RSS

Monthly Archives: অগাষ্ট 2011

কালিকা উপনিষদ্

ব্রহ্মরূপিণী সর্ব-ঐশ্বর্যশালিনী কালীকে ব্রহ্মরন্ধ্রেই প্রাপ্ত হওয়া যায়।। ১ ।।

তিনি সত্ত্ব, রজঃ ও তমো – এই তিন গুণ বিবর্জিতা; তিনিই সকল জীবের রূপে বিরাজমানা বা ‘ক্রীং’ অক্ষররূপা।। ২ ।।

ক্রীং বীজমন্ত্র তিনবার উচ্চারণ করে কূর্চবীজ হুং মন্ত্র দুবার উচ্চারণ করবে। তারপর দুবার ভূবনাবীজ হ্রীং মন্ত্র উচ্চারণ করে ‘দক্ষিণে কালিকে’ বলিয়াকে মাকে দর্শন করবে। ঐ হ্রীং মন্ত্রের সঙ্গে সপ্তবীজ উচ্চারণ করে অগ্নিপত্নী অর্থাৎ স্বাহা মন্ত্র যোগ করবে। এই মন্ত্র জপ করলে সাধক শিবময় হন।। ৩ ।।

তাঁরই সদগতি হয়, অপরের হয় না। তিনি নরশ্রেষ্ঠ, দেবশ্রেষ্ঠ ও সর্বশ্রেষ্ঠ হন। নতুন কালো মেঘের মতো যাঁর গায়ের রং, যিনি নিবিড়স্তনী, করাল দন্তবিশিষ্টা ও শবাসনা, সেই পরাপ্রকৃতি কালীকে ধ্যান করবে।। ৪ ।।

ত্রিকোণ বা নয় কোণবিশিষ্ট পদ্মের উপর ষড়ঙ্গন্যাস করে প্রকাশশীলা পরাপ্রকৃতিকে অর্চনা করবে। তাঁর দ্বারাই সর্বাঙ্গ প্রাপ্ত হবে।। ৫।।

কালী, কপালিনী, কুল্লা, কুরুকুল্লা, বিরোধিনী, বিপ্রচিত্তা, উগ্রা, উগ্রপ্রভা, দীপ্তা, নীলা, ঘনা, বলাকা, মাত্রা, মুদ্রা, মৃতা – এই পনেরোজন জ্যোতির্ময়ী দেবী পনেরোটি কোণে বিরাজ করছেন।। ৬।।

ব্রাহ্মী, মাহেশ্বরী, ঐন্ত্রী, চামুণ্ডা, কৌমারী, অপরাজিতা, বারাহী ও নারসিংহী – এঁরা অষ্টদলস্থিতা দেবী। দুই, তিন, চার, ছয়, বারো, আঠারো, চোদ্দো বা ষোলোস্থানীয় স্বরবিশেষ দ্বারা প্রণবের সঙ্গে এঁদের আমন্ত্রণ জানাতে হয় এবং মূলমন্ত্রের দ্বারা অঙ্গদেবতার আবাহন করে মূলমন্ত্রের দ্বারাই পূজা করতে হয়।। ৭ ।।

যে সাধক এই মন্ত্রগুলি নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে লক্ষ লক্ষ জপ করতে পারবেন, তিনি নিশ্চয়ই পাপমুক্ত হবেন। তাঁর দ্বারা আর দুষ্কার্জ হবে না, তিনি ব্রহ্মত্ব লাভ করবেন। তিনি সকল লোক হতে মুক্ত হয়ে আয়ু, আরোগ্য ও ঐশ্বর্যের পূর্ণ অধিকারী হবেন।। ৮ ।।

পঞ্চমকারের বেদসম্মত আধ্যাত্মিক অর্থ বুঝে যিনি তাঁর পূজা করবেন, তিনিই সতত ভজনশীল, তিনিই ভক্ত। তাঁর প্রচ্ছন্নতা দূর হয়ে মহত্ব প্রকাশিত হয়। তিনি নিরবিচ্ছিন্ন সুখ শান্তি লাভ করে সংসারপাশ থেকে চিরমুক্ত হন। সিদ্ধমন্ত্রজপকারী সাধকের অনিমাদি অষ্টসিদ্ধি লাভ হয়। তিনি জীবন্মুক্ত, সর্বশাস্ত্রবিদ হন। তাঁর হিংসাবৃত্তি বিনষ্ট হওয়ায় তিনি সকল জীবের বিশ্বাসভাজন হন।। ৯।।

সিদ্ধমন্ত্র যিনি জপ করেন তাঁর কাছে রাজাও ভৃত্যস্বরূপ হয়। সেই সাধক বিশ্বাতীত পরাৎপর আনন্দময় শিবস্বরূপ হন। এই সর্বদেবাত্মক বীজমন্ত্র যিনি জপ করেন, তিনি শিবস্বরূপ হন, এবং অনিমাদি অষ্টসিদ্ধির প্রভু হয়ে কালিকাকে লাভ করতে সক্ষম হন। শিব বলেছেন, হে দেবী, যিনি এই ঘোরা দক্ষিণাকালীকে ধ্যান করেন, তিনি কৃৎকর্তব্য, নিষ্পাপ, আমাদের উভয়ের কৃপাপাত্র ও জীবন্মুক্ত হন।। ১০।।

জপের দশমাংশ হোম করা উচিত, তাহলেই কালী তৃপ্ত হন। এতে জ্ঞান নিরুদ্ধ হয় না। কারণ দেবী সরস্বতীও অনিরুদ্ধা হয়ে চিরদিন সব কামনা পূর্ণ করেন। যে সাধক শ্রদ্ধাসহকারে এই কালীমন্ত্র জপ করেন, তিনি জ্ঞানলাভ করে চিরমুক্ত হন। শান্তচিত্তে সবসময় কালীপূজায় নিরত থেকে দিনের বেলা ব্রহ্মচারী অর্থাৎ ব্রহ্মনিষ্ঠ এবং রাতে কৌপিনধারী, আত্মরমণপরায়ণ ও জপপূজানিয়মে তৎপর হয়ে মাতৃরূপ নারীগণের সশ্রদ্ধ আজ্ঞাবহ হবে।। ১১।।

তারপর শুদ্ধ জলে তর্পণ ও পূজা করবে এবং সবসময় আত্মাকে কালীরূপে চিন্তা করবে। সকল স্ত্রীলোকের অনুগত হবে, তাতেই যাবতীয় হত্যাপাপ থেকে মুক্তিলাভ করতে পারবে। তারপর পঞ্চমকারের দ্বারা পূজা করলে ধনধান্য, পশু ও বিদ্যা প্রভৃতি যাবতীয় কাম্যবস্তু লাভ করবে। অতীত-ভবিষ্যৎ, দৃশ্যাদৃশ্য, স্থাবরজঙ্গম যা কিছু আছে, তা সবই কালীর কলামাত্র। কালিকাতন্ত্রে কথিত আছে, তিনি শ্রবণীয়, জ্ঞাতব্য, স্মরণীয় বা ধ্যানযোগ্য। শিব বলেছেন, হে দেবী, এই কালীমন্ত্রজপকারী অগম্যাগমন-পাপ ও ভ্রুণহত্যা-পাপ থেকে মুক্ত হয়ে সর্বসুখভাগী হয়ে থাকেন। তিনি সর্ববেত্তা, সর্বত্যাগী, নিঃসঙ্গ, শুদ্ধবুদ্ধি, সর্ববেদজ্ঞ, সর্বমন্ত্রজপকারী, সর্বশাস্ত্রজ্ঞ ও সর্বযজ্ঞকারী হয়ে তোমার ও আমার অত্যন্ত প্রিয় হন।। ১২।।

শিব আরও বলেছেন, সাধক সংশয়শূন্য হয়ে সব কাজ মনের দ্বারা সম্পাদনা করবেন এবং তারপর অপূর্ব জ্যোতির্ময় ত্রিকোণ মূলাধার চিন্তা করে সেই মূলাধারের অধঃ ও উর্ধ্বে সুষুম্নাকে স্থাপন করবে।। ১৩।।

নীলমেঘের মধ্যে স্থিতা, দীপ্তিশালিনী, বিদ্যুৎরেখাসমা, সূর্যের মতো অতুলনীয়া নীলা ও পীতা দেবীকে স্মরণ করবে এবং শিখামধ্যে সবার উপরে বিরাজিতা কালীকে ধ্যান করবে। তাহলেই সাধক সর্বপাপমুক্ত হয়ে শিব ও ব্রহ্মস্বরূপ হবেন এবং সকল মন্ত্র সিদ্ধ হয়ে কৈবল্য বা মুক্তি লাভ করবেন। ঐ মন্ত্রের ঋষি ভৈরব, ছন্দ অনুষ্টুপ, দেবতা কালিকা, বীজ লজ্জা, শক্তি বধূ এবং কবিত্বের জন্যই প্রয়োগ হয়ে থাকে। সাধক এইভাবে ঋষি ও ছন্দ জেনে মন্ত্রের ফল সম্পূর্ণরূপে লাভ করেন এবং যিনি এই সর্ববিদ্যা প্রথমে এক, দুই বা তিন নামে পুটিত করে জপ করেন, তিনিই সদ্গতি প্রাপ্ত হন, অন্যে হয় না।। ১৪ ।।

গোরু, ভূমি, সোনা ইত্যাদি দিয়ে গুরুকে তুষ্ট করে এই শ্রেষ্ঠ মন্ত্র লাভ করবে। গুরুও এই মন্ত্র কুলীন, বিদ্যাভক্ত, শুশ্রুষাপরায়ণ শিষ্যকে প্রদান করবেন। স্ত্রীদিগকে স্পর্শ ও পূজা করে রাতে শিবমন্দিরে একাকী বাস করে লক্ষ বা তার বেশি মন্ত্রজপ করার পর সেই মন্ত্র শিষ্যকে প্রদান করবে। সত্য যে, কালীমন্ত্র, ত্রিপুরামন্ত্র ও দুর্গামন্ত্র ছাড়া সিদ্ধিলাভ সম্ভব নয়। আমিই দুর্গা, আমিই শিব। ওঁ তৎসৎ।। ১৫।।

কালিকা উপনিষদ্ সমাপ্ত

(সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ও বসুমতী সাহিত্য মন্দির প্রকাশিত উপনিষৎ গ্রন্থাবলী তৃতীয় খণ্ডের বঙ্গানুবাদ অনুসারে।)

(আলোকচিত্র: অর্ণব দত্ত)

 

ট্যাগ সমুহঃ

কীভাবে গড়ে উঠল আমাদের সংবিধান?

সংবিধান দেশের মৌলিক আইন। দেশের সরকারের মূলনীতিগুলি প্রতিফলিত হয় সংবিধানে। সংবিধান শুধু সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের গঠন ও কাজকর্মের রূপরেখাই ঠিক করে না, বরং সরকারের সঙ্গে দেশের আমজনতার সম্পর্ক কেমন হবে তাও বলে দেয়। ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেরই লিখিত সংবিধান রয়েছে।

স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে সংবিধান রচনার জন্য একটি গণপরিষদ স্থাপন করা হয়েছিল। এই গণপরিষদই ভারতীয় সংবিধানের রচয়িতা ও প্রবর্তক। ঔপনিবেশিক যুগের বিভিন্ন আইন ও সনদ এই সংবিধানের উপরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলেছিল। তাই বর্তমান ভারতের সংবিধান রচনার ইতিহাস আলোচনার আগেই সেই পুরনো সনদ ও আইনগুলির ইতিহাসও জেনে নেওয়া জরুরি।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

ফিরে দেখা দুর্গাপূজা :: আহিরীটোলা শীতলাতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব (২০১০)

প্রতিমা

আহিরীটোলা শীতলাতলা সর্বজনীনের থিম ছিল সমুদ্রের তলদেশ। মণ্ডপটি বাইরে থেকে দেখতে ছিল সাবেকি পালতোলা বাংলা নৌকা। কিন্তু মণ্ডপের ভিতরে তৈরি করা হয়েছিল সাগরতলের কৃত্রিম আবহ। বাঁশ কেটে কঞ্চি দিয়ে তৈরি করা মণ্ডপ। ভিতরে ঝিনুকের মাছ আর বেলের খোলা দিয়ে তৈরি করা প্রবালের কারুকাজ। স্বচ্ছ প্লাস্টিকের টিউবের মধ্যে জলের স্রোত বইয়ে সমুদ্রের আমেজ আনা হয়েছিল। তবে আলো কম থাকায় সেই অসাধারণ মণ্ডপের ভিতরকার ছবি তুলতে পারিনি।

অবশ্য দুর্গাপ্রতিমার ছবি তুলতে পেরেছিলাম। মূর্তিতে ছিল পাথরের এফেক্ট। দর্শনীয়, দেবীর পাঁচ হাতে ধরা ছিল মোষের শিং, আর বাকি পাঁচ হাতে ত্রিশূল। পুজোটির বাজেট ছিল ৮-১০ লাখ টাকা। থিম পরিকল্পনা করেছিলেন গৌরাঙ্গ কুইল্যা।

মণ্ডপ (বাইরে থেকে)

 

ট্যাগ সমুহঃ

আমার ক্যামেরায় দুর্গাপূজা :: ফিরে দেখা বড়িশা ক্লাব ২০০৯

বড়িশা ক্লাবের ২০০৯  সালের থিম ছিল, যতদূর মনে পড়ছে, মাটি। এই বছরই আমি প্রথম বড়িশা ক্লাবের ঠাকুর দেখেছিলাম। সঙ্গে তুলেছিলাম তিনটি ছবি। সেগুলি শেয়ার করা গেল এখানে।

প্রতিমা

 

মাটির মণ্ডপ, সামনে দর্শনার্থীর লাইন

 

মণ্ডপের ভিতরের দেওয়ালে গ্রামবাংলার দৃশ্য

 

 

 

ট্যাগ সমুহঃ

প্রাগৈতিহাসিক ভারত

মধ্যভারতে পাওয়া আদিম মানুষের আঁকা গুহাচিত্র

প্যালিওলিথিক যুগ বা প্রাচীন প্রস্তর যুগ

ভারতে মানুষের অস্তিত্বের সবচেয়ে পুরনো যে নিদর্শনগুলি পাওয়া গিয়েছে তা ৪,০০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২,০০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ের। অর্থাৎ, পরিভাষায় যাকে বলে দ্বিতীয় আন্তঃহিমযুগ, সেই যুগের। অধুনা পাকিস্তানের সোয়ান উপত্যকা ও দক্ষিণ ভারতে (প্রধানত চেন্নাইয়ের আশেপাশে) এই সময়কার অনেক প্রাচীন পাথরের যন্ত্রপাতি ও জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীন প্রস্তর যুগীয় বা প্যালিওলিথিক আদিম মানুষের অস্তিত্ব ছিল ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। এই সময়কার মানুষ ঠুকরে ভাঙা পাথর দিয়ে তৈরি নানা জিনিস ব্যবহার করত। সিন্ধু, গঙ্গা ও যমুনা নদীর পলিগঠিত সমভূমি অঞ্চল ছাড়া ভারতের আর সব অঞ্চলেই এই সব জিনিস পাওয়া গিয়েছে। শক্তপোক্ত চকমকি পাথর দিয়ে সহজে ফলা তৈরি করা যেত। তাই এই পাথরের ব্যবহারই ছিল বেশি। পাথরের যন্ত্রপাতি নানা কাজে লাগত। যেমন, মৃত জন্তুর চামড়া ছাড়ানো, মাংস কাটা বা হাড় ছাড়ানো ইত্যাদি। এই সময়কার মানুষ মূলত ছিল খাদ্য-সংগ্রাহক। খাদ্যের জন্য মানুষ পুরোপুরি নির্ভর করত প্রকৃতির উপর। খেত শিকার করা পশুর মাংস আর ফলমূল। পরে আগুনের ব্যবহার শেখার পরে তাদের জীবনযাত্রার ধরন একেবারে আমূল বদলে যায়। তারা পশুর চামড়া, গাছের বাকল আর বড়ো বড়ো পাতা পোষাক হিসেবে ব্যবহার করত আর নারী, পুরুষ ও শিশু নিয়ে গঠিত ছোটো ছোটো দলে বিভক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াত।

Read the rest of this entry »

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 16, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

প্রাক-কংগ্রেসি জাতীয়তাবাদী সংগঠন

উনিশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে ভারতীয়দের কাছে বিদেশি শাসকের শোষক রূপটি প্রকট হয়ে পড়লে, তাঁরা ভারতের জন্য একটি কল্যাণ ও উন্নয়নমুখী নীতির পক্ষে সওয়াল শুরু করেন। জাতীয়তাবাদীদের সংগঠিত আন্দোলন শুরু হয় উনিশ শতকের শেষ দশকে, তবে রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল তার অনেক আগে। ১৮৫০-এর দশকে ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সিগুলির রাজধানীতে কয়েকটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে। এই সব সংগঠনের সদস্যরা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রভাব খাটিয়ে ১৮৫৩ সালের সনদের পুনর্নবীকরণ করতে চেয়েছিলেন। পরের দুই দশক ভারতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিল এই সংগঠনগুলিই।

বাংলার সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক সংগঠন ছিল ল্যান্ডহোল্ডারস’ সোসাইটি (১৮৩৮) ও ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান সোসাইটি (১৮৪৩)। এই দুটি সংগঠন পরে এক হয়ে গঠন করে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন (১৮৫১)। এর প্রথম সভাপতি  ও প্রথম সচিব হন যথাক্রমে রাধাকান্ত দেব ও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকু্র। অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে উল্লেখ করা যায় রামগোপাল ঘোষ ও প্যারীচাঁদ মিত্রের নাম। অ্যাসোসিয়েশনের মুখপত্র হিন্দু প্যাট্রিয়ট -এর ভাষা ছিল রাজনৈতিকভাবে বেশ উগ্র। ১৮৫২ সালে এই সংগঠন প্রথম ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একটি দরখাস্ত পাঠায়। তাঁদের দাবি ছিল আইনবিভাগ ও শাসনবিভাগের পৃথকীকরণ, উচ্চ সরকারি পদে আরও বেশি সংখ্যায় ভারতীয়দের নিয়োগ, ইংল্যান্ড ও ভারতে একই সঙ্গে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা গ্রহণ, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিস্তার, লবণ শুল্ক,অন্তঃশুল্ক (এক্সাইজ ডিউটি) ও মুদ্রাঙ্ক শুল্কের (স্ট্যাম্প ডিউটি) বিলোপ এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অনুদান বৃদ্ধি। ১৮৫৩ সালের সনদে এই সব দাবির একটিও মানা হয়নি। তাই অ্যাসোসিয়েশন আন্দোলন চালিয়ে যায়। তবে এই নরমপন্থী লাভের লাভ কিছু হয়নি।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

আমাদের জাতীয় সংগীত

আমাদের জাতীয় সংগীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’। রচয়িতা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মূল রচনার ভাষা বাংলা। রচনাকাল জানা যায় না। প্রথম গাওয়া হয় ১৯১১ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের এক অধিবেশনে। পাঁচ স্তবকের গানটির প্রথম স্তবকটি ১৯৫০ সালে সরকারিভাবে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি লাভ করে। একই মর্যাদা লাভ করে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘বন্দে মাতরম্’ গানটিও। ‘বন্দে মাতরম্’ হয় ভারতের জাতীয় স্তোত্র বা ন্যাশানাল সং। ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ হয় জাতীয় সংগীত বা ন্যাশানাল অ্যানথেম।

মূল গানটি ইমন রাগে কাহারবা তালে নিবদ্ধ। স্বরলিপিকার দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্বরবিতান ১৬শ খণ্ডে এর স্বরলিপি রয়েছে। ভারত সরকার অনুমোদিত জাতীয় সংগীতের স্বরলিপি মুদ্রিত হয়েছে বিশ্বভারতী প্রকাশিত ‘রাষ্ট্রসংগীত’ স্বরলিপি-পুস্তিকায়।

Read the rest of this entry »

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 15, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

আমার ক্যামেরায় দুর্গাপূজা :: শোভাবাজার বেনিয়াটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি (২০১০)

দুর্গাপ্রতিমা

উত্তর কলকাতার শোভাবাজার বেনিয়াটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির সেবারের থিম ছিল ছত্তিশগঢ়ের বস্তার জেলার একটি গ্রাম ও সেই গ্রামের দশেরা উৎসব। মণ্ডপের সামনে ছিল একটি বিরাট কাপড়ের রথ, রথে ছিল কড়ি, রং ও ঝুরির কারুকাজ। মণ্ডপের ভিতরে গাছ-গাছালি ও পাখির ডাকের মাধ্যমে জঙ্গলে আমেজ সৃষ্টি করা হয়েছিল। মণ্ডপের তোরণের সামনে দু’টি বিরাট হাতি ও রণপা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। মূল মণ্ডপের দিকে যাওয়ার পথটি নানারকম ডোকরা মূর্তি দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। সেই সঙ্গে লাল, হলুদ ও কমলা পতাকা দিয়ে গোটা মণ্ডপ সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। দেবী প্রতিমাও আদিবাসীদের আরাধ্য কোনো দেবীমূর্তির আদলে তৈরি হয়েছিল। মৃন্ময়ী প্রতিমায় দেওয়া হয়েছিল স্টোন ও মেটালের এফেক্ট। শোভাবাজার বেনিয়াটোলার এই ছিমছাম অথচ উচ্চ শিল্পরুচিমণ্ডিত পূজার বাজেট ছিল ৫ লক্ষ টাকার মতো।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

আমার ক্যামেরায় দুর্গাপূজা :: বাগবাজার সর্বজনীন (২০১০)

দুর্গাপ্রতিমার অলংকরণ

উত্তর কলকাতার বাগবাজার সর্বজনীনের পুজো সম্ভবত কলকাতার সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী দুর্গোৎসব। থিম প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ের মধ্যেও এই পূজাকমিটি প্রতিমা ও মণ্ডপে সাবেকিয়ানা বজায় রাখার পক্ষপাতী। শুধু তাই নয়, বিগত কয়েক দশক ধরে এই পুজোর প্রতিমা তৈরি হয়ে আসছে একই ছাঁচে। একচালা প্রতিমা। দেবীর মুখমণ্ডলে ঐতিহ্যবাহী আকর্ণনয়না ধাঁচ। শোলার পোষাক প্রতিমার নিচ অবধি নেমে এসেছে।

২০১০ সালের পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছিল গুজরাতের অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে। বাঁশ ও কাঠের বাটামের উপর ছিল কাপড়ের কারুকাজ। মণ্ডপের ভিতরের সিলিং-এ ছিল সুদৃশ্য সুবিশাল ঝাড়বাতি। চার দেওয়ালে বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি নানা হস্তশিল্পের নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছিল।

Read the rest of this entry »

 
2 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 11, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

৮০ খণ্ডে প্রকাশিত হচ্ছে ‘কালানুক্রমিক রবীন্দ্র রচনাবলী’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সিলমোহর, ‘কালানুক্রমিক রবীন্দ্র রচনাবলী’র প্রচ্ছদ থেকে।

গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম-সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষ্যে বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ কবির যাবতীয় রচনা মূল খসড়া ও পাঠান্তর সহ কালানুক্রমে প্রকাশের একটি বিরাট প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সম্ভাব্য ৮০ খণ্ডে প্রকাশিতব্য এই গ্রন্থমালার নাম রাখা হয়েছে ‘কালানুক্রমিক রবীন্দ্র রচনাবলী’। ২০১১ সালের ৮ অগস্ট (বাংলা ২২ শ্রাবণ, ১৪১৮) এই গ্রন্থমালার প্রথম চারটি খণ্ড আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হল।

রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ তথা এই প্রকল্পের সম্পাদক গৌতম ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “প্রতিটি প্রকাশিত গ্রন্থ সম্পর্কে অনেক গবেষণা করা হয়েছে। শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনের গবেষকরা প্রতিটি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও নাটকের মূল খসড়াগুলি অনুসন্ধান তো করেইছেন, সেই সঙ্গে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’, ‘ভারতী’, ‘গদ্য জ্ঞানাঙ্কুর’ প্রভৃতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত পাঠগুলিও দেখেছেন।” শুধু তাই নয়, পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ কতভাবে তাঁর রচনাগুলি সংশোধন-পরিমার্জন করেছেন, তারও হদিস রয়েছে এই সংস্করণে।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উন্মেষ

"ভারতমাতা", অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর১৮৫৮ সালে সমগ্র ভারত প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটিশ রাজশক্তির অধীনে আসে। ভারতের সকল ব্রিটিশ-শাসিত অঞ্চলে চালু হয় একটি অভিন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং একটি অভিন্ন ব্রিটিশ আইন। ভারতীয়রা সকলে এককভাবে ব্রিটিশ শাসনের ছাতার তলায় আসেন। দেশের এই রাজনৈতিক একীকরণ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তিভূমি রচনা করে। এই একীকরণের অন্যতম অঙ্গ ছিল রেলপথ, টেলিগ্রাফ, ডাকবিভাগ, সড়ক পরিবহণের উন্নতি। এই সব আধুনিক পরিকাঠামো ইংরেজরা নিজেদের স্বার্থে গড়ে তুললেও, দেশের ঐক্যসাধনে এগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ১৮৫৩ সালে অর্থনৈতিক সংহতিসাধনের অঙ্গ হিসেবে রেলপথের যাত্রা শুরু হয়। দুই দশকের মধ্যে দেশের সব প্রধান শহরই রেলপথের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে পড়ে। আগে ভারতের গ্রামগুলির মধ্যে একটা বিচ্ছিন্নতা এবং আত্মনির্ভরতার ভাব ছিল। রেলপথের বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্দেশীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলে তা নষ্ট হয়ে যায়। দেশের অঞ্চলগুলি পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ভারতে কাঁচামাল ও পণ্যের একটা জাতীয় বাজার সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরাও দেশের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

দ্যৌ ও ধরিত্রী

পৃথু ধরিত্রীকে তাড়া করেছেন, ভাগবত পুরাণের পুথিচিত্রণ, পাহাড়ি চিত্রকলা, ১৭০০-১৭৬০ খ্রিস্টাব্দ

মূল রচনা: ডব্লিউ. জে. উইলকিনস (হিন্দু মিথোলজি: বৈদিক অ্যান্ড পৌরাণিক থেকে)

অনুবাদ: অর্ণব দত্ত

সাধারণত দ্যৌ (স্বর্গ) ও ধরিত্রীকে (পৃথিবী) প্রাচীনতম আর্য দেবতা মনে করা হয়। ঋগ্বেদের স্তোত্রগুলিতে তাঁদের অন্যান্য দেবতার বাবা ও মা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (ম্যুর, ও.এস.টি., পাঁচ।২৩) তাঁরা বর্ণিত হয়েছেন “মহৎ, জ্ঞানী ও তেজোময়” বলে। বলা হয়েছে, তাঁরা “ধার্মিকতা প্রচারক করেন এবং পূজককে দামি উপহার দিয়ে থাকেন।” অন্য একটি জায়গায় বলা হয়েছে, তাঁরা “সকল জীবের স্রষ্টা” এবং তাঁদের অনুগ্রহেই “তাঁদের সন্তানসন্ততি অমরত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন।” তাঁরা শুধু সকল জীবের সৃষ্টিকর্তাই নন, সবার রক্ষাকর্তাও বটে। তাঁরা সকলের হিতকারী এবং সকলের প্রতি দয়াশীল। আবার অন্য একটি রচনায় বলা হয়েছে, স্বর্গ ও পৃথিবীর স্রষ্টা ইন্দ্র। ইন্দ্রই তাঁদের মহত্ব দান করেন এবং “রথ যেমন করে ঘোড়াকে অনুসরণ করে”, তেমনি করেই তাঁরা ইন্দ্রকে অনুসরণ করেন। এই বর্ণনা অনুযায়ী, ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে তাঁরা ইন্দ্রের সামনে মাথা নত করেন। কারণ তাঁরা ইন্দ্রেরই অধীনস্থ প্রজা। আবার অন্য মতে, তাঁদের স্রষ্টা হলেন সোম। অন্যান্য স্তোত্রে আবার অন্য অন্য দেবতাদের তাঁদের স্রষ্টা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধরণের মতানৈক্য থেকে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে। একটি স্তোত্রে তো সেই প্রশ্ন করাও হয়েছে, “তাঁদের সৃষ্টি কিভাবে হল, কোন ঋষি তা জানেন?”

Read the rest of this entry »

 
2 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 6, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

যে গল্প রবীন্দ্রনাথ লেখেননি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

“তাঁর (রবীন্দ্রনাথ) আরো একটি আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল। … সংলাপের আসরে ব’সে অনুরুদ্ধ হলে রবীন্দ্রনাথ মুখে মুখে নূতন গল্প ও উপন্যাসের প্লট তৈরি করে দিতে পারতেন।” – যাঁদের দেখেছি, দ্বিতীয় পর্ব, হেমেন্দ্রকুমার রায়।

আধুনিক লেখকদের ঢাউস ‘রচনাসংগ্রহে’র তুলনায় রবীন্দ্রনাথের কথাসাহিত্যকে ক্ষীণকায়ই বলতে হয়। তাঁর গল্পসংখ্যা মেরেকেটে শ’খানেক, উপন্যাস ১৩টি মোটে। গান বা কবিতার মতো অকাতরে গল্প-উপন্যাস লেখেননি তিনি। কিন্তু গল্পের প্লট রচনায় তিনি যে মোটেও কাতর ছিলেন না, তা জানা যায় তাঁর সমসাময়িকদের লেখা স্মৃতিচারণ ও অন্যান্য রচনা থেকে। বিস্মিত হতে হয় এই দেখে যে কত প্রথম সারির সাহিত্যিক কবির থেকে প্লট সংগ্রহ করেছেন তাঁদের গল্পের জন্য। এই সব প্লট থেকে জন্ম নিয়েছে বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সব কীর্তি। কিন্তু আড়ালে থেকে গেছেন এই সব জনকের জন্মদাতা পিতা। এমনকি অনেক সময় এটুকুও জানা যায়নি, কবি ঠিক কাকে কোন প্লটটি দিয়েছেন বা কে কবির লেখা প্লটটি দিয়ে ঠিক কোন গল্পটি লিখেছেন।

Read the rest of this entry »

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 6, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ