্তর, তন্ত্র দ্বারা সমাচ্ছন্ন।’ তাঁর মতে, বৈদিক যুগে প্রত্যেক ঋতুর প্রারম্ভে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হত। শরৎঋতুর আরম্ভেও হত। ‘এই শরৎকালীন যজ্ঞই রূপান্তরিত হইয়া দুর্গাপূজা হইয়াছে।’ তাঁর যুক্তি? তিনি বলেন, বৈদিক যজ্ঞ ও দুর্গাপূজার মধ্যে অনেক প্রভেদ রয়েছে। কিন্তু উভয়ের উদ্দেশ্য একই। বৈদিক যজ্ঞের উদ্দেশ্য, ধন-ধান্য-পুত্র, রোগমুক্তি ও শক্তিনাশের শক্তি প্রার্থনা। দুর্গার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র বলে, ‘আয়ুরারোগ্যং বিজয়ং দেহি দেবি নমস্তুতে। রূপং দেহি যশো দেহি ভাগ্যং ভগবতি দেহি মে। পুত্রান দেহি ধনং দেহি সর্ব্বকামাংশ্চ দেহি মে।।’ (হে ভগবতী, আপনাকে প্রণাম করি, আপনি আমাকে রোগমুক্ত করুন, বিজয়ী করুন, যশ ও সৌভাগ্য প্রদান করুন, পুত্র ও ধন দিন এবং আমার সকল কামনা পূর্ণ করুন।) যোগেশচন্দ্র আরও দেখাচ্ছেন, দুর্গাপূজার মন্ত্রে ‘যজ্ঞ’ শব্দটির পরিব্যাপ্তি কতটা। বৈদিক হিন্দুধর্ম ছিল যজ্ঞসর্বস্ব। দুর্গাপূজাতেও দেখি, দেবীকে যজ্ঞভাগ গ্রহণে আহ্বান জানানো হচ্ছে (‘দেবি যজ্ঞভাগান্ গৃহাণ’) এবং পশুবলি দেওয়ার সময় বলা হচ্ছে, যজ্ঞের নিমিত্তই পশুর সৃষ্টি (‘যজ্ঞার্থে পশবঃ সৃষ্টাঃ তস্মিন্ যজ্ঞে বধোঽবধঃ’)। যোগেশচন্দ্রের তাই অনুমান, বৈদিক শারদ যজ্ঞই তন্ত্রের প্রভাবে পর্যবসিত হয়েছে আধুনিক দুর্গোৎসবে। হৃদয়ে যা জাগে, শরৎমেঘে তাই তো দেখা যায়।

Read the rest of this entry »

 
22 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 20, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

দেবীসূক্তম্

অহং রুদ্রেভিরিত্যষ্টর্চ্চস্য সূক্তস্য বাগম্ভৃণী ঋষিঃ সচ্চিদানন্দাত্মকঃ সর্ব্বগতঃ শ্রীআদিশক্তির্দেবতা ত্রিষ্টুপ্ছন্দো দ্বিতীয়া জগতী শ্রীজগদম্বাপ্রীত্যর্থে সপ্তশতীপাঠান্তে জপে বিনিয়োগঃ।

[ঋগ্বেদ, দশম মণ্ডল, দশম অনুবাক, ১২৫তম সূক্ত]

ওঁ অহং রুদ্রেভির্ব্বসুভিশ্চরাম্যহমাদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ।

অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহমিন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা।।১।।

অহং সোমমাহনসং বিভর্ম্যহং ত্বষ্টারমুত পূষণং ভগম্।

অহং দধামি দ্রবিণং হবিষ্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্বতে।।২।।

অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসুনাঞ্চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম।

তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা ভূরিস্থাত্রাং ভূর্য্যাবেশয়ন্তীম্।।৩।।

ময়া সো অন্নমত্তি যো বিপশ্যতি যঃ প্রাণিতি য ঈং শৃণোত্যুক্তম্।

অমন্তবো মান্ত উপক্ষীয়ন্তি শ্রুধি শ্রুত শ্রদ্ধিবন্তে বদামি।।৪।।

অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং দেবেভিরুত মানুষেভিঃ।

যং কাময়ে তং তমুগ্রং কৃণোমি তং ব্রহ্মাণং তমুষিং তং সুমেধাম্।।৫।।

অহং রুদ্রায় ধনুরাতনোমি ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ।

অহং জনায় সমদং কৃণোম্যহং দ্যাবাপৃথিবী আবিবেশ।।৬।।

অহং সুবে পিতারমস্য মূর্ধ্বন্মম যোনি রপ্‍স্বন্তঃ সমুদ্রে।

ততো বিতিষ্ঠে ভুবনানি বিশ্বোতামূন্দ্যাং বর্ষ্মণোপস্পৃশামি।।৭।।

অহমেব বাত ইব প্রবাম্যারভমাণা ভুবনানি বিশ্বা।

পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈতাবতী মহিমা সম্বভূব।।৮।।

ওঁ তৎ সৎ ওঁ

ইতি ঋগ্বেদোক্তং দেবীসূক্তং সমাপ্তম্।

Read the rest of this entry »

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 20, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

শ্রীশ্রীদুর্গার অষ্টোত্তর-শতনাম (মূল সংস্কৃত ও বঙ্গানুবাদ)

দুর্গা

ঈশ্বর উবাচ

শতনাম প্রবক্ষ্যামি শৃণুষ্ব কমলাননে।

যস্য প্রসাদমাত্রেণ দুর্গা প্রীতা ভবেৎ সতী।।১।।

ওঁ সতী সাধ্বী ভবপ্রীতা ভবানী ভবমোচনী।

আর্য্যা দুর্গা জায়া আদ্যা ত্রিনেত্রা শূলধারিণী।।২।।

পিনাকধারিণী চিত্রা চন্দ্রঘণ্টা* মহাতপা।

মনোবুদ্ধিরহঙ্কারা চিত্তরূপা চিতা চিতিঃ।।৩।।

সর্ব্বমন্ত্রময়ী সত্যা সত্যানন্দস্বরূপিণী।

অনন্তা ভাবিনী ভাব্যা ভব্যাঽভব্যা সদাগতিঃ।।৪।।

শাম্ভবী দেবমাতা চ চিন্তা রত্নপ্রিয়া সদা।

সর্ব্ববিদ্যা দক্ষকন্যা দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী।।৫।।

অপর্ণানেকবর্ণা চ পাটলা পাটলাবতী।

পট্টাম্বরপরিধানা কলমঞ্জীররঞ্জিনী।।৬।।

অমেয়বিক্রমা ক্রূরা সুন্দরী পুরসুন্দরী।

বনদুর্গা চ মাতঙ্গী মতঙ্গমুনিপূজিতা।।৭।।

ব্রাহ্মী মাহেশ্বরী চৈন্দ্রী কৌমারী বৈষ্ণবী তথা।

চামুণ্ডা চৈব বারাহী লক্ষ্মীশ্চ পুরুষাকৃতিঃ।।৮।।

Read the rest of this entry »

 
10 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 19, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

পার্বতী

মূল রচনা: ডব্লিউ. জে. উইলকিনস (হিন্দু মিথোলজি: বৈদিক অ্যান্ড পৌরাণিক থেকে)

অনুবাদ: অর্ণব দত্ত

এই রূপে দেবী শুধুই শিবজায়া। তবে এই রূপেও তিনি কিছু লীলা করেছেন। পুরাণে হরপার্বতীর যে ছবিগুলি চিত্রিত হয়ে থাকে, তাতে দেখি হয় তাঁরা প্রেমালাপ করছেন, নয় কৈলাস পর্বতের শিখরে বসে হিন্দু দর্শনের গূঢ় তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করছেন। আবার মাঝেমধ্যে তাঁরা কলহও করে থাকেন। পার্বতীর গায়ের রং কালো ছিল বলে একবার শিব তাঁকে উপহাস করেছিলেন। সেই উপহাসে দুঃখিতা হয়ে পার্বতী কিছুদিনের জন্য স্বামীকে ছেড়ে বনে গিয়ে এক ভয়ানক তপস্যা করলেন। সেই তপস্যার ফলে ব্রহ্মার বরে তাঁর গায়ের রং হল সোনার মতো; পার্বতী অভিহিতা হলেন গৌরী নামে। (কেনেডি, “হিন্দু মিথোলজি”, পৃ. ৩৩৪)

শিব ও পার্বতী

“বরাহ পুরাণ”-এ উল্লিখিত একটি গল্পে পার্বতীর জন্মের বিবরণ পাওয়া যায়। গল্পটি এইরকম: একবার ব্রহ্মা শিবের সঙ্গে দেখা করতে এলেন কৈলাস পর্বতে। শিব তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন: “হে ব্রহ্মাদেব, কিসের টানে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন এখন, সে কথা শীঘ্র বলুন।” ব্রহ্মা উত্তর দিলেন, “অন্ধক নামে এক পরাক্রমশালী অসুর আছে। তার অত্যাচারে অতিষ্ট দেবগণ এসেছিলেন আমার কাছে অভিযোগ জানাতে। আমি এসেছি তাঁদের অভিযোগ সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করতে। ব্রহ্মা চাইলেন শিবের পানে। শিব ধ্যানযোগে বিষ্ণুকে আনলেন ডেকে। তিন দেবতা একে অপরের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। “তাঁদের নীলোৎপল-তুল্য নীলাভ জ্যোতির্ময় দৃষ্টি থেকে এক দিব্য কুমারীর জন্ম হল। রত্নভূষিতা সেই কন্যা ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবকে প্রণাম করলেন। তাঁরা কন্যাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে তিনি কে; আর কেনই বা তিনি নিজেকে সাদা, লাল ও কালো – এই তিন রঙে বিভক্ত করে রেখেছেন। শুনে দেবী বললেন, “আপনাদেরই দৃষ্টি থেকে উৎপন্না আমি। আপনারা কি আপনাদের শক্তি সম্পর্কে অবহিত নন?” ব্রহ্মা তখন তাঁর স্তব করে বললেন, “আপনি হবেন ত্রিকালেশ্বরী জগদ্ধাত্রী। নানা রূপে পূজিতা হবেন আপনি। কিন্তু হে দেবী, আপনি যে তিন রঙে প্রকাশিত হচ্ছেন, সেই তিন রঙে স্বীয় সত্ত্বাকে বিভাজিত করুন।” ব্রহ্মার কথামতো দেবী নিজেকে তিন অংশে বিভাজিত করলেন; একটি শ্বেতবর্ণ, একটি রক্তবর্ণ ও একটি কৃষ্ণবর্ণ সত্ত্বা। শ্বেতবর্ণ সত্ত্বাটি হলেন” সরস্বতী; তিনি প্রিয়দর্শনা ও মঙ্গলরূপিণী; তিনি ব্রহ্মার সৃষ্টিকর্মে সহযোগিতা করতে লাগলেন। রক্তবর্ণ সত্ত্বাটি হলেন বিষ্ণুপ্রিয়া জগদ্ধাত্রী লক্ষ্মী। কৃষ্ণবর্ণ সত্ত্বাটি হলেন পার্বতী; তিনি শিবের গুণাবলি লাভ করে তাঁরই শক্তি হলেন।” আগের গল্পটিতে বলা হয়েছে, কিভাবে কৃষ্ণাঙ্গিনী পার্বতী কনকবরণা হয়েছিলেন।

Read the rest of this entry »

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 14, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

ভগবতী-গীতা :: ২য় ও ৩য় অধ্যায়

দ্বিতীয় অধ্যায়-

হিমালয় বললেন,

মা মাহেশ্বরী, যে বিদ্যা মুক্তির পথ দেখায়, সেই বিদ্যা কি? তার স্বরূপই বা কি? আমাকে তা বলো।।১।।

পার্বতী বললেন,

বাবা, সংসার-নিবারণকারী বিদ্যার স্বরূপ সংক্ষেপে তোমার কাছে বর্ণনা করছি, শোনো।।২।।

চিৎস্বরূপ অদ্বিতীয় আত্মাকে শুদ্ধ বলে জানবে। তাকে প্রাণ, মন, অহংকার ও ইন্দ্রিয়গণ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক বলে জানবে। আমিই সেই আত্মা।।৩।।

আত্মাকে আদি, নিরাময়, জন্ম ও মৃত্যু রহিত এবং বুদ্ধি প্রভৃতি উপাধিবর্জিত শুদ্ধ চিদানন্দরূপে জানবে।।৪।।

আত্মা নিরাকার প্রভাবিশিষ্ট, পূর্ণ, শুদ্ধজ্ঞান ইত্যাদির লক্ষণযুক্ত, এক এবং অদ্বিতীয়। অথচ দেহে প্রবেশ করে তা ভিন্ন ভিন্ন জীব রূপে প্রতীয়মান হয়।।৫।।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

উমা

মূল রচনা: ডব্লিউ. জে. উইলকিনস (হিন্দু মিথোলজি: বৈদিক অ্যান্ড পৌরাণিক থেকে)

অনুবাদ: অর্ণব দত্ত

  উমা শব্দের অর্থ ‘জ্ঞান’ এবং দেবীরূপে উমা হলেন ‘দিব্য জ্ঞান’।

উমা হল সেই নাম, যে নামে শিবের পত্নী সর্বপ্রথম পরিচিত। পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলিতে তাঁকে দেখা যায় নানা রূপে, জানা যায় নানা নামে; কিন্তু যেহেতু অধিক পরিচিত রূপ ও নামগুলির সঙ্গে কতকগুলি নির্দিষ্ট কিংবদন্তি জড়িত, তাই সেগুলিই যথাসম্ভব কালানুক্রমিকভাবে দেওয়ার চেষ্টা করা হল।

কথিত আছে, দেবী উমা ছিলেন ব্রহ্মার পুত্র দক্ষের কন্যা। ভিক্ষোপজীবীর ঘরে মেয়ের বিয়ে দিতে ভারি আপত্তি ছিল দক্ষের। কিন্তু ব্রহ্মাই তাঁকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করান। শিব হলেন মহাদেব; সেই সূত্রে তাই উমাও হলেন মহাদেবী। দেবী উমার অপর নাম সতী। এই নামের পিছনে একটি গল্প আছে। দক্ষ একবার শিবকে অপমান করার জন্য জামাইকে আমন্ত্রণ না জানিয়েই এক মহাযজ্ঞের আয়োজন করলেন। তখন স্বামীর অপমানে অপমানিতা হয়ে উমা স্বয়ং যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে দেবতা-ব্রাহ্মণের সামনেই যজ্ঞের আগুনের ঝাঁপ দিয়ে আত্মাহুতি দিলেন। সেই থেকেই তিনি হলেন সতী। অন্য মতে, তিনি আপন মহিমাবলে সতী হয়েছিলেন। সতী শব্দটির অর্থ ‘সত্যবতী বা পবিত্র নারী’। সেকালে যে সমস্ত বিধবারা স্বামীর চিতায় স্বেচ্ছায় আত্মাহুতি দিতেন, তাঁদেরও সতী বলা হত। একটি প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে উমার অপর নাম অম্বিকা। উক্ত গ্রন্থমতে তিনি রুদ্রের বোন। যদিও অন্য একটি ধর্মগ্রন্থের মতে, তিনি রুদ্রের স্ত্রী।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

ভগবতী-গীতা :: ১ম অধ্যায়

নারদ বললেন,

হে মহাদেব, পরমেশ্বরী দুর্গা কিভাবে হিমালয়-পত্নী মেনকার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, আমাকে তা বলুন।।১।।

হে পরমেশ্বর, আমি জগজ্জননীর জন্ম ও কর্মের বিবরণ নানা পুরাণে শুনেছি এবং জেনেছি। কিন্তু একমাত্র আপনিই সেই সব তত্ত্ব সঠিক রূপে জানেন। তাই, হে মহাদেব, আমি আপনার কাছ থেকেই সেই সব তত্ত্ব যথাযথরূপে শুনতে ইচ্ছা করি। হে মহাদেব, আপনি আমাকে সেই সব কথা সবিস্তারে বলুন।।২।।

শিব বললেন,

হে মুনিবর, ত্রৈলোক্যজননী দুর্গা ব্রহ্মরূপা সনাতনী। গিরিরাজ হিমালয় ও তাঁর পত্নী মেনকা তাঁকে কন্যারূপে আরাধনা করেছিলেন। সতীবিরহে কাতর হয়ে আমি তাঁকে পত্নীরূপে প্রার্থনা করেছিলাম।।৩।।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

সিন্ধু সভ্যতা

সিন্ধু লিপি

১৯২২-২৩ সাল নাগাদ ব্রিটিশ পুরাতত্ত্ববিদ স্যার জন মার্শালের ভারতীয় সহকারী রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় অধুনা পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশের লারকানা জেলার মহেঞ্জোদাড়ো এলাকায় বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতাটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। তার কিছুদিন আগেই মহেঞ্জোদাড়োর কয়েকশো মাইল উত্তরে অধুনা পাকিস্তানেরই পাঞ্জাব প্রদেশের মন্টগোমারি জেলার হরপ্পায় একটি প্রাচীন শহরের চার-পাঁচটি স্তরবিশিষ্ট ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছিল। এরপর অধুনা ভারতের রাজস্থানের কালিবঙ্গান, চণ্ডীগড়ের কাছে রুপার, গুজরাতের আমেদাবাদের কাছে লোথাল, গুজরাতেরই কচ্ছ জেলার ধোলাবীরা, হরিয়ানার হিসার জেলার বনোয়ালিতে এবং অধুনা পাকিস্তানের সিন্ধুপ্রদেশের কোট দিজি ও চানহুদাড়ো এবং পাকিস্তান-ইরান সীমান্তের কাছে বালুচিস্তান প্রদেশের সুতকাজেন-ডোরেও অনুরূপ শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিকরা মনে করেন, এই সব শহর একটি স্বতন্ত্র সভ্যতার অন্তর্গত ছিল। এই সভ্যতাই সিন্ধু সভ্যতা, মেসোপটেমিয়ান সাহিত্যে সম্ভবত যার নাম মেলুহা। ঐতিহাসিকেরা একে সিন্ধু-ঘগ্গর-হাকরা সভ্যতা বা সিন্ধু-সরস্বতী সভ্যতাও বলে থাকেন। এই সভ্যতা ছিল তাম্র-ব্রোঞ্জ (ক্যালকোলিথিক) যুগের সভ্যতা; কারণ, লোহার ব্যবহার এই অঞ্চলের অধিবাসীদের অজ্ঞাতই ছিল। এই সভ্যতার সামগ্রিক সময়কাল ধরা হয় ৫৫০০-১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ