RSS

তামিল ভাষায় রবীন্দ্রনাথ

05 মে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জানেন কি, রবীন্দ্রনাথের প্রায় ৮০ শতাংশ রচনা অনূদিত হয়েছে তামিল ভাষায়? হ্যাঁ, এই ভাবেই তামিল সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন দখল করে নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 

কবিগুরুর রচনার প্রথম তামিল অনুবাদ প্রকাশ করেছিল অ্যালাইন্স পাবলিশার্স। কবির জীবদ্দশাতেই তারা তাঁর রচনার তামিল অনুবাদ ছাপার স্বত্ব লাভ করে। রবীন্দ্র-রচনার তামিল অনুবাদের ক্ষেত্রে যে দু-জনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলেন টি. এন. কুমারস্বামী ও টি. এন. সেনাপতি। এঁরা ছিলেন দুই ভাই। সরাসরি বাংলা থেকে তাঁরা কবির রচনা তামিলে অনুবাদ করেন। কুমারস্বামী নিজে ছিলেন একজন ঔপন্যাসিক ও ছোটোগল্পকার। তিনি নিজে বাংলা শিখে এই ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করে। পরে তিনি তাঁর ছোটো ভাই সেনাপতিকেও বাংলা শেখান। তারপর অ্যালাইন্স পাবলিশার্সের হয়ে রবীন্দ্র-রচনার অনুবাদ শুরু করেন। কুমারস্বামীর পুত্র কে. অশ্বিন কুমার বলেন, “আমার বাবা ১৯৩০-এর দশকে বিশ্বভারতীতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করে অনুবাদের প্রয়োজনীয় অনুমতি জোগাড় করে আনেন। অনুবাদের অধিকাংশ কাজ তাঁরই করা। তবে তাঁর ভাই সেনাপতিও কিছু অবদান রেখেছেন।” অ্যালাইন্স পাবলিশার্স ২৫ খণ্ডে তামিল রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশ করেছিল। রবীন্দ্র জন্মসার্ধশতবর্ষ উপলক্ষ্যে তাঁরা সেই রচনাবলীর পুনর্মুদ্রণ করেছেন।

 

(বাঁদিক থেকে) টি. এন. কুমারস্বামী, টি. এন. সেনাপতি ও এ. শ্রীনিবাসরাঘবন

আরেক জন স্বনামধন্য তামিল রবীন্দ্র-অনুবাদক হলেন এ. শ্রীনিবাসরাঘবন। এই ইংরেজি সাহিত্যের এই খ্যাতনামা অধ্যাপক ১০০টি রবীন্দ্র-কবিতা তামিল ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। ২০০৫ সালে অধ্যাপক শ্রীনিবাসরাঘবনের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ছয় খণ্ডে তাঁর রচনাসমগ্র প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থমালার ষষ্ঠ খণ্ডটিতে শুধু রয়েছে তাঁর অনুবাদ করা রবীন্দ্রনাথের ১২০টি কবিতা। জন্মশতবর্ষ-উদযাপন কমিটির সদস্য তথা অল ইন্ডিয়া রেডিওর প্রাক্তন ডিরেক্টর বিজয় তিরুভেঙ্গাদাম বলেন, “শ্রীনিবাসরাঘবন কবিতাগুলি অনুবাদ করেছিলেন ইংরেজি অনুবাদ থেকে। তবে বাংলা ভাষার সৌন্দর্য ও ছন্দ রক্ষার জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সামুদ্রিক মৎস্যচাষ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জীববিজ্ঞানী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সাহায্য নিয়েছিলেন।”

 

করাইকুড়ির বাসিন্দা ভি. আর. এম. চেত্তিয়ারকে বলা হত ‘টেগোর-ভক্ত’। তিনি তীব্র অর্থসংকট সত্ত্বেও নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তামিল ভাষায় রবীন্দ্রনাথের রচনা অনুবাদ ও প্রচারের কাজে। ১৯১৪ সালে তিরুচির সেন্ট জোসেফ কলেজে বন সম্পর্কে বক্তৃতা দিতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানেই চেত্তিয়ার প্রথম দেখেন তাঁকে। সেই সময় চেত্তিয়ারের বয়স ছিল অল্প। কবির কথা বিশেষ না বুঝলেও, কবির প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হন তিনি। এরপর ১৯২৯ সালে কবি যখন সাইগনে তখন কবিকে দ্বিতীয়বার দেখেন চেত্তিয়ার। কবির ভ্রমণের একটি বিস্তারিত বিবরণী তিনি প্রকাশ করেন “কবিতা মণ্ডলম” পত্রিকার ফেব্রুয়ারির শেষ সংখ্যায়। জানা যায়, চেত্তিয়ার একটি প্রকাশনাও চালাতেন শুধু রবীন্দ্র-রচনার অনুবাদ প্রকাশের জন্য। তবে অর্থসংকটের দরুন, বেশি দিন প্রকাশনার কাজ করে উঠতে পারেননি।

 

তথ্যসূত্র: দ্য হিন্দু পত্রিকা, ২ মে, ২০১২

 

ট্যাগ সমুহঃ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

 
%d bloggers like this: