RSS

সহজ চণ্ডীপাঠ বিধি

07 অক্টো.

বাগবাজার সর্বজনীনের মণ্ডপে ২০১০ সালে আমার তোলা ছবি।

শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম্ বা দুর্গাসপ্তশতী হিন্দু শাক্তদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। দুর্গাপূজা সহ একাধিক অনুষ্ঠানে চণ্ডীপাঠ অবশ্য করণীয়। কিন্তু ৭০০ শ্লোকবিশিষ্ট এই বিশাল গ্রন্থটি একবারে পাঠ করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। প্রাচীন শাস্ত্রগুলিতে একদিনে একবার বসে পূর্ণাঙ্গ পাঠেরই বিধান দেওয়া হয়েছে। তবে এই বিধান সকাম পূজকের জন্য (মানে, যিনি বিশেষ কোনো ফলকামনায় চণ্ডীপাঠ করছেন)। যিনি নিষ্কাম দেবীভক্ত, তাঁর জন্য নিয়মের বাঁধন আলগা, একথা তন্ত্রে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। ভারতের নানা প্রান্তে নিষ্কাম দেবীভক্তেরা দেবীপ্রীতির জন্য কিভাবে চণ্ডী পারায়ণাদি করে থাকেন, তার নিয়মগুলি এখানে লিখছি। দেবীভক্তেরা নিজ নিজ সুবিধা মতো একটি পদ্ধতি বেছে নেবেন।

 

প্রথমে পঞ্চোপচার বা দশোপচারে শ্রীশ্রীচণ্ডীদেবীর পূজা করবেন। চণ্ডীপূজাবিধি বাজারে প্রচলিত চণ্ডীপুস্তকগুলিতে দেওয়া থাকে। অত নিয়ম না মানতে পারলে, একটি ঘটস্থাপন করে ঘরে যেমন করে ফুল-বেলপাতা-জল-বাতাসা দিয়ে পূজা করেন, তেমনি করবেন। বাকিটা চণ্ডীপাঠের মাধ্যমেই হয়ে যাবে।

 

চণ্ডীপাঠ ত্রি-অঙ্গ বা ষড়-অঙ্গ হতে পারে। একদিনে একেবারে বসে ষড়ঙ্গ চণ্ডীপাঠই বিধেয়। কিন্তু এক এক দিনে ভেঙে ভেঙে চণ্ডীপাঠ করলে ত্রি-অঙ্গ পাঠ করলেই চলবে।

 

ত্রি-অঙ্গ পাঠের সময় মূল পাঠের আগে প্রথমে বৈদিক দেবীসূক্তম্, অর্গলাস্তোত্রম, কীলকস্তব ও দেবীকবচ পাঠ করবেন। আপনার ঘরে মায়ের সিংহবাহিনী কোনো রূপের ছবি বা মূর্তি থাকলে দেবীবাহন মহাসিংহেরও ধ্যান করবেন। এরপর নবার্ণমন্ত্র জপ করে, তারপর মূল পাঠ করবেন। এই সব মন্ত্র ও স্তোত্র যেকোনো চণ্ডীগ্রন্থে পেয়ে যাবেন।

 

মূল পাঠ তিন প্রকারে করা যায়, ৩ দিনে, ৭ দিনে বা ৯ দিনে।

 

৩ দিনে চণ্ডীপাঠ করতে হলে মূল পাঠ নিম্নোক্ত রূপে ভেঙে নেবেন:

প্রথম দিন—প্রথম চরিত্র (অধ্যায় ১)

দ্বিতীয় দিন—মধ্যম চরিত্র (অধ্যায় ২, ৩, ৪)

তৃতীয় দিন—উত্তম চরিত্র (অধ্যায় ৫ থেকে ১৩)

 

৭ দিনে চণ্ডীপাঠ করতে হলে মূল পাঠ নিম্নোক্ত রূপে ভেঙে নেবেন:

প্রথম দিন—অধ্যায় ১

দ্বিতীয় দিন—অধ্যায় ২-৩

তৃতীয় দিন—অধ্যায় ৪

চতুর্থ দিন—অধ্যায় ৫-৮

পঞ্চম দিন—অধ্যায় ৯-১০

ষষ্ঠ দিন—অধ্যায় ১১

সপ্তম দিন—অধ্যায় ১২-১৩

 

৯ দিনে চণ্ডীপাঠ করতে হলে (এটি সাধারণত শারদ ও বাসন্তী নবরাত্রিতে করা হয়) মূল পাঠ নিম্নোক্ত রূপে ভেঙে নেবেন:

প্রতিপদ—অধ্যায় ১

দ্বিতীয়া— অধ্যায় ২, ৩, ৪

তৃতীয়া— অধ্যায় ৫, ৬

চতুর্থী—অধ্যায় ৭

পঞ্চমী— অধ্যায় ৮

ষষ্ঠী— অধ্যায় ৯, ১০

সপ্তমী— অধ্যায় ১১

মহাষ্টমী—অধ্যায় ১২

মহানবমী—অধ্যায় ১৩

বিজয়াদশমী—অপরাধক্ষমাস্তোত্রম্।

 

মহানবমীর দিন ত্রয়োদশ অধ্যায় পাঠের পরও অপরাধক্ষমাস্তোত্রম্ পড়তে পারেন। তারপর ইচ্ছা করলে রহস্যত্রয়ও পড়বেন।

 

ভাগে ভাগে চণ্ডীপাঠ করলে প্রতিদিন পাঠের পর কুঞ্জিকা স্তোত্র অবশ্য পাঠ করবেন। রামকৃষ্ণ মিশন উদ্বোধন কার্যালয় প্রকাশিত স্বামী জগদীশ্বরানন্দ অনূদিত ও সম্পাদিত শ্রীশ্রীচণ্ডী-তে (পুথি বা পকেট সাইজ নয়, মূল বইটি) কুঞ্জিকা স্তোত্রম্ দেওয়া আছে।

 

পুনরায় বলছি, এই সব নিয়ম নিষ্কাম দেবীভক্তদের জন্য, যাঁদের দেবীপ্রীতি ও ভক্তি ছাড়া আর কিছু কামনা নেই তাঁদের জন্য। যাঁরা বিশেষ ফলকামনায় চণ্ডীপাঠ করেন বা ঠাকুরদেবতাদের সঙ্গে ‘Give-and-Take’ সম্পর্ক রাখেন, তাঁরা বিধিমতে পূজা করে ষড়ঙ্গ চণ্ডীপাঠই করবেন, কোনোভাবেই অঙ্গহীন পূজাপাঠ করবেন না—তাঁদের জন্য নান্য পন্থা বিদ্যতে—অন্য পথ নেই।

 

ট্যাগ সমুহঃ , ,

One response to “সহজ চণ্ডীপাঠ বিধি

  1. তমাল নাগ

    অক্টোবর 13, 2012 at 1:21 অপরাহ্ন

    দারুন হয়েছে

     

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

 
%d bloggers like this: