
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বিশ্বের ১২১ কোটি মানুষের জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’। ১৯১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে দুপুর বারোটার সময় ‘জনগণমন’ প্রথম গাওয়া হয়েছিল। যতদূর জানা যায়, রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (কবি যাঁকে বলতেন ‘আমার সকল গানের কাণ্ডারী’) তত্ত্বাবধানে ডাঃ নীলরতন সরকারের হ্যারিসন রোডের (অধুনা মহাত্মা গান্ধী রোড) বাড়িতে গানটির মহড়া হয়। অধিবেশনের দিন গানটি গাওয়া হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে। ‘জনগণমন’ রচনার সঠিক দিনক্ষণ জানা যায় না। তাই প্রথম গাওয়ার তারিখটি ধরেই ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর পালিত হচ্ছে আমাদের জাতীয় সংগীতের শতবর্ষ।
অধ্যাপক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য লিখেছেন, সম্ভবত ১৯১১-এর ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে কবি গানটি রচনা করেছিলেন। কিন্তু সেটা নিছকই অনুমানের কথা। ২৮ ডিসেম্বর ‘দ্য বেঙ্গলি’ পত্রিকায় গানটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সময় কোনো কোনো ইংরেজি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়, অধিবেশনে ‘রবীন্দ্রনাথের লেখা বন্দেমাতরম্’ ও ‘রাজা পঞ্চম জর্জের প্রশস্তিমূলক জনগণমন’ গাওয়া হয়। এই ভ্রান্ত সংবাদের প্রতিবাদস্বরূপ ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’র জানুয়ারি, ১৯১২ সংখ্যায় সম্পূর্ণ বাংলা গানটি প্রকাশ করেন রবীন্দ্রনাথ। অনেক বছর পরে ১৯৩৭ সালে পুলিনবিহারী সেনকে লেখা একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ এই প্রসঙ্গে বিশদে লেখেন, “…সে বৎসর ভারতসম্রাটের আগমনের আয়োজন চলছিল। রাজসরকারে প্রতিষ্ঠাবান আমার কোনও বন্ধু সম্রাটের জয়গান রচনার জন্যে আমাকে বিশেষ করে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। শুনে বিস্মিত হয়েছিলুম, সেই বিস্ময়ের সঙ্গে মনে উত্তাপেরও সঞ্চার হয়েছিল। তারই প্রবল প্রতিক্রিয়ার ধাক্কায় আমি জনগণমন-অধিনায়ক গানে সেই ভারতভাগ্যবিধাতার জয় ঘোষণা করেছি, পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থায় যুগ-যুগ ধাবিত যাত্রীদের যিনি চিরসারথি, যিনি জনগণের অন্তর্যামী পথপরিচায়ক, সেই যুগযুগান্তরের মানবভাগ্যরথচালক যে পঞ্চম বা ষষ্ঠ কোনো জর্জই কোনক্রমেই হতে পারেন না সে কথা রাজভক্ত বন্ধুও অনুভব করেছিলেন।…” সবচেয়ে বড় কথা, গানের চতুর্থ স্তবকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন,
ঘোরতিমিরঘন নিবিড় নিশীথে পীড়িত মূর্ছিত দেশে
জাগ্রত ছিল তব অবিচল মঙ্গল নতনয়নে অনিমেষে।
দুঃস্বপ্নে আতঙ্কে রক্ষা করিলে অঙ্কে
স্নেহময়ী তুমি মাতা।
জনগণদুঃখত্রায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।
এই একটি পংক্তিই প্রমাণ করে দেয় রবীন্দ্রনাথের ভারত-ভাগ্যবিধাতা স্বয়ং ভারতমাতা ছাড়া আর কেউই নন। পঞ্চম জর্জ আর যাই হোন, ‘মাতা’ হবেন কিভাবে?!
রবীন্দ্রনাথ ‘বন্দেমাতরম্’ ও ‘জনগণমন’ দুটিই একাধিকবার জনসমক্ষে গেয়েছেন, রেকর্ডও করেছেন। দুঃখের বিষয়, তাঁর ‘বন্দেমাতরম্’ রেকর্ডটি এখন হারিয়ে গেছে। কিন্তু ‘জনগণমন’ রেকর্ডটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা গেছে। যাঁরা শোনেননি তাঁদের জন্য রবীন্দ্রনাথের স্বকণ্ঠে উচ্চারিত ‘জনগণমন’-এর রেকর্ডের লিঙ্ক দিলাম নিচে।
‘জনগণমন’ গানটির সঙ্গে ভারতের আরও একটি রাজ্যের নাম বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে। সেটি অন্ধ্রপ্রদেশ। অন্ধ্রপ্রদেশের মদনপল্লী নামে এক জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিলেন কবি। বেসান্ত থিওজফিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, তথা বিতর্কিত আইরিশ কবি ও রবীন্দ্রনাথের বন্ধু জেমস এইচ কাজিনসের আমন্ত্রণে। সেটা ১৯১৮-১৯ সাল। সেখানে একটি ছাত্রসম্মেলনে কাজিনসের অনুরোধে কবি সর্বসমক্ষে গানটি গেয়ে শোনান। পরবর্তীকালে কাজিনস এই গানটিকে জাতীয় সংগীত করার সপক্ষে সওয়াল করে বলেন, “আমার প্রস্তাব হল, ডক্টর রবীন্দ্রনাথের গভীর দেশাত্মবোধক, আদর্শ প্রণোদিত এবং একই সঙ্গে বিশ্বাত্মবোধক মর্নিং সং অব ইন্ডিয়া (জনগণমন), যা বিগত কুড়ি বছর বেসরকারিভাবে ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত, তাকেই সরকারিভাবে অনুমোদন করা হোক।” পরে মদনপল্লীতে বসেই গানটির ইংরেজি অনুবাদ করেন তিনি। শ্রীমতী কাজিনস গানটির স্বরলিপি করেছিলেন। অনুবাদের নাম ছিল ‘দ্য মর্নিং সং অফ ইন্ডিয়া’। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ‘ভারতের প্রভাতী সংগীত’। অনুবাদটি এই রকম:
Thou art the ruler of the minds of all people,Dispenser of India’s destiny,
Thy name rouses the hearts of Punjab, Sindh, Gujarat & Maratha,of the Dravida and Orissa andBengal,
It echoes in the hills of the Vindhyas and Himalayas,mingles in the music of Jamuna andGanges,
And is chanted by the waves of theIndianSea. They pray for thy blessings and sing thy praise,
The saving of all people waits in thy hands,
Thou dispenser ofIndia’s destiny,
Victory, Victory, Victory to thee.
Day and night, thy voice goes out from land to land,
calling Hindus, Buddhists, Sikhs and Jains round thy throne and Parsees, Mussalmans and Christians.
Offerings are brought to thy shrine by the East and the West
To be woven in a garland of love.
Thou bringest the hearts of all peoples into the harmony of one life,Thou Dispenser of India’s destiny,
Victory, Victory, Victory to thee.”
The procession of pilgrims passes over the endless road, rugged with the rise and fall of nations;
and it resounds with the thunder of thy wheel.Eternal Charioteer!
Through the dire days of doom thy trumpet sounds, and men are led by thee across death.
Thy finger points the path to all people.
Oh dispenser ofIndia’s destiny!
Victory, victory, victory to thee.
The darkness was dense and deep was the night; my country lay in a deathlike silence of swoon.
But thy mother arms were round her and thine eyes gazed upon her troubled face
in sleepless love through her hours of ghastly dreams.
Thou art the companion and the saviour of the people in their sorrows,
thou dispenser ofIndia’s destiny!
Victory, victory, victory to thee.
The night fades;the light breaks over the peaks of the Eastern hills,
the birds begin to sing and the morning breeze carries the breath of new life.
The rays of the mercy have touched the waking land with their blessings.
Victory to the King of Kings,
victory to thee, dispenser ofIndia’s destiny.
Victory, victory, victory to thee.
আসুন দেখি কেমন ছিল রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতের লেখায় সেই অনুবাদ।
আরও পরে ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণকালে মস্কোয় পায়োনিয়ার্স কমিউনের অনাথ বালক-বালিকারা রবীন্দ্রনাথকে একটি গান গাইতে অনুরোধ করলে, তিনি তাদের ‘জনগণমন’ গেয়ে শোনান।
‘জনগণমন’-কে জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯৩৭ সালেই তিনি জাতীয় সংগীত হিসাবে ‘জনগণমন’ গানটির নাম প্রস্তাব করেছিলেন। ১৯৪৩ সালের ৫ জুলাই আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনের কথা ঘোষণা করার দিন প্রথম জাতীয় সংগীত হিসাবে ‘জনগণমন’ গাওয়া হয়। এরপর ওই বছরের ২৫ অগস্ট নেতাজির আনুষ্ঠানিকভাবে আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাপতি পদ গ্রহণের সময় ও ২১ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠার সময়ও জাতীয় সংগীত হিসাবে ‘জনগণমন’ গাওয়া হয়েছিল। ভারতের মাটিতে প্রথম জাতীয় সংগীত হিসেবে ‘জনগণমন’ শোনা গিয়েছিল ১৯৪৪ সালের মার্চ মাসে মৌডক রণক্ষেত্রে নেতাজির বাহিনীর বিজয়ের সময়।
স্বাধীনতার প্রাক্কালে ভারতের কোনো জাতীয় সংগীত নির্বাচিত হয়নি। স্বাধীনতালাভের কিছুদিন পর রাষ্ট্রসংঘের একটি অনুষ্ঠানে ভারতের কাছ থেকে জাতীয় সংগীতের রেকর্ড চাওয়া হলে ভারত সরকারের ‘জনগণমন’ গানের রেকর্ড পাঠান। পরে ভারতের রাজ্যগুলির মতামত নিয়ে ১৯৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি ভারতের গণপরিষদ সরকারিভাবে ‘জনগণমন’ গানটিকে ভারতের জাতীয় সংগীত ঘোষণা করে। এই ব্যাপারে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর উক্তিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ:
“…১৫ অগস্ট ১৯৪৭-এর অনতিকাল পরেই অর্কেস্ট্রা ও ব্যান্ডে বাজানোর উপযোগী জাতীয় সঙ্গীতের একটি সুর থাকা আমাদের কাছে এক অত্যন্ত জরুরি প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের প্রতিরক্ষা বিভাগ, বৈদেশিক দৌত্য ও প্রতিনিধিত্বের দৃষ্টিভঙ্গিতে এটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চিতভাবেই স্বাধীনতার পরে গড সেভ দ্য কিং আর আমাদের সেনাবাহিনীতে বাজানোর উপযুক্ত ছিল না। বারংবার বাজানোর জন্য একটি সুর আমাদের থেকে চাওয়া হতে থাকে। কিন্তু আমরা তার কোনও সদুত্তরই দিতে পারি না, কারণ এই সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী একমাত্র সংবিধান সভা।
কিঞ্চিত পরিবর্তনের সহিত জনগণমন-এর সুর দক্ষিণ-পুর্ব এশিয়ায় আজাদ হিন্দ ফৌজ কর্তৃক জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গৃহীত হয়েছিল এবং সেই সঙ্গে ভারতেও তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
নিউ ইয়র্কে ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভার এক অনুষ্ঠানে সমক্ষে আসে। কোনও একটি নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য আমাদের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আমাদের জাতীয় সংগীতটি চাওয়া হয়। প্রতিনিধিরা জনগণমন রেকর্ড করে অর্কেস্ট্রার অনুশীলনের জন্য সেটি প্রদান করে। তাঁরা যখন এটি এক বৃহৎ সম্মেলনে বাজান, তখন এই গানটি অত্যন্ত প্রশংসিত হয় এবং অনেক দেশের প্রতিনিধিরা এই নতুন সুরের স্বাতন্ত্র ও আভিজাত্যে মুগ্ধ হয়ে এর স্বরলিপিটি চাইতে থাকেন। জনগণমন-এর সেই অর্কেস্ট্রাবাদনটি রেকর্ড করে ভারতে পাঠানো হয়। আমাদের প্রতিরক্ষা বিভাগের ব্যান্ডগুলি এই সুরটিই বাজাতে থাকে এবং বৈদেশিক দূতাবাস ও প্রতিনিধিমহল প্রয়োজন অনুসারে এটিই ব্যবহার করতে থাকেন। অনেক দেশ থেকেই আমাদের এই সুরের জন্য প্রশংসাবার্তা ও অভিনন্দনপত্র আসতে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলতে থাকেন, তাঁদের শোনা অন্যান্য দেশের জাতীয় সঙ্গীতের সুরের চেয়ে এই সুর শ্রেষ্ঠতর। দেশে-বিদেশে বিশেষজ্ঞ সংগীতবিদ, ব্যান্ড ও অর্কেস্ট্রাগুলি এই সুর বাজাতে থাকেন। কোনও কোনও সময় সুরের সামান্য পরিবর্তন হয়ে যায়। যে জন্য অল ইন্ডিয়া রেডিও এই গানের অনেকগুলি রূপান্তরণ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।
সুরের জন্য এই সাধারণ প্রশংসা ছাড়াও বলতে হয়, আমাদের কাছে সে-সময় নির্বাচনের জন্য কোনও যথাযথ জাতীয় গানের সংগীতায়োজন ছিল না, যা আমরা বিদেশে পাঠাতে পারতাম। সেই অবস্থায় আমি সকল প্রাদেশিক গভর্নরদের চিঠি দিই এবং জনগণমন বা অন্য কোনও গান জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে নির্বাচনের ব্যাপারে তাঁদের মতামত জানতে চাই। আমি তাঁদের বলি যে উত্তর দেওয়ার আগে যেন তাঁরা তাঁদের প্রধানমন্ত্রীদের (প্রিমিয়ার) সঙ্গেও কথা বলে নেন। আমি তাঁদের স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছিলাম যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী একমাত্র সংবিধান সভা। কিন্তু বৈদেশিক দূতাবাস ও প্রতিরক্ষা বিভাগে নির্দেশ পাঠানোর জরুরি কারণে সাময়িক এক সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। একজন বাদে (সেন্ট্রাল প্রভিন্স বা মধ্য প্রদেশের গভর্নর) সকলেই জনগণমন-এর পক্ষে সাক্ষর করেন। এই কারণে ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যতদিন না সংবিধান সভা কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে, ততদিন সাময়িকভাবে জনগণমন ব্যবহৃত হবে।
প্রাদেশিক গভর্নরদের সেই মতো নির্দেশ দেওয়া হয়। স্পষ্ট হয়ে যায় জনগণমন-এর বিন্যাস সম্পূর্ণ যথাযথ ছিল না, কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল। শুধু শব্দবিন্যাসটিই নয়, সবচেয়ে ছিল জরুরি ছিল সুরটিও – যেন সেটি অর্কেস্ট্রা ও ব্যান্ডে বাজানো যেতে পারে।”
জাতীয় সংগীত জাতির প্রতীক। এই প্রতীক চিত্রপ্রতীক নয়, বাণীপ্রতীক। আমাদের জাতীয় সংগীত আমাদের দেশের ভ্রাতৃভাবটিকেই পরিস্ফুট করেছে। ‘পঞ্জাব-সিন্ধু-গুজরাট-মরাঠা-দ্রাবিড়-উৎকল-বঙ্গ’ – ভারতের মানচিত্রে মালার মতো দোদুল্যমান এই জাতিসমূহের মধ্যে কত পার্থক্য। আহারে পার্থক্য, বসনে পার্থক্য, ভাষায় পার্থক্য, মননে পার্থক্য – তবু সবাই ভাই। এই ভ্রাতৃভাব বোঝা সকলের সাধ্য নয়। ভাইয়ের গলায় ছুরি মারার বিদ্যায় যারা পটু, তারা কী করে বুঝবে, ভ্রাতৃত্ববোধের মাপকাঠি খাদ্যাভ্যাস, কাপড় পরার ধরন, মুখের ভাষা বা ধর্ম নয়, ভ্রাতৃত্ববোধের প্রকৃত মাপকাঠি মনুষ্যত্ব। মনুষ্যত্বই মানুষকে সবল করে, বীর্যবান করে। আর এই মনুষ্যতের বোধ যার আছে সেই গাইতে পারে:
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।
তথ্যসূত্র:
* গীতবিতান (প্রথম খণ্ড), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, বৈশাখ ১৩৮১ সংস্করণ
* গীতবিতান আর্কাইভ (তথ্যভিত্তিক সংগীতসমৃদ্ধ সফটওয়্যার), সংকলন, সংগ্রহ ও বিন্যাস : ড. পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার, ডিভিডি রম, সংখ্যা ডি ৪২০০১, সারেগামা ইন্ডিয়া লিমিটেড, ২০০৫
* রবিজীবনী (সপ্তম খণ্ড), প্রশান্তকুমার পাল, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৯৭
* গানের পিছনে রবীন্দ্রনাথ, সমীর সেনগুপ্ত, প্যাপিরাস, কলকাতা, ২০০৮
* Our National Songs, Publication Division, Ministry of Information and Broadcasting, Government of India, New Delhi, 1962
* গায়ক রবীন্দ্রনাথ, পার্থ বসু, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা
* প্রবন্ধ ‘শতবর্ষে জাতীয় সংগীত’, অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য, বর্তমান পত্রিকা, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১১