শুক্লযজুর্বেদীয়
ঈশোপনিষদ্
বা
বাজসনেয় সংহিতোপনিষদ্
অনুবাদ © অর্ণব দত্ত
ওঁ
জগতে যা কিছু রয়েছে সবই পরব্রহ্মের দ্বারা আচ্ছাদিত―এই জেনে বিষয়বুদ্ধি ত্যাগ করবে। এই ত্যাগের দ্বারাই ব্রহ্মকে সম্ভোগ করবে; অন্যের ধনসম্পত্তিতে লোভ করবে না ।। ১ ।।
যার ব্রহ্মজ্ঞান হয়নি, সে কর্মের মাধ্যমে একশো বছর বেঁচে থাকতে চাইবে। হে মানব, এইরকম জীবনের ইচ্ছা থাকলে তোমার পক্ষে এমন কোনো পথ নেই, যা তোমাকে অশুভ কর্মের লিপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে ।। ২ ।।
অজ্ঞানতার অন্ধকারে ঢাকা অনেক লোক আছে। যারা অবিদ্যার বশবর্তী হয়ে আত্মাকে অস্বীকার করে, তারাই মৃত্যুর পর সেই সব লোকে যায় ।। ৩ ।।
ব্রহ্ম এক। তিনি নিশ্চম হলেও মনের চেয়েও দ্রুতগামী। তিনিই সকলের আগে চলেন। ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে তাঁকে ধরা সম্ভব নয়। তিনি স্থির থেকেও অন্যান্য সচল বস্তুকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যান। তিনি পরব্রহ্ম রূপে আছেন বলেই, বায়ু প্রাণীর দেহধারণের প্রচেষ্টাকে সফল করছেন ।। ৪ ।।
তিনি চলেও চলেন না। দূরে থেকেও কাছে থাকেন। তিনি সকলের অন্তরে আছেন, আবার সকলের বাইরেও আছেন ।। ৫ ।।
তিনি আত্মায় সকল বস্তুকে দেখেন, আবার সকল বস্তুর মধ্যে আত্মাকে দেখেন। তাই তিনি কাউকেই ঘৃণা করেন না ।। ৬ ।।
জ্ঞানীর আত্মা যখন ব্রহ্মে লীন হয়, তখন সেই একত্বদর্শী জ্ঞানীর মোহ বা শোকের সম্ভাবনা থাকে না ।। ৭ ।।
ব্রহ্ম সবখানেই আছেন। তিনি জ্যোতির্ময়। তাঁর শরীর নেই, শিরা বা ব্রণও নেই। তিনি শুদ্ধ। পাপ তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। তিনি সব কিছুই দেখেন। মনকে তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি স্বয়ম্ভু। তিনিই সর্বকালে প্রাণীর ভোগের জন্য যথোপযুক্ত বস্তুগুলির জোগান দিচ্ছেন ।। ৮ ।।
শুধুমাত্র কর্মের অনুসরণ করাই অবিদ্যা। যারা এই কাজ করে, তারে অজ্ঞানের অন্ধকারে প্রবেশ করে। আবার যারা শুধুমাত্র জ্ঞানের চর্চাতেই রত থাকে, তারা আরও গভীর অন্ধকারে প্রবেশ করে ।। ৯ ।।
জ্ঞানীরা জ্ঞান ও কর্মের আলাদা আলাদা ফলের কথা বলেছেন। তাঁরাই আমাদের কাছে এই জ্ঞান ও কর্মের তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন। এই জ্ঞানীগণের কাছ থেকে আমরা জেনেছি ― ১০।।
যিনি জ্ঞান ও কর্ম দুইই অনুষ্ঠানের যোগ্য বলে জানেন, তিনি কর্মের মাধ্যমে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান এবং জ্ঞানের দ্বারা অমরত্ব লাভ করেন ।। ১১ ।।
যারা কেবল প্রকৃতির উপাসনা করে, তারা গভীর অন্ধকারে প্রবেশ করে। আর যারা শুধুমাত্র জগৎকারণ ব্রহ্মের উপাসনাতেই রত, তারা আরও গভীর অন্ধকারে প্রবেশ করে ।। ১২ ।।
জ্ঞানীরা প্রকৃতি ও ব্রহ্মের উপাসনার আলাদা আলাদা ফলের কথা বলেছেন। যাঁরা আমাদের কাছে এই দুই প্রকার উপাসনার তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন, তাঁদের মুখে শুনেছি ― ১৩।।
যিনি ব্রহ্ম ও প্রকৃতি উভয়কেই অনুসরণীয় বলে জানেন, তিনি প্রকৃতির উপাসনার মাধ্যমে মৃত্যুকে জয় করেন এবং ব্রহ্মের উপাসনার মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করেন ।। ১৪ ।।
জগতের পালক হে সূর্য, আপনার জ্যোতির্ময় পাত্র সত্য অর্থাৎ সূর্যমণ্ডলে অবস্থানকারী ব্রহ্মের মুখ ঢেকে রেখেছে। এই আবরণ উন্মোচন করুন, যাতে সত্যধর্মের অনুসরণকারীর জন্ম সম্ভব হয় ।। ১৫ ।।
জগতের পালক হে সূর্য! একাকী গমনকারী হে সূর্য! সকল প্রাণীর সংযমকর্তা হে সূর্য! প্রজাপতি-পুত্র হে সূর্য! আপনার রশ্মি সংযত করুন। আপনার তেজ সংবরণ করুন। আপনার সুন্দর রূপ আমাকে দেখার সুযোগ দিন। ঐ সূর্যমণ্ডলে যিনি আছেন, তিনিই আমি ।। ১৬ ।।
আমার প্রাণবায়ী সর্বব্যাপী বায়ুরূপী অমৃতে লীন হোক। আমার এই শরীর ভস্মীভূত হোক। ওঁ! হে মন, যে কাজ করেছো তা স্মরণ করো। হে মন, যে কাজ করেছো তা স্মরণ কর ।। ১৭ ।।
হে অগ্নি, আমাদের কর্মফল ভোগের জন্য সুপথে নিয়ে চলুন। হে দেব, আপনি সকল কর্মই জানেন। আমাদের মন থেকে কুটিল পাপ দূর করুন। আপনাকে বারংবার নমস্কার করি।। ১৮।।
।।ঈশোপনিষদের বঙ্গানুবাদ সমাপ্ত।।
।।ওঁ তৎ সৎ।।
এই পোস্টটির যাবতীয় স্বত্ব সংরক্ষিত। বিনা অনুমতিতে এটি কোনোভাবে প্রকাশ আইনত নিষিদ্ধ।