RSS

Tag Archives: পুরনো লেখা

সহজ শিবপূজাপদ্ধতি

এই রচনাটি কপিরাইটমুক্ত। হিন্দুধর্মের প্রচারার্থে এটি অন্যত্র প্রকাশে কোনো বাধা নেই। তবে বাণিজ্যিকভাবে প্রকাশ করা নিষিদ্ধ।

যোগীবর শিব

দেবের দেব মহাদেব। এমন মহাশক্তিধর, অথচ অল্পে-তুষ্ট দেবতা হিন্দু দেবমণ্ডলীতে বিরল। রামপ্রসাদের গানে আছে, ‘শিব আশুতোষ মহান দাতা’। সামান্য ফুল-বেলপাতা তাঁর মাথায় দিলে তিনি যা প্রতিদান দেন, তার তুলনা ত্রিজগতে নেই। এমন যে শিব, তাঁকে পূজা করতে কে না চায়? তাছাড়া তাঁর পূজা যে কেউ করতে পারে।

শিবরাত্রিব্রত বা বিশেষ ফলকামনায় যে ১৬টি সোমবারব্রত করা হয়, তার নিয়ম আলাদা এবং একটু জটিল। যাঁরা দৈনিক কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তাঁদের প্রিয় দেবতা শিবকে নিত্যপূজা করতে চান, কিন্তু শিবপূজার বিধান সম্পর্কে সম্যক অবগত নন, এমন আপামর জনসাধারণের জন্য সরলভাবে এই পূজাপদ্ধতি প্রণীত হল। বাচ্চা ছেলেমেয়েরা শিবের পূজা করে থাকে। কারণ, ছেলেবেলায় শিবের পূজা করা বিশেষভাবে উপকারী। আপনার বাড়িতে এমন ছেলে বা মেয়ে থাকলে, তাদের এই পদ্ধতিতে শিবপূজা করা শিখিয়ে দিতে পারেন। প্রবাসী ধর্মপ্রাণ হিন্দুরাও এই পদ্ধতি মেনে সহজেই নিত্য শিবপূজা করতে পারেন। মন্ত্রপাঠ কেউ করতে পারেন, কেউ পারেন না। তাই মন্ত্রপাঠের সমর্থরা কেমনভাবে পূজা করবেন, অসমর্থরাই বা কেমনভাবে করবেন, তাও আলাদা আলাদাভাবে বলে দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রপাঠ প্রসঙ্গে

 

শিবলিঙ্গ; উপরের U-আকৃতির অংশটি হল শিবপীঠ, নিচের হাতের মতো অংশটিকে বলে গৌরীপীঠ বা গৌরীপট্ট। গৌরীপট্টের মুখ উত্তর দিকে রাখতে হয়।

মন্ত্রপাঠ প্রসঙ্গে প্রথমেই মনে রাখতে হবে যে, শিব মন্ত্র বা উপচারের বশ নন। আর যাই হোক, যিনি দেবের দেব, তাঁকে আপনি মন্ত্রে ভুলিয়ে উপচার ঘুষ দিয়ে কার্যসিদ্ধি করতে পারবেন, এমন চিন্তা মনেও স্থান দেবেন না। শিব ভক্তির বশ। ভক্তের হৃদয় তাঁর আড্ডাঘর। শুধুমাত্র ভক্তিদ্বারা পূজা করলে পূজা তাতেই সিদ্ধ হয়। একথাও শাস্ত্রেও স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু আপনার অন্তরের ভক্তি আপনাকে মন্ত্রপাঠে উদ্বুদ্ধ করলে, অবশ্যই মন্ত্র পড়ে পূজা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মন্ত্রপাঠ শুদ্ধ উচ্চারণে হওয়া উচিৎ এবং আপনারও মন্ত্রের অর্থ জেনে তা পাঠ করা উচিত। তা না করলে মন্ত্রপাঠ বৃথা। তাই নিচে পূজাপদ্ধতি বলার আগে ক্রিয়াকর্ম ও মন্ত্রের অর্থ বা ভাবার্থও দিয়ে দেওয়া হল। মন্ত্র পড়তে না পারলে মন খারাপ করার কোনো প্রয়োজন নেই। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, মন্ত্রপাঠে অসমর্থ ব্যক্তিরাও ঈশ্বরের কৃপা পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের যথাযথ ভক্তিসহকারে পূজার মূল অর্থটি হৃদয়ঙ্গম করে পূজা করতে হবে। তাঁরা কিভাবে সেই পূজা করবেন, তাও পরে বলে দেওয়া হয়েছে। তবে মনে রাখবেন, দুই পদ্ধতির মূল কথা একই।

পূজাসামগ্রী ও সাধারণ নিয়মকানুন

দক্ষিণ ভারতীয় জনপ্রিয় চিত্রকলায় স্ত্রী গৌরী ও দুই পুত্র গণেশ ও কার্তিক সহ শিব।

এই জিনিসগুলি সাজিয়ে নিয়ে পূজা করতে বসবেন।—

১। একটি শিবলিঙ্গ।

২। একটি ছোটো ঘটিতে স্নান করানোর জল।

৩। একটি থালা, একটি গ্লাস ও কোশাকুশি। কোশাকুশি না থাকলে তামা বা পিতলের সাধারণ ছোটো পাত্র ব্যবহার করবেন।

৪। একটু সাদা চন্দন।

৫। একটুখানি আতপ চাল।

৬। কয়েকটি ফুল ও দুটি বেলপাতা (বেলপাতা না থাকলে দুটি তুলসীপাতা দিতে পারেন)।

৭। ধূপ, দীপ।

৮। নৈবেদ্য ও পানীয় জল (আপনার সাধ্য ও ইচ্ছামতো দেবেন। একটা বাতাসা হলেও চলবে।)

৯। প্রণামী (অন্তত একটি টাকা দেবেন। ইচ্ছা করলে বেশিও দিতে পারেন।)

১০। একটি ঘণ্টা।

উপচার সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞাতব্য হল এই যে, চন্দন, ফুল-বেলপাতা, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য এই পঞ্চোপচার পূজার ক্ষেত্রে অপরিহার্য্য। কোনো একটি উপচারের অভাব ঘটলে, সেই উপচারের নাম করে একটু জল দিলেও চলবে। আপনার প্রকৃত ভক্তিই সেই অভাব পূর্ণ করবে, এই কথা জানবেন।

শিবপূজা সর্বদা উত্তরমুখে বসে করবেন এবং শিবলিঙ্গকেও উত্তরমুখী করে রাখবেন। উত্তরদিক ব্রহ্মলোকপথ। তাই পরমব্রহ্মময় শিবের পূজা সর্বদা উত্তরমুখে বসে করাই নিয়ম। শিবলিঙ্গকে তামা বা পাথরের পাত্রে বসানো হয়ে থাকে।

Read the rest of this entry »

 
28 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 31, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ শিষ্যগণ: স্বামী ব্রহ্মানন্দ

স্বামী ব্রহ্

স্বামী ব্রহ্মানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম রাখালচন্দ্র ঘোষ। জন্ম ১৮৬৩ সালের ২১ জানুয়ারি (স্বামী বিবেকানন্দের চেয়ে মাত্র ৯ দিনের ছোটো)। জন্মস্থান কলকাতার ৩৬ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সদর বারাসতের নিকটবর্তী সিকরা-কুলীনগ্রাম।

বাল্যকাল থেকেই রাখালচন্দ্র ছিলেন ঈশ্বরভক্ত ও ধ্যানশীল। বারো বছর বয়সে কলকাতায় আসেন পড়াশোনা করতে। সেখানেই নরেন্দ্রনাথ দত্তের (পরবর্তীকালে স্বামী বিবেকানন্দ) সঙ্গে আলাপ। নরেন্দ্রনাথের প্রভাবে ব্রাহ্মসমাজেও যোগ দেন। সেযুগের প্রথা অনুসারে, বিশ্বেশ্বরী নাম্নী জনৈকা বালিকার সঙ্গে রাখালচন্দ্রের বিবাহ হয়। বিশ্বেশ্বরীর দাদা মনোমোহন মিত্র ছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্ত। তিনিই রাখালচন্দ্রকে ঠাকুরের কাছে নিয়ে যান। ইতিপূর্বে ঠাকুর ভাবচক্ষে দেখেছিলেন, জগজ্জননী একটি ছেলেকে ঠাকুরের পুত্র রূপে পাঠাচ্ছেন। রাখালচন্দ্র দক্ষিণেশ্বরে আসা মাত্রই ঠাকুর চিনতে পারলেন, এই ছেলেটিই তাঁর ভাবচক্ষে দেখা সেই ছেলে। সেই থেকে ঠাকুর রাখালচন্দ্রকে নিজের পুত্রের ন্যায় আদরযত্ন করতে থাকেন।

বেলুড় মঠ ব্রহ্মানন্দ মন্দিরে স্বামী ব্রহ্মানন্দের মর্মরমূর্তি

কয়েকবার দক্ষিণেশ্বরে আসাযাওয়া করার পর রাখালচন্দ্র শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গেই বসবাস করতে শুরু করেন। ঠাকুর স্বয়ং তাঁকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিতে থাকেন। ১৮৮৬ সালে ঠাকুরের মহাসমাধির পর বরাহনগরে যখন প্রথম রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠিত হয় তখন রাখালচন্দ্র সেই মঠে যোগ দেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় স্বামী ব্রহ্মানন্দ। দুই বছর পর বরাহনগর মঠ ত্যাগ করে পরিব্রাজক সন্ন্যাসীর জীবন নিয়ে বারাণসী, ওঙ্কারনাথ, বৃন্দাবন, হরিদ্বার প্রভৃতি তীর্থস্থান দর্শন করেন। ঠাকুরের সাহচর্যেই তিনি উচ্চ অধ্যাত্মিক অবস্থায় উন্নীত হয়েছিলেন। পরিব্রাজক জীবনে তিনি অদ্বৈততত্ত্বের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন। এই সময় দিনের পর দিন তিনি সমাধিস্থ হয়ে থাকতেন। ১৮৯০ সালে তিনি মঠে ফিরে আসেন। ১৮৯৭ সালে স্বামী বিবেকানন্দ পাশ্চাত্য পরিভ্রমণ সেরে দেশে ফিরে এসে নবরূপে মঠ পুনর্গঠন করেন। এই সময় স্বামী ব্রহ্মানন্দ তাঁকে প্রভূত সাহায্য করেন। দুই গুরুভাই একে অপরকে খুবই ভালবাসতেন। বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠার পর স্বামী বিবেকানন্দ যখন ট্রাস্ট হিসেবে রামকৃষ্ণ মঠকে নথিভুক্ত করেন, তখন স্বামী ব্রহ্মানন্দ মঠের প্রথম সঙ্ঘাধ্যক্ষ বা প্রেসিডেন্ট হন। আজীবন তিনি এই পদ অলংকৃত করেছিলেন।

স্বামী ব্রহ্মানন্দ প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন রামকৃষ্ণ সংঘের দ্রুত বিস্তার ঘটে। ভারত ও বহির্ভারতে মঠের একাধিক কেন্দ্র স্থাপিত হয়। স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশনকে অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বামী ব্রহ্মানন্দ মিশনকে নথিভুক্ত করেন। সন্ন্যাসীবৃন্দকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে তিনি সংঘকে স্থায়ী রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর রাজোচিত পরিচালন ক্ষমতা দেখে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁকে ‘রাজা’ নাম দিয়েছিলেন। সেই থেকে সংঘে তিনি রাজা মহারাজ নামে পরিচিত ছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর যে ছয় জন শিষ্যকে ‘ঈশ্বরকোটি’ হিসেবে চিহ্নিত করে যান, স্বামী ব্রহ্মানন্দ ছিলেন তাঁদের অন্যতম।

১৯২২ সালের ১০ এপ্রিল সামান্য রোগভোগের পর তিনি মহাসমাধিতে লীন হন। বেলুড় মঠে যে স্থানটিতে তাঁর পার্থিব দেহ পঞ্চভূতে লীন হয়, সেখানেই আজ তাঁর স্মরণে ব্রহ্মানন্দ মন্দির প্রতিষ্ঠিত।

Read the rest of this entry »

 
3 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 28, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

সূর্যের সংসার সৌরজগৎ

সৌরজগৎ

সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে তাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অসংখ্য গ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু ইত্যাদি জ্যোতিষ্ক। এদের সবাইকে নিয়েই সূর্যের সংসার—সৌরজগৎ। এই নিবন্ধে সৌরজগতের বিভিন্ন সদস্যদের একটি সচিত্র সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল।

সূর্য (Sun)

সূর্য

সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রীয় নক্ষত্র। সূর্যই পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র। এটি একটি সাধারণ আকারের নক্ষত্র। এমন অনেক নক্ষত্র আছে যেগুলি সূর্যের চেয়েও বড়ো, বেশি ভারী, বেশি গরম এবং বেশি উজ্জ্বল। তবে সেগুলির চাইতে সূর্যই আমাদের বেশি কাছে বলে আমরা সূর্যকে অত বড়ো আর উজ্জ্বল দেখি। সূর্য পৃথিবী থেকে ১৪৯,৬০০,০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমাদের দ্বিতীয় নিকটতম নক্ষত্র হল আলফা সেন্টারি (Alpha Centauri)। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৪০,০০০,০০০,০০০,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি। কিন্তু সূর্য পৃথিবী থেকে মাত্র ৮ আলোকমিনিট দূরে অবস্থিত। অর্থাৎ, সূর্যের আলো সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসতে মাত্র ৮ মিনিট সময় লাগে। সূর্য থেকে যে তাপশক্তি ও আলোকশক্তি বিকিরিত হয়, তা-ই আমাদের পৃথিবীর প্রাণের উৎস। তাছাড়া, সূর্যের আলো বিকিরিত না হলে আমরা ধূমকেতু আর উল্কা ছাড়া সৌরজগতের আর কোনো জ্যোতিষ্ককেই দেখতে পেতাম না।

সূর্যের আবহমণ্ডলের একেবারে বাইরের দিকের অংশটিকে বলে করোনা (Corona)। ফটোস্ফিয়ার (Photosphere) হল সূর্যের ‘দৃশ্যমান’ উপরিতল। প্রত্যেক নক্ষত্রেরই একটি বৈশিষ্ট্য হল তার অ্যাবসর্পশন স্পেকট্রাম (Absorption Spectrum)। সূর্যের অ্যাবসর্পশন স্পেকট্রামের উৎস হল ফটোস্ফিয়ার। এটি তার উপরের আবহমণ্ডলীয় স্তরের চেয়ে গভীরতর। ফটোস্ফিয়ারের উপরে ও করোনার নিচের স্তরটির নাম ক্রোমোস্ফিয়ার (Chromosphere)। সূর্যের উপরিতলের স্তরগুলির যত গভীরে যাওয়া যায়, উপরের স্তরগুলির চাপে নিচের স্তরগুলির তাপমাত্রা, চাপ ও গভীরতা ততই বাড়তে থাকে। সূর্যের গোটা শরীরটাই গ্যাসীয়। এর মধ্যে হাইড্রোজেন গ্যাসের ভাগই সবচেয়ে বেশি—সূর্যের মোট ভরের ৭০ শতাংশ। অবশিষ্ট ২৮ শতাংশ হিলিয়াম এবং ২ শতাংশ লিথিয়াম, ইউরেনিয়াম ইত্যাদি ভারী উপাদান। হান্স বেথ (Hans Bethe) প্রমাণ করেছিলেন, সৌরশক্তির উৎপাদনের জন্য দায়ি সূর্যের নিয়ন্ত্রিত থার্মোনিউক্লিয়ার বিক্রিয়া।

হিন্দু সূর্যদেবতা

সাদা আলোয় সূর্যের যে আলোকচিত্র তোলা হয়েছে, তাতে সূর্যের গায়ে অসংখ্য কালো কালো ছোপ দেখা যায়। এগুলিকে বলে সৌরকলঙ্ক (Sunspots)। সূর্যের উজ্জ্বল উপরিতলের প্রেক্ষিতে এগুলিকে যে কালো দেখায় তার কারণ, এগুলির উত্তাপ তুলনামূলকভাবে কম (৪৫০০ কে)। সাধারণত সৌরকলঙ্কে দুটি স্পষ্ট অংশ দেখা যায়—এর অন্ধকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলটিকে বলে আম্ব্রা (Umbra) এবং এর চারপাশের আলোকময় অংশটিকে বলে পেনুম্ব্রা (Penumbra)। সৌরকলঙ্কগুলি হল নিবিড় চৌম্বকক্ষেত্র। এগুলি নির্দিষ্ট চক্রের আকারে আবির্ভূত ও অন্তর্হিত হয়। এই চক্রকে বলে সৌরকলঙ্ক চক্র (Sunspot Cycle) বা সৌরচক্র (Solar Cycle)। এই চক্রের গড় সময়কাল প্রায় ১১ বছর। সৌরকলঙ্কগুলিকে প্রতিদিনই একটু একটু করে সরতে দেখা যায়। এর থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে সূর্য নিজের অক্ষের উপর ২৫ দিনে এক পাক ঘোরে। মাঝে মাঝে সূর্যচাকতির উপর লাল H আলোর নিবিড়তা বেড়ে যায়। এই ঘটনাকে বলে সোলার ফ্লেয়ার (Solar Flare)। এই সময় সূর্য থেকে প্রচুর প্রোটন, ইলেকট্রন ও আলফা কণা নির্গত হয়, যা এক দিন পর পৃথিবীতে পৌঁছে বিশ্বময় চৌম্বক ঝড় তোলে এবং বেতার তরঙ্গ প্রচারে অসুবিধা সৃষ্টি করে। সূর্যের মধ্যে এই সব ঘটনা অবশ্য সৌরকলঙ্ক চক্রের সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। জানা গিয়েছে, গাছের বৃদ্ধিও সৌরকলঙ্ক দ্বারা প্রভাবিত হয়। এর ফলে গাছের ট্রাঙ্কের চাকাগুলির গভীরতার তারতম্য ঘটে।

 

রোমান সূর্যদেবতা অ্যাপোলো

গ্রহমণ্ডল (Planets)

যে সব জ্যোতিষ্ক সূর্য বা অন্য কোনো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে, এবং শুধুমাত্র নক্ষত্রের আলোতেই আলোকিত হয়, তাদের বলে গ্রহ। সৌরজগতে আকারের হিসেবে সূর্যের পরেই গ্রহগুলির স্থান। শুধুমাত্র কয়েকটি উপগ্রহের ব্যাস ক্ষুদ্রতম গ্রহ বুধের চেয়ে বেশি। গ্রহের সংখ্যা ৮। সূর্য থেকে দূরত্বের ক্রম অনুসারে এগুলির নাম হল—(১) বুধ, (২) শুক্র, (৩) পৃথিবী, (৪) মঙ্গল, (৫) বৃহস্পতি, (৬) শনি, (৭) ইউরেনাস এবং (৮) নেপচুন। শেষোক্ত চারটি গ্রহের আকার এতই বড়ো যে এগুলিকে দৈত্যাকার গ্রহ (Giant Planet) বলে। পৃথিবীর আকার গ্রহের গড় আকারের চেয়ে কিছু কম। এটি উক্ত দৈত্যাকার গ্রহগুলির চেয়ে অনেকটাই ছোটো। আগে প্লুটোকে গ্রহ বলে মনে করা হত, আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের মতে প্লুটো পূর্ণাঙ্গ গ্রহ নয়, এটি বামন গ্রহ।

বেচারি প্লুটো: গ্রহতালিকা থেকে প্লুটোকে বাদ দেওয়ার পর অঙ্কিত একটি কার্টুন।

প্রতিটি গ্রহই একটি প্রকাণ্ড কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। এই কক্ষপথগুলি প্রায় বৃত্তাকার। প্রত্যেক গ্রহের অক্ষ মোটামুটি একই সমতলে থাকে। শুধুমাত্র প্লুটোর অক্ষ পৃথিবীর চেয়ে ১৭ ডিগ্রি কোণে অবস্থান করে।

সূর্য থেকে গ্রহের দূরত্ব যত বাড়ে, গ্রহগুলির কক্ষপথও অত ছড়িয়ে পড়ে। আঠারো শতকে জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান এলার্ট বোড (Johann Elert Bode) ‘বোডের সূত্র’ নামে পরিচিত একটি সাধারণ বুড়ো আঙুলের নিয়মে সূর্য থেকে গ্রহগুলির দূরত্ব মাপার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই সূত্রের অবশ্য কোনো তাত্ত্বিক ভিত্তি ছিল না। তাই সবচেয়ে দূরে অবস্থিত গ্রহগুলির দূরত্ব এই সূত্রের দ্বারা মাপা সম্ভব হয়নি।

রাতের আকাশে চাঁদকে বাদ দিলে সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হল শুক্র গ্রহ। এটি শেষ রাতে পূর্ব আকাশে অথবা সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে দেখা যায়। ভোর ও সন্ধ্যায় দৃশ্যমান শুক্রের নামও তাই যথাক্রমে হয় শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা। সূর্য-পরিক্রমার সঙ্গে সঙ্গে রাতের আকাশে গ্রহগুলির আপেক্ষিক অবস্থানেরও পরিবর্তন হয়।

পার্থিব গ্রহসমূহ

সূর্যের নিকটতম চারটি গ্রহের (বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল) গঠনতন্ত্র পৃথিবীর অনুরূপ। তাই এগুলিকে বলে পার্থিব গ্রহ (Terrestrial Planet)। এই গ্রহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল—মোটা পাথুরে ভূত্বক, লোহা ও ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ আচ্ছাদন শিলা এবং গলিত ধাতু দ্বারা নির্মিত অভ্যন্তরভাগ। এই গ্রহগুলির উপগ্রহের সংখ্যা খুবই কম এবং এদের বায়ুমণ্ডল পাতলা।

বার্হস্পত্য গ্রহসমূহ

অন্যদিকে, মঙ্গলের পরবর্তী গ্রহগুলি পার্থিব গ্রহগুলির চেয়ে অনেক দূরে অবস্থিত। এগুলির আকার বৃহস্পতির মতো বলে এগুলিকে বার্হস্পত্য গ্রহ (Jovian Planet) বলে। এগুলির আকার গ্যাসীয়। এদের চারপাশে বলয় ও অনেকগুলি উপগ্রহ থাকে।

Read the rest of this entry »

 
5 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 24, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

তথ্যকণিকা: ভারতে টকিং এটিএম মেশিন

* ইউনিয়ন ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ভারতে প্রথম টকিং এটিএম মেশিন চালু করেছে।

* প্রথম টকিং এটিএম চালু হয়েছে গুজরাটের আমেদাবাদ শহরে।
* টকিং এটিএম মেশিন মূলত দৃষ্টিহীনদের ব্যবহারের সুবিধার জন্যই চালু হয়েছে।
* প্রথম টকিং এটিএম উদ্বোধন করেন ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডি সরকার।
* টকিং এটিএম মেশিনে যে বিশেষ ইন্টারফেসটি থাকে, সেটি হল ভয়েস ইন্টারফেস।

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 21, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

তথ্যকণিকা: লন্ডন গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকস, ২০১২

  • মাইকেল ফেল্পস

    ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকসের পোষাকি নাম “The Games of the XXX Olympiad”. চলতি কথায় ”লন্ডন, ২০১২”।

  • যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে ২৭ জুলাই, ২০১২ তারিখে ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকসের আসর বসে। চলে ১২ অগস্ট, ২০১২ পর্যন্ত।
  •  ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের মোটো ছিল – “Inspire a Generation”.
  •  ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের ম্যাসকটদুটির নাম ছিল ওয়েনলক ও ম্যান্ডিভিল।
  • মোট ২০৪টি দেশ ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে অংশ নেয়।
  •  মোট ১০,৮২০ জন অ্যাথলেট ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে অংশ নেন।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় ২৭ জুলাই। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল “আইল অফ ওয়ান্ডার”। পরিচালনা করেন অস্কার-জয়ী পরিচালক ড্যানি বয়েল।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের উদ্বোধন সরকারিভাবে করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের নায়ক যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল ফেল্পস। তিনি তাঁর ২২তম অলিম্পিক পদক জয় করে সর্বাধিক পদকজয়ী অলিম্পিক অ্যাথলেটের সম্মান পান।
  • আয়োজক দেশ গ্রেট ব্রিটেন ১৯০৮-এর পর এইবার সর্বাধিক সংখ্যক স্বর্ণপদক জয় করেছে। ব্রিটেন পদক-সারণিতে তৃতীয় স্থান পেয়েছে।
  • লন্ডন প্রথম আধুনিক শহর যেখানে তিন বার অলিম্পিকসের আসর বসল। এর আগে ১৯০৮ ও ১৯৪৮ সালে লন্ডনে অলিম্পিকসের আসর বসেছিল।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে প্রথম স্বর্ণপদক জয় করলেন চিনের য়ি সিলিং।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে পুনরায় মঞ্চে ফিরে এলেন কিংবদন্তি বক্সার মহম্মদ আলি।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের প্রথম বিশ্বরেকর্ডটি করলেন অন্ধ সাউথ কেরিয়ান তিরন্দাজ ইম ডং হ্যুন।

২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে ভারত

 

সুশীল কুমার

  • ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে মোট ৮৩ সদস্যের একটি দল পাঠায়। এই দলের সদস্যরা মোট ১৩টি খেলায় অংশ নেন। ভারত এর আগে এতো বড়ো দল পাঠায়নি বা এতগুলি খেলাতেও অংশ নেয়নি।
  • ব্রিগেডিয়ার পি কে মুরলিধরন রাজা ভারতীয় দলের কার্যনির্বাহী শেফ-ডে-মিশন ছিলেন। তিনি আসলে ডেপুটি শেফ-ডে-মিশন। কিন্তু প্রধান শেফ-ডে-মিশন অজিতপাল সিং অসুস্থ থাকায় তিনিই এই দায়িত্ব পালন করেন।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে ভারত মোট ছয়টি পদক জয় করে। এর মধ্যে ২টি রুপো ও ৪টি ব্রোঞ্জ। এটিই কোনো একক গেমসে ভারতের সর্বাধিক সংখ্যক পদকজয়।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের পতাকাবাহী ছিলেন সুশীল কুমার।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতের পতাকাবাহী ছিলেন মেরি কম।
  • গগন নারং ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে দেশের হয়ে প্রথম পদকটি জয় করেন। তিনি পুরুষদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পান।
  • বিজয় কুমার পুরুষদের ২৫ মিটার র‌্যাপিড ফায়ার পিস্তল ইভেন্টে রুপো পান।
  • বিজয় কুমার তৃতীয় রুপোজয়ী ভারতীয় অলিম্পিয়ান (নর্মান প্রিচার্ড ও রাজ্যবর্ধন রাঠোরের পর)।
  • সাইনা নেহওয়াল মহিলাদের সিঙ্গলস ব্যাডমিন্টনে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।
  • সাইনা নেহওয়াল প্রথম অলিম্পিকস-পদকজয়ী ভারতীয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়।
  • সাইনা নেহওয়াল দ্বিতীয় মহিলা ভারতীয় অলিম্পিকস পদকজয়ী (কর্ণম মালেশ্বরীর পরে, যিনি ২০০০ সালে ভারোত্তোলনে অলিম্পিকস ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন)।
  • মেরি কম মহিলাদের ফ্লাইওয়েট বক্সিং-এ চতুর্থ পদকটি পান। তিনি পেয়েছেন ব্রোঞ্জ।
  • মেরি কম তৃতীয়া মহিলা ভারতীয় অলিম্পিকস-পদকজয়ী এবং অলিম্পিকস-পদকজয়ীয় প্রথম ভারতীয় মহিলা বক্সার।
  • যোগেশ্বর দত্ত ৬০ কেজি ফ্রিস্টাইল কুস্তিতে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন।
  • সুশীল কুমার ৬৬ কেজি ফ্রিস্টাইল কুস্তিতে রৌপ্যপদক জয় করেন।
  • সুশীল কুমার প্রথম ভারতীয় অলিম্পিয়ান যিনি পরপর দুটি অলিম্পিকসে পদক পেলেন।
 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 20, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

ব্রিটিশ শাসনে ভারতীয় প্রেস

১৫৫০ সালে পর্তুগিজরা ভারতে প্রথম ছাপাখানা চালু করেছিল। ১৫৫৭ সালে পর্তুগিজ মিশনারিরাই ভারতে প্রথম ছাপা বই প্রকাশ করে। এরপর ১৬৮৪ সালে ইংরেজরা ছাপাখানা চালু করে। ১৭৮০ সালে জেমস অগাস্টাস হিকি প্রথম ভারতে খবরের কাগজ চালু করেন। কাগজটির নাম ছিল বেঙ্গল গেজেট। লোকমুখে তা পরিচিত ছিল হিকির গেজেট নামে। সরকারি নীতি ও গভর্নর-জেনারেলের সমালোচনা করে হিকির গেজেট সরকারের বিষ নজরে পড়ে। ফলে দু-বছরের মধ্যেই কাগজটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু শিগগিরিই এর দেখাদেখি আরও কয়েকটি কাগজ চালু হয়ে যায়।

 

গঙ্গাধর ভট্টাচার্য হলেন প্রথম ভারতীয় যিনি খবরের কাগজ চালু করেছিলেন। তাঁর বেঙ্গল গেজেট কাগজটিও ছিল ইংরেজিতে। দেশীয় ভাষায় প্রথম পত্রিকা চালু হয় ১৮১৬ সালে। ১৮২১ সালে মার্শম্যান চালু করেন দিগ্দর্শন নামে এক বাংলা মাসিক পত্রিকা। ১৮১৮ সালে রাজা রামমোহন রায় তাঁর সম্বাদ কৌমুদী কাগজটি চালু করেন। ১৮২১ সালে তিনি মিরাত-উল-আখবর নামে একটি ফারসি সাপ্তাহিক পত্রও চালু করেন।

 

১৭৯৯ সালে সেন্সরশিপ আইন চালু করে প্রথম বার সংবাদপত্রের অধিকার খর্ব করা হয়। এই আইনবলে কাগজের প্রতিটি সংখ্যায় মুদ্রক, সম্পাদক ও মালিকের নাম ছাপা এবং কাগজের বিষয়বস্তু ছাপার আগে সরকারি সচিবের কাছে পেশ করা বাধ্যতামূলক করা হয়। লর্ড ওয়েলেসলি ভারতে ফরাসি আক্রমণের ভয়ের অজুহাত দেখিয়ে এই আইন জারি করেন। ১৮০৭ সালে আইনটি পত্রপত্রিকা ও পুস্তকপুস্তিকার উপরও জারি হয়। লর্ড হেস্টিংস এই আইন বিলোপ করেন।

Read the rest of this entry »

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 12, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

রাজস্থানি ভাষায় অনূদিত হল রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি

বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি অনূদিত হয়েছে ভারত ও বহির্ভারতের একাধিক ভাষায়। এই তালিকায় এবার সংযোজিত হল নতুন একটি নাম – রাজস্থানি। গত ১৬ মে, ২০১২ তারিখে কলকাতার ঐতিহাসিক টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে প্রকাশিত হল গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের রাজস্থানি অনুবাদ অঞ্জলি গীতান রি। অনুবাদটি করেছেন বিশিষ্ট রাজস্থানি কবি ইকরাম রাজস্থানি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অভিনেতা প্রসেনজিৎ, শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠানে রাজস্থান-বাংলার মৈত্রী সুদৃঢ় করার কথা বলেন। তিনি বলেন, “মানুষকে এক করা একটা মহৎ কাজ। এটি কবিকে সম্মান জানানো সঠিক উপায়।” রাজস্থানি ভাষায় কয়েকটি কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে চমৎকৃতও করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক তথা প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের কর্ণধার সন্দীপ ভুতোড়িয়া বলেন, “সারা দেশ রবীন্দ্রনাথের জন্মসার্ধশতবর্ষ পালন করছে। কিন্তু রাজস্থানের মানুষ ভাষাগত ব্যবধানের জন্য দীর্ঘকাল এই গ্রন্থ আস্বাদন করতে পারেননি। এই কাজ অনেক দিন আগেই হওয়া উচিত ছিল।” ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে সনাতন দিন্দার আঁকা একটি রবীন্দ্র-প্রতিকৃতিও মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া হয়। প্রসেনজিৎ বলেন, “ইকরাম রাজস্থানির কাব্য অনুবাদ বাংলা ও রাজস্থানের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের কাজ অনেক দূর এগিয়ে দেবে।”

 

ট্যাগ সমুহঃ

যক্ষপ্রশ্ন (মহাভারত থেকে অনূদিত নির্বাচিত অংশ)

রচনা-পরিচিতি

বলা হয়, ‘যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে।’ অর্থাৎ মহাভারত-এ যা নেই, তা ভূভারতে নেই। হিন্দুদের দু-টি মহাকাব্যের অন্যতম হল মহাভারত। আঠারো পর্বে বিন্যস্ত এই মহাগ্রন্থ শুধুমাত্র বিশ্বের বৃহত্তম নীতিমূলক মহাকাব্যই নয়, বরং হিন্দুধর্মের বিশ্বকোষ-স্বরূপ। মহাকাব্যের মূল আলোচ্য বিষয় পাণ্ডব ও কৌরবদের পারিবারিক বিবাদের ইতিহাস। তা সত্ত্বেও হিন্দুধর্মের প্রতিটি আধ্যাত্মিক ও নীতিমূলক বিষয় এই বইতে আলোচিত হয়েছে।

এখানে অনূদিত ‘যক্ষপ্রশ্ন’ অংশটি মহাভারত-এর বনপর্ব-এর অন্তর্গত। এটি ছদ্মবেশী যমের সঙ্গে পাণ্ডবাগ্রজ যুধিষ্ঠিরের একটি কথোপকথন। যম যক্ষের রূপ ধরে এসে যুধিষ্ঠিরকে কতগুলি অদ্ভুত প্রশ্ন করেছিলেন। এই প্রশ্নের উত্তরে যুধিষ্ঠির খুব সংক্ষেপে ধর্মের কয়েকটি গূঢ় তত্ত্ব বর্ণনা করেন।

নির্বাচিত অংশ

যক্ষ বললেন–কিভাবে কোনো ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারে? কিভাবে সে মহৎ হতে পারে? কিভাবে সে দ্বিতীয় হতে পারে? এবং, হে রাজা, কিভাবে সে বুদ্ধিমান হতে পারে?

যুধিষ্ঠির বললেন–বেদ অধ্যয়ন করে একজন ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। সাধুসুলভ ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করে সে মহৎ হতে পারে। সাহস অবলম্বন করে সে দ্বিতীয় হতে পারে। এবং গুরুজনের সেবা করে সে বুদ্ধিমান হতে পারে।

(শ্লোকসংখ্যা ৪৭-৪৮)

যক্ষ বললেন–ব্রাহ্মণদের দেবত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় কিসে? ব্রাহ্মণের গুণ কী? ব্রাহ্মণদের মানুষ-সুলভ বৈশিষ্ট্য কী? এবং ব্রাহ্মণদের দোষ কী?

যুধিষ্ঠির বললেন–বেদ অধ্যয়ন ব্রাহ্মণদের মধ্যে দেবত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ব্রহ্মচর্য ব্রাহ্মণের গুণ। নশ্বরতা ব্রাহ্মণের মানুষ-সুলভ বৈশিষ্ট্য। নিন্দাবাদ করা ব্রাহ্মণের দোষ।

(শ্লোকসংখ্যা ৪৯-৫০)

যক্ষ বললেন–কে পৃথিবীর চেয়েও ভারী? কে স্বর্গের চেয়েও উঁচু? কে বায়ুর চেয়েও দ্রুতগামী? ঘাসের চেয়েও সংখ্যায় বেশি কী?

যুধিষ্ঠির বললেন–মা পৃথিবীর চেয়েও ভারী। বাবা স্বর্গের চেয়েও উঁচু। মন বায়ুর চেয়েও দ্রুতগামী। দুশ্চিন্তা ঘাসের চেয়েও সংখ্যায় বেশি।

(শ্লোকসংখ্যা ৫৯-৬০)

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

———————————————-

বঙ্গভারতী পঁচিশে বৈশাখ স্মারক রচনা, ১৪১৯ (২০১২)

———————————————–

অর্ণব দত্ত

এই রচনার সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের বিনা অনুমতিতে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি।

প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর

উত্তর কলকাতার পাদপ্রান্তে অবস্থিত জোড়াসাঁকো অঞ্চলের আদি নাম ছিল ‘মেছুয়াবাজার’। আড়াইশো বছর আগেকার এই মৎস্যজীবী-প্রধান অঞ্চল কালক্রমে কিভাবে হয়ে উঠল ‘বাংলার নবজাগরণের শিশুশয্যা’, সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। ১৭৮৫ সালে কলকাতা শহরকে প্রথম যে ৩১টি থানায় ভাগ করা হয়েছিল, তার একটি ছিল এই জোড়াসাঁকো থানা। ক্রমে ক্রমে এই অঞ্চলে গড়ে ওঠে আদি ব্রাহ্মসমাজ, ভারতীয় নাট্যসমাজ, কলিকাতা হরিভক্তিপ্রদায়িনী সভা, মিনার্ভা লাইব্রেরি এবং কলকাতার প্রথম বেসরকারি স্কুল গৌরমোহন আঢ্যের ওরিয়েন্টাল সেমিনারি। জোড়াসাঁকোয় বসবাসকারী দু-টি পরিবারের সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের নাম জড়িয়ে রয়েছে ওতোপ্রতোভাবে। একটি হল সিংহ পরিবার–যে পরিবারের সন্তান ছিলেন হুতোম পেঁচার নকশা-খ্যাত মহাভারত-অনুবাদক কালীপ্রসন্ন সিংহ। অপর পরিবারটি, বলাই বাহুল্য, বঙ্গদেশের সুবিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের জোড়াসাঁকো শাখা। জোড়াসাঁকো থানা-গঠনের ঠিক এক বছর আগে ১৭৮৪ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা নীলমণি ঠাকুর পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে আসেন জোড়াসাঁকো অঞ্চলে। যে জমির উপর আজকের জোড়সাঁকো ঠাকুরবাড়ি তথা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে, সেই জমিটি নীলমণি ঠাকুর গৃহদেবতা লক্ষ্মীজনার্দন জিউয়ের নামে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে লাভ করেছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ধনী বৈষ্ণবচরণ শেঠের কাছ থেকে। এরপর অবস্থা আরও একটু স্বচ্ছল হলে নীলমণি সেই জমিতে বিরাট এক ইমারত তোলেন। জোড়াসাঁকো তখনও পর্যন্ত মেছুয়াবাজার নামেই পরিচিত ছিল। নীলমণি থেকে তাঁর নাতি দ্বারকানাথ পর্যন্ত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ছিল এক বিরাট জমিদারি ও ব্যবসাদারির কেন্দ্রস্থল। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আমলে ব্রাহ্মধর্মের প্রসার বঙ্গ-সংস্কৃতির মুকুটে ঠাকুরবাড়ির এক নতুন পালক সংযোজন। তবে জমিদারি-কেন্দ্র থেকে ঠাকুরবাড়িকে যথাযথরূপে সাংস্কৃতিক পীঠস্থানে পরিণত করেছিলেন দেবেন্দ্রনাথের সন্তানসন্ততিগণ; যাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। রবীন্দ্রনাথের জন্ম, কাব্যরচনা, সাহিত্যচর্চা, নাট্যাভিনয়, নোবেল-প্রাপ্তি, নাইটহুড-ত্যাগ, রাজনীতিদর্শন ও মহাপ্রয়াণের সঙ্গে এই বাড়ির নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর দাদা, বৌদি ও দিদিদের সুবাদে তৎকালীন ভারত ও বহির্ভারতের অনেক নামিদামি মানুষের পায়ের ধুলো পড়েছিল এই বাড়িতে। তাই বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় পাদে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রবীন্দ্র-নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন এই বাড়িটিকেই। যার ফলস্রুতি, আজকের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর থেকেই ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা একে একে জোড়াসাঁকোর বাস তুলে অন্যত্র চলে যান। বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব অংশের মালিকানা থেকে যায় গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে। কালক্রমে দেশভাগ ও স্বাধীনতা অর্জনের ডামাডোলে বাড়ির একটি বড়ো অংশই চলে যায় বহিরাগতদের হাতে। উনিশশো পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির তরফে সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার পনেরো লক্ষ টাকা দিয়ে বাড়িটি কিনে নেন। পরে বাড়ির তদনীন্তন মালিক হাইকোর্টে মামলা করে আরও তিন লক্ষ টাকা দাবি আদায় করে। এর ফলে সুরেশচন্দ্র বেশ অর্থসংকটে পড়েন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানান। এরপর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। সরকারি অনুদানের শর্ত হিসেবে ঠাকুরবাড়িতে সংগীত, নৃত্য ও নাটক শিক্ষার একটি আকাদেমি স্থাপনের প্রস্তাব রাখা হয়। এরপর ১৯৫৫ সালে স্থাপিত হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য, নাটক, সংগীত ও চারুকলা আকাদেমি। উদয় শংকর, অহীন্দ্র চৌধুরী ও রমেশ বন্দ্যোপাধ্যায় যথাক্রমে নৃত্য, নাটক ও সংগীতের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে অবশ্য উদয় শংকর তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। ১৯৫৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আসন্ন রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেন। রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পশ্চাতে সরকারের মূল উদ্দেশ্যটির সঙ্গে নিজেদের উদ্দেশ্যের সাদৃশ্য লক্ষ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কবি-পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার সমগ্র ঠাকুরবাড়ির দখল নেন। বিচিত্রা ভবন থেকে সেই সময় বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগের কাজকর্ম চলত। বিশ্বভারতী বিচিত্রা ভবন খালি করে দেয়। জোড়াসাঁকোর পাশাপাশি বরানগর অঞ্চলে বি টি রোডের ধারে ১৮২০-এর দশকে নির্মিত মরকত কুঞ্জটিকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষাপ্রাঙ্গনে পরিণত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাস হওয়া রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আইন রাষ্ট্রপতির সম্মতি পায় ১৯৬২ সালের ১০ জানুয়ারি। সেই বছরই পঁচিশে বৈশাখ যাত্রা শুরু হয় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

উর্দুতে রবীন্দ্রসংগীত গাইছেন পাকিস্তানি পপ গায়ক

পাকিস্তানি পপ গায়ক নাজম শেরাজ

জনৈক পাকিস্তানি গায়কের কণ্ঠে উর্দুতে রবীন্দ্রসংগীত মন কেড়ে নিল পাকিস্তানবাসীর:

অগর মেরে গ়মকে ঘনেরে অন্ধেরে

তেরি রেহ্‌মতোঁ কে উজালোঁ সে চমকেঁ

চমকনে দে উনকো,

চমকনে দে মওলা

তুমহারি মহব্বত ভরিঁ এ নিগাহেঁ

আগর চশম্-এ-তর পার মেরি টিক রহি হ্যায়

তো আঁখো মেঁ আঁসু হি রহনে দে মওলা।

খুব চেনা চেনা লাগছে কী? বাংলা গানটি হল:

দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল-আলোক

তবে তাই হোক ।।

মৃত্যু যদি কাছে আনে তোমার অমৃতময় লোক

তবে তাই হোক ।।

পুজার প্রদীপে তব জ্বলে যদি মম দীপ্ত শোক

তবে তাই হোক ।

অশ্রু-আঁখি-‘পরে যদি ফুটে ওঠে তব স্নেহচোখ

তবে তাই হোক ।।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সারা ভারত যখন ভাসছে রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের জোয়ারে, তখন সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানি পপ গায়ক নাজম শেরাজও বারোটি রবীন্দ্রগানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করলেন। বাংলা নয়, উর্দু অনুবাদে। শেরাজ পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতে বেশ জনপ্রিয়। হিন্দি ছবি মার্ডারে তিনি ভিগি হোঁঠ নামে সেই বিখ্যাত গানটি গেয়েছিলেন। প্রায় এক বছর খেটেখুটে এই অ্যালবামটি বের করলেন শেরাজ। এই বছর মার্চে উর্দু অনুবাদে ১০০টি রবীন্দ্রকবিতার একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। অ্যালবামটি সেই প্রকল্পেরই অংশ।

রবীন্দ্রনাথের কবিতা অবশ্য আগেও উর্দুতে অনূদিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনুবাদ ছিল ফিরাক গোরখপুরির অন্যবাদ। তিনি গীতাঞ্জলির কয়েকটি কবিতা অনুবাদ করেন। অনুবাদক নিয়াজ ফতেহপুরিও গীতাঞ্জলির কয়েকটি কবিতা অনুবাদ করেন। যেমন এটি:

আপনে কদমোঁ তলে

মুঝকো বিঝ জানে দো

ইক মুকাম্মাল খুশি কে লিয়ে

আপনে পাওঁ কি ধুল সে

সুর্খ হো জানে দো

মেরি পোষাক কো!

মূলগানটি বহুশ্রূত বাংলার লোকসুরের গান:

ওই      আসনতলের মাটির ‘পরে লুটিয়ে রব।

তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব।

অ্যালবামের কভার

অ্যালবামটির নাম রাখা হয়েছে রোম্যান্সিং টেগোর। এই অ্যালবামের গানগুলি অনুবাদ করেছেন দিল্লিবাসী গীতিকার ইন্দিরা বর্মা ও কবি ড. রেহমান মুসাওয়ির। সংগীত আয়োজন করেছেন কলকাতার দেবজ্যোতি মিশ্র। শেরাজের সঙ্গে অ্যালবামে কণ্ঠ মিলিয়েছেন শুভা মুদগল ও কমলিনী মুখোপাধ্যায়।

লাহোরের সাপ্তাহিক দ্য ফ্রাইডে টাইমস পত্রিকায় রক্ষানন্দ জলিল এই অ্যালবামের সমালোচনায় লিখেছেন, “এই অনূদিত কবিতাগুলি কাব্যের অনিবর্চনীয় আনন্দ লাভে সহায়তা করে। অনুবাদগুলি মূল কবিতার মতোই সুশ্রাব্য হয়েছে। সংগীত পরিচালক রবীন্দ্রসংগীতের অনুরূপ সুরেই সংগীত আয়োজন করেছেন। এগুলি প্রথাগত উর্দু গজলের মতো করে গাওয়া হয়নি।”

তিনি আরও বলেছেন, উর্দু কবি ইকবাল বা ফৈজের মতো রবীন্দ্রনাথ ভারত-পাকিস্তান উভয়ের সম্পদ। উর্দুতে রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ ও বাংলায় ফৈজের অনুবাদ তাই দুই দেশের সম্পর্কে মজবুত করবে।

শেরাজ বলেন, “রবীন্দ্রনাথ এমন একজন মানুষ যিনি জাতি হিসেবে ভারতকে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। আমি তাঁর গান গাইছি। শ্রোতাদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে রবীন্দ্রনাথের জীবনী আমি সম্প্রতি পড়েছি। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন। বাংলা ভালবাসা, শান্তি ও আবেগে বিশ্বাস করে। আমি জানি না লোকের এই উর্দু অনুবাদ কেমন লাগবে। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি মনপ্রাণ দিয়ে এতে কাজ করেছি।”

 

ট্যাগ সমুহঃ

গুজরাত ও রবীন্দ্রনাথ

মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সম্প্রতি গুজরাত সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উৎসবের দ্বিতীয় দিনে একটি আশ্চর্য তথ্য উঠে এল। রবীন্দ্রনাথের মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিসত্ত্বাকে রবীন্দ্রনাথেরও আগে চিনেছিলেন গুজরাত ও আমেদাবাদবাসী। বিশিষ্ট  গুজরাতি কবি, প্রাবন্ধিক ও ঔপন্যাসিক প্রফুল্ল রাভাল এই দিন বলেন, “সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন আমেদাবাদে জেলা জজ। রবীন্দ্রনাথ মাঝে মাঝে তাঁর কাছে এসে থাকতেন। তবে স্থানীয় মাসিক পত্রিকা বসন্ত-এর সুবাদে সত্যেন্দ্রনাথের কবিতা রবীন্দ্রনাথের আগেই পড়ার সুযোগ পান আমেদাবাদবাসী।”

 

বসন্ত পত্রিকাটি চালাতেন আনন্দ শঙ্কর ধ্রুব। পত্রিকার প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যায় প্রথম পৃষ্ঠাতেই ছিল সত্যেন্দ্রনাথের কবিতা। গুজরাতি ভাষায় তাঁর কবিতা অনুবাদ করেছিলেন কৃষ্ণ রাও ভোলানাথ। বসন্ত পত্রিকার একটি সংগ্রহ গুজরাত সাহিত্য পরিষদের গ্রন্থাগারে এখনও রাখা আছে এবং পাঠক তা পড়ারও সুযোগ পান।

 

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গুজরাতের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে রাভাল বলেন, “১৯১৮ সালে রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর নাটকটি গুজরাতিতে অনূদিত হয়। এটিই ছিল গুজরাতিতে অনূদিত প্রথম রবীন্দ্র-নাটক। পরের বছর ধ্রুব রবীন্দ্রনাথের মুকুট নাটকটিও অনুবাদ করেন।”

 

১৯১৩ সালে নোবেল-প্রাপ্তি রবীন্দ্রনাথকে এনে দিয়েছিল বিশ্বজোড়া খ্যাতি। তবে গুজরাতবাসী রবীন্দ্রনাথকে মনে রেখেছেন অন্য একটি বিশেষ কারণে। সেটি হল ১৯১৫ সালে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। রাভালের কথা থেকেই জানা যায়, ১৯১৫ থেকে ১৯৩০ পর্যন্ত সময়কালে গুজরাতের বহু যুবক শান্তিনিকেতনে গিয়ে কলা ও সাহিত্যের পাঠ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রহ্লাদ পারেখ ও কৃষ্ণলাল সাধ্বানি। পারেখ কবিতা রচনায় দক্ষতা অর্জন করেন এবং সাধ্বানি কবিতা, ছোটোগল্প রচনা ও চিত্রকলা শিক্ষা করেন।

 

সূত্র: ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস পত্রিকা, ৪ মে, ২০১২

 

ট্যাগ সমুহঃ

তামিল ভাষায় রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জানেন কি, রবীন্দ্রনাথের প্রায় ৮০ শতাংশ রচনা অনূদিত হয়েছে তামিল ভাষায়? হ্যাঁ, এই ভাবেই তামিল সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন দখল করে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

কবিগুরুর রচনার প্রথম তামিল অনুবাদ প্রকাশ করেছিল অ্যালাইন্স পাবলিশার্স। কবির জীবদ্দশাতেই তারা তাঁর রচনার তামিল অনুবাদ ছাপার স্বত্ব লাভ করে। রবীন্দ্র-রচনার তামিল অনুবাদের ক্ষেত্রে যে দু-জনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন টি. এন. কুমারস্বামী ও টি. এন. সেনাপতি। এঁরা ছিলেন দুই ভাই। সরাসরি বাংলা থেকে তাঁরা কবির রচনা তামিলে অনুবাদ করেন। কুমারস্বামী নিজে ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক ও ছোটোগল্পকার। তিনি নিজে বাংলা শিখে এই ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করে। পরে তিনি তাঁর ছোটো ভাই সেনাপতিকেও বাংলা শেখান। তারপর অ্যালাইন্স পাবলিশার্সের হয়ে রবীন্দ্র-রচনার অনুবাদ শুরু করেন। কুমারস্বামীর পুত্র কে. অশ্বিন কুমার বলেন, “আমার বাবা ১৯৩০-এর দশকে বিশ্বভারতীতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করে অনুবাদের প্রয়োজনীয় অনুমতি জোগাড় করে আনেন। অনুবাদের অধিকাংশ কাজ তাঁরই করা। তবে তাঁর ভাই সেনাপতিও কিছু অবদান রেখেছেন।” অ্যালাইন্স পাবলিশার্স ২৫ খণ্ডে তামিল রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশ করেছিল। রবীন্দ্র জন্মসার্ধশতবর্ষ উপলক্ষ্যে তাঁরা সেই রচনাবলীর পুনর্মুদ্রণ করেছেন।

 

(বাঁদিক থেকে) টি. এন. কুমারস্বামী, টি. এন. সেনাপতি ও এ. শ্রীনিবাসরাঘবন

আরেক জন স্বনামধন্য তামিল রবীন্দ্র-অনুবাদক হলেন এ. শ্রীনিবাসরাঘবন। এই ইংরেজি সাহিত্যের এই খ্যাতনামা অধ্যাপক ১০০টি রবীন্দ্র-কবিতা তামিল ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। ২০০৫ সালে অধ্যাপক শ্রীনিবাসরাঘবনের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ছয় খণ্ডে তাঁর রচনাসমগ্র প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থমালার ষষ্ঠ খণ্ডটিতে শুধু রয়েছে তাঁর অনুবাদ করা রবীন্দ্রনাথের ১২০টি কবিতা। জন্মশতবর্ষ-উদযাপন কমিটির সদস্য তথা অল ইন্ডিয়া রেডিওর প্রাক্তন ডিরেক্টর বিজয় তিরুভেঙ্গাদাম বলেন, “শ্রীনিবাসরাঘবন কবিতাগুলি অনুবাদ করেছিলেন ইংরেজি অনুবাদ থেকে। তবে বাংলা ভাষার সৌন্দর্য ও ছন্দ রক্ষার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সামুদ্রিক মৎস্যচাষ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জীববিজ্ঞানী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সাহায্য নিয়েছিলেন।”

 

করাইকুড়ির বাসিন্দা ভি. আর. এম. চেত্তিয়ারকে বলা হত ‘টেগোর-ভক্ত’। তিনি তীব্র অর্থসংকট সত্ত্বেও নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তামিল ভাষায় রবীন্দ্রনাথের রচনা অনুবাদ ও প্রচারের কাজে। ১৯১৪ সালে তিরুচির সেন্ট জোসেফ কলেজে বন সম্পর্কে বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানেই চেত্তিয়ার প্রথম দেখেন তাঁকে। সেই সময় চেত্তিয়ারের বয়স ছিল অল্প। কবির কথা বিশেষ না বুঝলেও, কবির প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন তিনি। এরপর ১৯২৯ সালে কবি যখন সাইগনে তখন কবিকে দ্বিতীয়বার দেখেন চেত্তিয়ার। কবির ভ্রমণের একটি বিস্তারিত বিবরণী তিনি প্রকাশ করেন “কবিতা মণ্ডলম” পত্রিকার ফেব্রুয়ারির শেষ সংখ্যায়। জানা যায়, চেত্তিয়ার একটি প্রকাশনাও চালাতেন শুধু রবীন্দ্র-রচনার অনুবাদ প্রকাশের জন্য। তবে অর্থসংকটের দরুন, বেশি দিন প্রকাশনার কাজ করে উঠতে পারেননি।

 

তথ্যসূত্র: দ্য হিন্দু পত্রিকা, ২ মে, ২০১২

 

ট্যাগ সমুহঃ

সিনেমা-শতবর্ষে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

সৌমিত্র এখন

৩ মে ২০১২। ভারতীয় সিনেমা পদার্পন করল শতবর্ষে। আর এই দিনই নতুন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি ৫৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার তুলে দিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। সৌমিত্রবাবু অবশ্য প্রথম বাঙালি ফালকে-বিজেতা নন। তাঁর আগে এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন দেবিকা রানি, বি এন সরকার, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি, কানন দেবী, নীতিন বোস, রাইচাঁদ বড়াল, সত্যজিৎ রায়, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ ও মান্না দে। সেই হিসেবে সৌমিত্রবাবুই প্রথম পূর্ণ সময়ের বাঙালি পুরুষ অভিনেতা, যিনি এই সম্মানে ভূষিত হলেন। পুরস্কার গ্রহণের সময় সৌমিত্রবাবু বলেন:

এই মুহুর্তে কিছু বলার মতো মানসিক অবস্থা আমার নেই। সারা জীবন আমি সংশয়ে ছিলাম। হয়ত মনোরঞ্জনের এই ব্যবসা এ যুগের উপযোগী নয়। হয়তো আমার উচিত ছিল এ থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের সেবা করা। কিন্তু এই পঞ্চাশ বছরে মানুষ আমাকে গ্রহণ করেছে, ভালবেসেছে। আমারও নিজেকে মনে হয়েছে তাদেরই একজন। আমার দৃষ্টিতে যা সুশিল্প, তা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগানোর জন্য আমি তাদের ভালবাসি, সম্মান করি ও অভিবাদন জানাই।

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে কৃষ্ণনগর, হাওড়া ও কলকাতায়। সৌমিত্রবাবু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে সাম্মানিক সহ স্নাতক ও পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। চলচ্চিত্র শিল্পে যোগ দেওয়ার আগে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে কাজ করতেন।

১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ে অপুর সংসার চলচ্চিত্রে অপুর চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ৩৪টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ১৪টিতেই তিনি অভিনয় করেছিলেন। এজন্য তাঁকে বলা হয় ‘সত্যজিতের নায়ক’। আবার রবীন্দ্রনাথের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত অনেক কাহিনিচিত্রে সার্থক অভিনয় তাঁকে এনে দিয়েছিল ‘রবীন্দ্রনাথের নায়ক’ আখ্যা। মননশীল চলচ্চিত্রের পাশাপাশি মূলধারার চলচ্চিত্রেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা। বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি ফেলুদার চরিত্রে তিনিই প্রথম রূপদান করেছিলেন।

সৌমিত্র তখন

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল: দেবী (১৯৬০), ক্ষুধিত পাষাণ (১৯৬০), ঝিন্দের বন্দী (১৯৬১), অভিযান (১৯৬২), অতল জলের আহ্বান (১৯৬২), সাত পাকে বাঁধা (১৯৬৩), চারুলতা (১৯৬৪), কিনু গোয়ালার গলি (১৯৬৪), আকাশ কুসুম (১৯৬৫), মণিহার (১৯৬৬), বাঘিনী (১৯৬৮), তিন ভুবনের পারে (১৯৬৯), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), স্ত্রী (১৯৭২), অশনি সংকেত (১৯৭৩), বসন্ত বিলাপ (১৯৭৩), সোনার কেল্লা (১৯৭৪), জয় বাবা ফেলুনাথ (১৯৭৮), দেবদাস (১৯৭৯), গণদেবতা (১৯৭৯), কোনি (১৯৮৬), আতঙ্ক (১৯৮৬), গণশত্রু (১৯৮৯), মহাপৃথিবী (১৯৯১), হুইলচেয়ার (১৯৯৪), অসুখ (১৯৯৯), পদক্ষেপ (২০০৬), ১৫ পার্ক এভিনিউ (২০০৬), বালিগঞ্জ কোর্ট  (২০০৭), অংশুমানের ছবি  (২০০৯), অপরাজিতা তুমি (২০১২) ইত্যাদি। কাজ করেছেন সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, মৃণাল সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রমুখ পরিচালকের সঙ্গে।

অভিনয়ের পাশাপাশি পেশাদার নাট্যমঞ্চেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এক উল্লেখযোগ্য নাম। ১৯৬৩ সালে দেবনারায়ণ গুপ্তের পরিচালনায় তাপসী নাটকে তাঁর প্রথম পেশাদার নাট্যাভিনয়। এর পর অভিনয় করেছেন নামজীবন, রাজকুমার, ফেরা, নীলকণ্ঠ, ঘটক বিদায়, দর্পনে শরৎশশী, চন্দনপুরের চোর, ন্যায়মূর্তি, অন্ধযুগ, বিদেহী, টিকটিকি, প্রাণতপস্যা,  কুরবানি, আর একটা দিন, আরোহণ, আত্মকথা, হোমাপাখি, তৃতীয় অঙ্ক, অতএব ইত্যাদি নাটকে। এবছর তাঁর অভিনীত শেকসপিয়রের রাজা লিয়ার যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে।

১৯৭০-এর দশকে সৌমিত্রবাবু পদ্মশ্রী সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন। তবে ২০০৪ সালে পদ্মভূষণ সম্মান গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে সুমন ঘোষের পদক্ষেপ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ফরাসি সরকার তাঁকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ কলা পুরস্কার ‘Officier des Arts et Metiers’ সম্মানে ভূষিত করেছে। লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার দিয়েছে ইতালি সরকারও। ক্যাথেরিন বার্জে ফরাসি ভাষায় তাঁর উপর একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন।

 

ট্যাগ সমুহঃ

নীল পদ্মরাগ (শার্লক হোমসের গল্প)

এই অনুবাদটির অনুবাদস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুবাদকের বিনা অনুমতিতে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি!

বড়োদিনের দিন দুয়েক পরে সকালের দিকে আমার বন্ধু শার্লক হোমসকে উৎসবের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম। হোমস তার পার্পল-রঙা ড্রেসিং গাউনটা পরে সোফায় হেলান দিয়ে বসেছিল।  তার ডানদিকে পাইপ রাখার তাক আর হাতের কাছে ছড়ানো ছিল একগাদা সদ্যপঠিত প্রভাতী সংবাদপত্র। সোফার পাশে চেয়ারে ঝুলছিল একখানা জীর্ণ পুরনো ফেল্ট হ্যাট। টুপিটা জায়গায় জায়গায় ফাট–ব্যবহারের অযোগ্য। চেয়ারের উপর রাখা লেন্স আর ফরসেপস দেখে বুঝলাম, ওটা ভাল করে পরীক্ষা করার জন্যেই ওভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

বললাম, “তুমি ব্যস্ত মনে হচ্ছে। আমি হয়ত এসে কাজে বাধা দিলাম।”

“মোটেও না। বরং এই যে তোমার মতো এক বন্ধুর সঙ্গে আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুটো কথা কইতে পারি, এটা কতো আনন্দের বলো তো। এই ব্যাপারটা খুবই সামান্য।” তারপর টুপিটার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে সে বলল, “কিন্তু ওই জিনিসটার সঙ্গে এমন কিছু বিষয় জড়িত যেগুলো শুধু মনোহারীই নয়, যথেষ্ট শিক্ষণীয়ও বটে।”

বাইরে খুব বরফ পড়ছিল। জানলার কাঁচ ঢেকে গিয়েছিল পুরু বরফের আস্তরণে। আরামকেদারায় বসে ফায়ারপ্লেসের গনগনে আগুনে হাতটা সেঁকতে সেঁকতে বললাম, “মনে হচ্ছে, এই সাদাসিধে দেখতে টুপিটার সঙ্গে বেশ একটা মারকাটারি গল্প জড়িয়ে আছে আর তুমি এটার সূত্র ধরে রহস্যের সমাধান করে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবছো।”

হোমস হেসে বলল, “না না, অপরাধ নয়। আসলে কয়েক মাইল এলাকার মধ্যে চল্লিশ লক্ষ লোক গুঁতোগুঁতি করলে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যায়। এটাও সেই রকমই একটা ঘটনা। এত লোকের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে, এত সম্ভাব্য ঘটনীয় ঘটনার মধ্যে অনেক ছোটোখাটো ঘটনাও থাকে, যেগুলো খুব উল্লেখযোগ্য ও অদ্ভুত ধরনের হয়, কিন্তু সবসময় তার সঙ্গে কোনো অপরাধের যোগ থাকে না। আমরা তো আগেও এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি।”

আমি বললাম, “দেখিনি আবার! আমি শেষ যে ছ-খানা কেস নোট করেছি, তার মধ্যে তিনটের সঙ্গেই তো–আইনের চোখে যাকে অপরাধ বলে–তার কোনো যোগ নেই।”

Read the rest of this entry »

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন এপ্রিল 29, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

শ্রীশ্রীচণ্ডী (মূল সহ বঙ্গানুবাদ) :: প্রথম পর্ব :: অর্গলাস্তোত্রম্‌

।। ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ ।।

                                                             

ওঁ অস্য শ্রীঅর্গলাস্তোত্রমন্ত্রস্য বিষ্ণুর্ঋষিঃ অনুষ্টুপ্ছন্দঃ শ্রীমহালক্ষ্মীর্দেবতা শ্রীজগদম্বাপ্রীত্যর্থং সপ্তশতীপাঠাঙ্গজপে বিনিয়োগঃ।

এই অর্গলাস্তোত্রের ঋষি হলেন বিষ্ণু, ছন্দ হল অনুষ্টুপ ও দেবতা হলেন শ্রীমহালক্ষ্মী। জগজ্জননীর প্রীতির জন্য শ্রীশ্রীচণ্ডীপাঠের অঙ্গরূপে এই স্তোত্র পাঠ করা হয়।

ওঁ মার্কণ্ডেয় উবাচ।

মার্কণ্ডেয় বললেন–

ওঁ জয় ত্বং দেবি চামুণ্ডে জয় ভূতাপহারিণি।[*]

জয় সর্বগতে দেবি কালরাত্রি নমোঽস্তু তে।। ১

হে দেবী চামূণ্ডা, তোমার জয় হোক। হে দেবী, তুমি জীবের দুঃখনাশকারিণী; তুমি সর্বভূতে অবস্থিতা; আবার তুমিই প্রলয়ের অন্ধকার স্বরূপিণী কালরাত্রি। তোমায় নমস্কার করি।

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।

দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে।। ২

হে দেবী, তুমি সর্বোৎকৃষ্টা জয়যুক্তা দেবী জয়ন্তী; তুমি জন্মমৃত্যুবিনাশিনী মোক্ষপ্রদায়িনী দেবী মঙ্গলা; তুমি সর্বসংহারকারিণী কালী; তুমি সুখদায়িনী ভদ্রকালী; আবার তুমিই প্রলয়কালে ব্রহ্মা প্রমুখের মাথার খুলি হস্তে নৃত্যরতা কপালিনী। তুমি দুর্গা, কারণ বহু কষ্ট স্বীকার করে তবে তোমায় লাভ করা যায়; তুমি চৈতন্যময়ী শিবা; তুমি করুণাময়ী ক্ষমা; তুমি বিশ্বধারিণী ধাত্রী; তুমি দেবগণের পোষণকর্ত্রী স্বাহা ও পিতৃগণের পোষণকর্ত্রী স্বধা। তোমায় নমস্কার করি।

Read the rest of this entry »

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন মার্চ 18, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

বাংলা সমাস :: পর্ব ১ :: সাধারণ আলোচনা ও দ্বন্দ্ব সমাস

‘সমাস’ শব্দের অর্থ সংক্ষেপ। পরস্পর অর্থসম্বন্ধযুক্ত একাধিক পদকে সংক্ষিপ্ত করে একটি পদে পরিণত করার নাম ‘সমাস’।

 

উদাহরণ: ‘চাঁদের মতো মুখ’ – এই তিনটি পদকে এক করে করা যায় ‘চাঁদমুখ’। একেই বলেই সমাস।

সমাস-সংক্রান্ত কয়েকটি সাধারণ শব্দার্থ

সমস্যমান পদ ও সমস্ত পদ:

সমাসে যে পদগুলিকে সংক্ষিপ্ত করে একটি পদে পরিণত করা হয় তাদের প্রত্যেকটিকে বলে সমস্যমান পদ। ‘চাঁদের মতো মুখ’ বাক্যাংশে সমস্যমান পদ তিনটি – ‘চাঁদের’, ‘মতো’ ও ‘মুখ’।

সমাস করার ফলে যে একক পদটি সৃষ্টি হয় তাকে বলে সমস্ত পদ। ‘চাঁদের মতো মুখ’ বাক্যাংশের সমাস করার ফলে সৃষ্ট ‘চাঁদমুখ’ শব্দটি হল সমস্ত পদ।

ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য:

‘ব্যাস’ বা ‘বিগ্রহ’ শব্দের অর্থ বিশ্লেষণ। যে বাক্য বা বাক্যাংশের সাহায্যে সমস্যমান পদগুলির অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়, তাকে বলে ব্যাসবাক্য বা বিগ্রহবাক্য। ‘চাঁদের মতো মুখ’ – এই বাক্যাংশটি হল ব্যাসবাক্য।

পূর্বপদ ও উত্তরপদ:

সমস্যমান পদগুলির প্রথমটির নাম পূর্বপদ ও শেষেরটির নাম উত্তরপদ। ‘চাঁদের মতো মুখ’ এই সমস্যমান পদের পূর্বপদ হল ‘চাঁদ’ ও উত্তরপদ ‘মুখ’।

 

 

সমাসের শ্রেণিবিভাগ

আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় সমাসকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। যথা: (১) সংযোগমূলক বা দ্বন্দ্ব সমাস, (২) ব্যাখ্যানমূলক বা আশ্রয়মূলক এবং (৩) বর্ণনামূলক বা বহুব্রীহি। আশ্রয়মূলক সমাসের তিনটি উপবিভাগ দেখিয়েছেন তিনি – তৎপুরুষ, কর্মধারয় ও দ্বিগু। বহুব্রীহি সমাসকে চার ভাগে ভাগ করেছেন। যথা: ব্যধিকরণ বহুব্রীহি, সমাধাধিকরণ বহুব্রীহি, ব্যতিহার বহুব্রীহি ও মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি।

আমরা বোঝার সুবিধার জন্য বাংলা সমাসকে প্রধানত ভাগ করব ছয় ভাগে। যথা: (১) দ্বন্দ্ব, (২) তৎপুরুষ, (৩) কর্মধারয়, (৪) দ্বিগু, (৫) বহুব্রীহি এবং (৬) অব্যয়ীভাব।

                                                                                              দ্বন্দ্ব সমাস

‘দ্বন্দ্ব’ শব্দের অর্থ যুগ্ম বা জোড়া।

যে সমাসে পূর্বপদ ও উত্তরপদ ও, এবং, আর ইত্যাদি সংযোজক অব্যয় দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকে এবং সমস্তপদে পূর্ব ও উত্তর উভয় পদের অর্থের প্রাধান্য বজায় থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।

উদাহরণ: হরিহর = হরি ও হর।

দ্বন্দ্ব সমাসে সাধারণত স্বল্পদলযুক্ত পদটি পূর্বপদের স্থানে বসে। যেমন – হাটবাজার = হাট (একদল) ও বাজার (দ্বিদল)। তবে এই নিয়মের ব্যতিক্রমও দুর্লভ নয়। যেমন – স্বামীস্ত্রী = স্বামী (দ্বিদল) ও স্ত্রী (একদল)। এক্ষেত্রে আচার্য সুনীতিকুমারের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য: “যে পদটী বানানে বা উচ্চারণে অপেক্ষাকৃত ছোট, এই সমাসে সাধারণত সেটী প্রথমে বসে; কিন্তু এই নিয়মের ব্যতয়ও দেখা যায় – যে পদটির অর্থ অপেক্ষাকৃত গৌরব-বোধক বলিয়া বিবেচিত হয়, সে পদটী অন্যটির অপেক্ষা দীর্ঘ হইলেও প্রথমে বসিতে পারে।”

দ্বন্দ্ব সমাস মূলত দুটি বিশেষ্য পদের সমাস। তবে দুটি সর্বনাম, দুটি বিশেষণ বা দুটি ক্রিয়াপদেরও সমাস হতে পারে।

সংস্কৃত সমাসে সমস্যমান পদ দুটি (যথা: দেবদ্বিজ = দেব ও দ্বিজ) বা দুইয়ের অধিক (যথা: রাম-লক্ষ্মণ-ভরত-শত্রুঘ্ন = রাম, লক্ষণ, ভরত ও শত্রুঘ্ন) হতে পারে। বাংলা সমাসে সাধারণত দুটি সমস্যমান পদেই দ্বন্দ্ব সমাস হয়; বাক্যের মধ্যে দুইয়ের অধিক সমস্যমান পদ থাকলে, সেগুলিকে সমাসবদ্ধ না করে পৃথক পৃথক ভাবে লেখা হয়। তবে এই নিয়মের ব্যতিক্রমও দেখা যায়। যেমন: চোখকাননাক = চোখ, কান ও নাক।

শ্রেণিবিভাগ–

পদবৈভিন্ন্য অনুসারে দ্বন্দ্ব সমাসের বিভাগগুলি হল:

(ক) দুই বিশেষ্য পদের দ্বন্দ্ব – গুরুশিষ্য = গুরু ও শিষ্য।

(খ) দুই সর্বনাম পদের দ্বন্দ্ব – তুমি-আমি = তুমি ও আমি।

(গ) দুই বিশেষণ পদের দ্বন্দ্ব – ন্যায়-অন্যায় = ন্যায় ও অন্যায়।

(ঘ) দুই ক্রিয়া পদের দ্বন্দ্ব – দেখেশুনে = দেখে ও শুনে।

গঠনপ্রকৃতি অনুসারে দ্বন্দ্ব সমাসের বিভাগগুলি হল:

(ক) অলোপ দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদের বিলুপ্ত হয় না তাকে, অলোপ দ্বন্দ্ব বলে। যেমন: মায়েঝিয়ে = মায়ে ও ঝিয়ে।

(খ) একশেষ দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলির একটিমাত্র পদ অবশিষ্ট থাকে, তাকে একশেষ দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন: পিতা চ মাতা = পিতারৌ (সংস্কৃত সমাস), তুমি ও সে = তোমরা (বাংলা সমাস)।

(গ) সমার্থক দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলি একই অর্থবাচক, তাকে সমার্থক দ্বন্দ্ব বলা হয়। যেমন: লজ্জাশরম = লজ্জা ও শরম।

দ্রঃ শব্দদ্বৈত ও সমার্থক দ্বন্দ্ব সর্বদা এক নয়। সমার্থক দ্বন্দ্বে সমস্যমান পদদুটির প্রত্যেকটিই স্বাধীন অর্থ বহন করে। কিন্তু শব্দদ্বৈতে উত্তরপদটি পূর্বপদের অর্থকে সম্প্রসারিত করে ‘ইত্যাদি’ অর্থে প্রযুক্ত হয়। যেমন: কাপড়চোপড় এই শব্দদ্বৈতে ‘চোপড়’ কথাটির দ্বারা একাধিক কাপড় বোঝায়, কিন্তু এটি কোনো স্বাধীন অর্থ বহন করে না।

(ঘ) বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলি পরস্পর বিপরীত অর্থ বহন করে তাকে বিপরীতার্থক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন: দেবাসুর = দেব ও অসুর।

(ঙ) মিলনার্থক দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদগুলির পারস্পরিক মিলন অর্থের দিক থেকে পূর্ণতা প্রকাশ করে, তাকে মিলনার্থক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন: রাধাকৃষ্ণ = রাধা ও কৃষ্ণ।

(চ) বিকল্পার্থক দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসের দ্বারা সমস্যমান পদগুলির যে কোনো একটি নির্দেশ করা হয় তাকে বিকল্পার্থক দ্বন্দ্ব বলে। যেমন: ভালোমন্দ = ভালো ও মন্দ।

(ছ) অলূক দ্বন্দ্ব – যে দ্বন্দ্ব সমাসের সমস্যমান পদগুলি বিভক্তিযুক্ত তাকে বলে অলূক দ্বন্দ্ব। যথা: মাঠে-ঘাটে = মাঠে ও ঘাটে। সংস্কৃতে এই সমাস নেই।

(পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির বানানরীতি অনুসৃত)

(ক্রমশ)

(পরবর্তী পর্বে তৎপুরুষ সমাস নিয়ে আলোচনা করা হবে)

 

ট্যাগ সমুহঃ

জেন অস্টিন: একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী

জেন অস্টিন

১৭৭৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ারের অন্তঃপাতী স্টিভেনটনে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে প্রখ্যাত ইংরেজ মহিলা-ঔপন্যাসিক জেন অস্টিনের জন্ম। তাঁর বাবা জর্জ অস্টিন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হলেও আর্থিক দিক থেকে ছিলেন দরিদ্র। তিনি ছিলেন রেক্টর। স্টিভেনটনে ধর্মশিক্ষা দিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। সেই সঙ্গে নিজের সন্তানদেরও শিক্ষাদান করতেন। জেন অস্টিন ছিলেন তাঁর সপ্তম সন্তান। জেনের শিক্ষা কিছুটা হয়েছিল তাঁর দাদাদের কাছে। তাঁর দুই দাদা ছিলেন ধর্মযাজক। অপর দুই দাদা ছিলেন নৌবাহিনীতে। পরে তাঁরা অ্যাডমিরাল পদে উন্নীত হন। আর এক দাদা এডওয়ার্ড ভাগ্যক্রমে ভূম্যধিকারী ভদ্রসমাজে প্রবেশের সুযোগ পান। শিশুদের শিক্ষিত করে তোলার জন্য অস্টিন পরিবারের আয়োজনের ত্রুটি ছিল না। গ্রামভ্রমণ, ধাঁধাখেলা, গ্রন্থপাঠ, গল্প ও পারিবারিক নাটক রচনার মাধ্যমে পরিবারের শিশুরা যে শিক্ষা পেত, তা প্রথাবহির্ভূত হলেও খুব উঁচুদরের ছিল। এর ফলেই শিশু জেনের মনে ঔপন্যাসিক হওয়ার ইচ্ছা জেগে ওঠে। অক্সফোর্ড, সাউদাম্পটন ও রিডিং-এর বোর্ডিং স্কুলে তিনি অল্প কয়েকদিন পড়াশোনা করেছিলেন। তবে এই পড়াশোনা তাঁর জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি।

জেনের কৈশোর কেটেছিল গ্রামীণ সমাজে। কখনও সখনও নিকটবর্তী শহরে গিয়ে বল নাচে অংশ নিতেন। এই সব সামাজিক ক্রিয়াকলাপ আর যে গ্রাম্য সমাজে জেন বাস করতেন, সেই সমাজকে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করতেন জেন। এইভাবে কৈশোরেই তিনি শিখে ফেলেছিলেন উপন্যাস লেখার কৌশলটি। জেন ও তাঁর প্রিয় বোন ক্যাসান্ড্রা কেউই বিয়ে করেননি। ক্যাসান্ড্রার বাগদান সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের আগেই তাঁর ভাবী স্বামী জলে ডুবে মারা যান। জেনের বাগদান সম্পন্ন হয়েছিল তাঁর দাদার এক বন্ধুর সঙ্গে। কিন্তু পরদিনই তিনি সম্বন্ধ ভেঙে দেন। প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস উপন্যাসে শার্লট লুকাস বিয়ে করতে চেয়েছিল সামাজিক মর্যাদা, নিরাপত্তা আর নিজস্ব একটা বাড়ির জন্য। জেন নিজে এই সবের জন্য মেয়েদের বিয়ে করাকে ঘৃণা করতেন।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

গোপাল ভাঁড় :: ২

গোপাল-পঞ্চমী

১।

মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র পরদিন খুব ভোরে গোপালকে রাজসভায় তলব করেছেন। সমস্যা হল, ভোরে গোপালের ঘুম ভাঙে না। তাই তিনি স্ত্রীকে বলে রেখেছিলেন, যেন ভোর ভোর তাঁকে ডেকে দেওয়া হয়। কিন্তু পরদিন ভোরে দৈবাৎ গোপাল ঘুম গেল ভেঙে। স্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে বললেন, ‘ওগো, যাও না, বাইরে গিয়ে একবারটি দ্যাখো, সূর্য উঠেছে কিনা।’ গোপালের স্ত্রী তন্দ্রার আবেশে বললে, ‘বাইরে যে ভীষণ অন্ধকার! সূর্য দেখবো কি করে?’ গোপাল বললেন, ‘তাহলে আলোটা জ্বেলেই দ্যাখো না।’

২।

ঘোর বর্ষা। মেঠো পথ ধরে গোপাল চলেছেন জুতো হাতে নিয়ে। সেই পথেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আসছিলেন পালকি চড়ে। গোপালকে দেখে মহারাজের একটু রসিকতা করার শখ হল। বললেন, ‘কি হে গোপাল, পরকাল হাতে করে চলেছো যে!’ গোপাল বললেন, ‘আমি তো তাও হাতে রেখেছি, মহারাজ! আপনি তো খেয়ে বসেছেন!’ কৃষ্ণচন্দ্র রেগে বললেন, ‘গোপাল, তুমি আমাকে জুতোখোর বললে?’ গোপাল বললে, ‘আজ্ঞে না মহারাজ। জুতোর কথা হচ্ছে না, হচ্ছে পরকালের। এই ঘোর বর্ষায় কর্দমাক্ত মেঠো পথ ধরে হাঁটার ক্ষমতা আমার মতো বৃদ্ধ লোকও হেঁটে চলেছে। আর আপনি, মহারাজ, জোয়ান পুরুষ, আপনি কিনা পালকি ছাড়া চলতে পারছেন না! ভাবুন তো, নিজের পরকাল কে খেয়েছে?’

Read the rest of this entry »

 
2 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন ফেব্রুয়ারি 19, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

সংক্ষিপ্ত শিবপুরাণ :: পর্ব ৪

শিববিবাহ

শিব সপ্তর্ষিকে ডেকে তাঁদের দূত নিয়োগ করলেন। তাঁরা গিরিরাজ হিমালয়ের কাছে বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে গেলেন। শুনে গিরিরাজের আনন্দের সীমা রইল না। শুভদিন স্থির করে বিবাহের কথা পাকা হয়ে গেল।

 

বিবাহের দিন গন্ধর্বেরা গান ধরলেন, অপ্সরাগণ নৃত্য শুরু করলেন। বরযাত্রী হবার জন্য দেবতারা উপস্থিত হলেন কৈলাসশিখরে। এদিকে গিরিরাজও প্রস্তুত। তাঁর প্রাসাদ তোরণ, পতাকা ইত্যাদি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। শিব হিমালয়ের প্রাসাদে এসে পৌঁছাতেই মেনকা বেরিয়ে এলেন। বললেন, ‘কই, শিব কই? দেখি আমার জামাই কেমন; যাকে পেতে মেয়েটা আমার এমন কঠোর তপস্যা করলে। সে নিশ্চয় পরম সুন্দর।’

 

শিববিবাহ

প্রথমেই মেনকা দেখলেন গন্ধর্বরাজ বিশ্ববসুকে। বিশ্ববসু ছিলেন সুদর্শন পুরুষ। মেনকা ভাবলেন, ইনিই শিব। কিন্তু প্রশ্ন করে জানলেন, উনি সামান্য গায়কমাত্র, বিবাহসভায় শিবের চিত্তবিনোদনের জন্য এসেছেন। তাই শুনে মেনকা ভাবলেন, শিব নিশ্চয় আরও সুদর্শন। তখন তিনি সম্পদের দেবতা কুবেরকে দেখলেন, কুবের বিশ্ববসু অপেক্ষা সুদর্শন। কিন্তু নারদ মেনকাকে বললেন যে উনি শিব নন। তারপর একে একে মেনকা দেখলেন বরুণ, যম, ইন্দ্র, সূর্য, চন্দ্র, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও বৃহস্পতিকে। প্রত্যেকেই পরম সুদর্শন পুরুষ। কিন্তু নারদ মেনকাকে বললেন, এঁরা কেউই শিব নন, শিবের অনুচরমাত্র। শুনে মেনকার আনন্দ আর ধরে না। এমন সুদর্শন দেবতারা যদি শিবের অনুচরমাত্র হন, তবে শিব নিজে কত না সুদর্শন। কিন্তু কোথায় শিব? শেষে এলেন শিব। নারদ মেনকাকে বললেন, ‘ইনিই শিব।’ জামাইয়ের অমন ভীষণ মূর্তি দেখে মেনকা তো মূর্ছা গেলেন।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

সংক্ষিপ্ত শিবপুরাণ :: পর্ব ৩

পার্বতীর তপস্যা

এদিকে পার্বতী শিবের প্রেমে পড়লেন। দিনরাত অন্য চিন্তা নেই, শুধু শিব শিব আর শিব।

 

একদিন দেবর্ষি নারদ এসে পার্বতীকে বললেন, শিব কেবলমাত্র তপস্যাতেই সন্তুষ্ট হন। তপস্যা বিনা ব্রহ্মা বা অন্যান্য দেবতারাও শিবের দর্শন পান না।

 

নারদের পরামর্শ মতো পার্বতী তপস্যা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রথমে তিনি পিতামাতার অনুমতি নিলেন। তাঁর পিতা গিরিরাজ হিমালয় সাগ্রহে অনুমতি দিলেন। যদিও মা মেনকা মেয়েকে এমন কঠিন তপস্যা করতে দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু পরে তিনিও অনুমতি দিলেন।

 

তপস্বিনী পার্বতী

পার্বতী বহুমূল্য বস্ত্র ও অলংকারাদি পরিত্যাগ করে মৃগচর্ম পরিধান করলেন। তারপর হিমালয়ের গৌরীশিখর নামক চূড়ায় গিয়ে কঠিন তপস্যায় বসলেন। বর্ষাকালে মাটিতে বসে, শীতকালে জলে দাঁড়িয়ে তপস্যা করতে লাগলেন পার্বতী। বন্য জন্তুরা তাঁর ক্ষতি করা দূরে থাক, কাছে ঘেঁষতেও ভয় পেতে লাগল। সকল দেবতা ও ঋষিরা একত্রিত হয়ে এই অত্যাশ্চর্য তপস্যা চাক্ষুষ করতে লাগলেন। দেবতাগণ ও ঋষিগণ শিবের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে বললেন, ‘হে প্রভু, আপনি কি দেখতে পান না পার্বতী কি ভীষণ তপস্যায় বসেছেন? এমন কঠোর তপস্যা পূর্বে কেউ করেনি। ভবিষ্যতেও কেউ করতে পারবে না। অনুগ্রহ করে তাঁর মনস্কাম পূর্ণ করুন।’

Read the rest of this entry »

 
2 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন ফেব্রুয়ারি 15, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ