শ্রীমৎপয়োনিধিনিকেতন চক্রপাণে ভোগীন্দ্রভোগমণিরঞ্জিতপূণ্যমূর্তে।
যোগীশ শ্বাশত শরণ্য ভবাব্ধিপোত লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।১।।
ব্রহ্মেন্দ্ররুদ্রমরুদর্ককীরিটকোটিসংঘট্টিতাঙ্ঘ্রিকমলামলকান্তিকান্ত।
লক্ষ্মীলসৎকুচসরোরুহরাজহংস লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।২।।
সংসারঘোরগহনে চরতো ভূরারেভারোগ্রভীকরমৃগিপ্রবরার্দিতস্য।
আর্তস্য মৎসরনিদাঘনিপীড়িতস্য লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।৩।।
সংসারকূপমতিঘোরমগাধমূলং সংপ্রাপ্য দুঃখশতসর্পসমাকূলস্য।
দীনস্য দেব করুণাপদমাগতস্য লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।৪।।
সংসারসাগরবিশালকরালকালনক্রগ্রহগ্রসননিগ্রহবিগ্রহস্য।
ব্যগ্রস্যরাগরসনোর্মিনিপীড়িতস্য লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।৫।।
সংসারবৃক্ষমঘবীজমনন্তকর্মশাখাশতং করণপত্রমনঙ্গপুষ্পম্।
আরুহ্য দুঃখফলিতং পততো দয়ালো লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।৬।।
সংসারসর্পধনবক্ত্রভয়োগ্রতীব্রদংষ্ট্রাকরালবিষদগ্ধবিনষ্টমূর্তে।
নাগারিবাহন সুধাব্ধিনিবাস শৌরে লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।৭।।
সংসারদাবদহনাতুরভীকরোরুজ্বালাবলীভিরতিদগ্ধতনুরুহস্য।
ত্বৎপাদপদ্মসরসীশরণাগতস্য লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।৮।।
সংসারজালপতিতস্য জগন্নিবাস সর্বেন্দ্রিয়ার্থবড়িশার্থঝষোপমস্য।
প্রোৎখণ্ডিতপ্রচুরতালুকমস্তকস্য লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।৯।।
সংসারভীকরকরীন্দ্রকলাভিঘাতনিষ্পিষতমর্মবপুষঃ সকলার্তিনাশ।
প্রাণপ্রয়াণভবভীতিসমাকুলস্য লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।১০।।
অন্ধস্য মে হৃতবিবেকমহাধনস্য চোরৈঃ প্রভো বলিভিরিন্দ্রিয়নামধেয়ৈঃ।
মোহান্ধকূপকুহরে বিনিপাতিতস্য লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।১১।।
লক্ষ্মীপতে কমলনাভ সুরেশ বিষ্ণো বৈকুণ্ঠ কৃষ্ণ মধুসূদন পুষ্করাক্ষ।
ব্রহ্মণ্য কেশব জনার্দন বাসুদেব দেবেশ দেহি কৃপণস্য করাবলম্বম্।।১২।।
লক্ষ্মীনৃসিংহচরণাব্জমধুব্রতেন স্তোত্রং কৃতং সুখকরং ভুবি শংকরেণ।।
যে তৎপথন্তি মনুজ হরিভক্তিযুক্তঃ লক্ষ্মীনৃসিংহ মম দেহি করাবলম্বম্।।১৩।।
ইতি শ্রীমৎপরমহংসপরিব্রাজকাচার্যশ্রীমচ্ছঙ্করাচ্চার্যবিরচিতং সংকষ্টনাশনং লক্ষ্মীনৃসিংহস্তোত্রং সম্পূর্ণম্।।
বঙ্গানুবাদ—
হে প্রভু, তুমি শ্রীপতি, ক্ষীরসমুদ্রনিবাসী, সুদর্শন-চক্রধারী, যোগীশ্বর; নাগরাজ অনন্তদেব তোমার মস্তকের মণিস্বরূপ; তুমি শরণাগতকে ভবসাগর পার করাও; হে লক্ষ্মীনৃসিংহ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ১।।
ব্রহ্মা, ইন্দ্র, শিব, মরুৎগণ ও সূর্য তাঁদের কোটি মুকুট তোমার পায়ে অর্পণ করেন। তোমার পদযুগল লক্ষ্মীর পরম প্রিয়। তিনি (লক্ষ্মীদেবী) তোমার বক্ষপদ্মে রাজহংসীরূপে বিরাজ করেন। হে লক্ষ্মীনৃসিংহ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ২।।
সংসারী মানুষ জন্মমৃত্যুর চক্রপথে দাবাগ্নিগ্রস্থ প্রাণীর মতো দগ্ধ হয়। শরীর দগ্ধ হওয়ার ভয়ে সে কাঁদে। দাবাগ্নিগ্রস্থ প্রাণী যেমন জলাশয়ে আশ্রয় খোঁকে, তেমনি সংসারদাবাগ্নিগ্রস্থ আশ্রয় নেয় তোমার পাদপদ্মরূপ জলাশয়ে। হে লক্ষ্মীনৃসিংহ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ৩।।
এই বিশ্বচরাচরে আমি জন্মমৃত্যুর চক্রপাকে পড়েছি। মাছ যেমন করে টোপ গেলে, তেমনি করে কাম্যবস্তুর টোপ সাগ্রহে গিলেছি। মাছ ছটফট করলে তার মাথাটি যেমন কেটে নেওয়া হয়, তেমনি আমি আমার আত্মস্বরূপ বিস্মৃত হয়ে জাগতিক প্রবৃত্তির দ্বারা দণ্ডিত হচ্ছি। হে লক্ষ্মীনৃসিংহ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ৪।।
জন্মমৃত্যুর করাল অতল কূপে পড়ে আমি সহস্রদুঃখরূপ সর্পের দ্বারা দংশিত হচ্ছি। এই পতিত অবস্থায়, হে প্রভু, তোমার কৃপায় আমি তোমার পাদপদ্ম আশ্রয় করেছি। হে লক্ষ্মীনৃসিংহ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ৫।।
হস্তীর ন্যায় শক্তিশালী দৈত্যপতি হিরণ্যকশিপুকে তুমি দুই হাতে নিষ্পেষিত করে হত্যা করেছো। এইভাবেই তুমি ভয়াবহ জন্মমৃত্যুচক্রের সকল দুঃখ নাশ করো। যারা সংসারের তাপে দগ্ধ হয়, তাদের তুমি শেষ গতি। হে লক্ষ্মীনৃসিংহ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ৬।।
জাগতিক সত্ত্বারূপ সর্পের শতসহস্র দন্তের আঘাতে আমি জর্জরিত। আমি যে শ্রীকৃষ্ণের চিরদাস, সেই সত্য এই করাল বিষ শরীরে ধারণ করে আমি বিস্মৃত হয়েছি। এই সর্পবিষের শ্রেষ্ঠ প্রতিষেধক হল অমৃত। হে শৌরী, তুমিই অমৃতসাগরের অধিবাসী, তোমার বাহন সর্পত্রাস গরুড়। হে লক্ষ্মীনৃসিংহ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ৭।।
পাপচিন্তার বীজ থেকে জন্ম হয় সংসারবৃক্ষের। সকাম কর্মের প্রতিফল এর শাখাপ্রশাখা, ইন্দ্রিয়াদি এর পাতা এবং কামচেতনা এর পুষ্প। হে দয়াল, আমি এই বৃক্ষে আরোহণ করে শুধুই দুঃখময় ফল পেয়েছি। তাই এখন পতিত হয়েছি। হে লক্ষ্মীনৃসিংহ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ৮।।
সংসারসাগরে সংসারবন্ধনরূপ শক্তিশালী তরঙ্গ আমাকে চূর্ণবিচূর্ণ করছে। কালকুম্ভীরের করাল চোয়ালে আমি আবদ্ধ হয়েছি। এই কুম্ভীর আমাকে বিদীর্ণ করে গ্রাস করছে। হে লক্ষ্মীনৃসিংহ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ৯।।
জাগতিক মায়ারূপ ভয়াল হস্তীরাজ আমাকে আঘাত করছে। আমার শরীরের প্রধান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সবই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। আমি যন্ত্রণায় বিদ্ধ হচ্ছি। আমার প্রাণসংশয় উপস্থিত। হে লক্ষ্মীনৃসিংহ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ১০।।
ভেদবুদ্ধি আমাকে অন্ধ করেছে। ইন্দ্রিয়রূপ চোরে আমাকে চুরি করেছে। আমি অন্ধ হয়ে কামনার গভীর কূপে পতিত হয়েছি। হে লক্ষ্মীনৃসিংহ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ১১।।
হে লক্ষ্মীপতি, পদ্মনাভ, সুরেশ্বর, পদ্মনয়ন বিষ্ণু। তুমিই বৈকুণ্ঠ, তুমিই কৃষ্ণ, তুমিই মধুসূদন। তুমিই ব্রহ্ম, তুমিই কেশব, তুমিই জনার্দন, তুমিই বাসুদেব। হে দেবেশ, তোমার করপদ্মস্পর্শে আমাকে ধন্য করো।। ১২।।
বিশ্বের মঙ্গলকারী এই স্তবটি লক্ষ্মীনৃসিংহপাদপদ্মে মধুপরূপী শঙ্করাচার্য কর্তৃক রচিত হল। যাঁরা হরিভক্তিসহকারে এই স্তবটি পাঠ করবেন, তাঁরা লক্ষ্মীনৃসিংহের পাদপদ্মে চিরতরে আশ্রয় পাবেন।। ১৩।।
স্তবপরিচয়:
লক্ষ্মীনৃসিংহস্তোত্র আদি শঙ্করাচার্যের রচনা। এটি লক্ষ্মীনৃসিংহ করাবলম্ব বা লক্ষ্মীনৃসিংহকরুণরসস্তোত্র নামেও পরিচিত। কথিত আছে, এক কাপালিক শঙ্করাচার্যকে বন্দী করে কালীর নিকট বলি দিতে গেলে, লক্ষ্মীনৃসিংহ তাঁকে উদ্ধার করেন, এরপর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে শঙ্কর এই স্তবটি রচনা করেন।
লক্ষ্মীনৃসিংহস্তোত্রটি দক্ষিণভারতে সুপ্রচলিত হলেও, বাংলায় এটি স্বল্পপরিচিত। তাই আমার নিত্যপূজিত ভগবান শ্রীশ্রীমহাবিষ্ণু লক্ষ্মীনৃসিংহ জীউ-র পাদপদ্মে এই অনুবাদ-অঞ্জলিটি প্রদান করলাম।