RSS

রাজা আলফ্রেডের কেকগুলি

04 অক্টো.

প্রাচীন ইংরেজি লোককথা। জেমস বাল্ডউইনের ফিফটি ফেমাস স্টোরিজ রিটোল্ড বই থেকে অনূদিত।

© অর্ণব দত্ত

অনেক অনেক বছর আগে ইংল্যান্ডে আলফ্রেড নামে এক ভারি বুদ্ধিমান ও দয়ালু রাজা ছিলেন। দেশে তাঁর মতো মানুষ আর একটিও ছিল না। শুধু দেশে কেন, সারা দুনিয়াতেও ছিল না। তাই আজও তাঁকে সবাই মহান আলফ্রেড বলে ডাকে।

সে যুগে রাজাদের বড়ো সুখের জীবন ছিল না। দেশে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকত। অবশ্য যুদ্ধে তাঁর মতো নেতাও বড়ো একটা দেখা যেত না। তাই রাজকাজ আর যুদ্ধবিগ্রহ নিয়ে আলফ্রেডের বেশ ব্যস্ত জীবন কাটছিল।

সে সময় ডেন নামে এক দুর্ধর্ষ ডাকাতে জাতি সাতসমুদ্দুর পেরিয়ে ইংরেজদের সঙ্গে লড়তে এসেছিল। তাদের সংখ্যা ছিল বেশি। গায়ের জোর আর সাহসও ছিল অনেক বেশি। শেষের বেশ কয়েকটা যুদ্ধে তারা হারের মুখ দেখেনি। এইভাবে চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই তারা সারা দেশের মালিক হয়ে বসত।

দুদলের মধ্যে ঘোরতর যুদ্ধ হল। কিন্তু যুদ্ধের শেষে ইংরেজ বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। যে যার প্রাণ নিয়ে যেদিকে পারল পালিয়ে গেল। রাজা আলফ্রেডও বন আর জলাজঙ্গল পেরিয়ে পালিয়ে গেলেন।

দিনের শেষে রাজা খুব ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে এক কাটুরের কুটিরে এসে পৌঁছালেন। তাই কাঠুরের বউয়ের কাছ থেকে কিছু খাবার আর তাদের কুটিরে ঘুমানোর একটু জায়গা চাইলেন।

বউটি উনুনের উপর কিছু কেক সেঁকছিল। ছেঁড়া কাপড় পরা হতভাগ্য লোকটিকে দেখে তার ভারি দয়া হল। কিন্তু সে বুঝতেই পারল না যে ইনি আসলে রাজা।

কাঠুরের বউ বললে, “হ্যাঁ, অবশ্যই। কেকগুলো একটু দেখো, তাহলে রাতের খাবার পাবে। আমি যাই, গিয়ে দুধ দুইয়ে নিয়ে আসি। নজর রেখো কিন্তু, যাতে পুড়ে না যায়।”

রাজা আলফ্রেড কেকগুলোর উপরে নজর রাখতেই চাইছিলেন। কিন্তু তাঁর মন পড়ে ছিল অন্য দিকে। কিভাবে তিনি তাঁর বাহিনীকে আবার গড়ে তুলবেন? কিভাবে ওই দুর্ধর্ষ ডেনসদের পরাজিত করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবেন? এই সব ভাবতে ভাবতে তিনিনিজের খিদের কথা ভুলে গেলেন, কেকের কথাও ভুলে গেলেন; এমনকি তিনি যে কাঠুরের কুটিরে আছেন সেটাও ভুলে গেলেন। তাঁর মন পরের দিনের জন্য পরিকল্পনা করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

ইতিমধ্যে সেই বেঁটেখাটো চেহারার বউটি ফিরে এল। উনুনের উপর কেকগুলো থেকে তখন ধোঁয়া উঠছে। সেগুলো পুড়ে কালো ছাই হয়ে গেছে। দেখে তো বউটি রেগে আগুন হলেন!

সে চেঁচিয়ে বলল, “কুঁড়ের বাদশা কোথাকার! কী করেছো তুমি! খেতে চাও, কিন্তু কাজে মন দিতে পারো না?”

আমি শুনেছি, বউটি নাকি রাজাকে লাঠির বাড়িও মেরেছিল এক ঘা। তবে আমার মনে হয় না যে, সে অতটা বদমেজাজি ছিল।

এমন বকুনি খেয়ে রাজা নিশ্চয় মনে মনে হেসেছিলেন। খুব খিদেও পেয়েছিল তাঁর। তাই বউটির কথায় তিনি রাগ করতে পারলেন না। কেকগুলো যে সত্যিই পুড়ে গেছে।

আমি জানি না, সেরাতে রাজা আদৌ কিছু খেতে পেয়েছিলেন কিনা। বা কিছু না খেয়েই তাঁকে কাটাতে হয়েছিল কিনা? কিন্তু এটা জানা যায়, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আবার নিজের বাহিনী গড়ে তুলে এক সাংঘাতিক যুদ্ধ লড়ে ডেনদের হারিয়ে দিয়েছিলেন।

 
2 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন অক্টোবর 4, 2012 in পুরনো লেখা

 

2 responses to “রাজা আলফ্রেডের কেকগুলি

  1. Indranil Modak

    অক্টোবর 5, 2012 at 1:16 পুর্বাহ্ন

    এটা হয়ত আজকে তেমন জমাটি গল্প হতে পারল না, সেসময় নিশ্চয়ই ভালো লেগেছিল সবার। পুরনো লোককথা হিসাবে আপনার পরিশ্রম সার্থক। পুনঃ আপনার ব্লগের নামটা তো তুলে দিলেন, আগের নামটা বেশ ভাও ছিল কিন্তু। ছবিটাও চমৎকার ছিল।

     
    • অর্ণব দত্ত

      অক্টোবর 5, 2012 at 2:03 অপরাহ্ন

      এটা একটা বহু পুরনো বই থেকে অনুবাদ করা গল্প। গল্প হিসেবে তেমন জমেনি, ঠিকই তবে পুরনো ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ বোধ আছে। তাই থেকেই দেওয়া।ব্লগের নামটা একেবারে তুলে দিইনি যদিও, ই-বইগুলো ওই নামেই বার করব। আসলে একটু আত্মপ্রচারের ইচ্ছা হচ্ছে। দিনদিন আপনাদের আস্কারা পেয়ে দাম্ভিকতা বাড়ছে কিনা! 😀

       

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

 
%d bloggers like this: