
পাকিস্তানি পপ গায়ক নাজম শেরাজ
জনৈক পাকিস্তানি গায়কের কণ্ঠে উর্দুতে রবীন্দ্রসংগীত মন কেড়ে নিল পাকিস্তানবাসীর:
অগর মেরে গ়মকে ঘনেরে অন্ধেরে
তেরি রেহ্মতোঁ কে উজালোঁ সে চমকেঁ
চমকনে দে উনকো,
চমকনে দে মওলা
তুমহারি মহব্বত ভরিঁ এ নিগাহেঁ
আগর চশম্-এ-তর পার মেরি টিক রহি হ্যায়
তো আঁখো মেঁ আঁসু হি রহনে দে মওলা।
খুব চেনা চেনা লাগছে কী? বাংলা গানটি হল:
দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল-আলোক
তবে তাই হোক ।।
মৃত্যু যদি কাছে আনে তোমার অমৃতময় লোক
তবে তাই হোক ।।
পুজার প্রদীপে তব জ্বলে যদি মম দীপ্ত শোক
তবে তাই হোক ।
অশ্রু-আঁখি-‘পরে যদি ফুটে ওঠে তব স্নেহচোখ
তবে তাই হোক ।।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সারা ভারত যখন ভাসছে রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষ উদযাপনের জোয়ারে, তখন সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানি পপ গায়ক নাজম শেরাজও বারোটি রবীন্দ্রগানের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করলেন। বাংলা নয়, উর্দু অনুবাদে। শেরাজ পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতে বেশ জনপ্রিয়। হিন্দি ছবি মার্ডারে তিনি ভিগি হোঁঠ নামে সেই বিখ্যাত গানটি গেয়েছিলেন। প্রায় এক বছর খেটেখুটে এই অ্যালবামটি বের করলেন শেরাজ। এই বছর মার্চে উর্দু অনুবাদে ১০০টি রবীন্দ্রকবিতার একটি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। অ্যালবামটি সেই প্রকল্পেরই অংশ।
রবীন্দ্রনাথের কবিতা অবশ্য আগেও উর্দুতে অনূদিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অনুবাদ ছিল ফিরাক গোরখপুরির অন্যবাদ। তিনি গীতাঞ্জলির কয়েকটি কবিতা অনুবাদ করেন। অনুবাদক নিয়াজ ফতেহপুরিও গীতাঞ্জলির কয়েকটি কবিতা অনুবাদ করেন। যেমন এটি:
আপনে কদমোঁ তলে
মুঝকো বিঝ জানে দো
ইক মুকাম্মাল খুশি কে লিয়ে
আপনে পাওঁ কি ধুল সে
সুর্খ হো জানে দো
মেরি পোষাক কো!
মূলগানটি বহুশ্রূত বাংলার লোকসুরের গান:
ওই আসনতলের মাটির ‘পরে লুটিয়ে রব।
তোমার চরণ-ধুলায় ধুলায় ধূসর হব।

অ্যালবামের কভার
অ্যালবামটির নাম রাখা হয়েছে রোম্যান্সিং টেগোর। এই অ্যালবামের গানগুলি অনুবাদ করেছেন দিল্লিবাসী গীতিকার ইন্দিরা বর্মা ও কবি ড. রেহমান মুসাওয়ির। সংগীত আয়োজন করেছেন কলকাতার দেবজ্যোতি মিশ্র। শেরাজের সঙ্গে অ্যালবামে কণ্ঠ মিলিয়েছেন শুভা মুদগল ও কমলিনী মুখোপাধ্যায়।
লাহোরের সাপ্তাহিক দ্য ফ্রাইডে টাইমস পত্রিকায় রক্ষানন্দ জলিল এই অ্যালবামের সমালোচনায় লিখেছেন, “এই অনূদিত কবিতাগুলি কাব্যের অনিবর্চনীয় আনন্দ লাভে সহায়তা করে। অনুবাদগুলি মূল কবিতার মতোই সুশ্রাব্য হয়েছে। সংগীত পরিচালক রবীন্দ্রসংগীতের অনুরূপ সুরেই সংগীত আয়োজন করেছেন। এগুলি প্রথাগত উর্দু গজলের মতো করে গাওয়া হয়নি।”
তিনি আরও বলেছেন, উর্দু কবি ইকবাল বা ফৈজের মতো রবীন্দ্রনাথ ভারত-পাকিস্তান উভয়ের সম্পদ। উর্দুতে রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ ও বাংলায় ফৈজের অনুবাদ তাই দুই দেশের সম্পর্কে মজবুত করবে।
শেরাজ বলেন, “রবীন্দ্রনাথ এমন একজন মানুষ যিনি জাতি হিসেবে ভারতকে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ করে তুলেছেন। আমি তাঁর গান গাইছি। শ্রোতাদের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে রবীন্দ্রনাথের জীবনী আমি সম্প্রতি পড়েছি। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন। বাংলা ভালবাসা, শান্তি ও আবেগে বিশ্বাস করে। আমি জানি না লোকের এই উর্দু অনুবাদ কেমন লাগবে। তবে এটুকু বলতে পারি, আমি মনপ্রাণ দিয়ে এতে কাজ করেছি।”