RSS

Author Archives: অর্ণব দত্ত

About অর্ণব দত্ত

উইকিপিডিয়ান ও অনুবাদক। আর শখের লেখক। পড়াশোনা আর লেখালিখি করা আমার অবসর-বিনোদন। তবে পণ্ডিত বা আঁতেলমার্কা কিছু নয়। আমি বুদ্ধির চর্চা করি না; বিশুদ্ধ জ্ঞানের চর্চা করি। বুদ্ধিটা বুদ্ধিমানের হাতে ছেড়ে রাখি। মতামত দেওয়াটাকেও কাজ বলে মনে করি না। তবে আমার প্রথম প্রেম অনুবাদ। মোটামুটি আমি একজন মামুলি কলমচি।

বঙ্গভারতী পূজাপদ্ধতি গ্রন্থমালা-১: বৃহস্পতিবারবিহিত শ্রীশ্রীলক্ষ্মীপূজাপদ্ধতি (ব্রতকথা ও অন্যান্য জ্ঞাতব্য বিষয় সহ)

বাজারে ‘শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর ব্রতকথা ও পাঁচালি’ নামাঙ্কিত অনেক বইই সুলভ। কিন্তু সেই সব অধিকাংশ বইই ত্রুটিপূর্ণ। তাছাড়া সাধারণ গৃহস্থ ভক্তের উপযোগী পূজাপদ্ধতি কোনো বইতেই দেওয়া থাকে না। সেই কথা মাথায় রেখে একটি পরিমার্জিত ব্রতকথা-সহ পূজাপদ্ধতির প্রকাশ আবশ্যক ছিল। এই পূজাপদ্ধতির একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এখানে মন্ত্রগুলির বাংলা অর্থ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রের অর্থজ্ঞান ছাড়া পূজা সম্পূর্ণ হয় না। আর যাঁরা দুরূহ সংস্কৃত ভাষা পাঠে অক্ষম হবেন, তাঁরা বাংলায় মন্ত্রার্থ দেখে মূল কথাটি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে জগজ্জননীকে নিবেদন করতে পারবেন। লক্ষ্মীদেবীর একটি অতি-সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও গ্রন্থাগ্রে সংযোজন করে দেওয়া হল। এতে লক্ষ্মীপূজা আমরা কেন করব, সেই সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা জন্মাবে। ব্রতকথা ও বারোমাস্যা বাজারে প্রচলিত বারোমাস্যারই একটি সংশোধিত রূপ।

বইটি পেতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।
http://www.mediafire.com/?muj3j3g77mrve5q

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 5, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর বৃহস্পতিবারবিহিত ব্রতকথা-পাঁচালি ও বারমাস্যা

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর ব্রতকথা-পাঁচালি

দোলপূর্ণিমা নিশীথে নির্মল আকাশ।

মন্দ মন্দ বহিতেছে মলয় বাতাস।।

লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ।

কহিতেছে নানা কথা সুখে আলাপন।।

হেনকালে বীণাযন্ত্রে হরি গুণগান।

উপনীত হইলেন নারদ ধীমান।।

ধীরে ধীরে উভপদে করিয়া প্রণতি।

অতঃপর কহিলেন লক্ষ্মীদেবী প্রতি।।

শুন গো, মা নারায়ণি, চলো মর্ত্যপুরে।

তব আচরণে দুখ পাইনু অন্তরে।।

তব কৃপা বঞ্চিত হইয়া নরনারী।

ভুঞ্জিছে দুর্গতি কত বর্ণিবারে নারি।।

সতত কুকর্মে রত রহিয়া তাহারা।

দুর্ভিক্ষ অকালমৃত্যু রোগে শোকে সারা।।

অন্নাভাবে শীর্ণকায় রোগে মৃতপ্রায়।

আত্মহত্যা কেহ বা করিছে ঠেকে দায়।।

কেহ কেহ প্রাণাধিক পুত্রকন্যা সবে।

বেচে খায় হায় হায় অন্নের অভাবে।।

অন্নপূর্ণা অন্নরূপা ত্রিলোকজননী।

বল দেবি, তবু কেন হাহাকার শুনি।।

কেন লোকে লক্ষ্মীহীন সম্পদ অভাবে।

কেন লোকে লক্ষ্মীছাড়া কুকর্ম প্রভাবে।।

শুনিয়া নারদবাক্য লক্ষ্মী ঠাকুরানি।

সঘনে নিঃশ্বাস ত্যজি কহে মৃদুবাণী।।

সত্য বাছা, ইহা বড় দুঃখের বিষয়।

কারণ ইহার যাহা শোনো সমুদয়।।

আমি লক্ষ্মী কারো তরে নাহি করি রোষ।

মর্ত্যবাসী কষ্ট পায় ভুঞ্জি কর্মদোষ।।

মজাইলে অনাচারে সমস্ত সংসার।

কেমনে থাকিব আমি বল নির্বিকার।।

কামক্রোধ লোভ মোহ মদ অহংকার।

আলস্য কলহ মিথ্যা ঘিরিছে সংসার।।

তাহাতে হইয়া আমি ঘোর জ্বালাতন।

হয়েছি চঞ্চলা তাই ওহে বাছাধন।।

পরিপূর্ণ হিংসা দ্বেষ তাদের হৃদয়।

পরশ্রী হেরিয়া চিত্ত কলুষিত ময়।।

রসনার তৃপ্তি হেতু অখাদ্য ভক্ষণ।

ফল তার হের ঋষি অকাল মরণ।।

ঘরে ঘরে চলিয়াছে এই অবিচার।

অচলা হইয়া রব কোন সে প্রকার।।

এসব ছাড়িয়া যেবা করে সদাচার।

তার গৃহে চিরদিন বসতি আমার।।

এত শুনি ঋষিবর বলে, নারায়ণি।

অনাথের মাতা তুমি বিঘ্নবিনাশিনী।।

কিবা ভাবে পাবে সবে তোমা পদছায়া।

তুমি না রাখিলে ভক্তে কে করিবে দয়া।।

বিষ্ণুপ্রিয়া পদ্মাসনা ত্রিতাপহারিণী।

চঞ্চলা অচলা হও পাপনিবারণী।।

তোমার পদেতে মা মোর এ মিনতি।

দুখ নাশিবার তব আছে গো শকতি।।

কহ দেবি দয়া করে ইহার বিধান।

দুর্গতি হেরিয়া সব কাঁদে মোর প্রাণ।।

দেবর্ষির বাক্য শুনি কমলা উতলা।

তাহারে আশ্বাস দানে বিদায় করিলা।।

জীবের দুঃখ হেরি কাঁদে মাতৃপ্রাণ।

আমি আশু করিব গো ইহার বিধান।।

নারদ চলিয়া গেলে দেবী ভাবে মনে।

এত দুঃখ এত তাপ ঘুচাব কেমনে।।

তুমি মোরে উপদেশ দাও নারায়ণ।

যাহাতে নরের হয় দুঃখ বিমোচন।।

লক্ষ্মীবাণী শুনি প্রভু কহেন উত্তর।

ব্যথিত কি হেতু প্রিয়া বিকল অন্তর।।

যাহা বলি, শুন সতি, বচন আমার।

মর্ত্যলোকে লক্ষ্মীব্রত করহ প্রচার।।

গুরুবারে সন্ধ্যাকালে যত নারীগণ।

পূজা করি ব্রতকথা করিবে শ্রবণ।।

ধন ধান্য যশ মান বাড়িবে সবার।

অশান্তি ঘুচিয়া হবে সুখের সংসার।।

নারায়ণ বাক্যে লক্ষ্মী হরষ মনেতে।

ব্রত প্রচারণে যান ত্বরিত মর্তেতে।।

উপনীত হন দেবী অবন্তী নগরে।

তথায় হেরেন যাহা স্তম্ভিত অন্তরে।।

ধনেশ্বর রায় হয় নগর প্রধান।

অতুল ঐশ্বর্য তার কুবের সমান।।

হিংসা দ্বেষ বিজারিত সোনার সংসার।

নির্বিচারে পালিয়াছে পুত্র পরিবার।

একান্নতে সপ্তপুত্র রাখি ধনেশ্বর।

অবসান নরজন্ম যান লোকান্তর।।

পত্নীর কুচক্রে পড়ি সপ্ত সহোদর।

পৃথগন্ন হল সবে অল্প দিন পর।।

হিংসা দ্বেষ লক্ষ্মী ত্যাজে যত কিছু হয়।

একে একে আসি সবে গৃহে প্রবেশয়।।

এসব দেখিয়া লক্ষ্মী অতি ক্রুদ্ধা হল।

অবিলম্বে সেই গৃহ ত্যজিয়া চলিল।।

বৃদ্ধ রানি মরে হায় নিজ কর্মদোষে।

পুরীতে তিষ্ঠিতে নারে বধূদের রোষে।।

পরান ত্যজিতে যান নিবিড় কাননে।

চলিতে অশক্ত বৃদ্ধা অশ্রু দুনয়নে।।

ছদ্মবেশে লক্ষ্মীদেবী আসি হেন কালে।

উপনীত হইলেন সে ঘোর জঙ্গলে।।

সদয় কমলা তবে জিজ্ঞাসে বৃদ্ধারে।

কিবা হেতু উপনীত এ ঘোর কান্তারে।।

লক্ষ্মীবাক্যে বৃদ্ধা কহে শোন ওগো মাতা।

মন্দভাগ্য পতিহীনা করেছে বিধাতা।।

ধনবান ছিল পিতা মোর পতি আর।

লক্ষ্মী বাঁধা অঙ্গনেতে সতত আমার।।

সোনার সংসার মোর ছিল চারিভিতে।

পুত্র পুত্রবধূ ছিল আমারে সেবিতে।।

পতি হল স্বর্গবাসী সুখৈশ্বর্য যত।

একে একে যাহা কিছু হল তিরোহিত।।

ভিন্ন ভিন্ন হাঁড়ি সব হয়েছে এখন।

অবিরত বধূ যত করে জ্বালাতন।।

অসহ্য হয়েছে এবে তাদের যন্ত্রণা।

এ জীবন বিসর্জিতে করেছি বাসনা।।

বৃদ্ধা বাক্যে নারায়ণী কহেন তখন।

আত্মহত্যা মহাপাপ শাস্ত্রের বচন।।

ফিরে যাও ঘরে তুমি কর লক্ষ্মীব্রত।

সর্ব দুঃখ বিমোচিত পাবে সুখ যত।।

গুরুবারে সন্ধ্যাকালে বধূগণ সাথে।

লক্ষ্মীব্রত কর সবে হরষ মনেতে।।

পূর্ণ ঘটে দিবে শুধু সিঁদুরের ফোঁটা।

আম্রশাখা দিবে তাহে লয়ে এক গোটা।।

গুয়াপান দিবে তাতে আসন সাজায়ে।

সিন্দূর গুলিয়া দিবে ভক্তিযুক্ত হয়ে।।

ধূপ দীপ জ্বালাইয়া সেইখানে দেবে।

দূর্বা লয়ে হাতে সবে কথা যে শুনিবে।।

লক্ষ্মীমূর্তি মানসেতে করিবেক ধ্যান।

ব্রতকথা শ্রবণান্তে শান্ত করে প্রাণ।।

কথা অন্তে ভক্তিভরে প্রণাম করিবে।

অতঃপর এয়োগণ সিঁদুর পরাবে।।

প্রতি গুরুবারে পূজা যে রমণী করে।

নিষ্পাপ হইবে সে কমলার বরে।।

বার মাস পূজা হয় যে গৃহেতে।

অচলা থাকেন লক্ষ্মী সেই সে স্থানেতে।।

পূর্ণিমা উদয় হয় যদি গুরুবারে।

যেই নারী এই ব্রত করে অনাহারে।।

কমলা বাসনা তার পুরান অচিরে।

মহাসুখে থাকে সেই সেই পুত্রপরিবারে।।

লক্ষ্মীর হাঁড়ি এক স্থাপিয়া গৃহেতে।

তণ্ডুল রাখিবে দিন মুঠা প্রমাণেতে।।

এই রূপে নিত্য যেবা সঞ্চয় করিবে।

অসময়ে উপকার তাহার হইবে।।

সেথায় প্রসন্না দেবী কহিলাম সার।

যাও গৃহে ফিরে কর লক্ষ্মীর প্রচার।।

কথা শেষ করে দেবী নিজ মূর্তি ধরে।

বৃদ্ধারে দিলেন দেখা অতি কৃপা ভরে।।

লক্ষ্মী হেরি বৃদ্ধা আনন্দে বিভোর।

ভূমিষ্ট প্রণাম করে আকুল অন্তর।।

ব্রত প্রচারিয়া দেবি অদৃশ্য হইল।

আনন্দ হিল্লোলে ভেসে বৃদ্ধা ঘরে গেল।।

বধূগণে আসি বৃদ্ধা বর্ণনা করিল।

যে রূপেতে বনমাঝে দেবীরে হেরিল।।

ব্রতের পদ্ধতি যাহা কহিল সবারে।

নিয়ম যা কিছু লক্ষ্মী বলেছে তাহারে।।

বধূগণ এক হয়ে করে লক্ষ্মীব্রত।

স্বার্থ দ্বেষ হিংসা যত হইল দূরিত।।

ব্রতফলে এক হল সপ্ত সহোদর।

দুঃখ কষ্ট ঘুচে যায় অভাব সত্বর।।

কমলা আসিয়া পুনঃ আসন পাতিল।

লক্ষ্মীহীন সেই গৃহে লক্ষ্মী অধিষ্ঠিল।।

দৈবযোগে একদিন বৃদ্ধার গৃহেতে।

আসিল যে এক নারী ব্রত সময়েতে।।

লক্ষ্মীকথা শুনি মন ভক্তিতে পুরিল।

লক্ষ্মীব্রত করিবে সে মানত করিল।।

কুষ্ঠরোগগ্রস্থ পতি ভিক্ষা করি খায়।

তাহার আরোগ্য আশে পূজে কমলায়।।

ভক্তিভরে এয়ো লয়ে যায় পূজিবারে।

কমলার বরে সব দুঃখ গেল দূরে।।

পতির আরোগ্য হল জন্মিল তনয়।

ঐশ্বর্যে পুরিল তার শান্তির আলয়।।

লক্ষ্মীব্রত এই রূপে প্রতি ঘরে ঘরে।

প্রচারিত হইল যে অবন্তী নগরে।।

অতঃপর শুন এক অপূর্ব ঘটন।

ব্রতের মাহাত্ম্য কিসে হয় প্রচলন।।

একদিন গুরুবারে অবন্তীনগরে।

মিলি সবে এয়োগন লক্ষ্মীব্রত করে।।

শ্রীনগরবাসী এক বণিক নন্দন।

দৈবযোগে সেই দেশে উপনীত হন।।

লক্ষ্মীপূজা হেরি কহে বণিক তনয়।

কহে, এ কি পূজা কর, কিবা ফল হয়।।

বণিকের কথা শুনি বলে নারীগণ।

লক্ষ্মীব্রত ইহা ইথে মানসপূরণ।।

ভক্তিভরে যেই নর লক্ষ্মীব্রত করে।

মনের আশা তার পুরিবে অচিরে।।

সদাগর এই শুনি বলে অহংকারে।।

অভাগী জনেতে হায় পূজে হে উহারে।।

ধনজনসুখ যত সব আছে মোর।

ভোগেতে সদাই আমি রহি নিরন্তর।।

ভাগ্যে না থাকিলে লক্ষ্মী দিবে কিবা ধন।

একথা বিশ্বাস কভু করি না এমন।।

হেন বাক্য নারায়ণী সহিতে না পারে।

অহংকার দোষে দেবী ত্যজিলা তাহারে।।

বৈভবেতে পূর্ণ তরী বাণিজ্যেতে গেলে।

ডুবিল বাণিজ্যতরী সাগরের জলে।

প্রাসাদ সম্পদ যত ছিল তার।

বজ্র সঙ্গে হয়ে গেল সব ছারখার।।

ভিক্ষাঝুলি স্কন্ধে করি ফিরে দ্বারে দ্বারে।

ক্ষুধার জ্বালায় ঘোরে দেশ দেশান্তরে।।

বণিকের দশা যেই মা লক্ষ্মী দেখিল।

কমলা করুণাময়ী সকলি ভুলিল।।

কৌশল করিয়া দেবী দুঃখ ঘুচাবারে।

ভিক্ষায় পাঠান তারে অবন্তী নগরে।।

হেরি সেথা লক্ষ্মীব্রত রতা নারীগণে।

বিপদ কারণ তার আসিল স্মরণে।।

ভক্তিভরে করজোড়ে হয়ে একমন।

লক্ষ্মীর বন্দনা করে বণিক নন্দন।।

ক্ষমা কর মোরে মাগো সর্ব অপরাধ।

তোমারে হেলা করি যত পরমাদ।।

অধম সন্তানে মাগো কর তুমি দয়া।

সন্তান কাঁদিয়া মরে দাও পদছায়া।।

জগৎ জননী তুমি পরমা প্রকৃতি।

জগৎ ঈশ্বরী তবে পূজি নারায়ণী।।

মহালক্ষ্মী মাতা তুমি ত্রিলোক মণ্ডলে।

গৃহলক্ষ্মী তুমি মাগো হও গো ভূতলে।।

রাস অধিষ্ঠাত্রী তুমি দেবী রাসেশ্বরী।

তব অংশভূতা যত পৃথিবীর নারী।।

তুমিই তুলসী গঙ্গা কলুষনাশিনী।

সারদা বিজ্ঞানদাত্রী ত্রিতাপহারিণী।।

স্তব করে এইরূপে ভক্তিযুক্ত মনে।

ভূমেতে পড়িয়া সাধু প্রণমে সে স্থানে।।

ব্রতের মানত করি নিজ গৃহে গেল।

গৃহিণীরে গৃহে গিয়া আদ্যান্ত কহিল।।

সাধু কথা শুনি তবে যত নারীগণ।

ভক্তিভরে করে তারা লক্ষ্মীর পূজন।।

সদয় হলেন লক্ষ্মী তাহার উপরে।

পুনরায় কৃপাদৃষ্টি দেন সদাগরে।।

সপ্ততরী জল হতে ভাসিয়া উঠিল।

আনন্দেতে সকলের অন্তর পূরিল।।

দারিদ্র অভাব দূর হইল তখন।

আবার সংসার হল শান্তি নিকেতন।।

এইরূপে ব্রতকথা মর্ত্যেতে প্রচার।

সদা মনে রেখো সবে লক্ষ্মীব্রত সার।।

এই ব্রত যেই জনে করে এক মনে।

লক্ষ্মীর কৃপায় সেই বাড়ে ধনে জনে।।

করজোড় করি সবে ভক্তিযুক্ত মনে।

লক্ষ্মীরে প্রণাম কর যে থাক যেখানে।।

ব্রতকথা যেবা পড়ে যেবা রাখে ঘরে।

লক্ষ্মীর কৃপায় তার মনোবাঞ্ছা পুরে।।

লক্ষ্মীর ব্রতের কথা বড়ো মধুময়।

প্রণাম করিয়া যাও যে যার আলয়।।

লক্ষ্মীব্রতকথা হেথা হৈল সমাপন।

আনন্দ অন্তরে বল লক্ষ্মী-নারায়ণ।।

শ্রীশ্রীলক্ষ্মীদেবীর বারমাস্যা

বছরের প্রথম মাস বৈশাখ যে হয়।

পূজা নিতে এস ওমা আমার আলয়।।

জ্যৈষ্ঠ মাসে ষষ্ঠী পূজা হয় ঘরে ঘরে।

এসো বসো তুমি ওমা পূজার বাসরে।।

আষাঢ়ে আসিতে মাগো নাহি করো দেরি।

পূজা হেতু রাখি মোরা ধান্য দুর্বা ধরি।।

শ্রাবণের ধারা দেখ চারি ধারে পড়ে।

পূজিবারে ও চরণ ভেবেছি অন্তরে।।

ভাদ্র মাসে ভরা নদী কুল বেয়ে যায়।

কৃপা করি এসো মাগো যত শীঘ্র হয়।।

আশ্বিনে অম্বিকা সাথে পূজা আয়োজন।

কোজাগরী রাতে পুনঃ করিব পূজন।।

কার্তিকে কেতকী ফুল চারিধারে ফোটে।

এসো মাগো এসো বসো মোর পাতা ঘটে।।

অঘ্রাণে আমন ধান্যে মাঠ গেছে ভরে।

লক্ষ্মীপূজা করি মোরা অতি যত্ন করে।।

পৌষপার্বনে মাগো মনের সাধেতে।

প্রতি গৃহে লক্ষ্মী পূজি নবান্ন ধানেতে।।

মাঘ মাসে মহালক্ষ্মী মহলেতে রবে।

নব ধান্য দিয়া মোরা পূজা করি সবে।।

ফাল্গুনে ফাগের খেলা চারিধারে হয়।

এসো মাগো বিষ্ণুজায়া পূজিগো তোমায়।।

চৈত্রেতে চাতক সম চাহি তব পানে।

আসিয়া বস ওমা দুঃখিনীর ভবনে।।

লক্ষ্মীদেবী বারমাস্যা হৈল সমাপন।

ভক্তজন মাতা তুমি করহ কল্যাণ।।

—সমাপ্ত—

 
2 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 5, 2012 in পুরনো লেখা

 

প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপূজা করবেন কিভাবে?

মা লক্ষ্মী

বাংলার ঘরে ঘরে বৃহস্পতিবার হল সাপ্তাহিক লক্ষ্মী আরাধনার দিন। বাংলায় বৃহস্পতিবারকে বলা হয় লক্ষ্মীবার। এই দিন লক্ষ্মীপূজা করলে হৃদয়ে ও গৃহে চঞ্চলা লক্ষ্মী হন অচলা। কিন্তু আজকের কর্মব্যস্ত জীবনে শুদ্ধ আচারে অথচ সহজে লক্ষ্মীপূজা করবেন কিভাবে?

ফর্দ

বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীপূজার উপকরণ অতীব সামান্য। যেগুলি লাগে সেগুলি হল—সিঁদুর, ঘট ১টি, ধান সামান্য, মাটি সামান্য, আমপল্লব ১টি, ফুল ১টি, দুর্বা সামান্য, তুলসীপাতা ২টি, ফুল, কাঁঠালি কলা বা হরীতকী ১টি, চন্দন, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, সামান্য আতপচাল ও জল। কোনো দ্রব্য সংগ্রহ করতে না পারলে, পূজার শেষে সেই দ্রব্যটির কথা মা লক্ষ্মীর কাছে উল্লেখ করে ক্ষমা চেয়ে নিলেই হবে।

কালীঘাটের পটচিত্রে লক্ষ্মীর এক বিরল মূর্তি।

লক্ষ্মী-পরিচয়

যে দেবতার পূজা করেন, সেই দেবতার পরিচয় আগে জেনে নিতে হয়। লক্ষ্মীকে আমরা টাকাপয়সার দেবী ভাবি, আসলে লক্ষ্মীর পরিচয় শুধু ওইটুকুতেই নয়। লক্ষ্মী শুধু ধনই দেন না, তিনি জ্ঞান ও সচ্চরিত্রও দান করেন। এককথায় লক্ষ্মীপূজা করলে, মানুষ সার্বিকভাবে সুন্দর ও চরিত্রবান হয়। স্বামী প্রমেয়ানন্দ বলেছেন, ‘কেবল টাকাকড়িই ধন নয়। চরিত্রধন মানুষের মহাধন। যার টাকাকড়ি নেই সে যেমন লক্ষ্মীহীন, যার চরিত্রধন নেই সে তেমনি লক্ষ্মীছাড়া। যাঁরা সাধক তাঁরা লক্ষ্মীর আরাধনা করেন মুক্তিধন লাভের জন্য।’ লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কেন? কেউ কেউ বলেন, এটি বিষ্ণুর বাহন গরুড়ের পরিবর্তিত রূপ। মা লক্ষ্মী আসলে তাঁর স্বামীর বাহনটিই ব্যবহার করেন। কিন্তু এই রূপ পেঁচার কেন? লক্ষ্মীর দেওয়া ধন যারা অপব্যবহার করে, তাদের কপালে লেখা আছে যমের দণ্ড—এই কথা ঘোষণা করে লক্ষ্মীর বাহন। তাই কথায় বলে, ‘লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু’। তাছাড়া ধনসম্পত্তি, সে টাকাকড়ি হোক বা সাধনধনই হোক, সদাজাগ্রত অবস্থায় রক্ষা করতে হয়। রাতে সবাই যখন ঘুমায়, তখন পেঁচা জেগে থাকে। পেঁচাই সেই ধনসম্পদ পাহারা দেয়।

লক্ষ্মী-পদচিহ্ন সহ সিংহাসনে উপবিষ্ট লক্ষ্মী।

জ্ঞাতব্য নিয়মকানুন

লক্ষ্মীপূজা বৃহস্পতিবার মাত্রেই করা যায়। তার জন্য তিথি নক্ষত্রের বিচার করতে হয় না। তাই যাঁরা প্রবাসী তাদের ভারতীয় বা বাংলাদেশী সময় মিলিয়ে পূজা না করলেও চলবে, যেদেশে যেমন বৃহস্পতিবার পড়বে, সেই দেশে তেমনই করবে। তাছাড়া শাস্ত্রে আছে, প্রবাসে নিয়মং নাস্তি। তাই প্রবাসী হলে রবিবার বা সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও লক্ষ্মীপূজা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে পূজার আগে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলে নেবেন, মা বৃহস্পতিবার পূজা করতে পারলাম না, আজ পূজা নাও। ভারত বা বাংলাদেশবাসী হলে বৃহস্পতিবারের পূজা বৃহস্পতিবারেই করবেন।

লক্ষ্মীপূজায় ঘণ্টা বাজাতে নেই। লক্ষ্মীকে তুলসীপাতা দিতে নেই। কিন্তু লক্ষ্মীপূজার পর একটি ফুল ও দুটি তুলসীপাতা দিয়ে নারায়ণকে পূজা করতে হয়। লক্ষ্মীপূজা সাধারণত সন্ধ্যাবেলা করে, তবে অনেকে সকালেও করে থাকেন। সকালে করলে সকাল ন-টার মধ্যে করে নেওয়াই ভাল। পূজার পর ব্রতকথা পাঠ করতে হয়। লক্ষ্মীপূজায় লোহা বা স্টিলের বাসনকোসন ব্যবহার করবেন না। লোহা দিয়ে অলক্ষ্মী পূজা হয়। তাই লোহা দেখলে লক্ষ্মী ত্যাগ করে যান।

Read the rest of this entry »

 
8 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 5, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

ভারতের বৃহত্তম দশটি জেলার মধ্যে চারটিই এখন পশ্চিমবঙ্গে

২০১১ সালের জনগণনার রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের বৃহত্তম দশটি জেলার মধ্যে চারটি জেলাই পশ্চিমবঙ্গের। এগুলি হল—উত্তর চব্বিশ পরগনা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদ। বৃহত্তম দশটি জেলার তালিকায় এদের স্থান যথাক্রমে দ্বিতীয়, ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবম।

 

বর্তমানে ভারতের বৃহত্তম জেলা মহারাষ্ট্রের থানে। জনসংখ্যা ১.১১ কোটি। তারপরেই স্থান উত্তর চব্বিশ পরগনার। জনসংখ্যা ১.০১ কোটি। তৃতীয় স্থানে রয়েছে কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু জেলা। জনসংখ্যা ৯৫.৮৯ লক্ষ।

 

চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্রেরই দুটি জেলা—পুনে ও মুম্বই শহরতলি। এই দুটি জেলার জনসংখ্যা যথাক্রমে ৯৪.২৭ ও ৯৩.৩২ লক্ষ।

 

ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে আবার পশ্চিমবঙ্গের নাম—দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও বর্ধমান। জনসংখ্যা যথাক্রমে ৮১.৫৩ ও ৭৭.২৪ লক্ষ।

 

অষ্টম স্থানাধিকারী গুজরাতের আমেদাবাদ জেলার জনসংখ্যা ৭২.০৮ লক্ষ।

 

নবম স্থানে আছে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা। জনসংখ্যা ৭১.০২ লক্ষ।

 

এবং দশম স্থানাধিকারী রাজস্থানের জয়পুর জেলার জনসংখ্যা ৬৬.৬৪ লক্ষ।

 

উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গের উক্ত চারটি জেলার মধ্যে তিনটিই কিছুদিনের মধ্যে ভেঙে দেওয়া হবে। উত্তর চব্বিশ পরগনা ভেঙে তৈরি হবে বারাসত ও বসিরহাট জেলা। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ভেঙে হবে ডায়মন্ড হারবার ও বারুইপুর জেলা। এবং বর্ধমান ভেঙে হবে বর্ধমান গ্রামীণ ও বর্ধমান শিল্পাঞ্চল জেলা। মুর্শিদাবাদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাবও সরকারের কাছে রাখা হয়েছে।

 
6 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 2, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

মাস্টার্স অফ দ্য ইউনিভার্স

মাস্টার্স অফ দ্য ইউনিভার্স ছবির পোস্টার

মাস্টার্স অফ দ্য ইউনিভার্স একটি কল্পবিজ্ঞান-ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্র। ১৯৮৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি ওই একই নামের একটি টয় লাইনের ভিত্তিতে নির্মিত হয়। ছবিতে হি-ম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করেন ডল্ফ লান্ডগ্রেন এবং স্কেলেটরের ভূমিকায় অভিনয় করেন ফ্র্যাঙ্ক ল্যাঙ্গেলা। ১৯৮৭ সালের ৭ অগস্ট ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায়। অবশ্য তার আগেই হি-ম্যান টয় লাইন ও কার্টুন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

গল্প:

মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থলে ইটারনিয়া গ্রহ। স্কেলেটরের (ফ্র্যাঙ্ক ল্যাঙ্গেলা) দলবল ইটারনিয়ার গ্রেস্কাল দুর্গ দখল করে গ্রেস্কালের জাদুকরীকে (ক্রিস্টিনা পিকেলস) বন্দী করেছে। স্কেলেটর গ্রেস্কালের গুপ্তক্ষমতা হস্তগত করার চেষ্টায় আছে। এই ক্ষমতা হাতে এলে দুর্গের সিংহাসন কক্ষে যাওয়ার ‘ছায়াপথের মহাচক্ষু’ নামে একটি পোর্টাল খুলে যাবে এবং ইটারনিয়ার চাঁদ তার সঙ্গে সঠিকভাবে যুক্ত হয়ে যাবে।

এদিকে ইটারনিয়ার সেনাবাহিনী যুদ্ধে হেরে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে। স্কেলেটরের একটি টহলদার দল ইটারনিয়ার সবচেয়ে বড়ো যোদ্ধা তথা স্কেলেটরের মহাশত্রু হি-ম্যান (ডল্ফ লান্ডগ্রেন), প্রবীণ যোদ্ধা ম্যান-অ্যাট-আর্মস (জন সাইফার) ও তাঁর মেয়ে টিলাকে (চেলসি ফিল্ড) আক্রমণ করল। তাদের পরাস্ত করে হি-ম্যান থিনোরিয়ান আবিষ্কর্তা ও চাবিপ্রস্তুতকারক গোইলডোরকে (বিলি বার্টি) উদ্ধার করল। গোইলডোরের থেকে তারা জানতে পারল যে, সে সম্প্রতি ‘কসমিক কি’ নামে এমন একটি চাবি আবিষ্কার করেছে, যার মাধ্যমে মহাবিশ্বের সব জায়গার সব সময়ের সব পোর্টাল খোলা সম্ভব। গ্রেস্কাল দুর্গে ঢোকার জন্য তার থেকে সেই চাবিটা চুরি করে নিয়েছে স্কেলেটর। কিন্তু অন্য একটি চাবি এখনও গোইলডোরের কাছে রয়ে গিয়েছে। গোইলডোর হি-ম্যানের দলবলকে তার আবিষ্কার দেখাচ্ছে, এমন সময় স্কেলেটরের লোকজন গোইলডোরের আস্তানায় হানা দিল। গোইলডোর তার বন্ধুদের গোপন পথে সোজা গ্রেস্কালে নিয়ে হাজির হল।

হি-ম্যানের ভূমিকায় ডল্‌ফ লান্ডগ্রেন

গ্রেস্কালে স্কেলেটর ও তার দলবল হি-ম্যান ও তার বন্ধুদের আক্রমণ করল। বন্ধুদের বাঁচাতে মরিয়া গোইলডোর চাবিটা ব্যবহার করে যে পোর্টালটা পেল সেটার মাধ্যমেই সবাইকে নিয়ে পালিয়ে গেল। তারা এসে পৌঁছালো পৃথিবীতে। তবে পৃথিবীতে পৌঁছেই চাবিটা গেল হারিয়ে। ইটারনিয়ানরা তখন চাবিটা খুঁজতে লাগল। তারা পৃথিবীর যে জায়গাটিতে এসেছিল, তার কাছেই ক্যালিফোর্নিয়ার হুইটিয়ার শহর। সেখানে জুলি উইনস্টোন (কোর্টনি কক্স) ও কেভিন করিগন (রবার্ট ডানকান ম্যাকনেইল) নামে এক কিশোর প্রণয়ীযুগল চাবিটা কুড়িয়ে পেল। অদ্ভুত জিনিস দেখে তারা খেলাচ্ছলে তার বোতামগুলি টিপতে লাগল। এর ফলে স্কেলেটরের সেকন্ড-ইন-কম্যান্ড ইভিল-লিন (মেগ ফর্স্টার) পৃথিবীতে চাবিটার অস্তিত্ব টের পেয়ে গেল। সে পৃথিবীতে তার ভাড়াটে সেনার দল পাঠিয়ে দিল। এই দলে ছিল সাউরোড, ব্লেড ও বিস্টম্যান ; এদের নেতা নিযুক্ত হল কার্গ।

কেভিন ছিল উদীয়মান সংগীতশিল্পী। সে যন্ত্রটাকে জাপানি সিন্থেসাইজার ভেবেছিল। জুলিকে হাইস্কুল জিমে রেখে সে যন্ত্রটা নিয়ে স্থানীয় মিউজিক স্টোরে তার এক বন্ধুর মতামত জানতে গেল। ইতিমধ্যে স্কেলেটরের দলবল জিমে এসে জুলিকে তাড়া করল। শেষে হি-ম্যান তাকে উদ্ধার করল। ভাড়াটে দলটা খালি হাতে গ্রেস্কালে ফিরে গেলে স্কেলেটর খুব রেগে গেল। সাউরোডকে সে খুনই করে ফেলল। তারপর ইভিল-লিনকে নেতৃত্ব দিয়ে আরও বড়ো একটা দল পাঠালো পৃথিবীতে।

Read the rest of this entry »

 
2 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 2, 2012 in পুরনো লেখা

 

সহজ শিবপূজাপদ্ধতি

এই রচনাটি কপিরাইটমুক্ত। হিন্দুধর্মের প্রচারার্থে এটি অন্যত্র প্রকাশে কোনো বাধা নেই। তবে বাণিজ্যিকভাবে প্রকাশ করা নিষিদ্ধ।

যোগীবর শিব

দেবের দেব মহাদেব। এমন মহাশক্তিধর, অথচ অল্পে-তুষ্ট দেবতা হিন্দু দেবমণ্ডলীতে বিরল। রামপ্রসাদের গানে আছে, ‘শিব আশুতোষ মহান দাতা’। সামান্য ফুল-বেলপাতা তাঁর মাথায় দিলে তিনি যা প্রতিদান দেন, তার তুলনা ত্রিজগতে নেই। এমন যে শিব, তাঁকে পূজা করতে কে না চায়? তাছাড়া তাঁর পূজা যে কেউ করতে পারে।

শিবরাত্রিব্রত বা বিশেষ ফলকামনায় যে ১৬টি সোমবারব্রত করা হয়, তার নিয়ম আলাদা এবং একটু জটিল। যাঁরা দৈনিক কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তাঁদের প্রিয় দেবতা শিবকে নিত্যপূজা করতে চান, কিন্তু শিবপূজার বিধান সম্পর্কে সম্যক অবগত নন, এমন আপামর জনসাধারণের জন্য সরলভাবে এই পূজাপদ্ধতি প্রণীত হল। বাচ্চা ছেলেমেয়েরা শিবের পূজা করে থাকে। কারণ, ছেলেবেলায় শিবের পূজা করা বিশেষভাবে উপকারী। আপনার বাড়িতে এমন ছেলে বা মেয়ে থাকলে, তাদের এই পদ্ধতিতে শিবপূজা করা শিখিয়ে দিতে পারেন। প্রবাসী ধর্মপ্রাণ হিন্দুরাও এই পদ্ধতি মেনে সহজেই নিত্য শিবপূজা করতে পারেন। মন্ত্রপাঠ কেউ করতে পারেন, কেউ পারেন না। তাই মন্ত্রপাঠের সমর্থরা কেমনভাবে পূজা করবেন, অসমর্থরাই বা কেমনভাবে করবেন, তাও আলাদা আলাদাভাবে বলে দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রপাঠ প্রসঙ্গে

 

শিবলিঙ্গ; উপরের U-আকৃতির অংশটি হল শিবপীঠ, নিচের হাতের মতো অংশটিকে বলে গৌরীপীঠ বা গৌরীপট্ট। গৌরীপট্টের মুখ উত্তর দিকে রাখতে হয়।

মন্ত্রপাঠ প্রসঙ্গে প্রথমেই মনে রাখতে হবে যে, শিব মন্ত্র বা উপচারের বশ নন। আর যাই হোক, যিনি দেবের দেব, তাঁকে আপনি মন্ত্রে ভুলিয়ে উপচার ঘুষ দিয়ে কার্যসিদ্ধি করতে পারবেন, এমন চিন্তা মনেও স্থান দেবেন না। শিব ভক্তির বশ। ভক্তের হৃদয় তাঁর আড্ডাঘর। শুধুমাত্র ভক্তিদ্বারা পূজা করলে পূজা তাতেই সিদ্ধ হয়। একথাও শাস্ত্রেও স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু আপনার অন্তরের ভক্তি আপনাকে মন্ত্রপাঠে উদ্বুদ্ধ করলে, অবশ্যই মন্ত্র পড়ে পূজা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে মন্ত্রপাঠ শুদ্ধ উচ্চারণে হওয়া উচিৎ এবং আপনারও মন্ত্রের অর্থ জেনে তা পাঠ করা উচিত। তা না করলে মন্ত্রপাঠ বৃথা। তাই নিচে পূজাপদ্ধতি বলার আগে ক্রিয়াকর্ম ও মন্ত্রের অর্থ বা ভাবার্থও দিয়ে দেওয়া হল। মন্ত্র পড়তে না পারলে মন খারাপ করার কোনো প্রয়োজন নেই। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, মন্ত্রপাঠে অসমর্থ ব্যক্তিরাও ঈশ্বরের কৃপা পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে তাঁদের যথাযথ ভক্তিসহকারে পূজার মূল অর্থটি হৃদয়ঙ্গম করে পূজা করতে হবে। তাঁরা কিভাবে সেই পূজা করবেন, তাও পরে বলে দেওয়া হয়েছে। তবে মনে রাখবেন, দুই পদ্ধতির মূল কথা একই।

পূজাসামগ্রী ও সাধারণ নিয়মকানুন

দক্ষিণ ভারতীয় জনপ্রিয় চিত্রকলায় স্ত্রী গৌরী ও দুই পুত্র গণেশ ও কার্তিক সহ শিব।

এই জিনিসগুলি সাজিয়ে নিয়ে পূজা করতে বসবেন।—

১। একটি শিবলিঙ্গ।

২। একটি ছোটো ঘটিতে স্নান করানোর জল।

৩। একটি থালা, একটি গ্লাস ও কোশাকুশি। কোশাকুশি না থাকলে তামা বা পিতলের সাধারণ ছোটো পাত্র ব্যবহার করবেন।

৪। একটু সাদা চন্দন।

৫। একটুখানি আতপ চাল।

৬। কয়েকটি ফুল ও দুটি বেলপাতা (বেলপাতা না থাকলে দুটি তুলসীপাতা দিতে পারেন)।

৭। ধূপ, দীপ।

৮। নৈবেদ্য ও পানীয় জল (আপনার সাধ্য ও ইচ্ছামতো দেবেন। একটা বাতাসা হলেও চলবে।)

৯। প্রণামী (অন্তত একটি টাকা দেবেন। ইচ্ছা করলে বেশিও দিতে পারেন।)

১০। একটি ঘণ্টা।

উপচার সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞাতব্য হল এই যে, চন্দন, ফুল-বেলপাতা, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য এই পঞ্চোপচার পূজার ক্ষেত্রে অপরিহার্য্য। কোনো একটি উপচারের অভাব ঘটলে, সেই উপচারের নাম করে একটু জল দিলেও চলবে। আপনার প্রকৃত ভক্তিই সেই অভাব পূর্ণ করবে, এই কথা জানবেন।

শিবপূজা সর্বদা উত্তরমুখে বসে করবেন এবং শিবলিঙ্গকেও উত্তরমুখী করে রাখবেন। উত্তরদিক ব্রহ্মলোকপথ। তাই পরমব্রহ্মময় শিবের পূজা সর্বদা উত্তরমুখে বসে করাই নিয়ম। শিবলিঙ্গকে তামা বা পাথরের পাত্রে বসানো হয়ে থাকে।

Read the rest of this entry »

 
28 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 31, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ শিষ্যগণ: স্বামী ব্রহ্মানন্দ

স্বামী ব্রহ্

স্বামী ব্রহ্মানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম রাখালচন্দ্র ঘোষ। জন্ম ১৮৬৩ সালের ২১ জানুয়ারি (স্বামী বিবেকানন্দের চেয়ে মাত্র ৯ দিনের ছোটো)। জন্মস্থান কলকাতার ৩৬ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সদর বারাসতের নিকটবর্তী সিকরা-কুলীনগ্রাম।

বাল্যকাল থেকেই রাখালচন্দ্র ছিলেন ঈশ্বরভক্ত ও ধ্যানশীল। বারো বছর বয়সে কলকাতায় আসেন পড়াশোনা করতে। সেখানেই নরেন্দ্রনাথ দত্তের (পরবর্তীকালে স্বামী বিবেকানন্দ) সঙ্গে আলাপ। নরেন্দ্রনাথের প্রভাবে ব্রাহ্মসমাজেও যোগ দেন। সেযুগের প্রথা অনুসারে, বিশ্বেশ্বরী নাম্নী জনৈকা বালিকার সঙ্গে রাখালচন্দ্রের বিবাহ হয়। বিশ্বেশ্বরীর দাদা মনোমোহন মিত্র ছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্ত। তিনিই রাখালচন্দ্রকে ঠাকুরের কাছে নিয়ে যান। ইতিপূর্বে ঠাকুর ভাবচক্ষে দেখেছিলেন, জগজ্জননী একটি ছেলেকে ঠাকুরের পুত্র রূপে পাঠাচ্ছেন। রাখালচন্দ্র দক্ষিণেশ্বরে আসা মাত্রই ঠাকুর চিনতে পারলেন, এই ছেলেটিই তাঁর ভাবচক্ষে দেখা সেই ছেলে। সেই থেকে ঠাকুর রাখালচন্দ্রকে নিজের পুত্রের ন্যায় আদরযত্ন করতে থাকেন।

বেলুড় মঠ ব্রহ্মানন্দ মন্দিরে স্বামী ব্রহ্মানন্দের মর্মরমূর্তি

কয়েকবার দক্ষিণেশ্বরে আসাযাওয়া করার পর রাখালচন্দ্র শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গেই বসবাস করতে শুরু করেন। ঠাকুর স্বয়ং তাঁকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিতে থাকেন। ১৮৮৬ সালে ঠাকুরের মহাসমাধির পর বরাহনগরে যখন প্রথম রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠিত হয় তখন রাখালচন্দ্র সেই মঠে যোগ দেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় স্বামী ব্রহ্মানন্দ। দুই বছর পর বরাহনগর মঠ ত্যাগ করে পরিব্রাজক সন্ন্যাসীর জীবন নিয়ে বারাণসী, ওঙ্কারনাথ, বৃন্দাবন, হরিদ্বার প্রভৃতি তীর্থস্থান দর্শন করেন। ঠাকুরের সাহচর্যেই তিনি উচ্চ অধ্যাত্মিক অবস্থায় উন্নীত হয়েছিলেন। পরিব্রাজক জীবনে তিনি অদ্বৈততত্ত্বের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন। এই সময় দিনের পর দিন তিনি সমাধিস্থ হয়ে থাকতেন। ১৮৯০ সালে তিনি মঠে ফিরে আসেন। ১৮৯৭ সালে স্বামী বিবেকানন্দ পাশ্চাত্য পরিভ্রমণ সেরে দেশে ফিরে এসে নবরূপে মঠ পুনর্গঠন করেন। এই সময় স্বামী ব্রহ্মানন্দ তাঁকে প্রভূত সাহায্য করেন। দুই গুরুভাই একে অপরকে খুবই ভালবাসতেন। বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠার পর স্বামী বিবেকানন্দ যখন ট্রাস্ট হিসেবে রামকৃষ্ণ মঠকে নথিভুক্ত করেন, তখন স্বামী ব্রহ্মানন্দ মঠের প্রথম সঙ্ঘাধ্যক্ষ বা প্রেসিডেন্ট হন। আজীবন তিনি এই পদ অলংকৃত করেছিলেন।

স্বামী ব্রহ্মানন্দ প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন রামকৃষ্ণ সংঘের দ্রুত বিস্তার ঘটে। ভারত ও বহির্ভারতে মঠের একাধিক কেন্দ্র স্থাপিত হয়। স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশনকে অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বামী ব্রহ্মানন্দ মিশনকে নথিভুক্ত করেন। সন্ন্যাসীবৃন্দকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে তিনি সংঘকে স্থায়ী রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর রাজোচিত পরিচালন ক্ষমতা দেখে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁকে ‘রাজা’ নাম দিয়েছিলেন। সেই থেকে সংঘে তিনি রাজা মহারাজ নামে পরিচিত ছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর যে ছয় জন শিষ্যকে ‘ঈশ্বরকোটি’ হিসেবে চিহ্নিত করে যান, স্বামী ব্রহ্মানন্দ ছিলেন তাঁদের অন্যতম।

১৯২২ সালের ১০ এপ্রিল সামান্য রোগভোগের পর তিনি মহাসমাধিতে লীন হন। বেলুড় মঠে যে স্থানটিতে তাঁর পার্থিব দেহ পঞ্চভূতে লীন হয়, সেখানেই আজ তাঁর স্মরণে ব্রহ্মানন্দ মন্দির প্রতিষ্ঠিত।

Read the rest of this entry »

 
3 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 28, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

সূর্যের সংসার সৌরজগৎ

সৌরজগৎ

সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে তাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অসংখ্য গ্রহ, গ্রহাণু, ধূমকেতু ইত্যাদি জ্যোতিষ্ক। এদের সবাইকে নিয়েই সূর্যের সংসার—সৌরজগৎ। এই নিবন্ধে সৌরজগতের বিভিন্ন সদস্যদের একটি সচিত্র সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল।

সূর্য (Sun)

সূর্য

সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রীয় নক্ষত্র। সূর্যই পৃথিবীর নিকটতম নক্ষত্র। এটি একটি সাধারণ আকারের নক্ষত্র। এমন অনেক নক্ষত্র আছে যেগুলি সূর্যের চেয়েও বড়ো, বেশি ভারী, বেশি গরম এবং বেশি উজ্জ্বল। তবে সেগুলির চাইতে সূর্যই আমাদের বেশি কাছে বলে আমরা সূর্যকে অত বড়ো আর উজ্জ্বল দেখি। সূর্য পৃথিবী থেকে ১৪৯,৬০০,০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমাদের দ্বিতীয় নিকটতম নক্ষত্র হল আলফা সেন্টারি (Alpha Centauri)। পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব ৪০,০০০,০০০,০০০,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি। কিন্তু সূর্য পৃথিবী থেকে মাত্র ৮ আলোকমিনিট দূরে অবস্থিত। অর্থাৎ, সূর্যের আলো সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসতে মাত্র ৮ মিনিট সময় লাগে। সূর্য থেকে যে তাপশক্তি ও আলোকশক্তি বিকিরিত হয়, তা-ই আমাদের পৃথিবীর প্রাণের উৎস। তাছাড়া, সূর্যের আলো বিকিরিত না হলে আমরা ধূমকেতু আর উল্কা ছাড়া সৌরজগতের আর কোনো জ্যোতিষ্ককেই দেখতে পেতাম না।

সূর্যের আবহমণ্ডলের একেবারে বাইরের দিকের অংশটিকে বলে করোনা (Corona)। ফটোস্ফিয়ার (Photosphere) হল সূর্যের ‘দৃশ্যমান’ উপরিতল। প্রত্যেক নক্ষত্রেরই একটি বৈশিষ্ট্য হল তার অ্যাবসর্পশন স্পেকট্রাম (Absorption Spectrum)। সূর্যের অ্যাবসর্পশন স্পেকট্রামের উৎস হল ফটোস্ফিয়ার। এটি তার উপরের আবহমণ্ডলীয় স্তরের চেয়ে গভীরতর। ফটোস্ফিয়ারের উপরে ও করোনার নিচের স্তরটির নাম ক্রোমোস্ফিয়ার (Chromosphere)। সূর্যের উপরিতলের স্তরগুলির যত গভীরে যাওয়া যায়, উপরের স্তরগুলির চাপে নিচের স্তরগুলির তাপমাত্রা, চাপ ও গভীরতা ততই বাড়তে থাকে। সূর্যের গোটা শরীরটাই গ্যাসীয়। এর মধ্যে হাইড্রোজেন গ্যাসের ভাগই সবচেয়ে বেশি—সূর্যের মোট ভরের ৭০ শতাংশ। অবশিষ্ট ২৮ শতাংশ হিলিয়াম এবং ২ শতাংশ লিথিয়াম, ইউরেনিয়াম ইত্যাদি ভারী উপাদান। হান্স বেথ (Hans Bethe) প্রমাণ করেছিলেন, সৌরশক্তির উৎপাদনের জন্য দায়ি সূর্যের নিয়ন্ত্রিত থার্মোনিউক্লিয়ার বিক্রিয়া।

হিন্দু সূর্যদেবতা

সাদা আলোয় সূর্যের যে আলোকচিত্র তোলা হয়েছে, তাতে সূর্যের গায়ে অসংখ্য কালো কালো ছোপ দেখা যায়। এগুলিকে বলে সৌরকলঙ্ক (Sunspots)। সূর্যের উজ্জ্বল উপরিতলের প্রেক্ষিতে এগুলিকে যে কালো দেখায় তার কারণ, এগুলির উত্তাপ তুলনামূলকভাবে কম (৪৫০০ কে)। সাধারণত সৌরকলঙ্কে দুটি স্পষ্ট অংশ দেখা যায়—এর অন্ধকার কেন্দ্রীয় অঞ্চলটিকে বলে আম্ব্রা (Umbra) এবং এর চারপাশের আলোকময় অংশটিকে বলে পেনুম্ব্রা (Penumbra)। সৌরকলঙ্কগুলি হল নিবিড় চৌম্বকক্ষেত্র। এগুলি নির্দিষ্ট চক্রের আকারে আবির্ভূত ও অন্তর্হিত হয়। এই চক্রকে বলে সৌরকলঙ্ক চক্র (Sunspot Cycle) বা সৌরচক্র (Solar Cycle)। এই চক্রের গড় সময়কাল প্রায় ১১ বছর। সৌরকলঙ্কগুলিকে প্রতিদিনই একটু একটু করে সরতে দেখা যায়। এর থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে সূর্য নিজের অক্ষের উপর ২৫ দিনে এক পাক ঘোরে। মাঝে মাঝে সূর্যচাকতির উপর লাল H আলোর নিবিড়তা বেড়ে যায়। এই ঘটনাকে বলে সোলার ফ্লেয়ার (Solar Flare)। এই সময় সূর্য থেকে প্রচুর প্রোটন, ইলেকট্রন ও আলফা কণা নির্গত হয়, যা এক দিন পর পৃথিবীতে পৌঁছে বিশ্বময় চৌম্বক ঝড় তোলে এবং বেতার তরঙ্গ প্রচারে অসুবিধা সৃষ্টি করে। সূর্যের মধ্যে এই সব ঘটনা অবশ্য সৌরকলঙ্ক চক্রের সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। জানা গিয়েছে, গাছের বৃদ্ধিও সৌরকলঙ্ক দ্বারা প্রভাবিত হয়। এর ফলে গাছের ট্রাঙ্কের চাকাগুলির গভীরতার তারতম্য ঘটে।

 

রোমান সূর্যদেবতা অ্যাপোলো

গ্রহমণ্ডল (Planets)

যে সব জ্যোতিষ্ক সূর্য বা অন্য কোনো নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে, এবং শুধুমাত্র নক্ষত্রের আলোতেই আলোকিত হয়, তাদের বলে গ্রহ। সৌরজগতে আকারের হিসেবে সূর্যের পরেই গ্রহগুলির স্থান। শুধুমাত্র কয়েকটি উপগ্রহের ব্যাস ক্ষুদ্রতম গ্রহ বুধের চেয়ে বেশি। গ্রহের সংখ্যা ৮। সূর্য থেকে দূরত্বের ক্রম অনুসারে এগুলির নাম হল—(১) বুধ, (২) শুক্র, (৩) পৃথিবী, (৪) মঙ্গল, (৫) বৃহস্পতি, (৬) শনি, (৭) ইউরেনাস এবং (৮) নেপচুন। শেষোক্ত চারটি গ্রহের আকার এতই বড়ো যে এগুলিকে দৈত্যাকার গ্রহ (Giant Planet) বলে। পৃথিবীর আকার গ্রহের গড় আকারের চেয়ে কিছু কম। এটি উক্ত দৈত্যাকার গ্রহগুলির চেয়ে অনেকটাই ছোটো। আগে প্লুটোকে গ্রহ বলে মনে করা হত, আধুনিক বৈজ্ঞানিকদের মতে প্লুটো পূর্ণাঙ্গ গ্রহ নয়, এটি বামন গ্রহ।

বেচারি প্লুটো: গ্রহতালিকা থেকে প্লুটোকে বাদ দেওয়ার পর অঙ্কিত একটি কার্টুন।

প্রতিটি গ্রহই একটি প্রকাণ্ড কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। এই কক্ষপথগুলি প্রায় বৃত্তাকার। প্রত্যেক গ্রহের অক্ষ মোটামুটি একই সমতলে থাকে। শুধুমাত্র প্লুটোর অক্ষ পৃথিবীর চেয়ে ১৭ ডিগ্রি কোণে অবস্থান করে।

সূর্য থেকে গ্রহের দূরত্ব যত বাড়ে, গ্রহগুলির কক্ষপথও অত ছড়িয়ে পড়ে। আঠারো শতকে জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান এলার্ট বোড (Johann Elert Bode) ‘বোডের সূত্র’ নামে পরিচিত একটি সাধারণ বুড়ো আঙুলের নিয়মে সূর্য থেকে গ্রহগুলির দূরত্ব মাপার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই সূত্রের অবশ্য কোনো তাত্ত্বিক ভিত্তি ছিল না। তাই সবচেয়ে দূরে অবস্থিত গ্রহগুলির দূরত্ব এই সূত্রের দ্বারা মাপা সম্ভব হয়নি।

রাতের আকাশে চাঁদকে বাদ দিলে সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক হল শুক্র গ্রহ। এটি শেষ রাতে পূর্ব আকাশে অথবা সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে দেখা যায়। ভোর ও সন্ধ্যায় দৃশ্যমান শুক্রের নামও তাই যথাক্রমে হয় শুকতারা ও সন্ধ্যাতারা। সূর্য-পরিক্রমার সঙ্গে সঙ্গে রাতের আকাশে গ্রহগুলির আপেক্ষিক অবস্থানেরও পরিবর্তন হয়।

পার্থিব গ্রহসমূহ

সূর্যের নিকটতম চারটি গ্রহের (বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল) গঠনতন্ত্র পৃথিবীর অনুরূপ। তাই এগুলিকে বলে পার্থিব গ্রহ (Terrestrial Planet)। এই গ্রহগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল—মোটা পাথুরে ভূত্বক, লোহা ও ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ আচ্ছাদন শিলা এবং গলিত ধাতু দ্বারা নির্মিত অভ্যন্তরভাগ। এই গ্রহগুলির উপগ্রহের সংখ্যা খুবই কম এবং এদের বায়ুমণ্ডল পাতলা।

বার্হস্পত্য গ্রহসমূহ

অন্যদিকে, মঙ্গলের পরবর্তী গ্রহগুলি পার্থিব গ্রহগুলির চেয়ে অনেক দূরে অবস্থিত। এগুলির আকার বৃহস্পতির মতো বলে এগুলিকে বার্হস্পত্য গ্রহ (Jovian Planet) বলে। এগুলির আকার গ্যাসীয়। এদের চারপাশে বলয় ও অনেকগুলি উপগ্রহ থাকে।

Read the rest of this entry »

 
5 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 24, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

শ্রীঅরবিন্দ রচিত ‘বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়’ (সটীক বঙ্গানুবাদ)/পর্ব ১

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

শ্রীঅরবিন্দ

অনুবাদ ও টীকা: অর্ণব দত্ত

তাঁর বাল্যকাল ও কলেজ জীবন

বাংলা গদ্যের স্রষ্টা ও অধিপতি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন এক উচ্চবর্ণীয় ব্রাহ্মণ[*] এবং নিম্নবঙ্গের[†] এক বিশিষ্ট পদাধিকারীর[‡] পুত্র। ১৮৩৮ সালের ২৭ জুন[§] কাঁটালপাড়ায়[**] তাঁর জন্ম, ১৮৯৪ সালের ৮ এপ্রিল কলকাতায় তাঁর মৃত্যুর। তাঁর কর্মময় জীবনের এই ছাপ্পান্নটি বছর ছিল বাংলার ইতিহাসের এক সুবর্ণযুগ। বাংলার অনেক মহৎ নামের মধ্যে তাঁর নামটি মহত্তম। তাঁর জীবনের তিনটি মুখ আমরা দেখতে পাই—তাঁর বিদ্যাচর্চা, তাঁর কঠোর কর্মজীবন ও তাঁর সাহিত্যিক মাহাত্ম্য। এখানে আমি এগুলির প্রত্যেকটিরই কিছু কিছু বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাঁর বাল্যকালের প্রথম যে চিত্রটি আমরা পাই সেটি তাঁর একবার মাত্র পাঠে বর্ণমালা আয়ত্ত করার চিত্র।[††] এটি শুধুমাত্র প্রথম জীবনের একটি ছবিই নয়, এর মাধ্যমে তাঁর পরবর্তী জীবনের ভবিষদ্বাণীটিও করা হয়ে গিয়েছিল। এরই মাধ্যমে সেকালের মানুষ তাঁর মধ্যে সুসংস্কৃত বাঙালির তিনটি স্বাভাবিক গুণ দেখতে পেয়েছিল—অসীম প্রজ্ঞা, দৈহিক শীর্ণতা এবং নিজস্ব এক মননশীলতা। এবং অবশ্যই বঙ্কিম আমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতমই নন, আমাদের সমধর্মী ও মহৎ চরিত্রেরও বটে। বাঙালি জাতির অধিকাংশ মহৎ চরিত্রবৈশিষ্ট্যের মূর্তপ্রতীক তিনি। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছিল মেদিনীপুরে।[‡‡] সেই অঞ্চলে তাঁর বুদ্ধির খ্যাতি এতদূর ছড়িয়েছিল যে তাঁর নাম পরিণত হয়েছিল প্রবাদে। “তুমি শিগগিরই আরেকজন বঙ্কিম হবে”—পণ্ডিতমশাই বলবেন, এটা প্রশংসার অতিরঞ্জন। কিন্তু সাহিত্যিক সমাজে এটি শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। বিদ্যালয়ে তিনি দ্রুত এক একটি শ্রেণি অতিক্রম করে যেতে লাগলেন; এত অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে করতে লাগলেন যে, তাঁর শিক্ষকরাও তাঁর জন্য চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তাঁরা ভয় পাচ্ছিলেন, এই অতিরিক্ত পঠনপাঠনে তাঁর দুর্বল শরীর না একেবারে ভেঙে পড়ে। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে তাঁরা তাঁর উচ্চতম শ্রেণিতে প্রবেশ আটকে রেখেছিলেন।[§§] তবে ভাগ্য সবসময়ই বঙ্কিমের অনুকূল ছিল। উচ্চশিক্ষা হল সেই অসুর যার পায়ে আমরা ভারতের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বলি দিয়েছি। বিদ্যালয় জীবনে বঙ্কিমের অভিভাবকের তৎপরতায় তিনি এই দানবের খপ্পরে পড়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। আবার হুগলি কলেজে[***] পড়ার সময় তাঁর নিজের পরিশ্রমবিমুখতা তাঁকে এর হাত থেকে রক্ষা করেছিল। হুগলি কলেজেও তাঁর বুদ্ধিবৃত্তির খ্যাতি মেদিনীপুরের মতোই হয়েছিল। এবং অবশ্যই তাঁর লেখাপড়ার গতিপ্রকৃতি ঠিক মানবীয় ছিল না। পুরস্কার বা স্বাতন্ত্রতার খ্যাতির লোভ তাঁর ছিল না। কিন্তু যেখানে অন্যেরা শত পরিশ্রমেও কুল পেত না, সেখানে এক অলৌকিক নিস্পৃহতার মাধ্যমে তিনি নিজের সম্মানটি জয় করে নিয়েছিলেন; যেন কতকটা দৈবঘটিতের মতো। কর্তব্যে গাফিলতি যাই থাকুক না কেন, তাঁর হঠাৎ ওঠা ইচ্ছাগুলির প্রতি তিনি খুবই মনোযোগ দিতেন। এই সময় সংস্কৃত ভাষা চর্চার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ জাগে। এক পণ্ডিতে টোলে তিনি গভীর অধ্যবসায়ের সঙ্গে সংস্কৃত শিক্ষা করেন। এক বছরের মধ্যে তিনি মুগ্ধবোধ[†††], রঘুবংশ[‡‡‡], ভট্টি[§§§] ও মেঘদূত[****] আয়ত্ত করে ফেলেন।[††††] এইভাবে পড়াশোনা চালিয়ে মাত্র চার বছরের মধ্যে তিনি এই প্রাচীন ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং এই ভাষার সাহিত্য-রহস্য তাঁকে নতুন গদ্য রচনায় ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। তবে তাঁর বাংলা রচনাশৈলীতে তিনি অকারণে পণ্ডিতি ফলাতে যাননি। সত্যি বলতে কি, তিনি এবং মধুসূদন দত্ত দুজনে মিলে সংস্কৃত রীতিনীতির জগদ্দলটি ভেঙে দেন। কিন্তু দেখাই যায় যে সংস্কৃত জ্ঞানের সুন্দর ও মৌলিক ব্যবহার করে তিনি তাঁর রচনাকে কেমন সরল করে তুলেছিলেন। হুগলি কলেজে পাঁচ বছর পড়াশোনা করার পর সতেরো বছর বয়সে তিনি উক্ত কলেজ ত্যাগ করেন।[‡‡‡‡] তিনি যে খ্যাতি পিছনে ফেলে আসেন, একমাত্র দ্বারকানাথ মিত্র[§§§§] ছাড়া আর কেউ তা স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু তিনি কঠোর পরিশ্রম করে প্রায় কিছুই করেননি। অধিকাংশ মহাপণ্ডিতদের মতো তাঁরও মেধানুশীলন বেশ অনিয়মিত ছিল। তাঁর বিশাল মন বিদ্যালয়ের কার্যক্রমের বাঁধা গতে ধরা দিতে রাজি ছিল না। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। প্রত্যেক মুক্তমনা মানুষের মতো তিনিও চাননি যে বিদ্যালয়ের বাঁধা রুটিনে পড়ে তাঁর মনের প্রাকৃতিক গুণগুলি বিনষ্ট হয়ে যাক। যত সময় যেতে লাগল, তাঁর মধ্যে একটি অভ্যাস গড়ে উঠতে লাগল—তিনি কলেজ লাইব্রেরির কোণে বসে নানা ধরনের বই পড়ে জ্ঞান পিপাসা মেটাতে লাগলেন। পরীক্ষার ঠিক মুখে তিনি পাঠক্রমের বই নিয়ে বসতেন। দ্রুত সেগুলি শেষ করে কয়েকটি পুরস্কার জয় করে নিয়ে আবার পুরানো পদ্মভুকবৃত্তি ধরতেন। আমি মনে করি, এই অভ্যাস বিশ্বের সর্বদেশের মেধাবী যুবসম্প্রদায়ের মধ্যেই দেখা যায়। এই অভ্যাস তাদের অতি-অনুশাসনের নির্বীর্যকারী প্রভাব থেকে রক্ষা করে। কিন্তু মন্থর মনের মানুষদের ক্ষেত্রে এই অভ্যাস নিরাপদ নয়। তাঁর পরবর্তী বিদ্যাচর্চাস্থল প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি আইন পড়াশোনার মাধ্যমে তাঁর বহুমুখী মনের পুষ্টিসাধন করতে গিয়েছিলেন। তিনি হাইকোর্টের উকিল হওয়ার বাসনা রাখতেন সেই সময়। কিন্তু সাহিত্য-ইতিহাসের একেবারে সঠিক ক্ষণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হল।[*****] বঙ্কিম আইনবিদ্যায় সাম্মানিক না নিয়ে নিলেন সাহিত্যে।[†††††] আদালত হারালো একজন বিশিষ্ট উকিলকে। ভারত পেল এক মহান মানুষকে। তবে সম্ভবত আইনের প্রতি বঙ্কিমের একটু টান ছিল। পরে তিনি তাঁর অফিসের হাড়ভাঙা খাটুনি আর সাহিত্যজীবনের মাঝেও একটু সময় বের করে কঠোর পরিশ্রম করে একজন বিশিষ্ট বি. এল. হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।[‡‡‡‡‡] তবে বিদ্যাক্ষেত্রে তাঁর প্রথম পরিচয় হল তিনি এবং যদুনাথ বসু হলেন আমাদের দেশের প্রথম বি.এ.।[§§§§§] এই পরিচয়েও তিনি দেশের মানুষের পথপ্রদর্শক হয়েছেন। ডিগ্রি অর্জনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি সরকারি চাকুরি গ্রহণ করেন। কুড়ি বছর বয়সে তিনি যশোরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন।[******]

Read the rest of this entry »

 

তথ্যকণিকা: ভারতে টকিং এটিএম মেশিন

* ইউনিয়ন ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ভারতে প্রথম টকিং এটিএম মেশিন চালু করেছে।

* প্রথম টকিং এটিএম চালু হয়েছে গুজরাটের আমেদাবাদ শহরে।
* টকিং এটিএম মেশিন মূলত দৃষ্টিহীনদের ব্যবহারের সুবিধার জন্যই চালু হয়েছে।
* প্রথম টকিং এটিএম উদ্বোধন করেন ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডি সরকার।
* টকিং এটিএম মেশিনে যে বিশেষ ইন্টারফেসটি থাকে, সেটি হল ভয়েস ইন্টারফেস।

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 21, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

তথ্যকণিকা: লন্ডন গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকস, ২০১২

  • মাইকেল ফেল্পস

    ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকসের পোষাকি নাম “The Games of the XXX Olympiad”. চলতি কথায় ”লন্ডন, ২০১২”।

  • যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরে ২৭ জুলাই, ২০১২ তারিখে ২০১২ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকসের আসর বসে। চলে ১২ অগস্ট, ২০১২ পর্যন্ত।
  •  ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের মোটো ছিল – “Inspire a Generation”.
  •  ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের ম্যাসকটদুটির নাম ছিল ওয়েনলক ও ম্যান্ডিভিল।
  • মোট ২০৪টি দেশ ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে অংশ নেয়।
  •  মোট ১০,৮২০ জন অ্যাথলেট ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে অংশ নেন।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় ২৭ জুলাই। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল “আইল অফ ওয়ান্ডার”। পরিচালনা করেন অস্কার-জয়ী পরিচালক ড্যানি বয়েল।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের উদ্বোধন সরকারিভাবে করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের নায়ক যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল ফেল্পস। তিনি তাঁর ২২তম অলিম্পিক পদক জয় করে সর্বাধিক পদকজয়ী অলিম্পিক অ্যাথলেটের সম্মান পান।
  • আয়োজক দেশ গ্রেট ব্রিটেন ১৯০৮-এর পর এইবার সর্বাধিক সংখ্যক স্বর্ণপদক জয় করেছে। ব্রিটেন পদক-সারণিতে তৃতীয় স্থান পেয়েছে।
  • লন্ডন প্রথম আধুনিক শহর যেখানে তিন বার অলিম্পিকসের আসর বসল। এর আগে ১৯০৮ ও ১৯৪৮ সালে লন্ডনে অলিম্পিকসের আসর বসেছিল।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে প্রথম স্বর্ণপদক জয় করলেন চিনের য়ি সিলিং।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে পুনরায় মঞ্চে ফিরে এলেন কিংবদন্তি বক্সার মহম্মদ আলি।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের প্রথম বিশ্বরেকর্ডটি করলেন অন্ধ সাউথ কেরিয়ান তিরন্দাজ ইম ডং হ্যুন।

২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে ভারত

 

সুশীল কুমার

  • ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে মোট ৮৩ সদস্যের একটি দল পাঠায়। এই দলের সদস্যরা মোট ১৩টি খেলায় অংশ নেন। ভারত এর আগে এতো বড়ো দল পাঠায়নি বা এতগুলি খেলাতেও অংশ নেয়নি।
  • ব্রিগেডিয়ার পি কে মুরলিধরন রাজা ভারতীয় দলের কার্যনির্বাহী শেফ-ডে-মিশন ছিলেন। তিনি আসলে ডেপুটি শেফ-ডে-মিশন। কিন্তু প্রধান শেফ-ডে-মিশন অজিতপাল সিং অসুস্থ থাকায় তিনিই এই দায়িত্ব পালন করেন।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে ভারত মোট ছয়টি পদক জয় করে। এর মধ্যে ২টি রুপো ও ৪টি ব্রোঞ্জ। এটিই কোনো একক গেমসে ভারতের সর্বাধিক সংখ্যক পদকজয়।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের পতাকাবাহী ছিলেন সুশীল কুমার।
  • ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ভারতের পতাকাবাহী ছিলেন মেরি কম।
  • গগন নারং ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকসে দেশের হয়ে প্রথম পদকটি জয় করেন। তিনি পুরুষদের ১০ মিটার এয়ার রাইফেল ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পান।
  • বিজয় কুমার পুরুষদের ২৫ মিটার র‌্যাপিড ফায়ার পিস্তল ইভেন্টে রুপো পান।
  • বিজয় কুমার তৃতীয় রুপোজয়ী ভারতীয় অলিম্পিয়ান (নর্মান প্রিচার্ড ও রাজ্যবর্ধন রাঠোরের পর)।
  • সাইনা নেহওয়াল মহিলাদের সিঙ্গলস ব্যাডমিন্টনে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।
  • সাইনা নেহওয়াল প্রথম অলিম্পিকস-পদকজয়ী ভারতীয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়।
  • সাইনা নেহওয়াল দ্বিতীয় মহিলা ভারতীয় অলিম্পিকস পদকজয়ী (কর্ণম মালেশ্বরীর পরে, যিনি ২০০০ সালে ভারোত্তোলনে অলিম্পিকস ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন)।
  • মেরি কম মহিলাদের ফ্লাইওয়েট বক্সিং-এ চতুর্থ পদকটি পান। তিনি পেয়েছেন ব্রোঞ্জ।
  • মেরি কম তৃতীয়া মহিলা ভারতীয় অলিম্পিকস-পদকজয়ী এবং অলিম্পিকস-পদকজয়ীয় প্রথম ভারতীয় মহিলা বক্সার।
  • যোগেশ্বর দত্ত ৬০ কেজি ফ্রিস্টাইল কুস্তিতে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন।
  • সুশীল কুমার ৬৬ কেজি ফ্রিস্টাইল কুস্তিতে রৌপ্যপদক জয় করেন।
  • সুশীল কুমার প্রথম ভারতীয় অলিম্পিয়ান যিনি পরপর দুটি অলিম্পিকসে পদক পেলেন।
 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 20, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

ব্রিটিশ শাসনে ভারতীয় প্রেস

১৫৫০ সালে পর্তুগিজরা ভারতে প্রথম ছাপাখানা চালু করেছিল। ১৫৫৭ সালে পর্তুগিজ মিশনারিরাই ভারতে প্রথম ছাপা বই প্রকাশ করে। এরপর ১৬৮৪ সালে ইংরেজরা ছাপাখানা চালু করে। ১৭৮০ সালে জেমস অগাস্টাস হিকি প্রথম ভারতে খবরের কাগজ চালু করেন। কাগজটির নাম ছিল বেঙ্গল গেজেট। লোকমুখে তা পরিচিত ছিল হিকির গেজেট নামে। সরকারি নীতি ও গভর্নর-জেনারেলের সমালোচনা করে হিকির গেজেট সরকারের বিষ নজরে পড়ে। ফলে দু-বছরের মধ্যেই কাগজটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু শিগগিরিই এর দেখাদেখি আরও কয়েকটি কাগজ চালু হয়ে যায়।

 

গঙ্গাধর ভট্টাচার্য হলেন প্রথম ভারতীয় যিনি খবরের কাগজ চালু করেছিলেন। তাঁর বেঙ্গল গেজেট কাগজটিও ছিল ইংরেজিতে। দেশীয় ভাষায় প্রথম পত্রিকা চালু হয় ১৮১৬ সালে। ১৮২১ সালে মার্শম্যান চালু করেন দিগ্দর্শন নামে এক বাংলা মাসিক পত্রিকা। ১৮১৮ সালে রাজা রামমোহন রায় তাঁর সম্বাদ কৌমুদী কাগজটি চালু করেন। ১৮২১ সালে তিনি মিরাত-উল-আখবর নামে একটি ফারসি সাপ্তাহিক পত্রও চালু করেন।

 

১৭৯৯ সালে সেন্সরশিপ আইন চালু করে প্রথম বার সংবাদপত্রের অধিকার খর্ব করা হয়। এই আইনবলে কাগজের প্রতিটি সংখ্যায় মুদ্রক, সম্পাদক ও মালিকের নাম ছাপা এবং কাগজের বিষয়বস্তু ছাপার আগে সরকারি সচিবের কাছে পেশ করা বাধ্যতামূলক করা হয়। লর্ড ওয়েলেসলি ভারতে ফরাসি আক্রমণের ভয়ের অজুহাত দেখিয়ে এই আইন জারি করেন। ১৮০৭ সালে আইনটি পত্রপত্রিকা ও পুস্তকপুস্তিকার উপরও জারি হয়। লর্ড হেস্টিংস এই আইন বিলোপ করেন।

Read the rest of this entry »

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অগাষ্ট 12, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

রাজস্থানি ভাষায় অনূদিত হল রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি

বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি অনূদিত হয়েছে ভারত ও বহির্ভারতের একাধিক ভাষায়। এই তালিকায় এবার সংযোজিত হল নতুন একটি নাম – রাজস্থানি। গত ১৬ মে, ২০১২ তারিখে কলকাতার ঐতিহাসিক টাউন হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে প্রকাশিত হল গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের রাজস্থানি অনুবাদ অঞ্জলি গীতান রি। অনুবাদটি করেছেন বিশিষ্ট রাজস্থানি কবি ইকরাম রাজস্থানি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অভিনেতা প্রসেনজিৎ, শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠানে রাজস্থান-বাংলার মৈত্রী সুদৃঢ় করার কথা বলেন। তিনি বলেন, “মানুষকে এক করা একটা মহৎ কাজ। এটি কবিকে সম্মান জানানো সঠিক উপায়।” রাজস্থানি ভাষায় কয়েকটি কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে চমৎকৃতও করেন। অনুষ্ঠানের আয়োজক তথা প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের কর্ণধার সন্দীপ ভুতোড়িয়া বলেন, “সারা দেশ রবীন্দ্রনাথের জন্মসার্ধশতবর্ষ পালন করছে। কিন্তু রাজস্থানের মানুষ ভাষাগত ব্যবধানের জন্য দীর্ঘকাল এই গ্রন্থ আস্বাদন করতে পারেননি। এই কাজ অনেক দিন আগেই হওয়া উচিত ছিল।” ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে সনাতন দিন্দার আঁকা একটি রবীন্দ্র-প্রতিকৃতিও মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার দেওয়া হয়। প্রসেনজিৎ বলেন, “ইকরাম রাজস্থানির কাব্য অনুবাদ বাংলা ও রাজস্থানের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনের কাজ অনেক দূর এগিয়ে দেবে।”

 

ট্যাগ সমুহঃ

মাতৃতীর্থ জয়রামবাটী

যে গ্রামে জন্মিলা মাতাদেবী ঠাকুরানী।

পুণ্যময়ী লীলা-তীর্থ ধামে তারে গণি।।

শ্রীপ্রভুর পদরেণু বিকীর্ণ যেখানে।

বিধাতার সুদুর্লভ তপস্যা সাধনে।।

(শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণপুঁথি, অক্ষয়কুমার সেন)

নবদ্বীপধামে দেবী বিষ্ণুপ্রিয়া জয়রামবাটী এলে সারদা সাজিয়া,

জীর্ণ চীর বাসে নিজেরে ঢাকিয়া রাজলক্ষ্মী হ’লে যোগিনী।।

(মণীন্দ্রকুমার সরকার)

মাতৃমন্দিরে পূজিত মায়ের শ্বেতপাথরের মূর্তি

পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমার অন্তঃপাতী জয়রামবাটী গ্রাম শ্রীশ্রীমা সারদা দেবীর পুণ্য জন্মস্থান। মা বলতেন–‘ওদের এখানে তিনরাত্রি বাস কত্তে বলো। এখানে তিনরাত্রি বাস কল্লে দেহ শুদ্ধ হয়ে যাবে, এটা শিবের পুরী কিনা।’ সত্যিসত্যিই মায়ের মন্দির নির্মাণের সময় ভিত খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গিয়েছিল একটি ছোটো কালো শিবলিঙ্গ। মাতৃমন্দিরের সিংহাসনে আজও সেটি পূজিত হয়।

জয়রামবাটী গ্রামের আদি নাম ছিল ‘তেঁতুলমুড়ি’। ‘জয়রামবাটী’ নাম কিভাবে এল, তা সঠিক জানা যায় না। মায়ের জীবনীকার স্বামী গম্ভীরানন্দ অনুমান করেন, সম্ভবত মায়ের পিতৃকুল মুখোপাধ্যায় বংশের কুলদেবতা রামচন্দ্র বা কোনো পুর্বপুরুষের নামে গ্রামের নতুন নামকরণ হয়েছিল। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মভূমি হুগলি জেলার কামারপুকুর গ্রাম থেকে জয়রামবাটীর দূরত্ব মাত্র সাড়ে তিন মাইল। ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬ বছর মা নিরবিচ্ছিন্নভাবে জয়রামবাটীতেই বাস করেছিলেন। বিয়ের পর কামারপুকুরের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে মাঝে মাঝে থাকলেও ১৮৭২ সাল পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় মা জয়রামবাটীতেই কাটান। এরপরও ১৮৯০ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত জয়রামবাটীতেই বেশি ছিলেন তিনি।

শ্রীরামকৃষ্ণ একাধিকবার জয়রামবাটীতে এসেছিলেন। ঠাকুরের পার্ষদ ও মায়ের ভক্তশিষ্যদের মধ্যে কথামৃতকার শ্রীম, নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষ, স্বামী সারদানন্দ, স্বামী শিবানন্দ সহ অনেকেই জয়রামবাটী দর্শন করেছেন। স্বামী সারদানন্দই প্রথম জয়রামবাটীতে মাতৃমন্দির ও আশ্রয় স্থাপনে উদ্যোগী হন। তবে স্বামী বিবেকানন্দ এখানে এসেছিলেন কিনা, তা জানা যায় না।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ ,

যক্ষপ্রশ্ন (মহাভারত থেকে অনূদিত নির্বাচিত অংশ)

রচনা-পরিচিতি

বলা হয়, ‘যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে।’ অর্থাৎ মহাভারত-এ যা নেই, তা ভূভারতে নেই। হিন্দুদের দু-টি মহাকাব্যের অন্যতম হল মহাভারত। আঠারো পর্বে বিন্যস্ত এই মহাগ্রন্থ শুধুমাত্র বিশ্বের বৃহত্তম নীতিমূলক মহাকাব্যই নয়, বরং হিন্দুধর্মের বিশ্বকোষ-স্বরূপ। মহাকাব্যের মূল আলোচ্য বিষয় পাণ্ডব ও কৌরবদের পারিবারিক বিবাদের ইতিহাস। তা সত্ত্বেও হিন্দুধর্মের প্রতিটি আধ্যাত্মিক ও নীতিমূলক বিষয় এই বইতে আলোচিত হয়েছে।

এখানে অনূদিত ‘যক্ষপ্রশ্ন’ অংশটি মহাভারত-এর বনপর্ব-এর অন্তর্গত। এটি ছদ্মবেশী যমের সঙ্গে পাণ্ডবাগ্রজ যুধিষ্ঠিরের একটি কথোপকথন। যম যক্ষের রূপ ধরে এসে যুধিষ্ঠিরকে কতগুলি অদ্ভুত প্রশ্ন করেছিলেন। এই প্রশ্নের উত্তরে যুধিষ্ঠির খুব সংক্ষেপে ধর্মের কয়েকটি গূঢ় তত্ত্ব বর্ণনা করেন।

নির্বাচিত অংশ

যক্ষ বললেন–কিভাবে কোনো ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারে? কিভাবে সে মহৎ হতে পারে? কিভাবে সে দ্বিতীয় হতে পারে? এবং, হে রাজা, কিভাবে সে বুদ্ধিমান হতে পারে?

যুধিষ্ঠির বললেন–বেদ অধ্যয়ন করে একজন ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। সাধুসুলভ ব্রহ্মচর্য অবলম্বন করে সে মহৎ হতে পারে। সাহস অবলম্বন করে সে দ্বিতীয় হতে পারে। এবং গুরুজনের সেবা করে সে বুদ্ধিমান হতে পারে।

(শ্লোকসংখ্যা ৪৭-৪৮)

যক্ষ বললেন–ব্রাহ্মণদের দেবত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় কিসে? ব্রাহ্মণের গুণ কী? ব্রাহ্মণদের মানুষ-সুলভ বৈশিষ্ট্য কী? এবং ব্রাহ্মণদের দোষ কী?

যুধিষ্ঠির বললেন–বেদ অধ্যয়ন ব্রাহ্মণদের মধ্যে দেবত্ব প্রতিষ্ঠা করে। ব্রহ্মচর্য ব্রাহ্মণের গুণ। নশ্বরতা ব্রাহ্মণের মানুষ-সুলভ বৈশিষ্ট্য। নিন্দাবাদ করা ব্রাহ্মণের দোষ।

(শ্লোকসংখ্যা ৪৯-৫০)

যক্ষ বললেন–কে পৃথিবীর চেয়েও ভারী? কে স্বর্গের চেয়েও উঁচু? কে বায়ুর চেয়েও দ্রুতগামী? ঘাসের চেয়েও সংখ্যায় বেশি কী?

যুধিষ্ঠির বললেন–মা পৃথিবীর চেয়েও ভারী। বাবা স্বর্গের চেয়েও উঁচু। মন বায়ুর চেয়েও দ্রুতগামী। দুশ্চিন্তা ঘাসের চেয়েও সংখ্যায় বেশি।

(শ্লোকসংখ্যা ৫৯-৬০)

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়

———————————————-

বঙ্গভারতী পঁচিশে বৈশাখ স্মারক রচনা, ১৪১৯ (২০১২)

———————————————–

অর্ণব দত্ত

এই রচনার সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। লেখকের বিনা অনুমতিতে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি।

প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর

উত্তর কলকাতার পাদপ্রান্তে অবস্থিত জোড়াসাঁকো অঞ্চলের আদি নাম ছিল ‘মেছুয়াবাজার’। আড়াইশো বছর আগেকার এই মৎস্যজীবী-প্রধান অঞ্চল কালক্রমে কিভাবে হয়ে উঠল ‘বাংলার নবজাগরণের শিশুশয্যা’, সে এক দীর্ঘ ইতিহাস। ১৭৮৫ সালে কলকাতা শহরকে প্রথম যে ৩১টি থানায় ভাগ করা হয়েছিল, তার একটি ছিল এই জোড়াসাঁকো থানা। ক্রমে ক্রমে এই অঞ্চলে গড়ে ওঠে আদি ব্রাহ্মসমাজ, ভারতীয় নাট্যসমাজ, কলিকাতা হরিভক্তিপ্রদায়িনী সভা, মিনার্ভা লাইব্রেরি এবং কলকাতার প্রথম বেসরকারি স্কুল গৌরমোহন আঢ্যের ওরিয়েন্টাল সেমিনারি। জোড়াসাঁকোয় বসবাসকারী দু-টি পরিবারের সঙ্গে বাংলার নবজাগরণের নাম জড়িয়ে রয়েছে ওতোপ্রতোভাবে। একটি হল সিংহ পরিবার–যে পরিবারের সন্তান ছিলেন হুতোম পেঁচার নকশা-খ্যাত মহাভারত-অনুবাদক কালীপ্রসন্ন সিংহ। অপর পরিবারটি, বলাই বাহুল্য, বঙ্গদেশের সুবিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের জোড়াসাঁকো শাখা। জোড়াসাঁকো থানা-গঠনের ঠিক এক বছর আগে ১৭৮৪ সালে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের ঠাকুরদা নীলমণি ঠাকুর পাথুরিয়াঘাটার ঠাকুরদের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে চলে আসেন জোড়াসাঁকো অঞ্চলে। যে জমির উপর আজকের জোড়সাঁকো ঠাকুরবাড়ি তথা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে, সেই জমিটি নীলমণি ঠাকুর গৃহদেবতা লক্ষ্মীজনার্দন জিউয়ের নামে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে লাভ করেছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ধনী বৈষ্ণবচরণ শেঠের কাছ থেকে। এরপর অবস্থা আরও একটু স্বচ্ছল হলে নীলমণি সেই জমিতে বিরাট এক ইমারত তোলেন। জোড়াসাঁকো তখনও পর্যন্ত মেছুয়াবাজার নামেই পরিচিত ছিল। নীলমণি থেকে তাঁর নাতি দ্বারকানাথ পর্যন্ত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ছিল এক বিরাট জমিদারি ও ব্যবসাদারির কেন্দ্রস্থল। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আমলে ব্রাহ্মধর্মের প্রসার বঙ্গ-সংস্কৃতির মুকুটে ঠাকুরবাড়ির এক নতুন পালক সংযোজন। তবে জমিদারি-কেন্দ্র থেকে ঠাকুরবাড়িকে যথাযথরূপে সাংস্কৃতিক পীঠস্থানে পরিণত করেছিলেন দেবেন্দ্রনাথের সন্তানসন্ততিগণ; যাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম। রবীন্দ্রনাথের জন্ম, কাব্যরচনা, সাহিত্যচর্চা, নাট্যাভিনয়, নোবেল-প্রাপ্তি, নাইটহুড-ত্যাগ, রাজনীতিদর্শন ও মহাপ্রয়াণের সঙ্গে এই বাড়ির নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। রবীন্দ্রনাথ এবং তাঁর দাদা, বৌদি ও দিদিদের সুবাদে তৎকালীন ভারত ও বহির্ভারতের অনেক নামিদামি মানুষের পায়ের ধুলো পড়েছিল এই বাড়িতে। তাই বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় পাদে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রবীন্দ্র-নামাঙ্কিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন এই বাড়িটিকেই। যার ফলস্রুতি, আজকের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর থেকেই ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা একে একে জোড়াসাঁকোর বাস তুলে অন্যত্র চলে যান। বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব অংশের মালিকানা থেকে যায় গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে। কালক্রমে দেশভাগ ও স্বাধীনতা অর্জনের ডামাডোলে বাড়ির একটি বড়ো অংশই চলে যায় বহিরাগতদের হাতে। উনিশশো পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির তরফে সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার পনেরো লক্ষ টাকা দিয়ে বাড়িটি কিনে নেন। পরে বাড়ির তদনীন্তন মালিক হাইকোর্টে মামলা করে আরও তিন লক্ষ টাকা দাবি আদায় করে। এর ফলে সুরেশচন্দ্র বেশ অর্থসংকটে পড়েন। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানান। এরপর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির মধ্যে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। সরকারি অনুদানের শর্ত হিসেবে ঠাকুরবাড়িতে সংগীত, নৃত্য ও নাটক শিক্ষার একটি আকাদেমি স্থাপনের প্রস্তাব রাখা হয়। এরপর ১৯৫৫ সালে স্থাপিত হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য, নাটক, সংগীত ও চারুকলা আকাদেমি। উদয় শংকর, অহীন্দ্র চৌধুরী ও রমেশ বন্দ্যোপাধ্যায় যথাক্রমে নৃত্য, নাটক ও সংগীতের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে অবশ্য উদয় শংকর তাঁর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। ১৯৫৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আসন্ন রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেন। রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পশ্চাতে সরকারের মূল উদ্দেশ্যটির সঙ্গে নিজেদের উদ্দেশ্যের সাদৃশ্য লক্ষ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কবি-পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আলোচনার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার সমগ্র ঠাকুরবাড়ির দখল নেন। বিচিত্রা ভবন থেকে সেই সময় বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগের কাজকর্ম চলত। বিশ্বভারতী বিচিত্রা ভবন খালি করে দেয়। জোড়াসাঁকোর পাশাপাশি বরানগর অঞ্চলে বি টি রোডের ধারে ১৮২০-এর দশকে নির্মিত মরকত কুঞ্জটিকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষাপ্রাঙ্গনে পরিণত করা হয়। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাস হওয়া রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আইন রাষ্ট্রপতির সম্মতি পায় ১৯৬২ সালের ১০ জানুয়ারি। সেই বছরই পঁচিশে বৈশাখ যাত্রা শুরু হয় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের।

Read the rest of this entry »

 

ট্যাগ সমুহঃ

উর্দুতে রবীন্দ্রসংগীত গাইছেন পাকিস্তানি পপ গায়ক

পাকিস্তানি পপ গায়ক নাজম শেরাজ

জনৈক পাকিস্তানি গায়কের কণ্ঠে উর্দুতে রবীন্দ্রসংগীত মন কেড়ে নিল পাকিস্তানবাসীর:

অগর মেরে গ়মকে ঘনেরে অন্ধেরে

তেরি রেহ্‌মতোঁ কে উজালোঁ সে চমকেঁ

চমকনে দে উনকো,

চমকনে দে মওলা

তুমহারি মহব্বত ভরিঁ এ নিগাহেঁ

আগর চশম্-এ-তর পার মেরি টিক রহি হ্যায়

তো আঁখো মেঁ আঁসু হি রহনে দে মওলা।

খুব চেনা চেনা লাগছে কী? বাংলা গানটি হল:

দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল-আলোক

তবে তাই হোক ।।

মৃত্যু যদি কাছে আনে তোমার অমৃতময় লোক

তবে তাই হোক ।।

পুজার প্রদীপে তব জ্বলে যদি মম দীপ্ত শোক

তবে তাই হোক ।

অশ্রু-আঁখি-‘পরে যদি ফুটে ওঠে তব স্নেহচোখ

তবে তাই হোক ।।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সারা ভারত যখন ভাসছে রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের জোয়ারে, তখন সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানি পপ গায়ক নাজম শেরাজও বারোটি রবীন্দ্রগানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করলেন। বাংলা নয়, উর্দু অনুবাদে। শেরাজ পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতে বেশ জনপ্রিয়। হিন্দি ছবি মার্ডারে তিনি ভিগি হোঁঠ নামে সেই বিখ্যাত গানটি গেয়েছিলেন। প্রায় এক বছর খেটেখুটে এই অ্যালবামটি বের করলেন শেরাজ। এই বছর মার্চে উর্দু অনুবাদে ১০০টি রবীন্দ্রকবিতার একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। অ্যালবামটি সেই প্রকল্পেরই অংশ।

রবীন্দ্রনাথের কবিতা অবশ্য আগেও উর্দুতে অনূদিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনুবাদ ছিল ফিরাক গোরখপুরির অন্যবাদ। তিনি গীতাঞ্জলির কয়েকটি কবিতা অনুবাদ করেন। অনুবাদক নিয়াজ ফতেহপুরিও গীতাঞ্জলির কয়েকটি কবিতা অনুবাদ করেন। যেমন এটি:

আপনে কদমোঁ তলে

মুঝকো বিঝ জানে দো

ইক মুকাম্মাল খুশি কে লিয়ে

আপনে পাওঁ কি ধুল সে

সুর্খ হো জানে দো

মেরি পোষাক কো!

মূলগানটি বহুশ্রূত বাংলার লোকসুরের গান:

ওই      আসনতলের মাটির ‘পরে লুটিয়ে রব।

তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব।

অ্যালবামের কভার

অ্যালবামটির নাম রাখা হয়েছে রোম্যান্সিং টেগোর। এই অ্যালবামের গানগুলি অনুবাদ করেছেন দিল্লিবাসী গীতিকার ইন্দিরা বর্মা ও কবি ড. রেহমান মুসাওয়ির। সংগীত আয়োজন করেছেন কলকাতার দেবজ্যোতি মিশ্র। শেরাজের সঙ্গে অ্যালবামে কণ্ঠ মিলিয়েছেন শুভা মুদগল ও কমলিনী মুখোপাধ্যায়।

লাহোরের সাপ্তাহিক দ্য ফ্রাইডে টাইমস পত্রিকায় রক্ষানন্দ জলিল এই অ্যালবামের সমালোচনায় লিখেছেন, “এই অনূদিত কবিতাগুলি কাব্যের অনিবর্চনীয় আনন্দ লাভে সহায়তা করে। অনুবাদগুলি মূল কবিতার মতোই সুশ্রাব্য হয়েছে। সংগীত পরিচালক রবীন্দ্রসংগীতের অনুরূপ সুরেই সংগীত আয়োজন করেছেন। এগুলি প্রথাগত উর্দু গজলের মতো করে গাওয়া হয়নি।”

তিনি আরও বলেছেন, উর্দু কবি ইকবাল বা ফৈজের মতো রবীন্দ্রনাথ ভারত-পাকিস্তান উভয়ের সম্পদ। উর্দুতে রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ ও বাংলায় ফৈজের অনুবাদ তাই দুই দেশের সম্পর্কে মজবুত করবে।

শেরাজ বলেন, “রবীন্দ্রনাথ এমন একজন মানুষ যিনি জাতি হিসেবে ভারতকে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। আমি তাঁর গান গাইছি। শ্রোতাদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে রবীন্দ্রনাথের জীবনী আমি সম্প্রতি পড়েছি। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন। বাংলা ভালবাসা, শান্তি ও আবেগে বিশ্বাস করে। আমি জানি না লোকের এই উর্দু অনুবাদ কেমন লাগবে। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি মনপ্রাণ দিয়ে এতে কাজ করেছি।”

 

ট্যাগ সমুহঃ

গুজরাত ও রবীন্দ্রনাথ

মহাত্মা গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সম্প্রতি গুজরাত সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উৎসবের দ্বিতীয় দিনে একটি আশ্চর্য তথ্য উঠে এল। রবীন্দ্রনাথের মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিসত্ত্বাকে রবীন্দ্রনাথেরও আগে চিনেছিলেন গুজরাত ও আমেদাবাদবাসী। বিশিষ্ট  গুজরাতি কবি, প্রাবন্ধিক ও ঔপন্যাসিক প্রফুল্ল রাভাল এই দিন বলেন, “সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন আমেদাবাদে জেলা জজ। রবীন্দ্রনাথ মাঝে মাঝে তাঁর কাছে এসে থাকতেন। তবে স্থানীয় মাসিক পত্রিকা বসন্ত-এর সুবাদে সত্যেন্দ্রনাথের কবিতা রবীন্দ্রনাথের আগেই পড়ার সুযোগ পান আমেদাবাদবাসী।”

 

বসন্ত পত্রিকাটি চালাতেন আনন্দ শঙ্কর ধ্রুব। পত্রিকার প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যায় প্রথম পৃষ্ঠাতেই ছিল সত্যেন্দ্রনাথের কবিতা। গুজরাতি ভাষায় তাঁর কবিতা অনুবাদ করেছিলেন কৃষ্ণ রাও ভোলানাথ। বসন্ত পত্রিকার একটি সংগ্রহ গুজরাত সাহিত্য পরিষদের গ্রন্থাগারে এখনও রাখা আছে এবং পাঠক তা পড়ারও সুযোগ পান।

 

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গুজরাতের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে রাভাল বলেন, “১৯১৮ সালে রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর নাটকটি গুজরাতিতে অনূদিত হয়। এটিই ছিল গুজরাতিতে অনূদিত প্রথম রবীন্দ্র-নাটক। পরের বছর ধ্রুব রবীন্দ্রনাথের মুকুট নাটকটিও অনুবাদ করেন।”

 

১৯১৩ সালে নোবেল-প্রাপ্তি রবীন্দ্রনাথকে এনে দিয়েছিল বিশ্বজোড়া খ্যাতি। তবে গুজরাতবাসী রবীন্দ্রনাথকে মনে রেখেছেন অন্য একটি বিশেষ কারণে। সেটি হল ১৯১৫ সালে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। রাভালের কথা থেকেই জানা যায়, ১৯১৫ থেকে ১৯৩০ পর্যন্ত সময়কালে গুজরাতের বহু যুবক শান্তিনিকেতনে গিয়ে কলা ও সাহিত্যের পাঠ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রহ্লাদ পারেখ ও কৃষ্ণলাল সাধ্বানি। পারেখ কবিতা রচনায় দক্ষতা অর্জন করেন এবং সাধ্বানি কবিতা, ছোটোগল্প রচনা ও চিত্রকলা শিক্ষা করেন।

 

সূত্র: ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস পত্রিকা, ৪ মে, ২০১২

 

ট্যাগ সমুহঃ

তামিল ভাষায় রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জানেন কি, রবীন্দ্রনাথের প্রায় ৮০ শতাংশ রচনা অনূদিত হয়েছে তামিল ভাষায়? হ্যাঁ, এই ভাবেই তামিল সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন দখল করে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

কবিগুরুর রচনার প্রথম তামিল অনুবাদ প্রকাশ করেছিল অ্যালাইন্স পাবলিশার্স। কবির জীবদ্দশাতেই তারা তাঁর রচনার তামিল অনুবাদ ছাপার স্বত্ব লাভ করে। রবীন্দ্র-রচনার তামিল অনুবাদের ক্ষেত্রে যে দু-জনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন টি. এন. কুমারস্বামী ও টি. এন. সেনাপতি। এঁরা ছিলেন দুই ভাই। সরাসরি বাংলা থেকে তাঁরা কবির রচনা তামিলে অনুবাদ করেন। কুমারস্বামী নিজে ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক ও ছোটোগল্পকার। তিনি নিজে বাংলা শিখে এই ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করে। পরে তিনি তাঁর ছোটো ভাই সেনাপতিকেও বাংলা শেখান। তারপর অ্যালাইন্স পাবলিশার্সের হয়ে রবীন্দ্র-রচনার অনুবাদ শুরু করেন। কুমারস্বামীর পুত্র কে. অশ্বিন কুমার বলেন, “আমার বাবা ১৯৩০-এর দশকে বিশ্বভারতীতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করে অনুবাদের প্রয়োজনীয় অনুমতি জোগাড় করে আনেন। অনুবাদের অধিকাংশ কাজ তাঁরই করা। তবে তাঁর ভাই সেনাপতিও কিছু অবদান রেখেছেন।” অ্যালাইন্স পাবলিশার্স ২৫ খণ্ডে তামিল রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশ করেছিল। রবীন্দ্র জন্মসার্ধশতবর্ষ উপলক্ষ্যে তাঁরা সেই রচনাবলীর পুনর্মুদ্রণ করেছেন।

 

(বাঁদিক থেকে) টি. এন. কুমারস্বামী, টি. এন. সেনাপতি ও এ. শ্রীনিবাসরাঘবন

আরেক জন স্বনামধন্য তামিল রবীন্দ্র-অনুবাদক হলেন এ. শ্রীনিবাসরাঘবন। এই ইংরেজি সাহিত্যের এই খ্যাতনামা অধ্যাপক ১০০টি রবীন্দ্র-কবিতা তামিল ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। ২০০৫ সালে অধ্যাপক শ্রীনিবাসরাঘবনের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ছয় খণ্ডে তাঁর রচনাসমগ্র প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থমালার ষষ্ঠ খণ্ডটিতে শুধু রয়েছে তাঁর অনুবাদ করা রবীন্দ্রনাথের ১২০টি কবিতা। জন্মশতবর্ষ-উদযাপন কমিটির সদস্য তথা অল ইন্ডিয়া রেডিওর প্রাক্তন ডিরেক্টর বিজয় তিরুভেঙ্গাদাম বলেন, “শ্রীনিবাসরাঘবন কবিতাগুলি অনুবাদ করেছিলেন ইংরেজি অনুবাদ থেকে। তবে বাংলা ভাষার সৌন্দর্য ও ছন্দ রক্ষার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সামুদ্রিক মৎস্যচাষ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জীববিজ্ঞানী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সাহায্য নিয়েছিলেন।”

 

করাইকুড়ির বাসিন্দা ভি. আর. এম. চেত্তিয়ারকে বলা হত ‘টেগোর-ভক্ত’। তিনি তীব্র অর্থসংকট সত্ত্বেও নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তামিল ভাষায় রবীন্দ্রনাথের রচনা অনুবাদ ও প্রচারের কাজে। ১৯১৪ সালে তিরুচির সেন্ট জোসেফ কলেজে বন সম্পর্কে বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানেই চেত্তিয়ার প্রথম দেখেন তাঁকে। সেই সময় চেত্তিয়ারের বয়স ছিল অল্প। কবির কথা বিশেষ না বুঝলেও, কবির প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন তিনি। এরপর ১৯২৯ সালে কবি যখন সাইগনে তখন কবিকে দ্বিতীয়বার দেখেন চেত্তিয়ার। কবির ভ্রমণের একটি বিস্তারিত বিবরণী তিনি প্রকাশ করেন “কবিতা মণ্ডলম” পত্রিকার ফেব্রুয়ারির শেষ সংখ্যায়। জানা যায়, চেত্তিয়ার একটি প্রকাশনাও চালাতেন শুধু রবীন্দ্র-রচনার অনুবাদ প্রকাশের জন্য। তবে অর্থসংকটের দরুন, বেশি দিন প্রকাশনার কাজ করে উঠতে পারেননি।

 

তথ্যসূত্র: দ্য হিন্দু পত্রিকা, ২ মে, ২০১২

 

ট্যাগ সমুহঃ

সিনেমা-শতবর্ষে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

সৌমিত্র এখন

৩ মে ২০১২। ভারতীয় সিনেমা পদার্পন করল শতবর্ষে। আর এই দিনই নতুন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি ৫৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে দেশের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র সম্মান দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার তুলে দিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। সৌমিত্রবাবু অবশ্য প্রথম বাঙালি ফালকে-বিজেতা নন। তাঁর আগে এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন দেবিকা রানি, বি এন সরকার, পঙ্কজ কুমার মল্লিক, ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলি, কানন দেবী, নীতিন বোস, রাইচাঁদ বড়াল, সত্যজিৎ রায়, হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ ও মান্না দে। সেই হিসেবে সৌমিত্রবাবুই প্রথম পূর্ণ সময়ের বাঙালি পুরুষ অভিনেতা, যিনি এই সম্মানে ভূষিত হলেন। পুরস্কার গ্রহণের সময় সৌমিত্রবাবু বলেন:

এই মুহুর্তে কিছু বলার মতো মানসিক অবস্থা আমার নেই। সারা জীবন আমি সংশয়ে ছিলাম। হয়ত মনোরঞ্জনের এই ব্যবসা এ যুগের উপযোগী নয়। হয়তো আমার উচিত ছিল এ থেকে বেরিয়ে এসে মানুষের সেবা করা। কিন্তু এই পঞ্চাশ বছরে মানুষ আমাকে গ্রহণ করেছে, ভালবেসেছে। আমারও নিজেকে মনে হয়েছে তাদেরই একজন। আমার দৃষ্টিতে যা সুশিল্প, তা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তি জোগানোর জন্য আমি তাদের ভালবাসি, সম্মান করি ও অভিবাদন জানাই।

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে কৃষ্ণনগর, হাওড়া ও কলকাতায়। সৌমিত্রবাবু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে সাম্মানিক সহ স্নাতক ও পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। চলচ্চিত্র শিল্পে যোগ দেওয়ার আগে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে কাজ করতেন।

১৯৫৯ সালে সত্যজিৎ রায়ে অপুর সংসার চলচ্চিত্রে অপুর চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ৩৪টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ১৪টিতেই তিনি অভিনয় করেছিলেন। এজন্য তাঁকে বলা হয় ‘সত্যজিতের নায়ক’। আবার রবীন্দ্রনাথের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত অনেক কাহিনিচিত্রে সার্থক অভিনয় তাঁকে এনে দিয়েছিল ‘রবীন্দ্রনাথের নায়ক’ আখ্যা। মননশীল চলচ্চিত্রের পাশাপাশি মূলধারার চলচ্চিত্রেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা। বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি ফেলুদার চরিত্রে তিনিই প্রথম রূপদান করেছিলেন।

সৌমিত্র তখন

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হল: দেবী (১৯৬০), ক্ষুধিত পাষাণ (১৯৬০), ঝিন্দের বন্দী (১৯৬১), অভিযান (১৯৬২), অতল জলের আহ্বান (১৯৬২), সাত পাকে বাঁধা (১৯৬৩), চারুলতা (১৯৬৪), কিনু গোয়ালার গলি (১৯৬৪), আকাশ কুসুম (১৯৬৫), মণিহার (১৯৬৬), বাঘিনী (১৯৬৮), তিন ভুবনের পারে (১৯৬৯), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), স্ত্রী (১৯৭২), অশনি সংকেত (১৯৭৩), বসন্ত বিলাপ (১৯৭৩), সোনার কেল্লা (১৯৭৪), জয় বাবা ফেলুনাথ (১৯৭৮), দেবদাস (১৯৭৯), গণদেবতা (১৯৭৯), কোনি (১৯৮৬), আতঙ্ক (১৯৮৬), গণশত্রু (১৯৮৯), মহাপৃথিবী (১৯৯১), হুইলচেয়ার (১৯৯৪), অসুখ (১৯৯৯), পদক্ষেপ (২০০৬), ১৫ পার্ক এভিনিউ (২০০৬), বালিগঞ্জ কোর্ট  (২০০৭), অংশুমানের ছবি  (২০০৯), অপরাজিতা তুমি (২০১২) ইত্যাদি। কাজ করেছেন সত্যজিৎ রায়, তপন সিংহ, তরুণ মজুমদার, মৃণাল সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ প্রমুখ পরিচালকের সঙ্গে।

অভিনয়ের পাশাপাশি পেশাদার নাট্যমঞ্চেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এক উল্লেখযোগ্য নাম। ১৯৬৩ সালে দেবনারায়ণ গুপ্তের পরিচালনায় তাপসী নাটকে তাঁর প্রথম পেশাদার নাট্যাভিনয়। এর পর অভিনয় করেছেন নামজীবন, রাজকুমার, ফেরা, নীলকণ্ঠ, ঘটক বিদায়, দর্পনে শরৎশশী, চন্দনপুরের চোর, ন্যায়মূর্তি, অন্ধযুগ, বিদেহী, টিকটিকি, প্রাণতপস্যা,  কুরবানি, আর একটা দিন, আরোহণ, আত্মকথা, হোমাপাখি, তৃতীয় অঙ্ক, অতএব ইত্যাদি নাটকে। এবছর তাঁর অভিনীত শেকসপিয়রের রাজা লিয়ার যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে।

১৯৭০-এর দশকে সৌমিত্রবাবু পদ্মশ্রী সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন। তবে ২০০৪ সালে পদ্মভূষণ সম্মান গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালে সুমন ঘোষের পদক্ষেপ ছবিতে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ফরাসি সরকার তাঁকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ কলা পুরস্কার ‘Officier des Arts et Metiers’ সম্মানে ভূষিত করেছে। লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার দিয়েছে ইতালি সরকারও। ক্যাথেরিন বার্জে ফরাসি ভাষায় তাঁর উপর একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন।

 

ট্যাগ সমুহঃ