যে গ্রামে জন্মিলা মাতাদেবী ঠাকুরানী।
পুণ্যময়ী লীলা-তীর্থ ধামে তারে গণি।।
শ্রীপ্রভুর পদরেণু বিকীর্ণ যেখানে।
বিধাতার সুদুর্লভ তপস্যা সাধনে।।
(শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণপুঁথি, অক্ষয়কুমার সেন)
নবদ্বীপধামে দেবী বিষ্ণুপ্রিয়া জয়রামবাটী এলে সারদা সাজিয়া,
জীর্ণ চীর বাসে নিজেরে ঢাকিয়া রাজলক্ষ্মী হ’লে যোগিনী।।
(মণীন্দ্রকুমার সরকার)

মাতৃমন্দিরে পূজিত মায়ের শ্বেতপাথরের মূর্তি
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমার অন্তঃপাতী জয়রামবাটী গ্রাম শ্রীশ্রীমা সারদা দেবীর পুণ্য জন্মস্থান। মা বলতেন–‘ওদের এখানে তিনরাত্রি বাস কত্তে বলো। এখানে তিনরাত্রি বাস কল্লে দেহ শুদ্ধ হয়ে যাবে, এটা শিবের পুরী কিনা।’ সত্যিসত্যিই মায়ের মন্দির নির্মাণের সময় ভিত খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গিয়েছিল একটি ছোটো কালো শিবলিঙ্গ। মাতৃমন্দিরের সিংহাসনে আজও সেটি পূজিত হয়।
জয়রামবাটী গ্রামের আদি নাম ছিল ‘তেঁতুলমুড়ি’। ‘জয়রামবাটী’ নাম কিভাবে এল, তা সঠিক জানা যায় না। মায়ের জীবনীকার স্বামী গম্ভীরানন্দ অনুমান করেন, সম্ভবত মায়ের পিতৃকুল মুখোপাধ্যায় বংশের কুলদেবতা রামচন্দ্র বা কোনো পুর্বপুরুষের নামে গ্রামের নতুন নামকরণ হয়েছিল। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মভূমি হুগলি জেলার কামারপুকুর গ্রাম থেকে জয়রামবাটীর দূরত্ব মাত্র সাড়ে তিন মাইল। ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬ বছর মা নিরবিচ্ছিন্নভাবে জয়রামবাটীতেই বাস করেছিলেন। বিয়ের পর কামারপুকুরের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মাঝে মাঝে থাকলেও ১৮৭২ সাল পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় মা জয়রামবাটীতেই কাটান। এরপরও ১৮৯০ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত জয়রামবাটীতেই বেশি ছিলেন তিনি।
শ্রীরামকৃষ্ণ একাধিকবার জয়রামবাটীতে এসেছিলেন। ঠাকুরের পার্ষদ ও মায়ের ভক্তশিষ্যদের মধ্যে কথামৃতকার শ্রীম, নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ, স্বামী সারদানন্দ, স্বামী শিবানন্দ সহ অনেকেই জয়রামবাটী দর্শন করেছেন। স্বামী সারদানন্দই প্রথম জয়রামবাটীতে মাতৃমন্দির ও আশ্রয় স্থাপনে উদ্যোগী হন। তবে স্বামী বিবেকানন্দ এখানে এসেছিলেন কিনা, তা জানা যায় না।