তারকাসুরের বরলাভ
তার নামে এক অসুর ছিল। তার পুত্রের নাম ছিল তারক।
তারক দেবতাদের পরাজিত করতে চাইল। তাই সে মধুবন নামে এক স্থানে গিয়ে ভীষণ তপস্যা শুরু করে দিল। সূর্যের দিকে তাকিয়ে উর্ধ্ববাহু হয়ে এক পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে একশো বছর তপস্যা করল তারক। এই একশো বছর সে শুধু জল ছাড়া আর কিছুই খেল না। তারপর একশো বছর জল ত্যাগ করে শুধুমাত্র বায়ু ভক্ষণ করে তপস্যা করল। একশো বছর তপস্যা করল জলের তলায়, একশো বছর মাটিতে, আর একশো বছর আগুনের মধ্যে। তারপর একশো বছর সে হাতে ভর দিয়ে উলটো হয়ে তপস্যা করল। পরের একশো বছর তপস্যা করল গাছের ডালে উলটো হয়ে ঝুলে।
এই কঠোর তপস্যায় ব্রহ্মা খুশি হলেন। তিনি তারকাসুরের সামনে আবির্ভূত হয়ে বললেন, ‘বৎস, তোমার তপস্যায় আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। তুমি কী বর চাও, বলো।’
তারকাসুর উত্তরে বলল, ‘আপনি যদি সত্যই সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন, তবে আমাকে দু-টি বর দিন। প্রথম বরটি হল, আপনার সৃষ্ট কোনো প্রাণীই আমার মতো শক্তিশালী হবে না। দ্বিতীয় বরটি হল, একমাত্র শিবের পুত্রই আমাকে বধ করার ক্ষমতা রাখবেন, আর কেউ নয়।’
সেই সময় শিবের কোনো পুত্র ছিল না। সতী দেহত্যাগ করেছিলেন। যদিও তিনি পার্বতী-রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তবু তখনও তাঁর সঙ্গে শিবের বিবাহ হয়নি।
ব্রহ্মা তারকাসুরকে তার কাঙ্ক্ষিত দু-টি বরই দিয়ে দিলেন। তারকাসুর শোনিতপুর নামে এক শহরে গিয়ে বসবাস করতে থাকে। দৈত্যরা তাকে রাজা বলে মেনে নেয়। ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে তারকাসুর দেবতাদের পরাজিত করে। সে দেবতাদের থেকে স্বর্গ থেকে কেড়ে নিল। শুধু তাই নয়, দেবতাদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তাঁদের ভৃত্যের কাজে নিয়োগ করল।
হতাশ দেবতারা ব্রহ্মার কাছে গিয়ে এর প্রতিকার প্রার্থনা করেন। ব্রহ্মা বললেন, ‘আমার বরে তারকাসুর এমন বলীয়ান। তাকে নিরস্ত করার ক্ষমতা তাই আমার নেই। তাছাড়া, আমার বর অনুযায়ী, একমাত্র শিবের পুত্রই তারকাসুরকে বধ করতে সক্ষম। শিব বর্তমানে হিমালয়ে তপস্যা করছেন। পার্বতীও এখন হিমালয়ে। আপনারা কিছু করে উভয়ের মধ্যে প্রেমের সঞ্চার ঘটান। তাঁদের বিবাহ দিতে পারলেই শিবের পুত্রের জন্ম সম্ভব হবে।’
মদনভষ্ম
দেবতারা ব্রহ্মার উপদেশ মতো কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু শিব ও পার্বতীর হৃদয়ে পরস্পরের প্রতি প্রেমের সঞ্চার কিভাবে ঘটানো যায়? দেবরাজ ইন্দ্র তখন ডেকে পাঠালেন প্রেমের দেবতা কন্দর্প বা মদনকে। ইন্দ্র বললেন, ‘হিমালয়ে তপস্যা করছেন শিব। হিমালয়েই আছেন পার্বতী। যে করেই হোক, উভয়ের হৃদয়ে পরস্পরের প্রতি অনুরাগের সঞ্চার করো। এ কাজ তোমাকে করতেই হবে। অন্য কোনো উপায় নেই।’
শিব যেখানে তপস্যা করছিলেন সেখানে গেলেন মদন। প্রেমের দেবতা সেখানে পদার্পণ করা মাত্র চারিদিকে বসন্তের সমাগম ঘটল। ফুল ফুটল। ভ্রমর গুঞ্জন করতে লাগল। কোকিলের গান শুরু হল। বনে মলয় বাতাস বইতে লাগল। শিবের ধ্যানে পড়ল বাধা।
এমন সময় সেখানে পার্বতী উপস্থিত হলেন। পার্বতীর রূপ দেখে শিব কাতর হলেন। পার্বতীও শিবকে দেখে আকৃষ্ট হলেন।
কিন্তু শিব শিবই। তিনি বুঝতে পারলেন, কোথাও একটা গোলমাল আছে। তাঁর ধ্যানভঙ্গ কিভাবে সম্ভব? বসন্তকাল না হওয়া সত্ত্বেও বসন্তের আবির্ভাব হল কিভাবে? শিব চারদিকে চেয়ে দেখলেন। তাঁর চোখ পড়ল লুকিয়ে থাকা মদনের উপর। তিনি বুঝতে পারলেন, মদনই এসবের জন্য দায়ী।

মদনভষ্ম
ক্রোধে শিবের তৃতীয় নয়ন জ্বলে উঠল। সেই নয়নের আগুনে ভষ্ম হয়ে গেলেন মদন।
মদনের পত্নীর নাম ছিল রতি। স্বামীকে ভষ্ম হয়ে যেতে দেখে তিনি শোকার্ত হয়ে ছুটে এলেন শিবের কাছে। বললেন, তাঁর স্বামীর কোনো দোষ ছিল না। তারকাসুর সমস্যার সমাধানের জন্য দেবরাজের আদেশে তিনি শিবের ধ্যান ভঙ্গ করতে এসেছিলেন।
শিব বললেন, ‘যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। মদন দ্বারকা নগরে কৃষ্ণের পুত্র প্রদ্যুম্ন হয়ে জন্ম নেবেন। তখনই রতির সঙ্গে তাঁর পুনর্মিলন হবে। কিন্তু ততদিন রতিকে অপেক্ষা করতে হবে।’
এই বলে শিব পুনরায় ধ্যানমগ্ন হলেন। দেবতাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হল না। শিব ও পার্বতীর বিবাহের কোনো আশু সম্ভাবনা কেউ দেখতে পেলেন না।
(ক্রমশ)
adriza sen
নভেম্বর 30, 2012 at 4:47 অপরাহ্ন
puro porte chai, apnake ajosra dhanyabad….
অর্ণব দত্ত
নভেম্বর 30, 2012 at 6:34 অপরাহ্ন
এই আমার একটা সমস্যা, জানেন! সিরিজ শুরু করি, কিন্তু শেষ করার ধৈর্য থাকে না!