RSS

অবসাদে ভুগতেন রবীন্দ্রনাথ, বলছে তাঁর নতুন জীবনী

26 ডিসে.

শেষ অসুখের সময় কলকাতার পথে কবি

‘যদি কেউ কথা না কয়, ওরে ওরে ও অভাগা,/ যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে সবাই করে ভয়–/ তবে পরান খুলে/ ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা একলা বলো রে।।’ – এই অমোঘ পংক্তি যাঁর লেখা সেই রবীন্দ্রনাথ ভুগতেন অবসাদে। এমনটাই দাবি করছে অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্যের লেখা কবির নতুন জীবনী ‘রবীন্দ্রনাথ টেগোর: অ্যান ইন্টারপ্রিটেশন’।

পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া থেকে প্রকাশিত এই বইটিতে দেখানো হয়েছে সদা-সংশয়াচ্ছন্ন আত্মসমালোচক রবীন্দ্রনাথ কিভাবে সারা জীবন তাঁর অন্তরলোকের বিক্ষোভ-আন্দোলন সামাল দিয়েছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর নিত্যসঙ্গী ছিল একাকীত্ব। জীবনস্মৃতিছেলেবেলা-য় আমরা পড়ি সেই দিনগুলির কথা। দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজকেও একবার তিনি লেখেন, “আমার ছেলেবেলার প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল আমার একাকীত্ব।” বাবা দেবেন্দ্রনাথকে ছেলেবেলায় কাছে পাননি বললেই হয়। মায়ের মৃত্যুর পর একপ্রকার চাকরবাকরদের তত্ত্বাবধানেই বড়ো হয়েছিলেন তিনি; জীবনস্মৃতি-তে যাকে তিনি বলেছেন ‘ভৃত্যরাজক-তন্ত্র’। এমনকি যৌবনেও পূর্ববঙ্গে একা অনেক দিন কাটান রবীন্দ্রনাথ। এই সময় জনৈক বন্ধুকে কবি লেখেন, “অনেক সময় মাসের পর মাস একা থাকতাম। কথা বলারও লোক ছিল না। ব্যবহারের অভাবে সেই সময়েই আমার কণ্ঠ ক্ষীণ হয়ে এসেছিল।” এই একাকীত্ব রবীন্দ্রনাথের স্বাস্থ্যের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। ১৯১৪-১৫ সাল নাগাদ অবসাদ-জনিত অসুস্থতা বেশ বেড়েছিল তাঁর। অ্যান্ড্রুজ এক জায়গায় লিখেছেন, “রামগড়ে আসার পর তাঁর মানসিক যন্ত্রণা মৃত্যু যন্ত্রণার তুল্য হয়েছিল। তিনি ভাবতে পারেননি যে তিনি এই যন্ত্রণা কাটিয়ে বেঁচে যাবেন।” ছয় বছর বাদে আর একবার তিনি অবসাদ-জনিত অসুস্থতায় পড়েন। এবার অবসাদের কারণ ছিল তাঁর শারীরিক অসুস্থতা।

রবীন্দ্রনাথের অবসাদ-জনিত অসুস্থতার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সব্যসাচীবাবু দায়ী করেছেন রবীন্দ্র-নিন্দুকদেরই। ইউরোপে, আমেরিকায় কবি যতই খ্যাতি অর্জন করুন না কেন, তাঁর স্বদেশীয় সমাজ তাঁর রচনার মর্মোদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছিল। নানা অযৌক্তিক, অশালীন, অবর্ণনীয় বিদ্রুপের আঘাত সেই সময় সহ্য করতে হয় কবিকে। এই অপকর্ম করা থেকে বাদ যাননি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের মতো বরেণ্য ব্যক্তিরাও। স্বভূমিতে স্বজনের এহেন অবজ্ঞা সহ্য করতে পারেননি কবি। তাই বার বার তাঁর কথায় উঠে আসত নিজের ‘একাকীত্ব ও অসহায় অবস্থা’র কথা। ১৯২১ সালে নিউ ইয়র্কে ব্যাপক সমাদর পাওয়ার পর কবি অ্যান্ড্রুজকে বলেন, “আমার স্বদেশে অপেক্ষা করে আছে আমার নির্জন কক্ষটি।” আর তাই হয়ত তাঁর নির্জন-এককের গানে বার বার নিজেকেই বার বার শুনিয়েছেন অবসাদ জয়ের প্রেরণামন্ত্র – ‘আমার সকল কাঁটা ধন্য করে ফুটবে ফুল ফুটবে।/ আমার সকল ব্যথা রঙিন হয়ে গোলাপ হয়ে উঠবে।।’

তথ্যসূত্র: আইবিএন লাইভ

 

ট্যাগ সমুহঃ

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

 
%d bloggers like this: