RSS

নীল পদ্মরাগ (শার্লক হোমসের গল্প)

29 এপ্রিল

এই অনুবাদটির অনুবাদস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুবাদকের বিনা অনুমতিতে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি!

বড়োদিনের দিন দুয়েক পরে সকালের দিকে আমার বন্ধু শার্লক হোমসকে উৎসবের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলাম। হোমস তার পার্পল-রঙা ড্রেসিং গাউনটা পরে সোফায় হেলান দিয়ে বসেছিল।  তার ডানদিকে পাইপ রাখার তাক আর হাতের কাছে ছড়ানো ছিল একগাদা সদ্যপঠিত প্রভাতী সংবাদপত্র। সোফার পাশে চেয়ারে ঝুলছিল একখানা জীর্ণ পুরনো ফেল্ট হ্যাট। টুপিটা জায়গায় জায়গায় ফাট–ব্যবহারের অযোগ্য। চেয়ারের উপর রাখা লেন্স আর ফরসেপস দেখে বুঝলাম, ওটা ভাল করে পরীক্ষা করার জন্যেই ওভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

বললাম, “তুমি ব্যস্ত মনে হচ্ছে। আমি হয়ত এসে কাজে বাধা দিলাম।”

“মোটেও না। বরং এই যে তোমার মতো এক বন্ধুর সঙ্গে আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুটো কথা কইতে পারি, এটা কতো আনন্দের বলো তো। এই ব্যাপারটা খুবই সামান্য।” তারপর টুপিটার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে সে বলল, “কিন্তু ওই জিনিসটার সঙ্গে এমন কিছু বিষয় জড়িত যেগুলো শুধু মনোহারীই নয়, যথেষ্ট শিক্ষণীয়ও বটে।”

বাইরে খুব বরফ পড়ছিল। জানলার কাঁচ ঢেকে গিয়েছিল পুরু বরফের আস্তরণে। আরামকেদারায় বসে ফায়ারপ্লেসের গনগনে আগুনে হাতটা সেঁকতে সেঁকতে বললাম, “মনে হচ্ছে, এই সাদাসিধে দেখতে টুপিটার সঙ্গে বেশ একটা মারকাটারি গল্প জড়িয়ে আছে আর তুমি এটার সূত্র ধরে রহস্যের সমাধান করে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবছো।”

হোমস হেসে বলল, “না না, অপরাধ নয়। আসলে কয়েক মাইল এলাকার মধ্যে চল্লিশ লক্ষ লোক গুঁতোগুঁতি করলে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যায়। এটাও সেই রকমই একটা ঘটনা। এত লোকের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে, এত সম্ভাব্য ঘটনীয় ঘটনার মধ্যে অনেক ছোটোখাটো ঘটনাও থাকে, যেগুলো খুব উল্লেখযোগ্য ও অদ্ভুত ধরনের হয়, কিন্তু সবসময় তার সঙ্গে কোনো অপরাধের যোগ থাকে না। আমরা তো আগেও এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি।”

আমি বললাম, “দেখিনি আবার! আমি শেষ যে ছ-খানা কেস নোট করেছি, তার মধ্যে তিনটের সঙ্গেই তো–আইনের চোখে যাকে অপরাধ বলে–তার কোনো যোগ নেই।”

“ঠিক বলেছো। আইরিন অ্যাডলারের কাগজ উদ্ধার, মিস মেরি সাদারল্যান্ডের সেই অভূতপূর্ব কেস আর সেই বাঁকা-ঠোঁটওয়ালা লোকটির রহস্যের কথা বলছো তো। এই ব্যাপারটাও যে একই রকম নিরীহ, তা হলপ করে বলতে পারি। কমিশনেয়ার[*] পিটারসনকে চেনো তো?”

“হ্যাঁ, চিনি বৈকি।”

“জিনিসটা সে-ই জুটিয়েছে।”

“এটা পিটারসনের টুপি?”

“না না, পিটারসন এটা কুড়িয়ে পেয়েছে। মালিকের পরিচয় অজ্ঞাত। হাতে নিয়ে দ্যাখো। ফুটো টুপি বলে অবছেদ্দা কোরো না। জেনো, এটাও একটা বৌদ্ধিক সমস্যা। ও হ্যাঁ, এর এখানে আগমনের ইতিবৃত্তটাও আগে শুনে নাও। বড়োদিনের সকালে একটা নধর রাজহাঁস আর এই টুপিটা নিয়ে পিটারসন হাজির। হাঁসটা খুব সম্ভবত এখন পিটারসনের রান্নাঘরের উনুনে। ঘটনাটা এই রকম: বড়োদিনের দিন ভোর চারটে নাগাদ পিটারসন টটেনহ্যাম কোর্ট রোড ধরে নিজের বাড়িতে ফিরছিল। সামনের রাস্তায় গ্যাসের আলোয় সে দেখল একটি লম্বা লোক একটু যেন টলতে টলতে হাঁটছে। লোকটার কাঁধে ছিল একটা সাদা হাঁস। গুজ স্ট্রিটের কোনার দিকে যেতেই একদল গুন্ডার সঙ্গে লোকটার ঝামেলা বাধল। একটা গুন্ডা লোকটা টুপিটা তার মাথা থেকে খুলে ফেলে দিল। লোকটা আত্মরক্ষার জন্য নিজের লাঠিটা মাথার উপর তুলে ঘোরাতে গেল। কিন্তু তাতে তার পিছনের দোকানের জানলার কাঁচটি ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। তুমি জানো, পিটারসন সৎ ছেলে। সে লোকটাকে গুন্ডাদলের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ছুটে গেল। এদিকে জানলার কাঁচ ভেঙে লোকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ওই অবস্থায় একটা উর্দিপরা পুলিশ-গোছের লোককে ছুটে আসতে দেখে হাঁসটা ফেলেই দৌড় লাগালো টটেনহ্যাম কোর্ট রোডের পিছনদিককার ছোটো গলিপথের গোলকধাঁধার দিকে। পিটারসনকে দেখে গুন্ডাদলও পালাল। সেই অকুস্থল থেকেই এই ছেঁড়া টুপি আর সেই অনবদ্য বড়োদিনের ভোজটিকে উদ্ধার করে আনল পিটারসন।”

“আর তারপর নিশ্চয় জিনিসগুলো তার মালিকের কাছে পৌঁছে দিয়ে এল?”

“এখানেই তো সমস্যা, বন্ধু। হাঁসটার বাঁ পায়ের সঙ্গে একটা ছোটো কার্ড আটকানো ছিল। তাতে লেখা ছিল ‘মিসেস হেনরি বেকারের জন্য’। টুপিটার লাইনিং-এর উপর ‘এইচ. বি.’ লেখাটাও স্পষ্ট। কিন্তু আমাদের শহরে কয়েক হাজার বেকার পদবীধারী লোক পাওয়া যাবে, যাদের মধ্যে অন্তত কয়েকশো লোকের নাম হেনরি বেকার। এই হারানো সম্পত্তিটি তার সঠিক মালিকের হাতে তুলে দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়!”

“ও! তাই পিটারসন হাঁসটা তোমার কাছে নিয়ে এল?”

“পিটারসন জানে যে, ছোটোখাটো ব্যাপারেও আমার আগ্রহ আছে। তাই বড়োদিনের দিন সকালেই হাঁস আর টুপিটা আমার কাছে নিয়ে এল। হাঁসটা আজ অবধি আমার এখানেই ছিল। কিন্তু দেখলাম, ঠান্ডা সত্ত্বেও জিনিসটায় পচ ধরছে। তাই আর দেরি না করে, যে ওটা কুড়িয়ে পেয়েছিল, তাকেই ওটার সদ্‌ব্যবহারের দায়িত্ব দিলাম। বেচারা ভদ্রলোকের বড়োদিনের ডিনারটা মাঠে মারা গেল। টুপিটা রেখে দিয়েছি। এখন দেখি এটা অন্তত ওঁকে ফেরত দেওয়া যায় কিনা।”

“ভদ্রলোক হারানো-প্রাপ্তির বিজ্ঞাপন দেননি?”

“না।”

“তুমি তাহলে কী সূত্র পেলে?”

“পর্যবেক্ষণ করে যতটুকু অনুমান করা যায়, ততটুকুই।”

“এই টুপিটা পর্যবেক্ষণ করে?”

“হ্যাঁ।”

“ঠাট্টা করছ? এই পুরনো ফুটো টুপিটা পর্যবেক্ষণ করে তুমি কী অনুমান করলে শুনি!”

“আমার পদ্ধতি তোমার জানা। এই লেন্সটা নাও। দ্যাখো তো, জিনিসটা পর্যবেক্ষণ করে তুমি এর মালিক সম্পর্কে কী ধারণা পাও।”

জিনিসটা হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখলাম। খুব সাধারণ কালো রঙের একটা গোল টুপি। শক্তপোক্ত, তবে অবস্থা খুব খারাপ। ভিতরে রংচটা লাল রেশমের লাইনিং। নির্মাতার নাম নেই। তবে, হোমস যেমন বলেছিল–‘এইচ. বি.’ আদ্যক্ষরটা এককোণে খুব এবড়োখেবড়ো হরফে লেখা। দু-পাশে টুপি আটকানোর ছিদ্র। তবে ইলাস্টিকটা ছেঁড়া। ছেঁড়াফোঁড়া, ধুলোমাখা টুপি। জায়গায় জায়গায় দাগ। আবার কালি লাগিয়ে দাগগুলো ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে।

টুপিটা আমার বন্ধুর হাতে ফিরিয়ে দিয়ে বললুম, “কিছুই তো দেখতে পেলুম না।”

“ভুল করছ, ওয়াটসন, সবই দেখতে পেয়েছো। শুধু জানতে পারোনি যে দেখতে পেয়েছো। আসলে কার্যকারণগুলো ঠিকঠাক মেলাতে পারছো না।”

“তাহলে দয়া করে তুমিই বলো এই টুপি থেকে কী কার্যকারণ আবিষ্কার করলে?”

টুপিটা হাতে তুলে নিয়ে নিজের স্বভাবসিদ্ধ অদ্ভুত পর্যবেক্ষণ ভঙ্গিতে সেটার দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল হোমস। তারপর বলল, “সবটা হয়তো সঠিক জানা যাবে না। তবে কয়েকটা জিনিস খুব স্পষ্ট; অন্যগুলোর সম্ভাবনাও বেশ উজ্জ্বল। যেমন, এই লোকটা যথেষ্ট বুদ্ধি ধরে। গত তিন বছরের মধ্যে কোনো এক সময় তার অবস্থা বেশ ভাল ছিল। তারপর কোনো কারণে অর্থসংকটে পড়ে। আগে লোকটার বেশ দূরদৃষ্টি ছিল। এখন সেই দূরদৃষ্টি আর নেই। পকেটের জোর কমে যাওয়ায় স্বভাবটাও একটু খারাপ হয়েছে। মদ্যপানের মতো খারাপ উপসর্গও সম্ভবত জুটেছে। তাছাড়া, খুব জোর দিয়ে বলা চলে, ভদ্রলোকের স্ত্রী আর তাঁকে আগের মতন ভালবাসেন না।”

“বটে!”

আমার ব্যঙ্গোক্তি ধর্তব্যের মধ্যে না এনে হোমস বলে চলল, “তবে কিছুটা আত্মমর্যাদাবোধ এখনও লোকটার মধ্যে রয়ে গেছে। লোকটা অলস প্রকৃতির। বেশি বাইরে বেরোয়-টেরোয় না। শরীরও বিশেষ দেয় না। মাঝবয়সী। মাথায় কাঁচাপাকা চুল। কিছুদিন আগেই কেটেছে। মাথায় লাইম-ক্রিম মাখে। এই টুপি থেকে এই ব্যাপারগুলোই নিশ্চিত করে বলে যায়। আর হ্যাঁ, খুব সম্ভবত লোকটার বাড়িতে গ্যাসের আলো নেই।”

“ঠাট্টা করছ, হোমস?”

“এক বর্ণও না। এত কথার পরেও বলে দিতে হবে যে, কি করে এগুলো জানতে পারলাম?”

“আচ্ছা, আমি না হয় বোকাসোকা লোক। তোমার কথার কিছুই বুঝি না। কিন্তু তুমি কি করে বুঝলে যে, এই লোকটা বুদ্ধিমান?”

উত্তরে হোমস টুপিটা নিজের মাথায় পরল। তার কপাল ঢেকে দিয়ে তার নাকের ডগা অবধি নেমে এল সেটা। সেটা দেখিয়ে হোমস বলল, “টুপিটার আকারটাই বলে দেয়, এত বড়ো মাথা যার, তার মগজেই নিশ্চয় কিছু আছে।”

“কী করে বুঝলে লোকটার অবস্থা আগে স্বচ্ছল ছিল; কিন্তু এখন অবস্থা পড়ে গেছে?”

“এই টুপিটা বছর তিনেকের পুরনো। এই রকম বাঁকা ধারওয়ালা টুপি তখনই বাজারে উঠেছিল। এমনিতে এটা খুব ভাল মানের টুপি। রেশমের বেড় আর লাইনিং-এর কাপড়টা দ্যাখো। বেশ দামি। যদি লোকটা তিন বছর আগে এই টুপিটা কিনতে পারে, এবং তারপর আর টুপিটা না পালটায় তাহলে বুঝতে হবে তাঁর অবস্থা এখন ভাল যাচ্ছে না।”

“আচ্ছা বেশ, বোঝা গেল। কিন্তু তাঁর দূরদর্শিতা ও আত্মসম্মানবোধের কী প্রমাণ পেলে?”

শার্লক হোমস হাসল। ছোট্টো চাকতি আর আঙটার উপর হাত রেখে বলল, “এখানেই আছে দূরদৃষ্টির পরিচয়। এগুলো টুপিতে লাগানো থাকে না। লোকটা নিশ্চয় অর্ডার দিয়ে বানিয়েছে। এর থেকেই বোঝা যায় যে, লোকটার দূরদৃষ্টি আছে। টুপিটা যাতে হাওয়ায় না উড়ে যায় এটা তারই ব্যবস্থা। কিন্তু দ্যাখো, এর ইলাস্টিকটা ছিঁড়ে গেছে। লোকটাও সেটা নতুন করে লাগায়নি। তার মানে দূরদৃষ্টি তার আগের থেকে কমে এসেছে। এটা স্বভাবের দুর্বলতার লক্ষণ। অন্যদিকে এই দাগগুলো কালি দিয়ে ঢাকার চেষ্টাটাই বলে দিচ্ছে লোকটা এখনও তার আত্মমর্যাদাবোধ সম্পূর্ণ হারায়নি।”

“হুম! তুমি যা বলছ, তা একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না!”

“আরও শুনবে? এই লোকটা মাঝবয়সী, মাথায় কাঁচাপাকা চুল, সম্প্রতি চুল কেটেছে, লাইম-ক্রিম ব্যবহার করে–এসবের প্রমাণ কী? লাইনিং-এর নিচের অংশটুকু খুব কাছ থেকে পরীক্ষা করে দ্যাখো। লেন্স দিয়ে দেখলে দেখবে, নাপিতের কাঁচিতে কাটা চুলের কয়েকটা ডগা চিটে আছে। আর লাইম-ক্রিমের একটা আবছা গন্ধ পাবে। এই যে ধুলো দেখছো, এটা রাস্তার খড়খড়ে ধূসর ধুলো নয়, এই রকম হালকা বাদামি ধুলো বাড়ির ভিতরেই দেখা যায়। তার মানে এটা বেশির ভাগ সময় ঘরের মধ্যেই টাঙানো থাকে। টুপির ভিতরে ঘামের দাগ দেখে বুঝবে লোকটা খুব ঘামে। কারোর মাথা এতো ঘামা সুস্বাস্থ্যের লক্ষণ নয়।”

“কিন্তু কিভাবে বুঝলে যে, তাঁর স্ত্রী তাঁকে আর আগের মতন ভালবাসেন না?”

“এই টুপিতে বেশ কয়েক সপ্তাহ ব্রাশ পড়েনি। ওয়াটসন, তোমার বউ যদি তোমাকে এই রকম ধুলোমাখা টুপি পরে বাইরে যেতে দেয়, তাহলে জানবে তুমি একটি হতভাগা। তোমার বউ আর তোমাকে ভালবাসে না।”

“সে তো অবিবাহিতও হতে পারে।”

“না। সে বাড়িতে একটা হাঁস নিয়ে যাচ্ছিল স্ত্রীকে তুষ্ট করতে। হাঁসের পায়ের কার্ডটায় কী লেখা ছিল মনে করে দ্যাখো।”

“হুম! তোমার কাছে দেখছি সব কিছুরই উত্তর আছে। কিন্তু কী করে বুঝলে লোকটার ঘরে গ্যাসের আলো নেই?”

“টুপিতে একটা-দুটো ট্যালোর[†] দাগ থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু দ্যাখো পাঁচ-পাঁচটা দাগ। এ থেকে নিঃসন্দেহে ধরে নেওয়া যায়, লোকটা খুব ঘন ঘন ট্যালো জ্বালে। রাতের অন্ধকারে এক হাতে টুপি আর অন্য হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি ধরে উপরে ওঠে। গ্যাসজেট থেকে ট্যালোর দাগ পড়ে না। কি, মিলছে তো?”

আমি হেসে বললাম, “নিঃসন্দেহে অসামান্য তোমার পর্যবেক্ষণ শক্তি! কিন্তু তুমি বলছো, কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটেনি। একটা হাঁস খোয়া-যাওয়া ছাড়া কারো কোনো ক্ষতি হয়নি। তাহলে আর এই সব পাঁচ-সাত ভেবে মাথা খারাপ করছো কেন হে?”

হোমস একটা কী বলার জন্য মুখ খুলেছিল। কিন্তু এমন সময় দড়াম করে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে এল কমিশনেয়ার পিটারসন। তার চোখমুখ লাল। একটা হতভম্ব ভাব।

“মিস্টার হোমস, ওই হাঁসটা! ওই হাঁসটা, মশায়!” সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।

“অ্যাঁ? কী হয়েছে ওই হাঁসটা? ওটা কী আবার জ্যান্ত হয়ে উঠে ডানা মেলে জানলা দিয়ে উড়ে পালিয়ে গেছে?” উত্তেজিত লোকটার মুখটা ভাল করে দেখার জন্য সোফায় বসেই শরীরটাকে মোচড় দিল।

“না মশায় না! দেখুন, আমার বউ ওই হাঁসটার পেট থেকে কী পেয়েছে!” এই বলে পিটারসন নিজের হাতটা মেলে ধরল। একটা জ্বলজ্বলে নীল পাথর। মটরশুঁটির দানার চেয়েও ছোটো। কিন্তু এত চকচকে যে মনে হচ্ছিল পিটারসনের হাত থেকে বিজলি আলো ঠিকরাচ্ছে।

একটা শিস দিয়ে উঠে বসল হোমস। “বাই জোভ, পিটারসন! তুমি যে গুপ্তধন পেয়েছো হে। জিনিসটা কী জানো তো?”

“মশায়, এটা কী হিরে? হিরে তো খুব দামি পাথর। কাঁচ কাটা যায়।”

“এটা যে-সে দামি পাথর নয়। এটা হল সবচেয়ে দামি পাথর।”

আমি বলে ফেললাম, “কাউন্টেস অফ মরকারের নীল পদ্মরাগ নয় তো!”

“হ্যাঁ, সেটাই। এটা কেমন দেখতে তা আমার আগেই জানা ছিল। ‘দ্য টাইমস’-এ প্রায়ই এটার সম্পর্কে একটা বিজ্ঞাপন বেরোচ্ছে। আশ্চর্য পাথর এটা। এর আসল দাম শুধুই অনুমান করা যায়। এটার উপর ১০০০ পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সেটা এর আসল দামের যে কুড়ি ভাগের এক ভাগও নয়, তা বলাই যায়।”

“এক হাজার পাউন্ড! হা ভগবান!” কমিশনেয়ার ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল। তারপর আমাদের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখতে লাগল।

“হ্যাঁ, এক হাজার পাউন্ড। আমার মনে হয় এটার সঙ্গে কাউন্টেসের কিছু অমূল্য মধুর স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এটা ফিরে পাওয়ার জন্য উনি অর্ধেক সম্পত্তি হাতছাড়া করতেও অরাজি হবেন না।”

আমি বললাম, “যতদূর মনে পড়ছে, এটা হোটেল কসমোপলিটান থেকে খোয়া গিয়েছিল।”

“ঠিক বলেছো। বাইশে ডিসেম্বরের ঘটনা। ঠিক পাঁচ দিন আগে। কলের মিস্ত্রি জন হরনারকে গ্রেফতার করা হয় লেডির গয়নার বাক্স থেকে এটা সরানোর অভিযোগে। তার বিরুদ্ধে প্রমাণ এতই অকাট্য ছিল যে তাকে অ্যাসিজেসে[‡] পেশ করা হয়। আমার কাছে এই ঘটনার কাগজপত্র আছে মনে হয়।” হোমস কাগজপত্র হাতড়ে, তারিখের উপর চোখ বুলিয়ে, একটাকে বের করে আনল। তারপর সেটা দু-ভাঁজ করে পড়তে শুরু করল:

হোটেল কসমোপলিটান থেকে চুরি রত্ন। এমাসের ২২ তারিখে কাউন্টেস অফ মোরকারের গয়নার বাক্স থেকে নীল পদ্মরাগ নামে একটি মহামূল্য রত্ন চুরির অভিযোগে জন হরনার নামে এক ছাব্বিশ বছর বয়সী কলের মিস্ত্রিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হোটেলের প্রধান-পরিচারক জেমস রাইডারের সাক্ষ্য থেকে জানা গিয়েছে যে, রাইডার হরনারকে কাউন্টসের ড্রেসিং রুমে নিয়ে এসেছিল একটা ফায়ার প্লেসের একটা ভাঙা শিক ঝালাই করানোর জন্য। রাইডার কিছুক্ষণ হরনারের সঙ্গে ছিল। তারপর রাইডারের ডাক পড়ায় সে কিছুক্ষণ হরনারকে একলা রেখে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যায়। ফিরে এসে সে দেখে হরনার চলে গেছে। ঘরের দেরাজ ভাঙা। যে ছোট্টো মরোক্কীয় বাক্সে কাউন্টসে রত্নটি রাখতেন, সেটি খালি অবস্থায় ড্রেসিং টেবিলের উপর খোলা পড়ে আছে। রাইডার সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বাজায়। সেই দিন সন্ধ্যেবেলাই হরনারকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু রত্নটা তার কাছে বা তার ঘরে কোথাও পাওয়া যায়নি। কাউন্টেসের খাস-পরিচারিকা ক্যাথারিন কাসক রাইডারের চিৎকার শুনে ছুটে আসে। তার সাক্ষ্যের সঙ্গে রাইডারের সাক্ষ্য হুবহু মিলে গেছে। বি ডিভিশনের ইনস্পেক্টর ব্র্যাডস্ট্রিট হরনারকে গ্রেফতার করার কথা জানান। তিনি বলেন, হরনার গ্রেফতারের সময় পাগলের মতো ছটফট করছিল এবং খুব কড়া ভাষায় নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করছিল। তার বিরুদ্ধে আগেও ডাকাতির অভিযোগ থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট চটজলদি কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে তাকে অ্যাসিজেসে পাঠিয়ে দেন। অভিযুক্ত অত্যন্ত বিহ্বল হয়ে পড়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেটের রায় শুনে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন তাকে ধরাধরি করে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হয়।

কাগজটা পাশে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হোমস খানিকক্ষণ চিন্তা করে বলল, “হুম! এই হল পুলিশ-কোর্টের ব্যাপার। এখন আমাদের কাছে প্রশ্ন হল, গয়নার বাক্স থেকে খোয়া যাওয়ার পর টটেনহ্যাম কোর্ট রোডের হাঁসের পেটে রত্নটা গেল কী করে? দেখলে তো, ওয়াটসন, আমাদের ওই একটুখানি পর্যবেক্ষণজনিত অনুমান কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে! ব্যাপারটাকে আর নেহাতই নিরীহ ব্যাপার বলা চলে না। এই পাথরটা বেরোলো হাঁসের পেট থেকে। হাঁসটা মিস্টার হেনরি বেকারের–যে ভদ্রলোকের খারাপ টুপি আর অন্যান্য চরিত্রবৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে তোমাকে এতক্ষণ বিরক্ত করছিলাম। এবার আমাদের সবার আগে কাজ হবে ভদ্রলোককে খুঁজে বের করা এবং এই ছোট্টো রহস্যটায় তাঁর কী ভূমিকা রয়েছে সেটা জানা। তা করতে হতে আমাদের প্রথমে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিটি অবলম্বন করতে হবে। সন্ধ্যের কাগজে একটা বিজ্ঞাপন দিতে হবে। কাজ না হলে, তখন অন্য পদ্ধতি ভাবব।”

“কী বলবে বিজ্ঞাপনে?”

“একটা পেনসিল আর একটুকরো দাও দেখি। হ্যাঁ, এবার শোনো:

গুজ স্ট্রিটের কোণ থেকে একটা হাঁস ও একটা কালো ফেল্ট টুপি পাওয়া গিয়েছে। মিস্টার হেনরি বেকার নামে কারোর এই জিনিস দুটি খোয়া গিয়ে থাকলে তিনি আজ সন্ধ্যে সাড়ে ছটায় ২২১বি বেকার স্ট্রিটে এসে দেখা করুন।

খুবই পরিস্কার ও সংক্ষিপ্ত।”

“কিন্তু এটা কী তাঁর চোখে পড়বে?”

“অবশ্যই। ভদ্রলোক নিশ্চয় কাগজের দিকে নজর রাখবেন। গরিব মানুষ। তাঁর কাছে এই খোয়া যাওয়াটা বড়ো ব্যাপার। ভুল করে একটা জানলার কাঁচ ভেঙে ফেলেছিলেন। তারপর পিটারসনকে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে যান। পরে হাঁসটা ওভাবে ফেলে আসার জন্য ভদ্রলোক নিশ্চয় খুব আফসোস করেছেন। তাছাড়া তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এতে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ হবে। তাঁকে যারা চেনে, তারাই তাঁকে বিজ্ঞাপনটা দেখিয়ে দেবে। পিটারসন, শোনো। বিজ্ঞাপন এজেন্সিতে গিয়ে এটাকে সন্ধ্যের কাগজে ছাপানোর ব্যবস্থা করো দেখি।”

“কোন কাগজটা, মশায়?”

“‘গ্লোব’, ‘স্টার’, ‘পল মল’, ‘সেন্ট জেমস’স’, ‘ইভনিং নিউজ স্ট্যান্ডার্ড’, ‘ইকো’ আর অন্যান্য, যাতে তুমি ভাল বোঝো।”

“খুব ভাল কথা, মশাই। আর পাথরটা?”

“ও হ্যাঁ, পাথরটা আমি রাখছি। ধন্যবাদ। আর, শোনো, পিটারসন, ফেরার পথে একটা হাঁস কিনে আমাকে দিয়ে যেয়ো তো। তোমরা তো ওই হাঁসটা দিয়ে আজ ভোজ করবে। আমাকে তো ভদ্রলোককে ওটার বদলে কিছু একটা দিতে হবে।”

কমিশনেয়ার চলে গেলে, হোমস পাথরটা আলোর সামনে তুলে ধরে বলল, “জিনিসটা বেশ, তাই না! কেমন চকচক করছে দ্যাখো। আলো ঠিকরে পড়ছে যেন। সত্যি বলতে কী, এই পাথরটাই যত নষ্টের গোড়া। শুধু এই পাথর কেন, যে কোনো রত্নই এমন হয় – শয়তানের সবচেয়ে প্রিয় টোপ। যেসব রত্ন বেশ বড়ো আকারের বা বয়সে প্রাচীন, সেসব রত্নের সঙ্গে একটা না একটা খুনখারাপির ঘটনা জড়িত থাকবেই। পাথরটার বয়স তো এখনও কুড়িও হয়নি। এটা পাওয়া গিয়েছিল দক্ষিণ চীনের অ্যাময় নদীর তীরে। আকার-আকৃতি গুণাবলি সব পদ্মরাগের মতো, শুধু পদ্মরাগ হয় চুনির মতো লাল, এটা নীল। বয়সের কম হলে কী হবে, এর ইতিহাস খুব হেলাফেলার নয়। এখনই এর সঙ্গে দুটো খুন, একটা ভিট্রিওল-হামলা, একটা আত্মহত্যা, কয়েকটা ডাকাতির ঘটনা জড়িয়ে পড়েছে। আর এই সব কিছুর জন্য দায়ী এই চল্লিশ গ্রেন ওজনের কাঠকয়লার স্ফটিকটা। কে বলবে, এমন সুন্দর খেলনাটা আসলে ফাঁসিকাঠ আর জেলখানার রসদদার? এটাকে আমার স্ট্রং বক্সে[§] তুলে রাখি আর কাউন্টেসকে লিখে দিই যে আমরা এটা পেয়েছি।”

“তোমার কী মনে হয়, এই হরনার লোকটা নির্দোষ।”

“বলতে পারব না।”

“ও! আর এই অন্য লোকটি? হেনরি বেকার? ইনিও কী এই ব্যাপারে জড়িত?”

“আমার কী মনে হয় জানো? এই হেনরি বেকার লোকটি সম্পূর্ণ নির্দোষ। যে হাঁসটা সে বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তার আসল দাম যে একটা নিরেট সোনার হাঁসের দামের চেয়েও বেশি, এই ব্যাপারটা সেটা লোকটার সম্পূর্ণ অজানাই থেকে গিয়েছিল। আমাদের বিজ্ঞাপনের উত্তর পেলে আমি একটা ছোট্ট পরীক্ষার মাধ্যমেই সেটা প্রমাণ করে দিতে পারব।”

“আর ততক্ষণ কিছুই করবে না?”

“কিচ্ছু না।”

“তাহলে আমি এক চক্কর রোগী দেখে আসি। তবে সাড়ে ছটার আগেই ফিরে আসব। এই আজব রহস্যের সমাধান কিভাবে করো সেটা আমাকে দেখতেই হবে।”

“সেই ভাল। আমি সাতটায় ডিনার করি। আজ একটা উডকক[**] এসেছে মনে হচ্ছে। ও হ্যাঁ, আজকাল যা সব ঘটছে, তাতে করে আমি মিসেস হাডসনকে আমাদের পাখিটার পেট একবার পরীক্ষা করে দেখে নিতে বলেছি।”

একটা রোগীকে দেখতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল। বেকার স্ট্রিটে পৌঁছোতে পৌঁছোতেই সাড়ে ছ-টা বেজে গেল। গিয়ে দেখি বাড়ির সামনে স্কচ বনেট টুপি আর কোট পরা একটা লোক থুতনি-অবধি বোতাম আটকিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। ফ্যানলাইটের[††] উজ্জ্বল অর্ধবৃত্তাকার আলো এসে পড়েছে তার উপরে। দরজার কাছে আসতেই দরজা খুলে গেল। আমরা দু-জনে একসঙ্গে হোমসের ঘরে ঢুকলাম।

হোমস চট করে আরামকেদারা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। হাসিমুখে অতিথিকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বলল,  “আপনিই নিশ্চয় মিস্টার হেনরি বেকার। আসুন, অনুগ্রহ করে আগুনের ধারে এসে বসুন, মিস্টার বেকার। আজ খুব শীত পড়েছে, আপনার স্বাস্থ্যও এই শীতের অনুকূল বলে মনে হচ্ছে না। আহ্, ওয়াটসন। একেবারে ঠিক সময়ে এসেছো। ওই টুপিটা কী আপনার, মিস্টার বেকার?”

“হ্যাঁ, মশাই, নিঃসন্দেহে ওটা আমারই টুপি।”

ভদ্রলোকের চেহারা লম্বা। কাঁধটা চওড়া। মুখখানা বুদ্ধিদীপ্ত। মুখে কাঁচাপাকা ছুঁচলো দাড়ি। নাক আর গালটা ঈষৎ লাল। হাতটা সামনের দিকে বাড়াতে একটু কেঁপে উঠল। তখনই লোকটার অভ্যাস সম্পর্কে হোমসের অনুমানের কথা মনে পড়ল। লোকটার ধুলোট কালো ফ্রক-কোটটা সামনের দিকে উপর পর্যন্ত বোতাম আঁটা। কলারটা তোলা। সরু কব্জিটা কোটের হাতার ভিতর থেকে বেরিয়ে ছিল, কোনো কাফ বা শার্টের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না। খুব ধীরে সুস্থে থেমে থেকে কথা বলছিলেন। খুব সন্তপর্ণে শব্দ চয়ন করছিলেন। দেখে মনে হচ্ছিল, ভদ্রলোক পণ্ডিত মানুষ; কিন্তু ভাগ্যের ফেরে অবস্থান্তরে পড়েছেন।

হোমস বলল, “এই জিনিসগুলো দিনকয়েক ধরে আমাদের কাছে আছে। আমরা ভেবেছিলাম, আপনি আপনার ঠিকানা জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেবেন। কিন্তু আপনি বিজ্ঞাপন দিলেন না দেখে একটু অবাকই হয়েছি।”

লজ্জিত একটা হাসি হেসে আগন্তুক ভদ্রলোক বললেন, “এখন আর আমার আগের মতো অর্থসামর্থ্য নেই। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, যে গুন্ডাদল আমাকে আক্রমণ করেছিল, তারাই আমার টুপি আর হাঁস নিয়ে পালিয়েছে। তাই ওগুলোর ফিরে পাওয়ার বৃথা আশায় আর নিরর্থক অর্থব্যয় করার সাহস হয়নি।”

“খুবই স্বাভাবিক। ও হ্যাঁ, হাঁস বলতে মনে পড়ল। আমরা ওটা খেয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছি।”

ভদ্রলোক আঁতকে উঠে বললেন, “খেয়ে ফেলেছেন!”

“হ্যাঁ, তা না করলে ওটা একেবারেই নষ্ট হয়ে যেত। তবে ওই সাইডবোর্ডের উপর আর একটা হাঁস রাখা আছে। মনে হয়, ওটা আপনার চাহিদা পূরণ করতে পারবে। জিনিসটা ওজনে প্রায় এক আর বেশ তাজা।”

মিস্টার বেকার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “ও হ্যাঁ, অবশ্যই অবশ্যই।”

“অবশ্য আমরা আপনার নিজের হাঁসটার পালক, পা, নাড়িভুড়ি ইত্যাদি রেখে দিয়েছি, যদি চান তো…”

ভদ্রলোক এবার হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন, “আমার সেই অভিযানের স্মৃতি হিসেবে সেগুলো মূল্যবান বটে। কিন্তু তাছাড়া আমার সেই পুরনো সঙ্গীর দেহাবশেষ আমার আর কী কাজে লাগবে, তা ভেবে পাচ্ছি না। না মশাই, যদি অনুমতি করেন, তাহলে আপনার সাইডবোর্ডে রাখা ওই চমৎকার হাঁসটাই নিয়ে যেতে চাই।”

হোমস আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কিঞ্চিৎ কাঁধ ঝাঁকালো।

মুখে বলল, “তবে এই নিন আপনার টুপি আর আপনার হাঁস। হ্যাঁ, ভাল কথা, আপনি আমাকে বলতে পারেন ওই আগের হাঁসটা আপনি কোত্থেকে পেয়েছিলেন?  হাঁস-মুরগি খাওয়াটা আমার শখ বলতে পারেন। কিন্তু এমন নধর হাঁস আমি খুব কমই দেখেছি।”

মিস্টার বেকার উঠে দাঁড়ালেন। সদ্য-পাওয়া হাঁসটা বগলদাবা করে বললেন, “অবশ্যই, মশাই। আমরা দিনের বেলা মিউজিয়ামে কাজ করি। মিউজিয়ামের কাছে আলফা ইন হল আমাদের প্রিয় আড্ডা। তার মালিকের নাম উইন্ডিগেট। ভারী ভাল লোক। তিনি একটা হাঁস ক্লাব স্থাপন করেছেন। প্রতি সপ্তাহে কয়েক পেনি করে চাঁদা দিলে আমরা বড়োদিনের সময় একটা হাঁস পাই। আমি আমার চাঁদা সময়মতো দিয়ে এসেছিলাম। বাকি সবটাই তো আপনার জানা। আপনার কাছে আমি ঋণী থেকে গেলাম, মশাই। আমার বয়স বা সম্মানের কথা ভাবলে, এই স্কচ বনেট জাতীয় টুপি আর এই আমাকে মানায় না।” যাওয়ার সময় তিনি মাথা ঝুঁকিয়ে বেশ কেতাবি কায়দায় একটা অভিবাদন জানিয়ে গেলেন। বেশ মজা লাগল দেখে।

তিনি চলে গেলে হোমস দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বলল, “এই হল মিস্টার হেনরি বেকারের গল্প। বোঝাই যাচ্ছে, তিনি ঘটনার কিছুই জানেন না। ওয়াটসন, তোমার কি খিদে পেয়েছে?”

“না, কেন?”

“তাহলে চলো, সন্ধ্যের খাবারটা একেবারে রাতেই খাওয়া যাবে; এইবেলা এই টাটকা সূত্রটার পিছু নেওয়া যাক।”

“বেশ, তাই চলো।”

বেশ শীত পড়েছিল সে রাতে। আমরা গলায় ভাল করে আলস্টার[‡‡] পরে মাফলার জড়িয়ে বের হলাম। মেঘহীন আকাশে তারা ঝিলমিল করছিল। পথের লোকেদের মুখ থেকে পিস্তলের গুলির মতো ধোঁয়া বের হচ্ছিল। ডকটর’স কোয়ার্টার, উইমপোল স্ট্রিট, হার্লে স্ট্রিট, উইগমোর স্ট্রিট পেরিয়ে অক্সফোর্ড স্ট্রিটে এসে পড়লাম। আমাদের পায়ের শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল। আধঘণ্টার মধ্যে ব্লুমসবেরির আলফা ইনে এসে পড়লাম। হলবোর্নের দিকে যে রাস্তাটা গেছে তারই এক কোণে একটা ছোটো পাবলিক হাউস। হোমস প্রাইভেট বারের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে লাল-মুখো, সাদা অ্যাপ্রন-পরিহিত মালিকের কাছে দুই গ্লাস বিয়ার অর্ডার করল।

বলল, “তোমার বিয়ার নিশ্চয় তোমার হাঁসের মতোই ভাল।”

লোকটা অবাক হয়ে বলল, “আমার হাঁস!”

“হ্যাঁ, আধঘণ্টা আগেই তোমার হাঁস ক্লাবের সদস্য মিস্টার হেনরি বেকারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল।”

“ও, হ্যাঁ! এবার বুঝেছি। তবে কিনা, মশাই, ওই হাঁস ঠিক আমার নয়।”

“তাই নাকি! তাহলে কার?”

“কভেন্ট গার্ডেনের এক হাঁসওয়ালার কাছ থেকে ডজন দুয়েক আনিয়েছিলাম।”

“বটে! ওখানকার কয়েকজনকে চিনি। ওগুলো ঠিক কার থেকে আনিয়েছিলে?”

“লোকটার নাম ব্রেকিনরিজ।”

“ও! তাকে চিনি না। আচ্ছা, এই নাও তোমার বিয়ারের দাম। তোমার ব্যবসার উন্নতি হোক। শুভরাত্রি।”

বাইরের হিমেল হাওয়ায় আবার বেরিয়ে এসে সে কোটের বোতাম লাগাতে লাগাতে বলল, “এবার গন্তব্য মিস্টার ব্রেকিনরিজের দোকান। বুঝে দ্যাখো, ওয়াটসন, আমরা যে লক্ষ্যে চলেছি, তার এক দিকে একটা সামান্য হাঁস। কিন্তু অন্যদিকে একটি নিরপরাধ লোক যাকে আমরা নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারলে তাকে সাত বছর বিনা অপরাধেই জেল খাটতে হবে। এমনও হতে পারে যে, আমরা দেখব আসলে চুরিটা সেই করেছে। কিন্তু ভাগ্যক্রমেই হোক, আর যেভাবেই হোক, আমাদের হাতে এমন একটা সূত্র এসে গেছে যা পুলিশের হাতেও আসেনি। এর শেষ দেখেই ছাড়ব। চলো দক্ষিণ দিকে। তাড়াতাড়ি।”

হলবোর্ন পেরিয়ে এনডেল স্ট্রিটে এসে পড়লাম। বসতি এলাকার আঁকাবাঁকা পথ ধরে কভেন্ট গার্ডেন মার্কেটে পৌঁছালাম। সেখানে সবচেয়ে বড়ো দোকানগুলোর একটার নাম ব্রেকিনরিজের নামে। মালিকের মুখটা ঠিক ঘোড়ার মতো লম্বাটে। দু-পাশে ছাঁটা জুলপি। একটা ছেলেকে দোকানের শাটার ফেলতে সাহায্য করছিল।

হোমস বললে, “শুভ সন্ধ্যা। বেশ শীত পড়েছে আজ রাতে।”

বিক্রেতা মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন জানাল। তারপর আমার সঙ্গীর দিকে প্রশ্নালু চোখে তাকাল।

মার্বেলের শূন্য স্ল্যাবগুলোর দিকে আঙুল দেখিয়ে হোম জিজ্ঞাসা করলে, “সব হাঁস বিক্রি হয়ে গেছে দেখছি।”

“কাল সকালে আসুন। পাঁচশো হাঁস চাইলেও দিতে পারবো।”

“সে আমার কোনো কাজে লাগবে না।”

“তবে ওই যে দোকানটায় গ্যাস জ্বলছে, ওটায় যান।”

“কিন্তু আমাকে যে তোমার দোকানের কথাই বলা হয়েছে।”

“কে বলেছে?”

“আলফার মালিক।”

“ও, হ্যাঁ। আমি তাকে ডজন দুয়েক পাঠিয়েছিলাম।”

“হাঁসগুলো বেশ ছিল। তা ওগুলো পেয়েছিলে কোত্থাকে?”

অবাক কাণ্ড। প্রশ্নটা শুনেই বিক্রেতা রাগে ফেটে পড়ল। সে এবার ঘাড় ঘুরিয়ে কোমরে হাত দিয়ে যুদ্ধং দেহি ভূমিকায় দাঁড়াল। বলল, “পথে আসুন মশায়! কি চাইছেন বলুন দেখি! ঝেড়ে কাশুন।”

“বাঁকা কথা তো কিছুই বলিনি। আমি শুধু জানতে চেয়েছি যে হাঁসগুলো তুমি আলফায় বিক্রি করেছিল, সেই হাঁসগুলো তুমি কার কাছ থেকে কিনেছিলে?”

“অ! আর যদি না বলি, তাহলে কী করবে?”

“কিছুই না। মামুলি ব্যাপার। কিন্তু আমি আশ্চর্য হচ্ছি, এই সামান্য কথায় তুমি এতটা উত্তেজিত হচ্ছ কেন?”

“উত্তেজিত হব না! এমন কথা শুনলে কার মাথার ঠিক থাকে? ভাল দামে ভাল মাল বেছবো, ব্যস, লেনদেন খতম। ‘হাঁস কোথায়?’ ‘কার থেকে হাঁস কিনেছো?’ ‘ওই হাঁসের কত দাম?’ হাঁস তো নয়, যেন আর কিছু। সামান্য হাঁস নিয়ে কত কথা!”

হোমস গা-ছাড়া ভাব দেখিয়ে বলল, “কি করে জানবো বলো যে, আরও পাঁচ জন ওই হাঁসের খোঁজ করছে। তবে তুমি না বললে, বাজিটা হেরে যাবো। হাঁস-মুরগির ব্যাপারে আমি নিজেকে একরকম বিশেষজ্ঞই মনে করি। আর একজনের সঙ্গে বাজি ধরেছি যে, যে হাঁসটা আজ খেলাম সেটা পাড়াগেঁয়ে হাঁস।”

হাঁসওয়ালা খুব সংক্ষেপে রাগত গলা বলল, “অ! তবে আপনি বাজি হেরেছেন। ওটা শহুরে হাঁস।”

“আমার দেখে তা মনে হল না।”

“আমি বলছি তাই।”

“মানি না।”

“ল্যাংটোবেলা থেকে হাঁস বেচছি, মশাই। আপনি আমাকে হাঁস চেনাচ্ছেন? আমি বলছি, আলফায় যে হাঁসগুলো বেচেছি, সেগুলো শহুরে হাঁস।”

“তুমি বললেই আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?”

“তাহলে বাজি রাখুন।”

“মিছিমিছি অর্থব্যয় করবেন। আমি জানি আমি যা বলছি তা ঠিক। এক সভারেন[§§] বাজি রইল; শুধু ওই বাজে তক্কো করার জন্য আপনাকে শিক্ষে দেওয়ার জন্যে।” তারপর ব্যঙ্গের হাসি হেসে দোকানদার বলল, “বিল, বইগুলো আমাকে এনে দে তো রে।”

ছোটো ছেলেটা একটা ছোটো মোটা বই আর একটা বেশ বড়ো চকচকে মলাটের বই আনল। দুটো বইই একসঙ্গে ঝুলন্ত বাতির নিচে রাখা হল।

হাঁসওয়ালা বলল, “এই যে হাঁসবিশেষজ্ঞ মশাই। ভেবেছিলাম আমার সব হাঁস বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তু না, এখনও একটা আছে। এই ছোটো খাতাটা দেখুন।”

“দেখলাম। তাতে হলটা কী?”

“এটা হল আমি যাদের থেকে হাঁস কিনি তাদের নামের তালিকা। দেখেছেন? আচ্ছা, এবার দেখুন, এই পাতাটা পাড়াগেঁয়ে হাঁসের মালিকদের তালিকা। নামের পাশে যে নম্বর দেখছেন সেগুলো বড়ো লেজার বইয়ে তাদের অ্যাকাউন্ট নম্বর। এবার দেখুন। অন্য পাতায় লাল কালিতে কী লেখা আছে? এই হল আমার শহরের সরবরাহকারীদের তালিকা। এবার, তিন নম্বর নামটা পড়ুন। পড়ুন পড়ুন, আমাকে পড়ে শোনান।”

হোমস পড়ল, “মিসেস ওকশট, ১১৭, ব্রিক্সটন রোড–২৪৯।”

“হ্যাঁ, ঠিক। এবার লেজারের পাতায় যান।”

হোমস নির্দিষ্ট পাতাটি খুলল, “এই যে এখানে, ‘মিসেস ওকশট, ১১৭ ব্রিক্সটন রোড, ডিম ও পোলট্রি সরবরাহকারী।”

“শেষ লাইনটায় কী লেখা আছে?”

“‘২২শে ডিসেম্বর। সাত শিলিং ছয় পেন্স দরে ২৪টি হাঁস।’”

“ঠিক। এবার, নিচে দেখুন। কী লেখা আছে?”

“‘আলফার মিস্টার উইন্ডিগেটের নিকট ১২ শিলিং দরে বিক্রীত হইয়াছে।’”

“এবার কী বলবেন?”

শার্লক হোমস মুখখানি ব্যাজার করল। তারপর পকেট থেকে এক সভারেন বের করে স্ল্যাবের উপর ছুঁড়ে দিয়ে মহাবিরক্তির ভাব দেখিয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। কয়েক ইয়ার্ড দূরে এসে একটা ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে সে তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় মুখে কোনো শব্দ না করে হেসে উঠল।

বলল, “এই রকম গোঁফ আর পকেট থেকে গোলাপি খাতা উঁকি দিচ্ছে দেখলেই বুঝবে, একে বাজি দিয়েই টোপ গেলাতে পারবে। ওকে একশো পাউন্ড দিলেও এত কিছু বলত কিনা সন্দেহ। কিন্তু দ্যাখো, একটা বাজির টোপ ফেলে কত সহজেই ওর পেট থেকে সব বের করে নেওয়া গেল। যাই হোক, ওয়াটসন, মনে হচ্ছে আমরা আমাদের অনুসন্ধানের শেষ পর্বে এসে পৌঁছে গেছি। এখন ভাবতে হবে, মিসেস ওকশটের কাছে আজ রাতেই যাওয়া উচিত না কাল যাবো। নিঃসন্দেহে যা বুঝলাম, এই ব্যাপারটা নিয়ে আমরা ছাড়াও আরও কেউ উৎসাহিত। আমার উচিত…”

তার কথা চাপা দিয়ে হঠাৎ দূরে একটা উচ্চ কোলাহল উঠল। যে দোকানটা থেকে এক্ষুনি বেরিয়ে এলাম সেই দোকানটার থেকেই। পিছন ফিরে দেখি একটা বেঁটেখাটো ইঁদুরমুখো লোক ঝুলন্ত আলোর বৃত্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে, আর ওই হাঁসওয়ালা ব্রেকিনরিজ রাগতমুখে দোকানের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে ঘুষি বাগিয়ে লোকটাকে কী সব বলছে।

তার চিৎকার কানে আসছিল, “যথেষ্ট হয়েছে তোমার আর তোমার হাঁস। চুলোর দোরে যাও গে। ফের যদি ফালতু বকতে আসো তবে তোমার পিছনে কুকুর লেলিয়ে দেবো। মিসেস ওকশটকে এখানে নিয়ে এসো, যা বলার তাঁকেই বলব। তোমার কাছে কেন জবাবদিহি করব হে? তোমার থেকে হাঁস কিনেছিলাম নাকি?”

লোকটা কুঁই কুঁই করতে করতে বলল, “না, কিন্তু ওগুলোর একটা যে আমার ছিল।”

“তাহলে মিসেস ওকশটকে জিজ্ঞাসা করো গে যাও।”

“উনি আমাকে বললেন তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে।”

“তাহলে প্রুশিয়ার রাজাকে জিজ্ঞাসা করো গে যাও। যত্তো সব! যথেষ্ট হয়েছে। এবার বেরোও এখান থেকে।” এই বলে দোকানি রীতিমতো ঘাড়ধাক্কা দিয়ে লোকটাকে বের করে দিল। লোকটাও অন্ধকারে মিশে গেল।

হোমস ফিসফিসিয়ে বলল, “মনে হচ্ছে, আর ব্রিক্সটন রোডে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ওয়াটসন, আমার সঙ্গে এসো। এই লোকটার পিছু নেওয়া যাক।” বাজারের লোকজনের ভিড় ঠেকে হোমস এগিয়ে গেল। খানিকক্ষণের মধ্যে লোকটাকে ধরেও ফেলল। কাঁধে হাত রাখতেই লোকটা পিছন ফিরে তাকালো। গ্যাসের আলোয় দেখলাম, ভয়ে লোকটার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

সে কাঁপা-কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করল, “কে আপনারা? কী চান?”

হোমস মৃদুস্বরে বলল, “মাপ করবেন, কিন্তু আপনার সঙ্গে ওই দোকানির বাক্যালাপ আমার কানে এসেছে। মনে হচ্ছে, এই ব্যাপারে আপনাকে কিছু সাহায্য করতে পারি।”

“আপনি? আপনি কে? এই ব্যাপারে আপনি কী জানেন?”

“আমার নাম শার্লক হোমস। আমার কাজই হল অন্যেরা যে খবর রাখে না, সেই খবরটি রাখা।”

“কিন্তু আপনি তো এই ব্যাপারে কিছুই জানেন না।”

“আজ্ঞে না, আমি সবই জানি। ব্রিক্সটন রোডের মিসেস ওকশট ব্রেকিনরিজ নামে এক দোকানিকে কয়েকটা হাঁস বেচেছিলেন। সেই হাঁসগুলি ব্রেকেনরিজ বেচে দেয় আলফার মিস্টার উইন্ডিগেটের কাছে। উইন্ডিগেট তার ক্লাব সদস্য মিস্টার হেনরি বেকারকে সেই হাঁস বিক্রি করে। এই হাঁসটাকেই তো তুমি খুঁজছ?”

লোকটা তার দুই হাত আর কাঁপতে থাকা আঙুলগুলো বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “মশাই, আপনার মতো একজনকেই তো খুঁজছিলাম। আপনি ভাবতেও পারবেন না, এই ব্যাপারটার সঙ্গে আমার জীবনমরণ সম্পর্ক জড়িয়ে আছে।”

একটা চার-চাকার গাড়ি যাচ্ছিল পাশ দিয়ে। সেটাকে দাঁড় করিয়ে হোমস বলল, “তাহলে চলুন কোথাও একটা গিয়ে আরামসে আলোচনা করা যাক। এই বাজারে বড্ড চিৎকার চ্যাঁচামেচি। কিন্তু সবার আগে–আপনার নামটা তো জানা হল না।”

লোকটা খানিক ইতস্তত করে শেষে অন্য দিকে মুখ করে বলল, “আমার নাম জন রবিনসন।”

হোমস মিষ্টি গলায় বলল, “না না, আপনার আসল নামটা বলুন। বেনামিদের সঙ্গে কাজ করা বড়ো অসুবিধাজনক।”

লোকটা সাদা গালদুটো লাল হয়ে এল। সে বলল, “আচ্ছা, ঠিক আছে। আমার আসল নাম হল জেমস রাইডার।”

“ভাল! তার মানে আপনিই হোটেল কসমোপলিটনের প্রধান পরিচারক। দয়া করে এই ক্যাবটিতে[***] উঠুন। যা জানতে চাইছেন, তার সবই আমার কাছে শুনবেন।”

লোকটা একবার আমার দিকে একবার হোমসের দিকে আধা-ভয় আধা-আশা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকাল। সে বুঝতে পারছিল না যে, তার কপালে লাভ না লোকসান লেখা আছে। দোনোমোনো করতে করতেই সে ক্যাবে উঠল। আধঘণ্টায় আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের বেকার স্ট্রিটের বৈঠকখানায়। লোকটা গাড়িতে কিছুই বলল না। তবে তার ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস আর হাত কচলানি থেকে বুঝতে পারছিলাম যে, সে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।

ঘরে ঢুকে হোমস হাসিমুখে বলল, “হ্যাঁ, এসে গেছি বাড়ি। বেশ সুন্দর আগুন জ্বলছে। মিস্টার রাইডার, আপনি দেখি শীতে কাঁপছেন। আসুন, এই বেতের চেয়ারটায় বসুন। আমি ঘরের জুতোটা পরে আসি। তারপর আপনার ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করব। হ্যাঁ, এইবার! আপনি জানতে চাইছিলেন না, ওই হাঁসগুলোর কী হয়েছে?”

“হ্যাঁ, মশায়।”

“অথবা, আমার যতদূর ধারণা, তার মধ্যে একটি হাঁস সম্পর্কে জানতে চাইছিলেন। ওই যে হাঁসটার লেজের দিকে কালো ডোরা দাগ আর বাকিটা পুরো সাদা, সেইটা।”

রাইডার উৎকণ্ঠিত হয়ে বলল, “হ্যাঁ, মশায়! বলতে পারেন ওটা কোথায় গেছে?”

“ওটা এখানে এসেছিল।”

“এখানে?”

“হ্যাঁ, আশ্চর্য সেই হাঁস, বুঝলেন মশাই। সত্যিই আপনি ওটার প্রতি আগ্রহ না দেখালেই অবাক হতুম। সেই মরা হাঁস একটা ডিমও পেরেছিল। ছোট্ট একটা উজ্জ্বল নীল রঙের ডিম। এমন ডিম কখনও দেখিনি। সেটা আমি আমার মিউজিয়ামে রেখে দিয়েছি।”

লোকটা পড়ে যাচ্ছিল। কোনো রকমে ডান হাত দিয়ে ম্যান্টলপিসটা[†††] ধরে সামলে নিল। হোমস তার স্ট্রংবক্সের ডালা খুলল। তারপর নীল পদ্মরাগটা বের করে ধরল। জিনিসটা একটা তারার মতো চকচক করছিল। একটা অদ্ভুত সুন্দর শীতল বহুকোণী আলো ঠিকরে পড়ছিল ওটা থেকে। রাইডার শুকনো মুখে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। সে বুঝতে পারছিল না, ওটা দাবি করাটা ঠিক হবে কিনা।

হোমস শান্তভাবে বলল, “তোমার খেলা শেষ, রাইডার। না না, ধরে দাঁড়াও। নইলে পিছনের আগুনে পড়ে যাবে। ওয়াটসন, ওকে চেয়ারটায় বসিয়ে দাও। অপরাধ করতে যেরকম কলজের জোর লাগে তা ওর নেই। আর এক গ্লাস ব্র্যান্ডি খাইয়ে দাও। হ্যাঁ! এবার ওকে মানুষের মতো দেখাচ্ছে বটে। একেবারে ইঁদুরের মতো হয়ে গিয়েছিল!”

সে খানিকক্ষণ টলতে লাগল। যেন পড়ে যাবে। ব্র্যান্ডি খেয়ে গালের রংটা একটু ফিরল। তারপর বসে হোমসের দিকে সন্ত্রস্ত চোখে তাকিয়ে রইল।

“আমার কাছে প্রায় সব তথ্য আর প্রমাণই আছে। তাই তোমাকে বেশি কিছু বলতে হবে না। শুধু কয়েকটা কথা জানলেই আমার সব জানা পূর্ণ হবে। রাইডার, তুমি কী এই নীল পাথরটার কথা কাউন্টেস অফ মোরকারের কাছ থেকে শুনেছিলে?”

লোকটা কাঁপা-কাঁপা গলায় বলল, “ক্যাথরিন কসাক আমাকে ওটার কথা বলে।”

“ও! মাননীয়া কাউন্টেসের খাস-পরিচারিকা। আর শুনেই হঠাৎ-বড়োলোক হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেলে। যাক, এমন লোভ অনেক ভাল মানুষও সামলাতে পারে না, তুমি তো কোন ছার। তবে, রাইডার, তুমিও ভালমানুষ নও। যাকে বলে একখানি ছিঁচকে চোর। তুমি জানতে, হরনার নামে ওই কলের মিস্ত্রিটার নামে আগেও একটা কেলেঙ্কারি আছে। আই তার দিকেই সবার সন্দেহ টানতে কষ্ট হবে না। তারপর কী করলে? তুমি আর তোমার এই সহচরীটি মিলে কাউন্টেসের ঘরে গ্যাঁড়াকল করে রাখলে যাতে লোকটাকে ডাকতে হয়। তারপর সে চলে গেলে, তুমি গয়নার বাক্স থেকে গয়নাটা সরালে। তারপর অ্যালার্ম বেল বাজালে আর ওই বেচারাকে গ্রেফতার হতে হল। তারপর তুমি…”

হঠাৎ রাইডার চেয়ার ছেড়ে মেঝেতে নেমে গেল। তারপর হোমসের পা জড়িয়ে ধরল, কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠল, “ভগবানের দোহাই, দয়া করুন! আমার বাবা-মার কথা ভাবুন। ওঁরা জানতে পারলে একেবারে ভেঙে পড়বে। আমি আগে কখনও এমন কাজ করিনি। কোনোদিন করব না। প্রতিজ্ঞা করছি। বাইবেলের দিব্যি। দয়া করে আমাকে আদালতে নিয়ে যাবেন না। খ্রিস্টের দোহাই, নিয়ে যাবেন না।”

হোমস কড়া ভাষায় বলল, “চেয়ারে গিয়ে বোসো। খুব তো নাকে কাঁদছ এখন। ওই বেচারি নির্দোষ করনারকে ফাঁসাবার আগে মনে ছিল না এসব কথা!”

“আমি পালিয়ে যাবো, মিস্টার হোমস। এই দেশ ছেড়েই পালিয়ে যাবো মশাই। তাহলে ওর বিরুদ্ধে মামলাটা আর টিকবে না।”

“আচ্ছা! সেকথা পরে ভাবব। আগে বলো দেখি, তারপর ঠিক কী কী করলে। পাথরটা হাঁসের পেটে গেল কী করে? আর সেই হাঁসই বা খোলা বাজারে এলো কী করে? যদি বাঁচতে চাও তো সব খুলে বলো।”

রাইডার একবার জিভ দিয়ে তার শুকনো ঠোঁটদুটো চেটে নিল। তারপর বলল, “যেমন যা ঘটেছে সবই বলছি, মশাই। হরনার গ্রেফতার হওয়ার পর মনে হল, পাথরটা নিজের কাছে রাখা আর নিরাপদ হবে না। যে কোনো মুহুর্তে পুলিশ আমার ঘরে খানাতল্লাশি করতে পারে। হোটেলেও এমন কোনো নিরাপদ জায়গা নেই যেখানে ওটা রাখা যেতে পারে। তাই আমার বোনের বাড়ি চলে গেলাম। আমার বোন ওকশট নামে একজনকে বিয়ে করে ব্রিক্সটন রোডে থাকে। সেখানেই সে বাজারে বিক্রির জন্য হাঁস পালন করে। মনে হচ্ছিল, সারা রাস্তায় পুলিশ আর গোয়েন্দারা আমার পিছু নিয়েছে। ওই শীতের রাতেও ব্রিক্সটন রোডে যেতে ঘেমেনেয়ে গেলাম। বোন জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে, আমাকে এত ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে কেন। আমি শুধু বললাম, হোটেলে একটা দামি রত্ন চুরি গেছে। তাই মন খারাপ। তারপর বাড়ির পিছনের উঠোনে গিয়ে কী করা যায় ভাবতে লাগলাম।”

“মডসলি নামে আমার এক বন্ধু আছে। স্বভাব ভাল না। পেন্টনভিলে জেল খেটে সদ্য ছাড়া পেয়েছিল। তার সঙ্গে একদিন দেখা হল। সে আমাকে চোরেদের কাজকারবারের কথা বলল। চোরাই মাল কিভাবে কোথায় বেচা যায়, সেও বলল। লোকটার কিছু গোপন কথা আমি জানি, তাই জানতাম ও আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। ও থাকে কিলবার্নে। সেখানেও যাওয়া স্থির করলাম। ওই ভাল দামে মাল বিক্রির ব্যবস্থা করে দিত। কিন্তু নিরাপদে ওর কাছে যাবো কি করে? অনেক কষ্টে হোটেল থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। যেকোনো মুহুর্তে আমার দেহতল্লাশ করলেই তো আমার ওয়েস্টকোটের পকেট থেকে পাথরটা বেরিয়ে পড়বে। দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় দেখলাম, আমার পায়ের কাছে হাঁসগুলো ঘুরছে। হঠাৎ মাথায় একটা মতলব খেলে গেল। ভাবলাম, এটাকে কাজে লাগিয়ে দুনিয়ার সেরা গোয়েন্দাকেও বোকা বানিয়ে ছাড়ব।

“কয়েক সপ্তাহ আগে আমার বোন আমাকে বলেছিল যে আমি বড়োদিনের উপহার হিসেবে একখানা হাঁস নিতে পারি। আমার বোন কথার খেলাপ করে না। ভাবলাম, এই মওকায় একখানা হাঁস বেছে নিই, সেটাই আমার সঙ্গে কিলবার্নে পাথরটা বয়ে নিয়ে যাবে। উঠোনে একটা ছোটো ছাউনি মতন ছিল। আমি তার পিছনে একখানা হাঁসকে তাড়িয়ে নিয়ে গেলাম। বেশ বড়োসড়ো একটা হাঁস। সাদা। কালো দাগওয়ালা লেজ। ধরলাম হাঁসটাকে। ওটার মুখ হাঁ করে যতখানি আঙুল যায় ঢুকিয়ে পাথরটা পুরে দিলাম। হাঁসটা পাথরটা গিলে নিল। কিন্তু হাঁসটা খুব ডানা ঝাপটাতে লাগল। আমার বোন ব্যাপারটা কি দেখার জন্য বেরিয়ে এল। আমি যখন তার সঙ্গে কথা বলার জন্য পিছন ফিরেছি ওমনি হাঁসটা আমার হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে দলের সঙ্গে মিশে গেল।

“আমার বোন জিজ্ঞেস করল, ‘হাঁসটা নিয়ে কী করছিস্, দাদা?’

“আমি বললাম, ‘কিছু না। তুই বলেছিলি বড়োদিনে আমাকে একখানা হাঁস দিবি। আমি দেখছিলাম, কোনটা সবচেয়ে মোটা।’

“বোন বলল, ‘ও, ওই যে তোর জন্য আলাদা করে রেখেছি। আমরা ওটাকে বলি ‘দাদার হাঁস’। ওই যে বড়ো সাদা হাঁসটা। মোট ছাব্বিশটা আছে। একটা তোর, একটা আমাদের, বাকি দু-ডজন বাজারে যাবে।’

“আমি বললাম, ‘ধন্যবাদ, ম্যাগি। তবে তোর কাছে সবগুলোই একরকম হয় তো আমি যেটা ধরেছিলাম, সেটাই নিই।’

“বোন বলল, ‘কিন্তু অন্যটার ওজন অন্তত তিন পাউন্ড বেশি। তোর জন্যই ওটাকে খাইয়ে দাইয়ে মোটা করেছি।’

“আমি বললাম, ‘আমার ওটাই বেশি পছন্দ। ওটাই নেবো। এখনই নিয়ে যাই?’

“আমার বোন একটু অসন্তুষ্ট হল। কিন্তু মুখে বলল, “আচ্ছা, তুই যা ভাল বুঝিস্! কোনটা নিবি?

“‘ওই যে কালো ডোরা লেজওয়ালা সাদা হাঁসটা। পালের মধ্যে ঘুরছে।’

“‘ঠিক আছে, মেরে নিয়ে যা।’

“তারপর, মিস্টার হোমস, আমার বোন যেমনটা বলল, তেমনটাই করলাম। একটা হাঁস নিয়ে গেলাম কিলবার্নে। আমার বন্ধুকে আমার ফন্দির কথা বললাম। ওই লোকটাকেই একমাত্র সব কথা খুলে বলা যেত। আমরা খুব হাসলাম। তারপর একটা ছুরি নিয়ে হাঁসটা কাটলাম। কিন্তু পাথরটা সেখানে ছিল না। আমার তো মাথায় বজ্রাঘাত। নিশ্চয় কোনো ভুল হয়েছে। হাঁসটা ফেলে বোনের বাড়ি ছুটে এলাম। পিছনের উঠোনে গেলাম। কিন্তু সেখানে একটা হাঁসও ছিল না।

“বোনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হাঁসগুলো কোথায় গেল, ম্যাগি?’

“‘দোকানে গেছে, দাদা।’

“‘কোন দোকানে?’

“‘কভেন্ট গার্ডেনের ব্রেকিনরিজের দোকানে।’

“আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আচ্ছা আমি যে হাঁসটা নিয়েছি, ওই রকম দেখতে আরও একটা হাঁস আছে কী?’

“‘হ্যাঁ, দাদা। ওই রকম লেজওয়ালা দুটো হাঁস আছে। একই রকম দেখতে। আমি দুটোকে আলাদা করে চিনতে পারতাম না।’

“তখনই ব্যাপারটা জলের মতো স্পষ্ট হয়ে গেল। দৌড়ে গেলাম ওই ব্রেকিনরিজ লোকটার কাছে। কিন্তু ততক্ষণে সে সব হাঁস বেচে দিয়েছে। আমাকে বললও না, কার কাছে বেচেছে। আপনারা তার কথাই শুনেছেন আজ রাতে। সবসময় ওইরকমভাবেই আমার সঙ্গে কথা বলেছে ও। আমার বোন ভাবছে, আমি বোধহয় পাগল হয়ে গেছি। আমার নিজেরই মনে হচ্ছে, আমি পাগল হয়ে গেছি। আর এখন… এখন আমি দাগি চোর! যেটা চুরি করে চোর হলাম, সেটাই হারালাম। ভগবান আমাকে রক্ষা করুন! ভগবান আমাকে রক্ষা করুন।’ লোকটা দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলল।

অনেকক্ষণ কারো মুখে কোনো কথা ফুটল না। শুধু দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। আর টেবিলের কানায় হোমসের আঙুল চালানোর টিপ টিপ শব্দ। তারপর হোমস উঠে দরজাটা খুলল।

বলল, “বেরিয়ে যাও!”

“অ্যাঁ, মশায়? ও! ঈশ্বর আপনার ভাল করুন!”

“একটাও কথা নয়। বেরিয়ে যাও!”

কোনো কথার দরকারও পড়ল না। লোকটা ছুটে বেরিয়ে গেল। দুড়দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে দড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে রাস্তায় গিয়ে পড়ল। তারপর শুনলাম রাস্তা দিয়ে তার ছুটে পালানোর পায়ের শব্দ।

পাইপটা টেনে নিয়ে হোমস বলল, “কথা হল, ওয়াটসন, পুলিশ আমাকে তাদের খামতি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য রাখেনি। হরনারের বিপদ থাকলে সে ব্যাপার আলাদা। তবে এই লোকটা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না। মামলাটাও আর টিকবে না। আমি যেটা করলাম, সেটা বেআইনি। কিন্তু এতে একটা লোককে বাঁচানো গেল। লোকটা আর চুরিচামারি করবে না। সাংঘাতিক ভয় পেয়েছে। এই লোকটাকে জেলে পাঠালে এ শেষটায় দাগি অপরাধীতে পরিণত হত। তাছাড়া এই উৎসব ক্ষমার উৎসব। কাকতালীয়ভাবে আমাদের দরজায় একটা রহস্য এসে পড়েছিল। সেটার সমাধান করতে পারাটাই আমার পুরস্কার। খাবার ঘণ্টাটা বাজাও, ডাক্তার, এবার অন্য একটা রহস্যের সমাধান করি। অবশ্য সেটাও এক পক্ষীরহস্য।”

রচনা-পরিচিতি

অনূদিত নাম: নীল পদ্মরাগ

মূল নাম: ‘দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য ব্লু কারবাঙ্কল’

মূল রচনা: স্যার আর্থার কোনান ডয়েল

অনুবাদ: অর্ণব দত্ত

অলংকরণ: সিডনি পেজেট

‘দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য ব্লু কারবাঙ্কল’ ব্রিটিশ লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস গল্প-সংকলন দি অ্যাডভেঞ্চার অফ শার্লক হোমস-এর বারোটি গল্পের মধ্যে সপ্তম গল্প। এটি ১৮৯২ সালের জানুয়ারি সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয় স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিন-এ।

————————————————————–

পাদটীকা:

[*] কমিশনেয়ার (Commissionaire) – উর্দিপরা দারোয়ান

[†] ট্যালো (Tallow) – চর্বি দিয়ে তৈরি মোমবাতি।

[‡] অ্যাসিজেস (Assizes) – ইংল্যান্ডের কাউন্টি আদালত, ১৯৭১ সালে এই আদালত উঠে গিয়ে ক্রাউন আদালত চালু হয়।

[§] স্ট্রং বক্স (Strong Box) – মূল্যবান জিনিসপত্র রাখার দুর্ভেদ্য বাক্স।

[**] উডকক (Woodcock) – স্নাইপ-জাতীয় বড়ো পাখিবিশেষ।

[††] ফ্যানলাইট (Fanlight) – দরজার উপরকার ছোটো জানলা।

[‡‡] আলস্টার (ulster) –মোটা কাপড়ে নির্মিত লম্বা ঢোলা ওভারকোট, সাধারণত বেল্ট দেওয়া থাকে।

[§§] সভারেন (sovereign) – যুক্তরাজ্যে প্রচলিত এক পাউন্ড মূল্যের স্বর্ণমুদ্রা।

[***] ক্যাব (Cab) – ছোটো ঘোড়ার গাড়ি।

[†††] ম্যান্টলপিস (Mantelpiece) – ফায়ারপ্লেসের উপরের তাক।

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন এপ্রিল 29, 2012 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

One response to “নীল পদ্মরাগ (শার্লক হোমসের গল্প)

  1. LUTFOR

    সেপ্টেম্বর 27, 2016 at 7:54 পুর্বাহ্ন

    শার্লক হোমের রচনা অসম্ভব ভাল লাগে ।

     

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

 
%d bloggers like this: