গোপাল-পঞ্চমী
১।
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র পরদিন খুব ভোরে গোপালকে রাজসভায় তলব করেছেন। সমস্যা হল, ভোরে গোপালের ঘুম ভাঙে না। তাই তিনি স্ত্রীকে বলে রেখেছিলেন, যেন ভোর ভোর তাঁকে ডেকে দেওয়া হয়। কিন্তু পরদিন ভোরে দৈবাৎ গোপাল ঘুম গেল ভেঙে। স্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে বললেন, ‘ওগো, যাও না, বাইরে গিয়ে একবারটি দ্যাখো, সূর্য উঠেছে কিনা।’ গোপালের স্ত্রী তন্দ্রার আবেশে বললে, ‘বাইরে যে ভীষণ অন্ধকার! সূর্য দেখবো কি করে?’ গোপাল বললেন, ‘তাহলে আলোটা জ্বেলেই দ্যাখো না।’
২।
ঘোর বর্ষা। মেঠো পথ ধরে গোপাল চলেছেন জুতো হাতে নিয়ে। সেই পথেই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আসছিলেন পালকি চড়ে। গোপালকে দেখে মহারাজের একটু রসিকতা করার শখ হল। বললেন, ‘কি হে গোপাল, পরকাল হাতে করে চলেছো যে!’ গোপাল বললেন, ‘আমি তো তাও হাতে রেখেছি, মহারাজ! আপনি তো খেয়ে বসেছেন!’ কৃষ্ণচন্দ্র রেগে বললেন, ‘গোপাল, তুমি আমাকে জুতোখোর বললে?’ গোপাল বললে, ‘আজ্ঞে না মহারাজ। জুতোর কথা হচ্ছে না, হচ্ছে পরকালের। এই ঘোর বর্ষায় কর্দমাক্ত মেঠো পথ ধরে হাঁটার ক্ষমতা আমার মতো বৃদ্ধ লোকও হেঁটে চলেছে। আর আপনি, মহারাজ, জোয়ান পুরুষ, আপনি কিনা পালকি ছাড়া চলতে পারছেন না! ভাবুন তো, নিজের পরকাল কে খেয়েছে?’
৩।
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের একদিন ইচ্ছে হল পরখ করে দেখবেন কার গায়ে জোর বেশি – তাঁর না গোপালের। বাগানে বেড়াতে বেড়াতে হঠাৎ গোপালকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘লড়ো কুস্তি আমার সঙ্গে। দেখি কার গায়ে বেশি জোর!’ গোপাল কুস্তি না লড়ে রাম-নাম করতে শুরু করে দিলেন। মহারাজ হতচকিত হয়ে গোপালকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘ও আবার কী হচ্ছে?’ গোপাল বললেন, ‘আজ্ঞে, মহারাজ, রামনামে ভূত পালায়। তাই আপনার হাত থেকে ছাড়ান পাওয়ার জন্য রামনাম ধরেছিলাম!’
৪।
মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র একদিন গোপালকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আচ্ছা গোপাল, টাকা গোল না হয়ে চৌকো হলে কেমন হত?’ গোপাল বললেন, ‘কিছুই হতো না, সে যেমন গোল, তেমনই থাকত।’ রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তার মানে?’ গোপাল বললেন, ‘টাকাই তো যত গোলের মূলে মহারাজ। টাকা দিতে গোল, পেতে গোল, রাখতে গোল, হারালে গোল। যার আছে, সে ছাগলের মতো সবেতে মুখ দিয়ে বেড়ায়; যার নেই, সে পাগলের মতো ঘুরে ঘুরে বেড়ায়! টাকার গোলে ব্যাকুল নয়, এমন দেশ তো ভূগোলে নেই। তাই বলছি, টাকার আকার যাই হোক, তার গোল যাবে না।’
৫।
রাজবাড়িতে গোপালের নিমন্ত্রণ। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র আর গোপাল একসঙ্গে বসেছেন খেতে বসেছেন। এমন সময় রাজার পোষা কুকুরটি সেখানে এসে হাজির। রাজা নিজের থালা থেকে একমুঠো ভাত তুলে কুকুরটিকে দিলেন। গোপালও রাজার দেখাদেখি নিজের থালা থেকে একমুঠো ভাত তুলে কুকুরটির দিকে ফেললেন। কুকুরটি কিন্তু গোপালের দেওয়া ভাত ছুঁলো না। সে তার প্রভুর প্রসাদেই তুষ্ট রইল। রাজা ঠাট্টা করে বললেন, ‘দেখলে গোপাল, তোমার হাতের অন্ন কুকুরেও ছোঁয়ে না।’ গোপাল বললেন, ‘তাই তো দেখছি, মহারাজ। পাছে জাত যায়, তাই বেজাতের হাতে খায় না!’
Indranil Modak
সেপ্টেম্বর 21, 2012 at 5:00 পুর্বাহ্ন
অত্যাধুনিক যুগে হাসির শব্দ শোনা যায় না এটা পড়া হয় “Ha Ha Ha”
অর্ণব দত্ত
সেপ্টেম্বর 21, 2012 at 9:52 পুর্বাহ্ন
গোপাল ভাঁড় নিয়ে আরও লেখার ইচ্ছে আছে। তবে সময় হচ্ছে না। পেলে আবার লিখতে চাই।