
“স্টোনিং অফ সেন্ট স্টিফেন” (১৬৬০), পিয়েত্রো দ্য করতোনা অঙ্কিত চিত্র
আমাদের নতুন ওয়েব-ঠিকানা:
http://www.bangabharatiemag.com/
সময়টা ৩৪ কি ৩৫ খ্রিস্টাব্দ। সানহার্ডিনের বিচারসভায় দাঁড়িয়ে আছেন এক তরুণ যুবক। নাম তাঁর স্টিফেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঈশ্বর ও মোজেসের নিন্দা করেছেন এবং মন্দির ও মোজেসের বিধানের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। বিচারসভার সকলের দৃষ্টি স্টিফেনের মুখে নিবদ্ধ। সে মুখ যেন স্বর্গদূতের মুখ।
আসল ঘটনাটি অন্য। যিশু খ্রিস্টের প্রেরিত শিষ্যমণ্ডলী সাত জন পুণ্যাত্মাকে জেরুজালেমে যিশুর বাণী প্রচারের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম এই যুবক স্টিফেন। স্টিফেন ছিলেন ঈশ্বরের শক্তিতে পরিপূর্ণ। জেরুজালেমে তিনি সাফল্যের সঙ্গে যিশুর বাণী প্রচার করতে লাগলেন। ঈশ্বরের অনুগ্রহে জনসমক্ষে অনেক অলৌকিক কাজও করলেন। এতে কিছু মুক্ত-ক্রীতদাস, সাইরিনি ও আলেকজান্দ্রিয়ার কিছু লোক এবং সিলিসিয়া ও এশিয়ার কিছু লোকের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়লেন স্টিফেন। স্টিফেনের কথাগুলি ছিল ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট। তাই সেগুলিকে খণ্ডানোর ক্ষমতা কারোরই হল না। তখন সেই লোকগুলি বাঁকা পথ ধরল। তারা জেরুজালেমের জনসাধারণ ও প্রবীণ সমাজপতিদের প্ররোচিত করল। স্টিফেনকে বেঁধে আনা হল বিচারসভায়। একদল মিথ্যা সাক্ষীও হাজির হল। তারা বললে, “এই লোকটি বলেছে, ঐ নাজারেথের যিশু নাকি এই মন্দির ধ্বংস করবে এবং মোজেস আমাদের যে বিধান দিয়ে গেছেন, তা বদলে দেবে?” প্রধান পুরোহিত স্টিফেনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “এসব কি সত্যি?”
স্টিফেন শাস্ত্র উদ্ধৃত করে দেখালেন যে, কোনো মন্দির ঈশ্বরের আবাস হতে পারে না। ঈশ্বরের সিংহাসন স্বর্গ, ঈশ্বরের পাদপীঠ এই মর্ত্য – কোথায়ই বা তাঁর আবাস নির্মাণ করা সম্ভব? এই কথা বলে স্টিফেন তীব্র আঘাত হানলেন জেরুজালেম-বাসীর উপর। বললেন, “চিরকালই তোমরা ঈশ্বরবিমুখ। যেমন ছিল তোমাদের পূর্বপুরুষেরা, তেমনই হয়েছো তোমরা। তোমাদের পূর্বপুরুষেরা কোন মহাপুরুষকে নির্যাতন করেনি? যাঁরাই শাস্ত্রোক্ত ধর্মপুত্রের আগমন ঘোষণা করেছেন, তাঁদেরই তোমরা হত্যা করেছো। এখন বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁকেও হত্যা করলে।”

“দ্য স্টোনিং অফ সেইন্ট স্টিফেন”, গ্যাব্রিয়েল-জুলস টমাস কর্তৃক নির্মিত প্যারিসের সেন্ট স্টিফেন ইন দ্য মাউন্টেনস গির্জার সদর দরজার উপর খোদিত চিত্র।
উন্মত্ত জনসাধারণ রাগের চোটে দাঁতে দাঁত ঘষতে লাগল। ঈশ্বরানুগ্রহপ্রাপ্ত স্টিফেন তাকালেন আকাশের পানে। দেখতে পেলেন সেখানে ঈশ্বরের ডানদিকে দাঁড়িয়ে আছেন যিশু। স্টিফেন বলে উঠলেন, “ওই দেখো, আকাশ বিদীর্ণ হয়েছে। দেখতে পাচ্ছি, মানবপুত্র দাঁড়িয়ে আছেন ঈশ্বরে ডানদিকে।”
উপদেশ মুর্খকে প্রকোপিতই করে, শান্ত করে না। চিৎকার করে উঠল সবাই। কানে আঙুল দিল। তারপর এক সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ল স্টিফেনের উপর। টানতে টানতে তাঁকে নিয়ে গেল শহরের বাইরে। সেখানে নিজেদের পোষাক খুলে সৌল নামে একজনের হাতে দিয়ে স্টিফেনকে পাথর মারতে লাগল তারা। মৃত্যুকাল আসন্ন দেখে স্টিফেন বলে উঠলেন, “প্রভু যিশু, আমার আত্মা গ্রহণ করুন।” তারপর মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। আর্তনাদ করে বললেন, “প্রভু এদের পাপ তুমি গ্রহণ করো না।” একের পর এক প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তরুন যুবক স্টিফেন।
রোমান ক্যাথলিক চার্চ, ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ, ওরিয়েন্টাল অর্থোডক্স চার্চ, ইস্টার্ন ক্যাথলিক চার্চ, লুথারিয়ান চার্চ, অ্যাংলিক্যান কমিউনিয়ন ও অ্যাংলিক্যান চার্চ – সর্বত্রই সন্তের মর্যাদা পান স্টিফেন। গ্রিক ভাষায় ‘স্টিফেন’ কথাটির অর্থ ‘মুকুট’। তাঁর মাথায় যে থাকে খ্রিস্ট-শহিদের মুকুট। আবার হিব্রু অর্থ ধরলে ‘স্টিফেন’ কথার অর্থ দাঁড়ায় ‘বিধি’। নববিধানে কথিত প্রথম শহিদ সন্ত স্টিফেন। তিনি খ্রিস্টের নামে যন্ত্রণাভোগের বিধিপ্রদায়ক।
asit
মে 19, 2012 at 9:11 অপরাহ্ন
nice excelent
অর্ণব দত্ত
মে 19, 2012 at 10:17 অপরাহ্ন
thank you