
স্বামী ব্রহ্
স্বামী ব্রহ্মানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম রাখালচন্দ্র ঘোষ। জন্ম ১৮৬৩ সালের ২১ জানুয়ারি (স্বামী বিবেকানন্দের চেয়ে মাত্র ৯ দিনের ছোটো)। জন্মস্থান কলকাতার ৩৬ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার সদর বারাসতের নিকটবর্তী সিকরা-কুলীনগ্রাম।
বাল্যকাল থেকেই রাখালচন্দ্র ছিলেন ঈশ্বরভক্ত ও ধ্যানশীল। বারো বছর বয়সে কলকাতায় আসেন পড়াশোনা করতে। সেখানেই নরেন্দ্রনাথ দত্তের (পরবর্তীকালে স্বামী বিবেকানন্দ) সঙ্গে আলাপ। নরেন্দ্রনাথের প্রভাবে ব্রাহ্মসমাজেও যোগ দেন। সেযুগের প্রথা অনুসারে, বিশ্বেশ্বরী নাম্নী জনৈকা বালিকার সঙ্গে রাখালচন্দ্রের বিবাহ হয়। বিশ্বেশ্বরীর দাদা মনোমোহন মিত্র ছিলেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্ত। তিনিই রাখালচন্দ্রকে ঠাকুরের কাছে নিয়ে যান। ইতিপূর্বে ঠাকুর ভাবচক্ষে দেখেছিলেন, জগজ্জননী একটি ছেলেকে ঠাকুরের পুত্র রূপে পাঠাচ্ছেন। রাখালচন্দ্র দক্ষিণেশ্বরে আসা মাত্রই ঠাকুর চিনতে পারলেন, এই ছেলেটিই তাঁর ভাবচক্ষে দেখা সেই ছেলে। সেই থেকে ঠাকুর রাখালচন্দ্রকে নিজের পুত্রের ন্যায় আদরযত্ন করতে থাকেন।

বেলুড় মঠ ব্রহ্মানন্দ মন্দিরে স্বামী ব্রহ্মানন্দের মর্মরমূর্তি
কয়েকবার দক্ষিণেশ্বরে আসাযাওয়া করার পর রাখালচন্দ্র শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গেই বসবাস করতে শুরু করেন। ঠাকুর স্বয়ং তাঁকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা দিতে থাকেন। ১৮৮৬ সালে ঠাকুরের মহাসমাধির পর বরাহনগরে যখন প্রথম রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠিত হয় তখন রাখালচন্দ্র সেই মঠে যোগ দেন। সন্ন্যাস গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় স্বামী ব্রহ্মানন্দ। দুই বছর পর বরাহনগর মঠ ত্যাগ করে পরিব্রাজক সন্ন্যাসীর জীবন নিয়ে বারাণসী, ওঙ্কারনাথ, বৃন্দাবন, হরিদ্বার প্রভৃতি তীর্থস্থান দর্শন করেন। ঠাকুরের সাহচর্যেই তিনি উচ্চ অধ্যাত্মিক অবস্থায় উন্নীত হয়েছিলেন। পরিব্রাজক জীবনে তিনি অদ্বৈততত্ত্বের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন। এই সময় দিনের পর দিন তিনি সমাধিস্থ হয়ে থাকতেন। ১৮৯০ সালে তিনি মঠে ফিরে আসেন। ১৮৯৭ সালে স্বামী বিবেকানন্দ পাশ্চাত্য পরিভ্রমণ সেরে দেশে ফিরে এসে নবরূপে মঠ পুনর্গঠন করেন। এই সময় স্বামী ব্রহ্মানন্দ তাঁকে প্রভূত সাহায্য করেন। দুই গুরুভাই একে অপরকে খুবই ভালবাসতেন। বেলুড় মঠ প্রতিষ্ঠার পর স্বামী বিবেকানন্দ যখন ট্রাস্ট হিসেবে রামকৃষ্ণ মঠকে নথিভুক্ত করেন, তখন স্বামী ব্রহ্মানন্দ মঠের প্রথম সঙ্ঘাধ্যক্ষ বা প্রেসিডেন্ট হন। আজীবন তিনি এই পদ অলংকৃত করেছিলেন।
স্বামী ব্রহ্মানন্দ প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন রামকৃষ্ণ সংঘের দ্রুত বিস্তার ঘটে। ভারত ও বহির্ভারতে মঠের একাধিক কেন্দ্র স্থাপিত হয়। স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশনকে অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বামী ব্রহ্মানন্দ মিশনকে নথিভুক্ত করেন। সন্ন্যাসীবৃন্দকে সঠিকভাবে পরিচালনা করে তিনি সংঘকে স্থায়ী রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর রাজোচিত পরিচালন ক্ষমতা দেখে স্বামী বিবেকানন্দ তাঁকে ‘রাজা’ নাম দিয়েছিলেন। সেই থেকে সংঘে তিনি রাজা মহারাজ নামে পরিচিত ছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর যে ছয় জন শিষ্যকে ‘ঈশ্বরকোটি’ হিসেবে চিহ্নিত করে যান, স্বামী ব্রহ্মানন্দ ছিলেন তাঁদের অন্যতম।
১৯২২ সালের ১০ এপ্রিল সামান্য রোগভোগের পর তিনি মহাসমাধিতে লীন হন। বেলুড় মঠে যে স্থানটিতে তাঁর পার্থিব দেহ পঞ্চভূতে লীন হয়, সেখানেই আজ তাঁর স্মরণে ব্রহ্মানন্দ মন্দির প্রতিষ্ঠিত।
বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন—
১। ব্রহ্মানন্দচরিত, স্বামী প্রভাবন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা।
২। ধর্মপ্রসঙ্গে স্বামী ব্রহ্মানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা।
তথ্যসূত্র—
বেলুড় মঠ ওয়েবসাইট
Indranil Modak
সেপ্টেম্বর 1, 2012 at 4:45 পুর্বাহ্ন
Osadharon arr thotthomulok lekha. Chesta karun apnar jara subscriber tara Facebook e apnar lekhar notification jodi pay bhalo hoy. Mail sobsomoy khola na thakleo FB te loke pagol. Tate dekte ba notification pele jana jabe.
অর্ণব দত্ত
সেপ্টেম্বর 1, 2012 at 11:39 অপরাহ্ন
ব্লগ-সাবস্ক্রাইবাররা কিভাবে ব্লগপোস্টের নোটিফিকেশন ফেসবুকে পেতে পারেন, সেই প্রযুক্তি আমার ঠিক জানা নেই। তবে আমি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কোনো কোনো লেখার লিঙ্ক দিয়ে দিই। সাবস্ক্রাইব করলে, মেল-মারফৎ অবশ্যই লেখার সংযোগ পাবেন। আমি বেশি পোস্ট করি না। তাই সপ্তাহে একদিন মেল খুললেও আপনার অসুবিধা হবে না।
মৃনাল কান্তি ঘোষ
অগাষ্ট 19, 2017 at 11:19 পুর্বাহ্ন
হে প্রভু !
জ্ঞান-অজ্ঞান, পাপ-পূন্য, সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, আশা-নিরাশা, সর্বস্ব নিয়ে, শুধু তোমার প্রতি পূর্ন-বিশ্বাস ও পূর্ন-ভক্তি দিয়ে চৈতন্য প্রদান করো হে প্রভু ! কৃপা করো হে প্রভু, কৃপা করো !
কিভাবে তার কৃপা প্রাপ্তি সম্ভব ? দয়া করে পথ দেখান।
হরি ওঁ !