RSS

ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষার ইতিহাস

17 সেপ্টে.

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকার ও পরে ব্রিটিশ রাজ সরকার ভারতবাসীর শিক্ষার মানোন্নয়নের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেননি। তাঁদের শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল কম-মাইনেতে ইংরেজি-শিক্ষিত কেরানির দল তৈরি করা।

১৭৮১ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস কলকাতা মাদ্রাসা (অধুনা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়) চালু করেন। ১৭৯১ সালে জোনাথান ডানকান বারাণসীতে একটি সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮০০ সালে লর্ড ওয়েলেসলি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীদের দেশীয় ভাষা ও আদবকায়দা শেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে কলকাতায় চালু করেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ।

১৮১৩ সালের চার্টার আইনে ভারতে শিক্ষাবিস্তারে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দায়িত্বের কথা প্রথম স্বীকার করা হয়। এই আইন মোতাবেক, ভারতীয়দের শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়। এরপর ১৮১৭ সালে ডেভিড হিউম কলকাতা হিন্দু কলেজ (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) স্থাপন করেন।

১৮৩৫ সালে ইংরেজি ভাষাকে ভারতের উচ্চশিক্ষার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৫৪ সালে প্রকাশিত হয় ‘উড’স ডেসপ্যাচ অন এডুকেশন’। চার্লস উডের এই ‘ডেসপ্যাচ’কেই ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষার ম্যাগনা কার্টা আখ্যা দেওয়া হয়। তিনিই প্রথম প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত শিক্ষার একটি যুক্তিসঙ্গত পাঠক্রম নথি আকারে প্রকাশ করেন। এই নথিতে প্রাথমিক স্তরে, মাধ্যমিক স্তরে এবং উচ্চশিক্ষা স্তরে কিভাবে কি পড়ানো হয়ে তার বিভাগ করে দেন তিনি। উচ্চশিক্ষার মাধ্যম হিসাবে ইংরেজি এবং প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় ভাষাকে গ্রহণ করা হয়। দেশীয় ভাষা শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইঙ্গ-দেশীয় ভাষা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও অনুমোদিত কলেজগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি সরকারি অনুদান পেতে শুরু করে। নারীশিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে ঘরোয়া পরিবেশে মেয়েদের শিক্ষা দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। শিক্ষক-প্রশিক্ষণের জন্যও উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। কারিগরি শিক্ষার গুরুত্বও স্বীকৃতি পায়। ১৮৫৭ সালে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

হান্টার কমিশন ১৮৮২-৮৩

ওয়ার্ডসের আবেদনের ভিত্তিতে লর্ড রিপন ভারত সরকারের শিক্ষানীতি পুনরালোচনার জন্য এক সদস্যের হান্টার কমিশন গঠন করেন। এই কমিশন জানায়, প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা, সাক্ষরতা ও বাণিজ্য শিক্ষার বিস্তারেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হান্টার কমিশন। শুধু তাই নয়, হান্টার নারীশিক্ষা বিস্তার ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপের জন্যও সুপারিশ করেছিলেন। এরপর ১৮৮২ সালে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৮৮৭ সালে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।

ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯০৪

লর্ড কার্জনের আমলে ১৯০৪ সালের ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস ও কার্যকর হয়। ১৯০১ সালে সিমলা শিক্ষা সম্মেলনের পর লর্ড কার্জন শিক্ষাক্ষেত্রে স্যার টমাস র্যালে কমিশন গঠন করেন। এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এই আইন পাস হয়। উক্ত কমিশনে একজন ভারতীয় সদস্যও ছিলেন। তিনি গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আইন চালু হওয়ার পর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলোদের মনোনীত করার অধিকার পায়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ব্যাপারে সরকারের ভেটো প্রয়োগের অধিকারও স্বীকৃত হয়। বেসরকারি কলেজগুলির উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃত্ব শুরু হয়। ফেলোদের সদস্যসংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্তিয়ার-এলাকা ও অনুমোদিত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে বাঁটোয়ারা করে দেওয়ার জন্য গভর্নর-জেনারেল-ইন-কাউন্সিলকে ক্ষমতা দেওয়া হয়।

স্যাডলার কমিশন, ১৯১৭-১৯

১৯০৬ সালে দেশীয় রাজ্য বরোদায় রাজার আদেশ বলে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়। ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম পর্যালোচনার জন্য গঠিত হয় স্যাডলার কমিশন। এই কমিশনের দুজন ভারতীয় সদস্য ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ। ১৯১৯ সালে স্যাডলার কমিশন উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রস্তাব রাখেন। স্যাডলার কমিশন সুপারিশ করেন, ইন্টারমিডিয়েটের পর ৩ বছরের ডিগ্রি কোর্স রাখা উচিত, নারীশিক্ষায় আরও গুরুত্ব আরোপ করা উচিত, শিক্ষক-প্রশিক্ষণের সুযোগ আরও বৃদ্ধি করা উচিত, এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকা উচিত এবং আবাসিক ও বোর্ডিং সুবিধাযুক্ত হওয়া উচিত।

হার্টোগ কমিশন, ১৯২৯

হার্টোগ কমিশন জাতীয় স্তরে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বের কথা বলে। এই কমিশন তহবিল সঞ্চয় ও উন্নয়ন নীতির উপর জোর দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়ার কথাও বলা হয়।

বুনিয়াদি শিক্ষাক্ষেত্রে ওয়ার্ধা পরিকল্পনা, ১৯৩৭

১৯৩৭ সালে মহাত্মা গান্ধী হরিজন পত্রিকায় একগুচ্ছ নিবন্ধ প্রকাশ করে শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বিশেষ পরিকল্পনার প্রস্তাব দেন। এই পরিকল্পনা বুনিয়াদি শিক্ষা পরিকল্পনা বা ওয়ার্ধা স্কিম নামে পরিচিত। এই পরিকল্পনার মূল কথা ছিল কাজের মাধ্যমে শিক্ষা। জাকির হুসেন কমিটি এই পরিকল্পনার খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ করেন এবং কয়েকটি কোর্সের জন্য পাঠক্রম তৈরি করেন। শুধু তাই নয়, শিক্ষক-প্রশিক্ষণ, পর্যালোচনা, পরীক্ষা ও শিক্ষাপ্রশাসন পরিচালনা সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রস্তাবও দেন।

সারজেন্ট পরিকল্পনা, ১৯৪৪

এই পরিকল্পনা ভারতে বুনিয়াদি শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনের উপর জোর দেয় এবং ৬-১১ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের জন্য সর্বজনীন অবৈতনিক শিক্ষাদানের কথা বলে। এই পরিকল্পনায় ৬ বছরের বিদ্যালয় পাঠক্রমের সুপারিশ করা হয়। উচ্চ বিদ্যালয়গুলিকে (১) আকাদেমিক ও কারিগরি ও (২) ভোকেশনাল—এই দুই ভাগে ভাগ করার কথা বলা হয়। এই পরিকল্পনাতেই ইন্টারমিডিয়েট স্তর অবলুপ্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়। সারজেন্ট পরিকল্পনায় ৪০-বছরের শিক্ষা-সংস্কার পরিকল্পনার উপর জোর দেওয়া হয়। পরে খের কমিটি এই সংস্কার পরিকল্পনার সময়কাল কমিয়ে ১৬ বছর করে।

 
3 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 17, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

3 responses to “ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষার ইতিহাস

  1. Indranil Modak

    সেপ্টেম্বর 28, 2012 at 1:21 অপরাহ্ন

    osadharon lekha. share korlam.

     
  2. Ranjit Ghosh

    এপ্রিল 3, 2015 at 4:30 অপরাহ্ন

    খুব ভালো হয়েছে লেখাটা

     

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

 
%d bloggers like this: