——————————————————–
বঙ্গভারতী নেতাজি জয়ন্তী স্মারক রচনা, ২০১২
———————————————————
নেতাজি সুভাষ ও তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজ
অর্ণব দত্ত
———————————————————-
এই লেখাটি পুনঃমুদ্রিত হয়েছে আমাদের নতুন ওয়েবসাইটে:
http://www.bangabharatiemag.com/2013/01/blog-post_7479.html
আমাদের নতুন ওয়েব-ঠিকানা:
http://www.bangabharatiemag.com/
———————————————————-

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু
বিশ শতকের গোড়ার দিকে কোনো কোনো চরমপন্থী বিপ্লবী দেশের বাইরে গিয়ে সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে ভারতকে ব্রিটিশদের হাত থেকে উদ্ধার করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁদেরই একজন ছিলেন রাসবিহারী বসু। ১৯১৫ সালে রাসবিহারী চলে যান জাপানে। সেখান থেকে প্রবাসী ভারতীয়দের সংগঠিত করে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে একটি সশস্ত্র সামরিক বাহিনী স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সেই সময় অসংখ্য ভারতীয় জওয়ান চাকরি করতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় জাপানের সঙ্গে ব্রিটিশদের যুদ্ধ বাধলে এদের একটি বিরাট অংশ জাপানিদের হাতে বন্দী হন।
১৯৪২ সালের মার্চ মাসে জাপানের রাজধানী টোকিয়োতে ভারতীয়দের একটি সম্মেলনে গঠিত হয় ‘ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেনডেন্স লিগ’ বা ‘ভারতীয় স্বাধীনতা লিগ’। ১৯৪২ সালে ব্যাংককে আরও একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনেই রাসবিহারী বসুকে লিগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং আজাদ হিন্দ বাহিনী (ইংরেজিতে ইন্ডিয়ান ন্যাশানাল আর্মি বা আইএনএ) নামে একটি সামরিক বাহিনী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জাপানিদের হাতে যুদ্ধবন্দী ৪০,০০০ ভারতীয় সেনা নিয়ে গড়ে ওঠে আজাদ হিন্দ ফৌজ। ক্যাপ্টেন মোহন সিং ফৌজের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। উক্ত সম্মেলনেই সুভাষচন্দ্র বসুকে আমন্ত্রণ জানানো হয় আজাদ হিন্দ ফৌজের ভার স্বহস্তে গ্রহণ করার জন্য। সুভাষচন্দ্র টোকিয়োতে এসে পৌঁছান ১৯৪৩ সালের জুন মাসে। পরের মাসে সিঙ্গাপুরে এসে ফৌজে যোগ দেন। রাসবিহারী বসু সুভাষচন্দ্রের হাতে আজাদ হিন্দ ফৌজের ভার তুলে দেন। বাহিনী সুভাষচন্দ্রকে অভিবাদন জানায় ‘নেতাজি’ নামে। সিঙ্গাপুরেই নেতাজি স্থাপন করেন আরজি-হুকুমত-এ-আজাদ হিন্দ বা অস্থায়ী আজাদ হিন্দ সরকারের। কংগ্রেসের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা গৃহীত হয় ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ গানটি নির্বাচিত হয় ভারতের জাতীয় সংগীত হিসেবে। নেতাজি আজাদ হিন্দ ফৌজের দুটি প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন – একটি রেঙ্গুনে, অপরটি সিঙ্গাপুরে। জাপান সেনাবাহিনী ব্রিটিশদের যুদ্ধে হারিয়ে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের অধিকার ব্রিটিশদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছিল। ১৯৪৩ সালের নভেম্বরে এই দ্বীপাঞ্চল জাপানি কর্তৃপক্ষ তুলে দেয় আজাদ হিন্দ সরকারের নামে। নেতাজি স্বয়ং আসেন আন্দামনে। আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নামকরণ করেন ‘শহীদ ও স্বরাজ দ্বীপপুঞ্জ’। এরপরই শুরু হয় আজাদ হিন্দ ফৌজের যুদ্ধাভিযান।