পার্বতীর তপস্যা
এদিকে পার্বতী শিবের প্রেমে পড়লেন। দিনরাত অন্য চিন্তা নেই, শুধু শিব শিব আর শিব।
একদিন দেবর্ষি নারদ এসে পার্বতীকে বললেন, শিব কেবলমাত্র তপস্যাতেই সন্তুষ্ট হন। তপস্যা বিনা ব্রহ্মা বা অন্যান্য দেবতারাও শিবের দর্শন পান না।
নারদের পরামর্শ মতো পার্বতী তপস্যা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রথমে তিনি পিতামাতার অনুমতি নিলেন। তাঁর পিতা গিরিরাজ হিমালয় সাগ্রহে অনুমতি দিলেন। যদিও মা মেনকা মেয়েকে এমন কঠিন তপস্যা করতে দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু পরে তিনিও অনুমতি দিলেন।

তপস্বিনী পার্বতী
পার্বতী বহুমূল্য বস্ত্র ও অলংকারাদি পরিত্যাগ করে মৃগচর্ম পরিধান করলেন। তারপর হিমালয়ের গৌরীশিখর নামক চূড়ায় গিয়ে কঠিন তপস্যায় বসলেন। বর্ষাকালে মাটিতে বসে, শীতকালে জলে দাঁড়িয়ে তপস্যা করতে লাগলেন পার্বতী। বন্য জন্তুরা তাঁর ক্ষতি করা দূরে থাক, কাছে ঘেঁষতেও ভয় পেতে লাগল। সকল দেবতা ও ঋষিরা একত্রিত হয়ে এই অত্যাশ্চর্য তপস্যা চাক্ষুষ করতে লাগলেন। দেবতাগণ ও ঋষিগণ শিবের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে বললেন, ‘হে প্রভু, আপনি কি দেখতে পান না পার্বতী কি ভীষণ তপস্যায় বসেছেন? এমন কঠোর তপস্যা পূর্বে কেউ করেনি। ভবিষ্যতেও কেউ করতে পারবে না। অনুগ্রহ করে তাঁর মনস্কাম পূর্ণ করুন।’
শিব তখন এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশ ধরে পার্বতীর কাছে গেলেন। বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ দেখে পার্বতী ফলফুল দিয়ে তাঁর পূজা করলেন।
ছদ্মবেশী শিব জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি তপস্যা করছ কেন? তুমি কি চাও?’
পার্বতী বললেন, ‘আমি শিবকে আমার স্বামীরূপে পেতে চাই।’
ব্রাহ্মণবেশী শিব বললেন, ‘তুমি তো দেখি মহামুর্খ! তুমি সোনার বদলে কাঁচ আর চন্দনের বদলে কাদা চাও! গঙ্গাজল ফেলে কেউ কি কূপের জল পান করে? বিবাহ করতে হলে স্বর্গের দেবতাদের করো। ইন্দ্র তোমার উপযুক্ত স্বামী হতে পারেন। শিব আবার একটা দেবতা নাকি! তিনটে চোখ, পাঁচটা মাথা, মাথায় জটা, গায়ে ভষ্ম, গলায় সাপের মালা, সঙ্গী ভূতপ্রেত, পরনে নেই কাপড়, ট্যাঁকে নেই টাকা! থাকার মধ্যে আছে গলায় বিষ! এমনকি কে যে তার বাপ-মা তাও কেউ জানে না! থাকে গহীন বনে! আমার মতে তুমি ভুল করছ। শিবকে ভুলে যাও। নিজের জীবনখানা নষ্ট কোরো না।
ব্রাহ্মণের কথা শুনে পার্বতী রেগে উঠলেন। বললেন, ‘মুর্খ তো আপনি। আপনি শিবের সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তিনিই তো মহাদেব। আপনার মতো শিবনিন্দুকের সেবা করলুম, ধিক আমাকে। শিবের বিরুদ্ধে আর একটি শব্দ উচ্চারণের আগেই আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই। শিবনিন্দার একটি শব্দও শুনতে চাই নে।’
পার্বতী সেই স্থান পরিত্যাগ করতে যাবেন, এমন সময় শিব স্বমূর্তি ধরে বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছো? আমি ভেবেছিলাম, তুমি আমারই জন্য প্রার্থনা করছিলে। এখন আমাকে ছেড়ে গেলে তো চলবে না। আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে দেবো না। তুমি বর চাও।’
অভিভূত পার্বতী বললেন, ‘প্রভু, আমাকে বিবাহ করুন।’
শিব বললেন, ‘তথাস্তু।’
এই কথা শুনে পার্বতী ফিরে এলেন ঘরে।
বিশ্বজিৎ
ফেব্রুয়ারি 27, 2012 at 1:01 অপরাহ্ন
শিবপুরাণ Mythological perspective থেকে অমূল্য কিন্তু ধর্মীয় গ্রন্থ হিসাবে beyond ridiculous!
অর্ণব দত্ত
ফেব্রুয়ারি 27, 2012 at 7:31 অপরাহ্ন
ধর্মগ্রন্থ হিসেবে শিবপুরাণ কেন, যে কোনো পুরাণই রিডিকিউলাস। তবে কিনা পড়তে মজা লাগে। 😀