[কিশোরীলাল রায় রচিত দেবতত্ত্ব (১৮৮৫) গ্রন্থ থেকে আধুনিক সরল বাংলা গদ্যে রূপান্তরিত।]

সপরিবার দুর্গা
মূল প্রকৃতিকে ঈশ্বরের সৃষ্টিশক্তি বা মায়াশক্তি বলে। আবার পঞ্চভূত ইত্যাদি জড় পদার্থের সমষ্টিকেও প্রকৃতি বলে। দুর্গা মূল প্রকৃতির এক অংশ। ব্রহ্মাণ্ডব্যাপী ও দুর্গতিনাশকারী—এই অর্থে ঈশ্বরের নাম দুর্গা। জড় পদার্থ জগৎ, পর্বত সবকিছু দিয়ে ধরা আছে; আর পর্বতের মধ্যে হিমালয় সবচেয়ে বড়ো—অতএব দুর্গাকে পার্বতী ও হিমালয়নন্দিনী বলে। গঙ্গাকেও হিমালয়নন্দিনী বলে, যেহেতু তা হিমালয় থেকে নিঃসৃত হয়েছে সাগর-অভিমুখে প্রবাহিত হয়েছে। এই জন্যই দুর্গাকে গঙ্গার সপত্নী বলে। কিন্তু মহাশক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবতা অর্থেই সচরাচর ঈশ্বরকে দুর্গা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। দশ হাতই সেই অর্থে মহাশক্তির পরিচায়ক। পরাক্রমাধিষ্ঠাত্রী দেবতার সিংহই উপযুক্ত বাহন। দুর্জন বা অসুরেরাই জগতের দুর্গতির প্রধান কারণ, অতএব দুর্গা অসুরনাশিনী বলে বর্ণিত হয়েই একপ্রকারে দুর্গতিনাশিনী বলে বর্ণিত হয়েছেন। যখন নানা রকমের দুর্গতি আছে, তখন অন্য প্রকার দুর্গতিনাশিনী অর্থেও দুর্গাকে দুর্গা বলা যায়। শারদীয়া দুর্গাপ্রতিমার সঙ্গে সরস্বতী ও কার্তিক ইত্যাদি মূর্তিও দেখা যায়। এর তাৎপর্য এই যে, দুর্গতিনাশিনী মহাশক্তির থেকেই যখন যুদ্ধশক্তি উৎপন্ন হয়, তখন যুদ্ধদেবতা কার্তিককে দুর্গার ছেলে বলা যায়। যখন ওই মহাশক্তি থেকেই দুর্গতি ও বিঘ্ন বিনষ্ট হয়ে সিদ্ধি প্রাপ্ত হওয়া যায়, তখন সিদ্ধিদেবতা গণেশও দুর্গার সন্তান বলে পরিগণিত হতে পারে। একই রকম ভাবে বাকশক্তি ও জ্ঞানশক্তি দ্বারাও দুর্গতি দূর হয় বলে এবং তা মহাশক্তির এক অংশ বলে সেই শক্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবতা সরস্বতীকেও দুর্গার সঙ্গে দেখা যায়। মহাশক্তির অংশ—তাই শোভা ও সম্পত্তির অধিষ্ঠাত্রী দেবতা লক্ষ্মীও দুর্গার পাশে বিরাজ করেন। মহাশক্তি বলে দুর্গাকে নিদ্রা, ক্ষুধা, লজ্জা, তুষ্টি, আগুনের দাহিকা শক্তি, সূর্যের তেজ, জলের শীতলতা, ব্রাহ্মণের ব্রহ্মণ্যশক্তি, ক্ষত্রিয়ের ক্ষত্রিয়শক্তি, তপস্বীর তপস্যাশক্তি, ক্ষমাবানের ক্ষমাশক্তি, পৃথিবীর ধারণ ও শস্য-উৎপাদন ক্ষমতা প্রভৃতি বলে স্তব করা হয়েছে ও হয়ে থাকে। যাঁরা শাস্ত্রতত্ত্ব বোঝেন না, তাঁরাই মাটির দুর্গাপ্রতিমাকে দুর্গা মনে করেন। কিন্তু জ্ঞানী ও শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তি বুঝতে পারেন যে, ঈশ্বরকেই অবস্থা বিশেষে দুর্গা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। যথা—”গণেশজননী দুর্গা রাধা লক্ষ্মী সরস্বতী। সাবিত্রী চ সৃষ্টিবিধৌ প্রকৃতিঃ পঞ্চমী স্মৃতা।” অর্থাৎ, মূল প্রকৃতিকে পাঁচ অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা—দুর্গা, রাধা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, সাবিত্রী। দুর্গাতে তেজের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা বলা হয়েছে। যথা—”তেজস্বরূপা পরমা তদধিষ্ঠাত্রী দেবতা।” হিন্দুশাস্ত্রের একটি প্রধান লক্ষণ এই যে, এতে ঈশ্বরের নাম নিয়ে অনেক প্রসঙ্গ আলোচনা করা হয়েছে। যেমন নারায়ণের সহস্র নাম, শত নাম, ষোড়শ নাম, অষ্ট নাম ইত্যাদি। এই রকম দুর্গারও সহস্র নাম বর্ণিত হয়েছে। ঈশ্বরের নাম নিয়ে এত প্রসঙ্গ করা হয়েছে যে, প্রায় প্রত্যেক ব্যাপারেই একটি পৃথক নাম নেওয়ার বিধি দেওয়া হয়েছে। যথা—”ঔষধে চিন্তয়েদ্বিষ্ণুং ভোজনে জনার্দনং। শয়নে পদ্মনাভঞ্চ বিবাহে চ প্রজাপতিং।।” ইত্যাদি। ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গ রক্ষার জন্য ভিন্ন ভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে। যথা—”পায়ান্মধ্যং দিনে বিষ্ণু প্রাতর্নারায়ণ্যেবতু। মধুহাচাপারাহ্নে চ সায়ং রক্ষতু মাধবঃ।।” ইত্যাদি। ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন নামে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান কথিত হয়েছে। যথা—মানসহ্রদে মৎস্য, হস্তিনাপুরে গোবিন্দ, কুরুক্ষেত্রে কুরুধ্বজ, হিমাচলে শূলবাহু, অবন্তিনগরে বিষ্ণু, বারাণসীতে কেশব, মর্ত্যলোকে অগস্ত্য, ভুবর্লোকে গরুড়, স্বর্গলোকে বিষ্ণু, জম্বুদ্বীপে চতুর্বাহু ইত্যাদি। শিব ও রাধিকারও সহস্র নাম কথিত হয়েছে। কিন্তু চৈতন্যদেবের সময়ে ঈশ্বরের নামের যে প্রকার অত্যধিক আলোচনা হয়েছে, এমন আর কোনো সময়েই হয়নি। এই বিষয়ে খ্রিস্টানদের সঙ্গে হিন্দুদের সম্পূর্ণ উল্টো রীতি দেখা যায়। খ্রিস্টধর্মে অনর্থক ঈশ্বরের নাম নেওয়া অপরাধ। কিন্তু হিন্দুদের মতে, অবহেলা করে নাম নেওয়াও মহাপুণ্যজনক। চৈতন্যদেবের সময়ে মহাভাগবত হরিদাস ঠাকুর প্রতিদিন তিন লক্ষ বার হরিনাম জপ করতেন। আজও অনেক হিন্দু রোজ শত শত বার ঈশ্বরের নাম জপ করে থাকেন। নাম জপের এত প্রাবল্য ভারতবর্ষ ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশেই দেখা যায় না। এর একটি প্রধান কারণ এই যে, অন্যান্য জাতি অপেক্ষা ভারতীয়রা ঈশ্বরের দাস হওয়ার চেয়ে ঈশ্বরের প্রেমিক হতেই বেশি ভালবাসে।
দুর্গাকে প্রকৃতির অংশ বলে ও শাস্ত্রে অনেক জায়গায় তাঁকে স্বয়ং প্রকৃতি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। পুরুষ ও প্রকৃতিকে কখনও কখনও কৃষ্ণ ও রাধা, কখনও কখনও শিব ও দুর্গা এবং কখনও কখনও লিঙ্গ ও যোনি বলা হয়েছে। যোনিপূজা বললে শাস্ত্র-না-জানা লোক তাকে যেভাবে গ্রহণ করে, দার্শনিক ও শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তি কখনই তাকে সেভাবে গ্রহণ করে না। উক্তস্থলে সত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিন গুণের সমবায়ের নামই যোনি এবং ঐ ত্রিগুণের সাম্য অবস্থার নামই প্রকৃতি।
পুরুষের যে রকম দশাবতার বর্ণিত হয়েছে, তেমনই প্রকৃতিরও দশাবতারের (দশমহাবিদ্যা) বর্ণনা আছে। যথা—”কৃষ্ণরূপা কালিকাস্যাৎ রামরূপা চ তারিণী। বগলা কূর্মমূর্তিস্যান্মীনো ধূমাবতীভবেৎ।। ছিন্নমস্তা নৃসিংহর্স্যাদ্ববরাহশ্চৈব ভৈরবী। সুন্দরী যামোদগ্ন্যর্স্যাদ্বামনো ভুবনেশ্বরী।। কমলা বৌদ্ধরূপাস্যাৎ দুর্গাস্যাৎ কল্পিরূপিণী।” ইত্যাদি। ইতি শব্দকল্পদ্রুমধৃত মুণ্ডমালা তন্ত্র।
জগদ্ধাত্রী
ছান্দোগ্য উপনিষদে মহাশক্তি বিষয়ক একটি সুন্দর গল্প আছে। সেটি হল: এক সময় ইন্দ্র প্রভৃতি দেবতারা মোহে পড়ে নিজেদের ঈশ্বর ভাবতে শুরু করেছিলেন। তা দেখে ভগবান এক অনির্বচনীয় কোটিচন্দ্রসূর্যের জ্যোতিঃপুঞ্জের রূপে তাঁদের সামনে দেখা দিলেন। তিনি বায়ুকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে? বায়ু উত্তর দিলেন, আমি মাতরিশ্বা, আমি সক কিছু ওড়াতে পারি। জ্যোতিঃপুঞ্জ একটি ঘাস সামনে রেখে বললেন, এই ঘাসটুকু ওড়াও। বায়ু কোনোভাবেই তা ওড়াতে না পেরে লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলেন। তারপর অগ্নি হাজির হলে তাঁর পরিচয় জানতে চাওয়া হল। অগ্নি উত্তর দিলেন, আমি অনল, আমি সব কিছু পোড়াতে পারি। জ্যোতিঃপুঙ্ক তাঁকে সেই ঘাসটি পোড়াতে বললে, অগ্নি তা পোড়াতে না পেরে লজ্জা পেয়ে গেলেন। কাত্যায়নী তন্ত্রের মতে, এই জ্যোতিঃপুঞ্জ পরে চতুর্ভূজা জগদ্ধাত্রীরূপে বিনয়াবনত দেবগণের সামনে কিছুক্ষণ প্রকাশিত থেকে অন্তর্হিতা হলেন। এই জগদ্ধাত্রীও দুর্গার রূপান্তর বিশেষ। শোভা, শক্তি ও জ্ঞানদাত্রীত্ব সূচনার্থে ইনি জ্যোতির্ময়ী বলে বর্ণিত হয়েছেন।
কালী
কালীকে দুর্গার ললাট থেকে উৎপন্না বলা হয়েছে। যথা—”দুর্গার ললাটে জাতা জলদবরণী।” কালী দুর্গার ললাট থেকে উৎপন্না হয়েছেন—এই বাক্যের তাৎপর্য যে, ললাটের সংকোচনেই ক্রোধভাব প্রকাশিত হয় বলে সদা ক্রোধান্বিতা; রণরঙ্গিনী করাল-বদনা কালীকে ললাট-সম্ভবা বলা হয়েছে। বাস্তবিক কালীও দুর্গার রূপান্তর বিশেষ। ক্রোধাবস্থাপন্না শক্তিকেই কালী বলা বয়েছে। ভয়ানক ভাবান্বিতা বিশ্বব্যাপিনী শক্তি—এই অর্থে ঈশ্বরের নাম কালী। এই জন্য কালীর বিবিধ প্রকার ভয়ানক মূর্তি কল্পিত হয়েছে। ধূমাবতী, ছিন্নমস্তা ও ভৈরবী—এ সবারই অতি ভয়ংকর মূর্তি। পাঠকদের জ্ঞাতার্থে একটি ধ্যান দেওয়া হল। দক্ষিণাকালীর ধ্যান—
করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভূজাম্। কালিকাং দক্ষিণাং দিব্যাং মুণ্ডমালাবিভূষিতাম্।। সদ্যশ্চিন্নশিরঃখড়্গবামাধোর্ধ্বকরাম্বুজাম্। অভয়ং বরদং চৈব দক্ষিণোর্ধ্বাধঃপাণিকাম্।। মহামেঘপ্রভাং শ্যামাং তথা চৈব দিগম্বরীম্। কর্ণাবসক্তমুণ্ডালীগলদ্রুধিরচর্চিতাম্।। কর্ণাবতংসতানীতশবযুগ্মভয়ানকম্। ঘোরদ্রংষ্টাং করালাস্যাং পীনোন্নতপয়োধরাম্।। শবানাং করসংঘাতৈঃ কৃতকাঞ্চীং হসন্মুখীম্। সৃক্কদ্বয়গলদ্রক্তধারাবিস্ফুরিতাননাম্।। ঘোররাবাং মহারৌদ্রীং শ্মশানালয়বাসিনীম্। বালার্কমণ্ডলাকারলোচনত্রিতয়ান্বিতাম্।। দন্তুরাং দক্ষিণব্যাপিমুক্তালম্বিকচোচ্চয়াম্। শবরূপমহাদেবহৃদয়োপরি সংস্থিতাম্। শিবাভির্ঘোররাবাভিশ্চতুর্দিক্ষু সমান্বিতাম্। মহাকালেন চ সমং বিপরীতরতাতুরাম্।। সুখপ্রসন্নবদনং স্মেরাননসরোরুহম্। ছিন্নমস্তার ধ্যান আরও ভয়ংকর। বাস্তবিক কালীর মূর্তি, অস্ত্র, অনুচরী ডাকিনী ও যোগিনী এবং বাসস্থান ভূতশ্মশান সবই ভয়ানক ভাবের অবতার বিশেষ। কালী-সংক্রান্ত সব কিছুই যেমন ভয়ানক, তেমন আবার কৃষ্ণ সংক্রান্ত সব কিছুই আনন্দপ্রদ। কৃষ্ণের মূর্তি মনোহর। হাতে আনন্দজনক শব্দকর মুরলী। প্রিয়তমা আনন্দরূপিণী রাধিকা। মনোহর বেশধারিণী সখীগণের মধ্যে কেউ বীণা, কেউ বংশী, কেউ রবাব, কেউ মৃদঙ্গ, কেউ বা খঞ্জনী বাজাচ্ছেন। সংক্ষেপে বললে, তাঁরা নৃত্যগীতে মেতে থাকেন, নানা রকম বাদ্যযন্ত্র সুন্দর বাজাতে পারেন এবং সাদা, লাল, নীল, হলুদ প্রভৃতি নানা রঙের সুন্দর বস্ত্র পরে থাকেন। কালীর মূর্তি ও সংগ্রামকর্ম—দুইই ভয়ংকর। কৃষ্ণের মূর্তি ও নৃত্যগীতরূপ কাজ উভয়ই মনোহর। কালীর উপাসকেরা যেমন সব রকম ভয়ানক ভাবের একত্র সমাবেশ করতে যার-পর-নাই যত্নপরায়ন হয়েছেন, তেমন কৃষ্ণের উপাসকগণও আনন্দজনক ভাব সংগ্রহে, যিনি যেখান থেকে পেরেছেন, সেখান থেকে উপকরণ সঞ্চয় করে গেছেন। কালীর বাসস্থান ভয়ানক শ্মশান, কৃষ্ণের বাসস্থান মনোহর বৃন্দবন। কালীর হাতে ভয়ানক খড়্গ, কৃষ্ণের হাতে মনোহর বাঁশি। কালীর শরীর রক্তমাখা, কৃষ্ণের শরীর চন্দনমাখানো। কালী গম্ভীর গর্জন করেন, কৃষ্ণ মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন। কালী যুদ্ধে মেতে থাকেন, কৃষ্ণ নাচগান করেন। কালীর গলায় মুণ্ডমালা, কৃষ্ণের গলায় ফুলের হার। সংক্ষেপে বললে, কালীর ভয়ানক বেশ, কৃষ্ণের মূর্তি মনোহর। কালীর উপাসকরা নানারকম প্রাণী বলি দেয়, কৃষ্ণের উপাসনায় বলি নিষিদ্ধ। কালীপূজার কাল অমাবস্যা তিথি ও ঘনঘোর অন্ধকার রাত। মৃতদেহের উপর বসে, শ্মশানে তাঁর সাধনা করতে হয়। পূজার বাদ্যযন্ত্র ঢাক ও উপহারের ফুল টকটকে লাল রঙের জবা। তান্ত্রিকেরা আবার পঞ্চ-মকার দিয়ে ভয়ানক সাধনপ্রণালীর বিধানও দিয়েছেন। মদ্য, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা ও মৈথুন—এই পঞ্চ-মকারের প্রায় প্রত্যেকই বাইরে থেকে দেখলে এক এক ভয়ানক সাধন-প্রণালী। বাইরে থেকে—এই কথা বলার তাৎপর্য এই যে, ওই পঞ্চ-মকারের আধ্যাত্মিক ভাব অত্যন্ত নির্মল ও উচ্চ। লোকনাথ বসু তাঁর হিন্দুধর্ম মর্ম নামক বইয়ে পঞ্চ-মকার সম্পর্কে আগমসারের যে এক অংশ উদ্ধৃত করেছেন, তার তাৎপর্য এই যে, ঐ স্থানে মদ্য বলতে পানীয় মদ বোঝায় না, তা ব্রহ্মরন্ধ্র থেকে ক্ষরিত অমৃতধারা বা ব্রহ্মানন্দ; মাংস মানে দেহের মাংস নয়, তা হল জিভের সংযম; মৎস্য বলতে মাছ বোঝায় না, তা হল শ্বাসনিরোধ (প্রাণায়ম); মুদ্রা মানে টাকাপয়সা নয়, বরং আত্মাতে যে পরমাত্মা মুদ্রিত হয়ে আছেন, সেই তত্ত্বজ্ঞান এবং মৈথুন বলতে যৌনসংগম বোঝায় না, তা হল জীবাত্মাতে পরমাত্মার বিরাজ।
—
শারদীয়া দুর্গাদেবীর কৃষ্ণানবম্যাদিবিহিত কল্পারম্ভ (১৪১৯ বঙ্গাব্দ) উপলক্ষ্যে প্রকাশিত বিশেষ রচনা।
Ram Sankar Bhattacharya
নভেম্বর 13, 2012 at 10:53 অপরাহ্ন
‘মুদ্রা মানে টাকাপয়সা নয়’ ঠিক। সাধারণ ভাবে তন্ত্র সাধনায় পঞ্চ-মকারের মুদ্রা বলতে বোঝায় মদ্যের সঙ্গে চাট, অর্থাৎ ভাজাভুজি, ছোলা ইত্যাদি। নিবেদন করার পর মদ্যকে কারণ বলা হয়।
আধার ভেদে বিভিন্ন ব্যবস্থা, একটি পথ একজনের জন্য উপযুক্ত হলেও অন্যজনের পক্ষে অনুপযুক্ত হতে পারে।
সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে কিন্তু কালী বা কৃষ্ণ আলাদা কিছু নয়।
জগন্নাথ মন্দিরে বিমলা ক্ষেত্র আছে। বিমলা ক্ষেত্র ৫১ পীঠের মধ্যে একটি। সেখানে শ্রীজগন্নাথ ভৈরব। সেই জন্যই জগন্নাথ মন্দিরে বিমলা ক্ষেত্রে ছাগবলি হয়, অষ্টমী এবং নবমীর দিন।
সব দেবদেবীর মূলে আছেন পরমব্রহ্ম- ‘দেবতায়া এক আত্মা বহুধা স্তূয়তে’, ‘একস্যাত্ম নোন্যে দেবাঃ প্রত্যাঙ্গানি ভবন্তি’ (নিরুক্ত)।
আপনি আন্তরিক চেষ্টা করছেন, খুব ভাল লাগছে। সব শিখে যাবেন। গুরুর আশীর্বাদ তো পেয়েছেন। শুভমস্তু।
অর্ণব দত্ত
নভেম্বর 14, 2012 at 2:13 পুর্বাহ্ন
এই রচনাটি আমার নয়। আমি অনুলেখক মাত্র। প্রাচীন বাংলা থেকে আধুনিক বাংলায় রূপান্তর করেছি। এই যা।
Ram Sankar Bhattacharya
নভেম্বর 13, 2012 at 11:01 অপরাহ্ন
রাধার কোন উল্লেখ কিন্তু মহাভারত বা কোন প্রামাণ্য শাস্ত্র গ্রন্থে নেই। রাধার উদ্ভব বাঙালী বৈষ্ণবরা করেছিলেন সুলতানি আমলে। সে গল্প অন্য।
অর্ণব দত্ত
নভেম্বর 14, 2012 at 2:17 পুর্বাহ্ন
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, রাধার টানটুকু নিতে। সেটাই আসল। বাকিটা শুকনো ইতিহাস মাত্র।