RSS

Monthly Archives: মার্চ 2012

শ্রীশ্রীচণ্ডী (মূল সহ বঙ্গানুবাদ) :: প্রথম পর্ব :: অর্গলাস্তোত্রম্‌

।। ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ ।।

                                                             

ওঁ অস্য শ্রীঅর্গলাস্তোত্রমন্ত্রস্য বিষ্ণুর্ঋষিঃ অনুষ্টুপ্ছন্দঃ শ্রীমহালক্ষ্মীর্দেবতা শ্রীজগদম্বাপ্রীত্যর্থং সপ্তশতীপাঠাঙ্গজপে বিনিয়োগঃ।

এই অর্গলাস্তোত্রের ঋষি হলেন বিষ্ণু, ছন্দ হল অনুষ্টুপ ও দেবতা হলেন শ্রীমহালক্ষ্মী। জগজ্জননীর প্রীতির জন্য শ্রীশ্রীচণ্ডীপাঠের অঙ্গরূপে এই স্তোত্র পাঠ করা হয়।

ওঁ মার্কণ্ডেয় উবাচ।

মার্কণ্ডেয় বললেন–

ওঁ জয় ত্বং দেবি চামুণ্ডে জয় ভূতাপহারিণি।[*]

জয় সর্বগতে দেবি কালরাত্রি নমোঽস্তু তে।। ১

হে দেবী চামূণ্ডা, তোমার জয় হোক। হে দেবী, তুমি জীবের দুঃখনাশকারিণী; তুমি সর্বভূতে অবস্থিতা; আবার তুমিই প্রলয়ের অন্ধকার স্বরূপিণী কালরাত্রি। তোমায় নমস্কার করি।

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।

দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে।। ২

হে দেবী, তুমি সর্বোৎকৃষ্টা জয়যুক্তা দেবী জয়ন্তী; তুমি জন্মমৃত্যুবিনাশিনী মোক্ষপ্রদায়িনী দেবী মঙ্গলা; তুমি সর্বসংহারকারিণী কালী; তুমি সুখদায়িনী ভদ্রকালী; আবার তুমিই প্রলয়কালে ব্রহ্মা প্রমুখের মাথার খুলি হস্তে নৃত্যরতা কপালিনী। তুমি দুর্গা, কারণ বহু কষ্ট স্বীকার করে তবে তোমায় লাভ করা যায়; তুমি চৈতন্যময়ী শিবা; তুমি করুণাময়ী ক্ষমা; তুমি বিশ্বধারিণী ধাত্রী; তুমি দেবগণের পোষণকর্ত্রী স্বাহা ও পিতৃগণের পোষণকর্ত্রী স্বধা। তোমায় নমস্কার করি।

Read the rest of this entry »

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন মার্চ 18, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

বাংলা সমাস :: পর্ব ১ :: সাধারণ আলোচনা ও দ্বন্দ্ব সমাস

‘সমাস’ শব্দের অর্থ সংক্ষেপ। পরস্পর অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদকে সংক্ষিপ্ত করে একটি পদে পরিণত করার নাম ‘সমাস’।

 

উদাহরণ: ‘চাঁদের মতো মুখ’ – এই তিনটি পদকে এক করে করা যায় ‘চাঁদমুখ’। একেই বলেই সমাস।

সমাস-সংক্রান্ত কয়েকটি সাধারণ শব্দার্থ

সমস্যমান পদ ও সমস্ত পদ:

সমাসে যে পদগুলিকে সংক্ষিপ্ত করে একটি পদে পরিণত করা হয় তাদের প্রত্যেকটিকে বলে সমস্যমান পদ। ‘চাঁদের মতো মুখ’ বাক্যাংশে সমস্যমান পদ তিনটি – ‘চাঁদের’, ‘মতো’ ও ‘মুখ’।

সমাস করার ফলে যে একক পদটি সৃষ্টি হয় তাকে বলে সমস্ত পদ। ‘চাঁদের মতো মুখ’ বাক্যাংশের সমাস করার ফলে সৃষ্ট ‘চাঁদমুখ’ শব্দটি হল সমস্ত পদ।

ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য:

‘ব্যাস’ বা ‘বিগ্রহ’ শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ। যে বাক্য বা বাক্যাংশের সাহায্যে সমস্যমান পদগুলির অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়, তাকে বলে ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য। ‘চাঁদের মতো মুখ’ – এই বাক্যাংশটি হল ব্যাসবাক্য।

পূর্বপদ ও উত্তরপদ:

সমস্যমান পদগুলির প্রথমটির নাম পূর্বপদ ও শেষেরটির নাম উত্তরপদ। ‘চাঁদের মতো মুখ’ এই সমস্যমান পদের পূর্বপদ হল ‘চাঁদ’ ও উত্তরপদ ‘মুখ’।

 

 

সমাসের শ্রেণিবিভাগ

আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সমাসকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যথা: (১) সংযোগমূলক বা দ্বন্দ্ব সমাস, (২) ব্যাখ্যানমূলক বা আশ্রয়মূলক এবং (৩) বর্ণনামূলক বা বহুব্রীহি। আশ্রয়মূলক সমাসের তিনটি উপবিভাগ দেখিয়েছেন তিনি – তৎপুরুষ, কর্মধারয় ও দ্বিগু। বহুব্রীহি সমাসকে চার ভাগে ভাগ করেছেন। যথা: ব্যধিকরণ বহুব্রীহি, সমাধাধিকরণ বহুব্রীহি, ব্যতিহার বহুব্রীহি ও মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি।

আমরা বোঝার সুবিধার জন্য বাংলা সমাসকে প্রধানত ভাগ করব ছয় ভাগে। যথা: (১) দ্বন্দ্ব, (২) তৎপুরুষ, (৩) কর্মধারয়, (৪) দ্বিগু, (৫) বহুব্রীহি এবং (৬) অব্যয়ীভাব।

                                                                                              দ্বন্দ্ব সমাস

‘দ্বন্দ্ব’ শব্দের অর্থ যুগ্ম বা জোড়া।

যে সমাসে পূর্বপদ ও উত্তরপদ ও, এবং, আর ইত্যাদি সংযোজক অব্যয় দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকে এবং সমস্তপদে পূর্ব ও উত্তর উভয় পদের অর্থের প্রাধান্য বজায় থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।

উদাহরণ: হরিহর = হরি ও হর।

দ্বন্দ্ব সমাসে সাধারণত স্বল্পদলযুক্ত পদটি পূর্বপদের স্থানে বসে। যেমন – হাটবাজার = হাট (একদল) ও বাজার (দ্বিদল)। তবে এই নিয়মের ব্যতিক্রমও দুর্লভ নয়। যেমন – স্বামীস্ত্রী = স্বামী (দ্বিদল) ও স্ত্রী (একদল)। এক্ষেত্রে আচার্য সুনীতিকুমারের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য: “যে পদটী বানানে বা উচ্চারণে অপেক্ষাকৃত ছোট, এই সমাসে সাধারণত সেটী প্রথমে বসে; কিন্তু এই নিয়মের ব্যতয়ও দেখা যায় – যে পদটির অর্থ অপেক্ষাকৃত গৌরব-বোধক বলিয়া বিবেচিত হয়, সে পদটী অন্যটির অপেক্ষা দীর্ঘ হইলেও প্রথমে বসিতে পারে।”

দ্বন্দ্ব সমাস মূলত দুটি বিশেষ্য পদের সমাস। তবে দুটি সর্বনাম, দুটি বিশেষণ বা দুটি ক্রিয়াপদেরও সমাস হতে পারে।

সংস্কৃত সমাসে সমস্যমান পদ দুটি (যথা: দেবদ্বিজ = দেব ও দ্বিজ) বা দুইয়ের অধিক (যথা: রাম-লক্ষ্মণ-ভরত-শত্রুঘ্ন = রাম, লক্ষণ, ভরত ও শত্রুঘ্ন) হতে পারে। বাংলা সমাসে সাধারণত দুটি সমস্যমান পদেই দ্বন্দ্ব সমাস হয়; বাক্যের মধ্যে দুইয়ের অধিক সমস্যমান পদ থাকলে, সেগুলিকে সমাসবদ্ধ না করে পৃথক পৃথক ভাবে লেখা হয়। তবে এই নিয়মের ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন: চোখকাননাক = চোখ, কান ও নাক।

শ্রেণিবিভাগ–

পদবৈভিন্ন্য অনুসারে দ্বন্দ্ব সমাসের বিভাগগুলি হল:

(ক) দুই বিশেষ্য পদের দ্বন্দ্ব – গুরুশিষ্য = গুরু ও শিষ্য।

(খ) দুই সর্বনাম পদের দ্বন্দ্ব – তুমি-আমি = তুমি ও আমি।

(গ) দুই বিশেষণ পদের দ্বন্দ্ব – ন্যায়-অন্যায় = ন্যায় ও অন্যায়।

(ঘ) দুই ক্রিয়া পদের দ্বন্দ্ব – দেখেশুনে = দেখে ও শুনে।

গঠনপ্রকৃতি অনুসারে দ্বন্দ্ব সমাসের বিভাগগুলি হল:

(ক) অলোপ দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদের বিলুপ্ত হয় না তাকে, অলোপ দ্বন্দ্ব বলে। যেমন: মায়েঝিয়ে = মায়ে ও ঝিয়ে।

(খ) একশেষ দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলির একটিমাত্র পদ অবশিষ্ট থাকে, তাকে একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন: পিতা চ মাতা = পিতারৌ (সংস্কৃত সমাস), তুমি ও সে = তোমরা (বাংলা সমাস)।

(গ) সমার্থক দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলি একই অর্থবাচক, তাকে সমার্থক দ্বন্দ্ব বলা হয়। যেমন: লজ্জাশরম = লজ্জা ও শরম।

দ্রঃ শব্দদ্বৈত ও সমার্থক দ্বন্দ্ব সর্বদা এক নয়। সমার্থক দ্বন্দ্বে সমস্যমান পদদুটির প্রত্যেকটিই স্বাধীন অর্থ বহন করে। কিন্তু শব্দদ্বৈতে উত্তরপদটি পূর্বপদের অর্থকে সম্প্রসারিত করে ‘ইত্যাদি’ অর্থে প্রযুক্ত হয়। যেমন: কাপড়চোপড় এই শব্দদ্বৈতে ‘চোপড়’ কথাটির দ্বারা একাধিক কাপড় বোঝায়, কিন্তু এটি কোনো স্বাধীন অর্থ বহন করে না।

(ঘ) বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলি পরস্পর বিপরীত অর্থ বহন করে তাকে বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন: দেবাসুর = দেব ও অসুর।

(ঙ) মিলনার্থক দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলির পারস্পরিক মিলন অর্থের দিক থেকে পূর্ণতা প্রকাশ করে, তাকে মিলনার্থক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন: রাধাকৃষ্ণ = রাধা ও কৃষ্ণ।

(চ) বিকল্পার্থক দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসের দ্বারা সমস্যমান পদগুলির যে কোনো একটি নির্দেশ করা হয় তাকে বিকল্পার্থক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন: ভালোমন্দ = ভালো ও মন্দ।

(ছ) অলূক দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসের সমস্যমান পদগুলি বিভক্তিযুক্ত তাকে বলে অলূক দ্বন্দ্ব। যথা: মাঠে-ঘাটে = মাঠে ও ঘাটে। সংস্কৃতে এই সমাস নেই।

(পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির বানানরীতি অনুসৃত)

(ক্রমশ)

(পরবর্তী পর্বে তৎপুরুষ সমাস নিয়ে আলোচনা করা হবে)

 

ট্যাগ সমুহঃ