RSS

জ্যোতির্বিজ্ঞানের তেরোটি বিশ্বকাঁপানো আবিষ্কার

10 সেপ্টে.

গ্রহের গতি (খ্রিস্টপূর্ব ২০০০-৫০০ অব্দ)

প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের এক হাজার বছরের পর্যবেক্ষণের ফলে জানা যায়, আকাশের তারাগুলির মধ্যে কয়েকটি নিজস্ব গতি আছে। এইগুলি এবং আমাদের পৃথিবী গ্রহ তারামণ্ডল থেকে পৃথক এক সৌরজগতের সদস্য।

 

কোপারনিকাস ও তাঁর সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের মডেল

পৃথিবীর গতি (১৫৪৩)

আগেকার মানুষের ধারণা ছিল, সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে পৃথিবী এবং তাকে কেন্দ্র করেই যাবতীয় গ্রহনক্ষত্র আবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু নিকোলাস কোপারনিকাস এই ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটিয়ে জানান যে, সৌরজগতের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে সূর্য। তাকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহগুলি ঘুরছে।

 

গ্রহগুলির উপবৃত্তাকার কক্ষপথ

গ্রহগুলির কক্ষপথ উপবৃত্তাকার (১৬০৫-১৬০৯)

গ্রহগুলির কক্ষপথ যে উপবৃত্তাকার তা গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে প্রথম যথাযথভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হন জোনান কেপলার।

বৃহস্পতির চাঁদেরা

বৃহস্পতির চাঁদ (১৬০৯-১৬১২)

গ্যালিলিও গ্যালিলি প্রথম আবিষ্কার করেন যে বৃহস্পতিরও পৃথিবীর মতো চাঁদ আছে। তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, সৌরজগতের আকৃতি সম্পর্কে টলেমি যা বলেছিলেন, তা ঠিক নয় ; এই ব্যাপারে কোপারনিকাসই ঠিক কথা বলেছেন।

 

এডমন্ড হ্যালি

হ্যালির ধূমকেতু ও তার নিয়তাকার কক্ষপথ (১৭০৫-১৭৫৮)

এডমন্ড হ্যালি প্রমাণ করেন যে, গ্রহগুলির মতো ধূমকেতুও নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। তিনি সঠিকভাবে হ্যালির ধূমকেতুর প্রত্যাবর্তনকালটি সম্পর্কে ভবিষ্যদবাণী করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ১৫৩১ ও ১৬০৬ সালে যে ধূমকেতু দুটি দেখা গিয়েছিল, তারা একই ধূমকেতু। এই ধূমকেতু ৭৬ বছর পর পর পৃথিবীর কাছাকাছি আসে। ১৭৫৮ সালে এই ধূমকেতু আবার পৃথিবীর কাছে ফিরে এলে হ্যালির ভবিষ্যদবাণী সত্য প্রমাণিত হয়। দুর্ভাগ্যের কথা, হ্যালি নিজে এই সত্য হওয়ার ঘটনার সাক্ষী থাকতে পারেননি। ১৭৪২ সালে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।

 

আকাশগঙ্গা হল তারা-ভরা একটি বিশালাকার চাকতি (১৭৮০-১৮৩৪)

টেলিস্কোপ-নির্মাতা উইলিয়াম হারসেল ও তাঁর বোন ক্যারোলিন আকাশের মানচিত্র তৈরি করেন। তাঁরা প্রমাণ করেন যে, সৌরজগৎ তারায় ভরা একটি বিরাট চাকতির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এই চাকতিটাই হল মিল্কি ওয়ে বা আকাশগঙ্গা। হারসেল তাঁর নিজের তৈরি টেলিস্কোপের মাধ্যমে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। তিনি ২,৪০০টি সমীক্ষা এলাকা থেকে ৯০,০০০-এরও বেশি তারার উদাহরণ সংগ্রহ করেছিলেন। পরবর্তীকালের গবেষণা থেকেও প্রমাণিত হয়েছে যে আমাদের এই ছায়াপথটি চাকতি-আকারের। তবে হারসেল যেমন বলেছিলেন, আমাদের সূর্য আকাশগঙ্গার ঠিক কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নয়। এবং আকাশগঙ্গার আকারও হারসেল কথিত আকারের চেয়ে অনেক বড়ো।

 

আকাশগঙ্গা

সাধারণ আপেক্ষিকতা (১৯১৫-১৯১৯)

আলবার্ট আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন। এই তত্ত্বে ভরের সঙ্গে স্থান ও কালের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। ১৯১৯ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি সূর্যগ্রহণের উপর এই তত্ত্বের প্রয়োগ করে এর যাথার্থতা প্রমাণ করেন।

 

মহাবিশ্ব ক্রমপ্রসারণশীল (১৯২৪-১৯২৯)

এডউইন হাবল নিকটবর্তী একাধিক ছায়াপথের দূরত্ব নির্ধারণ করে আবিষ্কার করেন যে, তারা আমাদের ছায়াপথ থেকে যত দূরে যাচ্ছে, ততই তারা দ্রুতগতিতে আমাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাঁর গণনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, মহাবিশ্ব ক্রমশই প্রসারিত হয়ে চলেছে।

 

আকাশগঙ্গার কেন্দ্র থেকে তেজষ্ক্রিয় প্রবাহ (১৯৩২)

কার্ল জানস্কি রেডিও-জ্যোতির্বিদ্যা আবিষ্কার করেন। তিনি আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থলে একটি আশ্চর্য রেডিও তরঙ্গ-বিকিরণকারী বস্তুর সন্ধান পান। জানস্কি তাঁর কার্যালয় বেল টেলিফোন ল্যাবোরেটরিজের জন্য বেতার তরঙ্গ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনটি স্ট্যাটিকের সন্ধান পান। একটি স্ট্যাটিক স্থানীয় ঝড়ের, দ্বিতীয়টি ছিল দূরের ঝড়ের, তৃতীয়টি একটি চিরস্থায়ী হিস-শব্দকারী স্ট্যাটিক। আকাশে আকাশগঙ্গার অবস্থান দেখে, জানস্কি সিদ্ধান্ত নেন যে, সেই স্ট্যাটিকটি আসছে আকাশগঙ্গার কেন্দ্রস্থ কোনো অজ্ঞাত উৎস থেকে।

 

কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন (১৯৬৪)

অর্নো পেনজিয়াস ও রবার্ট উইলসন কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন আবিষ্কার করেন। তাঁরা এটিকে বিগ ব্যাং-এর ধ্বংসপরবর্তী ঔজ্জ্বল্য বলে অনুমান করেন। হাবলের গবেষণার প্রেক্ষিতে গণনা চালিয়ে তাঁরা বলেন যে, ছায়াপথগুলি একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাঁদের মত মহাবিশ্বের উৎসের পিছনে বিগ ব্যাং-এর সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে।

 

গামা-রশ্মি বিস্ফোরণ

গামা-রে বিস্ফোরণ (১৯৬৯-১৯৯৭)

একগুচ্ছ অত্যাধুনিক টেলিস্কোপের সাহায্যে গামা-রে বার্স্টের দুই দশকের রহস্যের সমাধান হয়েছে। এগুলি হল গামা-রে ফোটনের ক্ষণস্থায়ী বিস্ফোরণ। এগুলি আলোর সবচেয়ে শক্তিশালী রূপ এবং পারমাণবিক বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানকালে দূরের কিছু সুপারনোভা বিস্ফোরণ ও তার ফলে কিছু অতিবৃহৎ নক্ষত্রের মৃত্যুর জন্য এই ধরণের বিস্ফোরণকে দায়ী করা হয়।

 

অন্যান্য তারাদের গ্রহ (১৯৯৫-২০০৪)

উন্নত টেলিস্কোপ প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিকরা সৌরজগৎ-বহির্ভূত কিছু গ্রহেরও সন্ধান পেয়েছেন। এর ফলে অন্যান্য সৌরজগতের অস্তিত্বও আবিষ্কার করা গেছে। তবে আজ পর্যন্ত ঠিক আমাদের সৌরজগতের মতো কোনো জগৎ আবিষ্কৃত হয়নি।

 

মহাবিশ্ব প্রসারণের গতিবৃদ্ধি (১৯৯৮-২০০০)

মাধ্যাকর্ষণ টানের জন্য যেখানে মহাবিশ্বের প্রসারণের গতি হ্রাস হওয়ার কথা, সেখানে তা হ্রাস না পেয়ে দ্রুত হারে বেড়ে চলেছে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে, একদিন অন্যান্য ছায়াপথ অদৃশ্য হয়ে যাবে। এই নতুন আবিষ্কার জন্ম দিয়েছে ‘বিগ রিপ’ তত্ত্বের।

 

ট্যাগ সমুহঃ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

 
%d bloggers like this: