কলকাতা ১৫২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মন্দির-শহর বিষ্ণুপুর। প্রাচীন মল্লভূম রাজ্যের রাজধানী। বর্তমানে বাঁকুড়া জেলার একটি মহকুমা শহর। এই শহরের খ্যাতি এর মন্দির-স্থাপত্য, শিল্পকলা ও সাংগীতিক ঐতিহ্যের জন্য। সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই শহরে গড়ে উঠেছিল একাধিক মাকড়া পাথর ও পোড়া ইঁটের মন্দির। মন্দিরগুলি মূলত বাংলা নবরত্ন, পঞ্চরত্ন বা চালা স্থাপত্যরীতির অনুসারী। কিন্তু মল্লরাজ বীরহাম্বীর ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে বিষ্ণুপুরে যে রাসমঞ্চটি নির্মাণ করেছিলেন, সেটি এক অভূতপূর্ব স্থাপত্যকলার নিদর্শন। এই মঞ্চটিতে বাংলার সনাতন মন্দিরস্থাপত্যের সঙ্গে মিশে যায় মিশরীয় পিরামিড ও ইসলামী স্থাপত্যশৈলী।
রাজা বীরহাম্বীর ছিলেন মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের সমসাময়িক এবং মুঘল-পাঠান সংঘর্ষে মুঘল বাহিনীর অন্যতম সহায়ক। এই দুর্ধর্ষ মল্লযোদ্ধাই শ্রীনিবাস আচার্যের কাছে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত হন। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে বীরহাম্বীর গড়ে তোলেন রাসমঞ্চ।
রাসমঞ্চটি একটি প্রশস্ত ভিত্তিবেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত। বেদীটি নির্মিত হয়েছে ঝামাপাথর বা ল্যাটেরাইট পাথরে; স্থানীয় উপভাষায় যার নাম মাকড়া পাথর। তাকে চারপাশে ঘিরে আছে তিন প্রস্থ খিলানযুক্ত দেওয়াল। বেদীটি বর্গাকার। এর উচ্চতা ১.৬ মিটার, প্রস্থ ২৪.৬ মিটার। পুরো মন্দিরটির উচ্চতা ১০.৭ মিটার। মাথাটি একটি স্বল্পপরিসর ছাদের আকারবিশিষ্ট। চূড়াটি মিশরের পিরামিডের আকার-বিশিষ্ট। চূড়ার পাদদেশে চারটি করে দোচালা ও প্রত্যেক কোণে একটি করে চারচালা নির্মিত হয়েছে। গর্ভগৃহ সাধারণত দেওয়াল দিয়ে আচ্ছাদন করে রাখার রীতি আমাদের বাংলায় প্রচলিত। কিন্তু এখানে সেই রীতি অনুসৃত হয়নি। এখানে দেওয়ালগুলি কতকগুলি খিলানের সমষ্টি। খিলানগুলি মুসলমানী স্থাপত্যের অনুসরণে নির্মিত। বাইরের খিলানের গায়ে পোড়ামাটির পদ্ম ও পূর্বের দেওয়ালে গায়ক-বাদকদের ছবি দেওয়া পোড়ামাটির প্যানেল দেখা যায়। প্রতি দেওয়ালে খিলানের সংখ্যা সমান নয়। বিষ্ণুপুরের আঞ্চলিক স্থাপত্যরীতি এখানে আদৌ অনুসরণ করা হয়নি।
রাস উৎসবের সময় মল্ল রাজবংশের পূজিত রাধাকৃষ্ণ মূর্তিগুলি রাসমঞ্চে নিয়ে আসা হত। ১৬০০ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত রাসমঞ্চে মহাসমারোহে রাস উৎসব হয়ে এসেছে।
রাসমঞ্চ এক অভিনব স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন। এমন স্থাপত্য শুধু বাংলাতেই নয়, সারা ভারতে বিরল।
লেখা ও ছবি: অর্ণব দত্ত
(উইকিমিডিয়া কমনস-কেও এই ছবিগুলি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।)
Indranil modak
সেপ্টেম্বর 6, 2012 at 9:25 অপরাহ্ন
পরলাম, খুব সুন্দর লেখা। শারদীয়াতেও আপনই লিখুন।
Jhumpa Bhaskar Bose
নভেম্বর 23, 2012 at 11:25 পুর্বাহ্ন
Jhumpa Bhaskar Bose
নভেম্বর 23, 2012 at 11:39 পুর্বাহ্ন