RSS

সংক্ষিপ্ত শিবপুরাণ :: পর্ব ৪

16 ফেব্রু.

শিববিবাহ

শিব সপ্তর্ষিকে ডেকে তাঁদের দূত নিয়োগ করলেন। তাঁরা গিরিরাজ হিমালয়ের কাছে বিবাহ প্রস্তাব নিয়ে গেলেন। শুনে গিরিরাজের আনন্দের সীমা রইল না। শুভদিন স্থির করে বিবাহের কথা পাকা হয়ে গেল।

 

বিবাহের দিন গন্ধর্বেরা গান ধরলেন, অপ্সরাগণ নৃত্য শুরু করলেন। বরযাত্রী হবার জন্য দেবতারা উপস্থিত হলেন কৈলাসশিখরে। এদিকে গিরিরাজও প্রস্তুত। তাঁর প্রাসাদ তোরণ, পতাকা ইত্যাদি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল। শিব হিমালয়ের প্রাসাদে এসে পৌঁছাতেই মেনকা বেরিয়ে এলেন। বললেন, ‘কই, শিব কই? দেখি আমার জামাই কেমন; যাকে পেতে মেয়েটা আমার এমন কঠোর তপস্যা করলে। সে নিশ্চয় পরম সুন্দর।’

 

শিববিবাহ

প্রথমেই মেনকা দেখলেন গন্ধর্বরাজ বিশ্ববসুকে। বিশ্ববসু ছিলেন সুদর্শন পুরুষ। মেনকা ভাবলেন, ইনিই শিব। কিন্তু প্রশ্ন করে জানলেন, উনি সামান্য গায়কমাত্র, বিবাহসভায় শিবের চিত্তবিনোদনের জন্য এসেছেন। তাই শুনে মেনকা ভাবলেন, শিব নিশ্চয় আরও সুদর্শন। তখন তিনি সম্পদের দেবতা কুবেরকে দেখলেন, কুবের বিশ্ববসু অপেক্ষা সুদর্শন। কিন্তু নারদ মেনকাকে বললেন যে উনি শিব নন। তারপর একে একে মেনকা দেখলেন বরুণ, যম, ইন্দ্র, সূর্য, চন্দ্র, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও বৃহস্পতিকে। প্রত্যেকেই পরম সুদর্শন পুরুষ। কিন্তু নারদ মেনকাকে বললেন, এঁরা কেউই শিব নন, শিবের অনুচরমাত্র। শুনে মেনকার আনন্দ আর ধরে না। এমন সুদর্শন দেবতারা যদি শিবের অনুচরমাত্র হন, তবে শিব নিজে কত না সুদর্শন। কিন্তু কোথায় শিব? শেষে এলেন শিব। নারদ মেনকাকে বললেন, ‘ইনিই শিব।’ জামাইয়ের অমন ভীষণ মূর্তি দেখে মেনকা তো মূর্ছা গেলেন।

মূর্ছা যাবেনই না বা কেন? ষাঁড়ের পিঠে চড়ে এসেছিলেন শিব। তিনটে চোখ, পাঁচটা মাথা, দশটা হাত, গায়ে মাখা ছাই, কপালে চন্দ্র, পরনে বাঘছাল, গলায় খুলির মালা। সঙ্গী ভূতপ্রেতেদের যেমন চেহারা, তেমনই ভয়ানক তাদের চিৎকার রব।

 

জ্ঞান ফিরতে মেনকা বিলাপ করতে লাগলেন। এমন লোককে পাত্র নির্বাচনের জন্য তিনি হিমালয়, নারদ ও পার্বতীকে তিরস্কার করতে লাগলেন। ব্রহ্মা, অন্যান্য দেবগণ ও ঋষিরা মেনকাকে শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন।

 

মেনকা বললেন, ‘আমি এমন শিবের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেব না। বরং মেয়েকে বিষ দিয়ে মারব, কুয়োয় ফেলে হত্যা করব, টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলবো, সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলে দেবো। আমি আত্মহত্যা করব। কিন্তু পার্বতীর বিয়ে আমি অন্য কারোর সঙ্গে দেবো।’ পার্বতীও বেঁকে বসলেন। বললেন, ‘শিব ছাড়া আমি আর কাউকেই বিয়ে করব না। শৃগাল কি সিংহের বিকল্প হতে পারে?’

 

বিষ্ণু মেনকাকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু মেনকা কোনো কথাই শুনলেন না। শেষে নারদ শিবকে মনোহর রূপ ধারণ করার অনুরোধ করলেন। শাশুড়িকে শান্ত করতে শিবকে তাই করতে হল। শিবের শরীর সহস্রসূর্যের প্রভাময় হল, মস্তকে শোভা পেল দিব্য মুকুট, অঙ্গ আবৃত হল বহুমূল্য বস্ত্রে, কণ্ঠের অলংকাররাজি নক্ষত্রদেরও লজ্জা দিতে লাগল। শিবের সেই মনোহর রূপ দেখে সবাই মোহিত হলেন। এমনকি মেনকাও।

 

নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য ক্ষমা চাইলেন মেনকা। শিব ও পার্বতীর বিবাহে তাঁর আর কোনো আপত্তি রইল না। ব্রহ্মার পৌরোহিত্যে শিব ও পার্বতীর বিবাহ সম্পন্ন হল। শিব পার্বতীকে নিয়ে কৈলাসে ফিরলেন।

 

কার্তিকেয়

যথাকালে শিব ও পার্বতীর এক পুত্রের জন্ম হল। তাঁর নাম রাখা হল স্কন্দ বা কার্তিকেয়। বাল্যকালে কার্তিকেয় একবার ঘাসের জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিলেন। ছয় রাজকুমারী তাঁকে উদ্ধার করেন। প্রত্যেকেই তাঁকে নিজ নিজ সন্তানরূপে পালন করেন। এই ছয় রাজকুমারীরা ছিলেন কৃত্তিকা। তাঁদের নামানুসারেই শিবের পুত্রের নাম হয় কার্তিকেয়। যথাকালে কার্তিকেয় শিব ও পার্বতীর কাছে ফিরে আসেন।

কার্তিকেয়

 

কার্তিকেয় বয়ঃপ্রাপ্ত হলে নারদের পরামর্শে দেবতারা তাঁকে সেনাপতি নিয়োগ করেন। দেবসৈন্য নিয়ে কার্তিকেয় তারকাসুরের রাজধানী শোনিতপুর আক্রমণ করেন। দশদিনের প্রবল যুদ্ধে তারকাসুর পরাজিত ও নিহত হয়। দেবতারা মুক্ত হলেন।

 

ট্যাগ সমুহঃ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

 
%d bloggers like this: