
বাফি দ্য ভ্যাম্পায়ার স্লেয়ার
সানিডেল হাইস্কুল। নিশুতি রাত। ক্লাসঘরের জানলা খুলে ভিতরে ঢুকে এল একটি ছেলে–সেই স্কুলেরই ছাত্র। সঙ্গে একটি মেয়ে। মেয়েটি যেন কিছুটা ভীত। বোঝাই যাচ্ছে, মেয়েটিকে ফুসলিয়ে অন্ধকার রাতে নির্জন স্কুলবাড়ির মধ্যে টেনে এনেছে ছেলেটা। হঠাৎ যেন মেয়েটি কিসের শব্দ শুনে কুঁকড়ে গেল। ছেলেটা ক্লাসঘরের বাইরে উঁকি মেরে দেখল কেউ আছে কিনা। কেউ নেই। মেয়েটির চোখে যেন অবিশ্বাস। সে নিজে দেখল। তারপরই আচমকা মেয়েটার মুখখানি বিকৃত ভ্যাম্পায়ারের আকার নিল। অতর্কিতে সে আক্রমণ করল ছেলেটিকে।
এই মেয়েটিই ডার্লা। দ্য মাস্টার নামে পরিচিত ভ্যাম্পায়ার-প্রভুর দলের এক অন্যতম প্রধান সদস্যা।
প্রথম দিন স্কুলে আসার আগে বাফি একটা বিচ্ছিরি দুঃস্বপ্ন দেখেছিল। তাইতে তার মা জয়েস সামারস নিজে গাড়ি চালিয়ে বাফিকে স্কুল অবধি ছেড়ে দিয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় বলে গেলেন, “সব সময় ইতিবাচক কথা ভাববি!” প্রিন্সিপাল ফ্লুটি বাফির কাগজপত্র ঘেঁটে জানতে পারলেন যে, বাফি তার আগের স্কুলের জিমটা পুড়িয়ে ফেলেছিল। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বাফি বলতে যাচ্ছিল যে ওটা ‘ভ্যাম্পায়ারে ভর্তি ছিল’; কিন্তু মাঝপথে নিজেকে শুধরে নিয়ে বলল “ওটা অ্যাসবেসটাসে ভর্তি ছিল!” প্রিন্সিপাল বাফিকে ভর্তি নিলেন ঠিকই। কিন্তু সাবধান করে দিলেন, এখানে উল্টোপাল্টা কোনো কাণ্ড ঘটালে তিনি তা আদৌ বরদাস্ত করবেন না।

বাফি
প্রিন্সিপালের অফিস থেকে বেরোনোর সময় একজনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বাফির হাতব্যাগটা মাটিতে ছিটকে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু ছড়িয়ে গেল। সুন্দরী মেয়েদের সাহায্য করতে কলেজে কোনো না কোনো ছেলে ঠিক ছুটে আসে। জান্ডার হ্যারিস সেখান দিয়েই যাচ্ছিল। সে বাফির দুরবস্থা দেখেই ছুটে এল। এইভাবেই জান্ডারের সঙ্গে বাফির পরিচয় হয়ে গেল। জান্ডার বাফির সব জিনিস তুলে তার হাতে দিল। শেষে দেখল বাফি একটা কাঠের গোঁজ ফেলে গেছে। সে ডাক দিল। কিন্তু বাফি তখন তার নাগালের বাইরে। অগত্যা জান্ডার গোঁজটা নিজের পকেটে পুরে রাখল।
এদিকে ইতিহাস ক্লাসে কর্ডেলিয়া চেজ নামে এক অতিসুন্দরী (এবং সেই জন্য ছেলে-মহলে বেশ জনপ্রিয়ও বটে) ছাত্রী বাফির সঙ্গে আলাপ করল। এটা-সেটা ছোটোখাটো ব্যাপারে সে বাফিকে সাহায্য করল। প্রথম দর্শনে বাফিরও তাকে বেশ লাগল। আসলে বাফি সান ফ্রান্সিসকো থেকে সানিডেলে এসেছে শুনে সে বাফির ‘কুলনেস ফ্যাক্টর’ টেস্ট করছিল। জল খাওয়ার জায়গায় উইলো রোসেনবার্গ নামে একটি বোকাসোকা মেয়েকে কর্ডেলিয়া যেভাবে অপমান করল, তাতেই তার আসল চেহারা বাফির কাছে খুলে গেল।
যাই হোক, এরপর বাফি গেল লাইব্রেরিতে। লাইব্রেরিয়ান রুপার্ট গিলস তো বাফিকে দেখেই আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তিনি অতি উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ভ্যাম্পায়ার নামে পুরনো মোটা বই বাফির সামনে রাখলেন। বইটা দেখে বাফির মুখের ছবিটাই গেল পালটে। সে কোনো কথা না বলে ছুট্টে লাইব্রেরি থেকে পালিয়ে গেল।

উইলোর সঙ্গে বাফি
বিরতির সময় উইলোকে একা পেয়ে বন্ধুত্ব করে নিল। এমন সময় জান্ডার এসে বাফিকে তার কাঠের গোঁজটি ফেরত দিল। গোঁজটা যাতে কারো সন্দেহ না উদ্রেক করতে পারে, সেজন্য বাফি বলল লস এঞ্জেলসের লোকে নাকি আত্মরক্ষার জন্য কাঠের গোঁজ রাখে! এমন সময় জেস ম্যাকনেল নামে একটা সুদর্শন ছোকরার সঙ্গে কর্ডেলিয়াও তাদের কাছে এসে হাজির হল। কর্ডেলিয়া বলল, তাদের বন্ধুর অরার লকার থেকে একটা মরা লোক পাওয়া গেছে! বাফি তাকে জিজ্ঞাসা করে বসল, লোকটার গায়ে কোনো দাগ আছে কিনা। এরকম অদ্ভুত প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে কর্ডেলিয়া সটান সেখান থেকে চলে গেল। বাফি কাউকে কিছু না বলে চুপিচুপি ঢুকল লকার রুমে। দেখল সত্যিই মৃতদেহের (যে ছেলেটিকে স্কুলে রাতের বেলা কামড়েছিল ডার্লা) ঘাড়ের কাছে ভ্যাম্পায়ারে কামড়ের দাগ।
সব দেখে শুনে বাফির মনে হল লাইব্রেরিতে গিয়ে মিস্টার গিলসের সঙ্গে দেখা করাটা জরুরি। মিস্টার গিলসের কাছে গিয়ে সে জানল যে, আসলে তিনি একজন ‘ওয়াচার’ আর বাফি একজন ‘স্লেয়ার’। যুগে যুগে ভ্যাম্পায়ারদের মারার জন্য বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন স্লেয়ারদের জন্ম হয়। আর সেই স্লেয়ারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাঁরা তাদের কাজ সফল করতে সাহায্য করেন, তাঁদের বলা হয় ওয়াচার। যদিও এসব শুনে বাফি মোটেও খুশি হল না। সে স্পষ্ট জানিয়ে দিল, স্লেয়ারের জীবন তার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। তাকে স্কুল থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছে। পুরনো বন্ধুরা সবাই তাকে ছেড়ে গেছে। সামাজিক জীবন বলে কিছুই থাকেনি তার। রেগে মেগে বাফি লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে যায়। তাকে বোঝানোর জন্য পিছন পিছন যান মিস্টার গিলস। এদিকে বাফি আর মিস্টার গিলসের সেই অদ্ভুত কথাগুলো চুপিচুপি বুকশেলফের আড়াল থেকে শুনে ফেলে জান্ডার। সব শুনে সে তো থ! যদিও কিছুই বুঝতে পারে না জান্ডার।

রহস্যময় যুবক
সেদিন রাতে বাফি যাচ্ছিল সানিডেলের বিখ্যাত নাইটক্লাব দ্য ব্রোঞ্জে। যাওয়ার পথে এক সুদর্শন যুবকের সঙ্গে দেখা হল বাফির। যুবকটি বাফিকে বলল, বাফি আসলে ভ্যাম্পায়ার ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্রস্থল এক ‘হেলমাউথ’-এ বাস করছে। আর সামনেই ভ্যাম্পায়ারদের ভয়াল উৎসব ‘হারভেস্ট’। এই অবস্থায় বাফি খুব একটা নিরাপদ নয়। যুবকটি বাফিকে একটা রুপোর ক্রুস দিয়ে চলে গেল।
দ্য ব্রোঞ্জে গিয়ে বাফি দ্যাখে উইলো অন্য ছেলেদের সঙ্গে মিশতে লজ্জা পাচ্ছে। সে উইলোকে উৎসাহ দেয়। এমন সময় ক্লাবে মিস্টার গিলসের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় বাফির। সে বাফিকে সেই যুবকের কথা বলে ‘হেলমাউথ’ আর ‘হারভেস্ট’ কথাদুটি শুনে মিস্টার গিলস আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি মরিয়া হয়ে বাফিকে ভ্যাম্পায়ারদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করতে উৎসাহ দিতে থাকেন। কথা বলতে বলতে বাফি দ্যাখে উইলো এক সুদর্শন যুবকের সঙ্গে খুব ভাব জমিয়েছে। তারপরই সে তার স্লেয়ার-সুলভ অনুভূতির সাহায্যে বুঝতে পারে যে, সুদর্শন যুবকটি আসলে এক ভ্যাম্পায়ার! ভ্যাম্পায়ারটা উইলোকে নিয়ে যেন কোথায় যাচ্ছে। শেষে তারা বাফির দৃষ্টির আড়ালে চলে গেলে বাফিও মরিয়া হয়ে তাদের খুঁজতে বের হল। এদিকে খুঁজতে গিয়ে ভুল করে কর্ডেলিয়াকে গোঁজ মারতে যায় বাফি। এদের বাফির উপর কর্ডেলিয়া খাপ্পা হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে সেই সময় ডার্লার সঙ্গে আলাপ হয় জেসের। জেস কিছুক্ষণ আগে কর্ডেলিয়া তার সঙ্গে ড্যান্সে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু কর্ডেলিয়া সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় জেসও সঙ্গিনী জোটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। এই অবস্থায় জেসকে হাত করল ডার্লা।
ওদিকে বাফির সঙ্গে দ্যাখা হয়ে গেল জান্ডারের। বাফি জান্ডারকে বোঝাতে সমর্থ হয় যে, শিগগির উইলোকে খুঁজে বের করতে না পারলে তার সমূহ বিপদ।

দ্য মাস্টার
মাটির উপর যখন এই সব কাণ্ড চলছে তখন সানিডেলের সড়কের তলায় ভূগর্ভে চলছে অন্য কিছু। সেখানে হারভেস্টের প্রস্তুতি সারছে ভ্যাম্পায়ারের দল। সেই জন্য প্রথামতো অনুষ্ঠান করে তাদের প্রভু দ্য মাস্টারকে জাগিয়ে তুলছে তারা। মাস্টার জাগলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বস্ত ভ্যাম্পায়ার লুককে পাঠালেন হারভেস্টের জন্য কিছু ‘তরুণ রক্ত’ খুঁজে আনতে।
উইলোর নতুন সঙ্গীটি উইলোকে নিয়ে একটা কবরখানার ক্রিপ্টে। সেখানে জেসকে নিয়ে হাজির হল ডার্লাও। ডার্লা ইতিমধ্যেই জেসকে কামড়েছিল। বেচারা তখন বেশ দুর্বল। ডার্লা স্বমূর্তি ধরে উইলোকে আক্রমণ করতে যাবে, এমন সময় সেখানে হাজির হল বাফি আর জান্ডার। বাফির অকুতোভয় ভাবভঙ্গি দেখে প্রথমে ডার্লা কিছুটা অবাকই হল। তারপর যেভাবে বাফি উইলোর ভ্যাম্পায়ারটাকে অতর্কিতে বধ করল, তাতে সে বুঝে গেল যে বাফি আসলে এক স্লেয়ার। আহত জেসকে নিয়ে জান্ডার আর উইলো পালাল। কিন্তু ক্রিপ্টের বাইরে এসে তারা অন্য একদল ভ্যাম্পায়ারের সামনে পড়ল। ক্রিপ্টের মধ্যে বাফির হাতে কয়েক ঘা খেয়েই ডার্লা ভয়ে কাঁপতে লাগল। ঠিক সেই সময় তার সাহায্যে এগিয়ে এল লুক। বাফিকে লুকের হাতে ছেড়ে দিয়েই ডার্লা পালাল। লুক শক্তিমান ভ্যাম্পায়ার। তার সঙ্গে বাফি কিছুতেই পেরে উঠল না। শেষে লুক বাফিকে একটা পাথরের কফিনের মধ্যে ফেলে কামড়াতে গেল। এমন সময়…
ক্রমশ…
razibshikder
এপ্রিল 24, 2013 at 5:39 পুর্বাহ্ন
চরম ! পরেরটুক কই