জীবন

তরুণ হেনরি জেমস
হেনরি জেমসের জন্ম নিউ ইয়র্কের এক ধনী ও সম্ভ্রান্ত আমেরিকান পরিবারে। শিক্ষা মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। পরে ১৮৬২ সালে তিনি আইন পড়ার জন্য যোগ দেন হার্ভার্ডে। নিউ ইংল্যান্ড লেখকগোষ্ঠীর সদস্য জেমস রাসেল লোয়েল, এইচ. ডাবলিউ. লংফেলো, উইলিয়াম ডিন প্রমুখ ছিলেন তাঁর বন্ধুস্থানীয়। হাওয়েলের অ্যাটলান্টিক মান্থলি ও অন্যান্য কয়েকটি মার্কিন পত্রিকায় লেখালিখি করতে গিয়ে জেমসের সাহিত্যজীবনের সূত্রপাত হয়। ১৮৬০-এর দশকের শেষদিক থেকে পুরনো ইউরোপীয় সভ্যতা তাঁকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করতে শুরু করে। এই সময় ইউরোপে তিনি দীর্ঘদিন কাটান। শেষে ১৮৭৫ সালে পাকাপাকিভাবে চলে আসেন লন্ডনে। ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত জেমস লন্ডনেই ছিলেন। তারপর তিনি চলে যান রাইতে। সেখানেই বাকি জীবন কাটিয়ে দেন। ১৯১৫ সালে তিনি ব্রিটেনের নাগরিকত্ব লাভ করেছিলেন।
সাহিত্য
জেমস ছিলেন বহুমুখী প্রতিভাধর লেখক। উপন্যাস, ছোটোগল্প, ভ্রমণকাহিনি, সাহিত্য সমালোচনা, আত্মজীবনী—সব কিছুই সারাজীবন ধরে নিয়মিত লিখে গিয়েছেন। তাঁর প্রধান উপন্যাসগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। রোডেরিক হাডসন (১৮৭৫) থেকে শুরু করে যে চারটি উপন্যাস আমরা পাই, সেগুলি তাঁর পরিণত উপন্যাসগুলির তুলনায় অনেক সরল সাদাসিধে পদ্ধতিতে লেখা। এগুলির মধ্যে তিনি ধরেছেন পুরনো ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও নব্য আমেরিকান সভ্যতার পার্থক্যের দিকটিকে। এই শ্রেণির অপর তিনটি উপন্যাসের নাম দ্য আমেরিকান (১৮৭৬-৭৭), দ্য ইউরোপিয়ানস (১৮৭৮) ও দ্য পোর্ট্রেট অফ আ লেডি (১৮৮১)। শেষোক্ত উপন্যাসটিকে তাঁর প্রথম জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা বলা চলে। এই উপন্যাসের সূক্ষ্ম চরিত্র বিশ্লেষণ ও সযত্ন রচনাশৈলী জেমসকে তাঁর সাহিত্যজীবনের পরবর্তী স্তরে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। এরপর যে তিনটি উপন্যাস তিনি লেখেন, সেগুলি মূলত তাঁর ইংরেজ-চরিত্র অধ্যয়নের ফল। এগুলি হল: দ্য ট্র্যাজিক মিউজ (১৮৯০), দ্য স্পয়েলস অফ পয়েন্টন (১৮৯৭) ও দ্য অকার্ড এজ (১৮৯৯)। এগুলির মধ্যে দ্য স্পয়েলস অফ পয়েন্টন উপন্যাসটি তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্রাকার। এই উপন্যাসটি জেমসের রচনাশৈলীর বিবর্তনের অন্যতম প্রধান সাক্ষী। সাহিত্যজীবনের মধ্যগগনে তিনি রচনা করেন তিনটি উপন্যাস—দ্য উইংস অফ দ্য ডোভ (১৯০২), দ্য অ্যাম্বাস্যাডারস (১৯০৩) ও দ্য গোল্ডেন বাওল (১৯০৪)। এই তিন উপন্যাসে তিনি আবার ফিরে আসেন ইউরোপীয় ও আমেরিকান সংস্কৃতির বিরোধের জায়গাটিতে। তবে এখানে চরিত্রচিত্রণে তিনি অনেক সূক্ষ্ম এবং শিল্পসৃজনে এক দক্ষ রূপকার। তাই আধুনিক উপন্যাসের সারিতে এগুলির নাম উঠে আসে সবার আগে। তবে এই উপন্যাসগুলি রসাস্বাদনের জন্য পাঠকের গভীর মনোযোগ ও সচেতনতা দাবি করেছিল। তাই এগুলি কখনই খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। আমেরিকান জীবনধারা অধ্যয়ন করে জেমস দুটি অসামান্য বই লিখেছিলেন—ওয়াশিংটন স্কোয়ার (১৮৮১) ও দ্য বস্টনিয়ানস (১৮৮৬)। আরও দুটি বই তিনি সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯১৭ সালে দ্য সেন্স অফ দ্য পাস্ট ও দ্য আইভরি টাওয়ার নামে প্রকাশিত হয় বইদুটি।
ছোটোগল্পেও হেনরি জেমস ছিলেন মুকুটহীন সম্রাট। তিনি প্রায় একশোটি ছোটোগল্প লিখেছিলেন, যার সূচনা হয়েছিল আমেরিকান পত্রপত্রিকার চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে। জীবনের মধ্যভাগ পর্যন্ত ছোটোগল্প লিখেছেন তিনি। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত গল্প-সংকলন সম্ভবত দ্য টার্ন অফ দ্য স্ক্রিউ (১৮৯৮)। কিন্তু অতিপ্রাকৃতের প্রতি তাঁর আগ্রহ সবচেয়ে বেশি পরিস্ফুট হয় দ্য অল্টার অফ দ্য ডেড, দ্য বিস্ট ইন দ্য জাঙ্গল, দ্য বার্থ প্লেস, অ্যান্ড আদার টেলস (১৯০৯) গল্প-সংকলনে। অন্যান্য গল্পগুলি সংকলিত হয়েছে দ্য ম্যাডোনা অফ দ্য ফিউচার অ্যান্ড আদার টেলস (১৮৭৯), দ্য অ্যাসপার্ন পেপারস অ্যান্ড আদার স্টোরিজ (১৮৮৮), টারমিনেশনস (১৮৯৫) ও দ্য টু ম্যাজিকস (১৮৯৮) সংকলনগুলিতে।
তাঁর আত্মজৈবনিক রচনাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য— আ স্মল বয় অ্যান্ড আদারস (১৯১৩), নোটস অফ আ সন অ্যান্ড ব্রাদার (১৯১৪), এবং মরণোত্তর প্রকাশিত খণ্ড-রচনা টারমিনেশনস (১৯১৭)। (উল্লেখ্য, টারমিনেশন নামে জেমসের একটি গল্প-সংকলনও আছে, সেটি আলাদা বই।) ১৯২০ সালে প্রকাশিত হয় জেমসের পত্র সংকলন। এছাড়া নোটস অন নভেলিস্টস (১৯১৪), এবং প্রবন্ধ দ্য আর্ট অফ ফিকশন (১৮৮৪) তাঁর দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রচনা। ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত দ্য নোটবুক অফ হেনরি জেমস লেখককে জানার এক অতীত প্রয়োজনীয় বই।
দর্শন
হেনরি জেমস আধুনিক ঔপন্যাসিকদের মধ্যে প্রথম প্রজন্মের ব্যক্তিত্ব। তাঁর উপন্যাস এবং ভার্জিনিয়া উলফ, ক্যাথরিন ম্যানসফিল্ড, কনরাড প্রমুখের উপন্যাসের মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে ঐক্য দেখা যায়। উপন্যাস রচনা ছিল জেমসের দৃষ্টিতে এক শিল্প। তিনি উপন্যাসকে তাই বিচার করতেন শিল্পের দৃষ্টিকোণ থেকে, নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে নয়। এই জন্যই নিজের উপন্যাসে উদ্দেশ্য ও বাস্তব জীবনের নিরপেক্ষ উপস্থাপনাকে তিনি অতিনাটকীয় রোম্যান্স বা ভাবপ্রবণতার আধিক্যের চেয়ে উচ্চ স্থানে বসিয়েছিলেন। বাইরের ঘটনার তুলনায় মানবমনের সূক্ষ্ম টানাপোড়েন তার উপন্যাসের কেন্দ্রস্থলে থাকত।
Indranil Modak
সেপ্টেম্বর 28, 2012 at 1:16 অপরাহ্ন
খুব সহজ সরল ভাষায় মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা।
অর্ণব দত্ত
সেপ্টেম্বর 29, 2012 at 12:56 অপরাহ্ন
ধন্যবাদ। 🙂