চরমপন্থীদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য
বিপ্লবী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ হল দুটি পথে। প্রথমটি, কংগ্রেসের অভ্যন্তরে চরমপন্থী গোষ্ঠী সংগঠনের মাধ্যমে; এবং দ্বিতীয়টি, চরমপন্থী বিপ্লবীদের কার্যকলাপের মাধ্যমে।
কংগ্রেসের মধ্যে যে চরমপন্থী দলটি তৈরি হল তার নেতৃত্ব দিলেন চার নেতা – লোকমান্য তিলক, বিপিনচন্দ্র পাল, অরবিন্দ ঘোষ ও লালা লাজপৎ রায়। নতুন দলের জন্য নতুন মন্ত্র লিখলেন তিলক – “স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার এবং আমি তা অর্জন করবই।”
নরমপন্থী নেতাদের কাছে স্বরাজ ছিল সাম্রাজ্যের মধ্যে থেকে একটি ঔপনিবেশিক স্বায়ত্ত্বশাসন মাত্র। কিন্তু চরমপন্থীরা স্পষ্ট করে দিলেন, তাঁদের ঘোষিত ‘স্বরাজ’-এর অর্থ ‘বিদেশী শাসন থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি এবং বিদেশী হস্তক্ষেপ ছাড়া দেশের দেখভালের পূর্ণ স্বাধীনতা।” দুই গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য ও কার্যপদ্ধতি এইভাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন হয়ে গেল। চরমপন্থী ব্রিটিশ জাতি বা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তথাকথিত বদান্যতায় বিশ্বাস রাখতেন না। নিছক অধিবেশনের রাজনীতিতেও তাঁদের ভরসা ছিল না। তাঁরা প্রত্যক্ষ বিরোধিতা, গণ-আন্দোলন ও আত্মত্যাগের কথা বলতে লাগলেন। তাঁদের কথায় ঝরে পড়তে লাগল স্বাধীনতা লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষার অভিপ্রায়। মানুষের মন থেকে তাঁরা উপড়ে ফেলতে চাইলেন সর্বশক্তিধর শাসকের ধারণাটি।
গণ-আন্দোলনের প্রবক্তা চরমপন্থী নেতাদের আন্দোলনের পদ্ধতিটিও ছিল অনেক বেশি প্রত্যক্ষ ও কার্যকর। তাঁরা বিদেশী দ্রব্য বয়কটের ডাক দিলেন, মানুষকে দেশজ দ্রব্য ব্যবহার করার পরামর্শ দিতে লাগলেন, প্রতিষ্ঠা করলেন জাতীয় শিক্ষাকেন্দ্র এবং পা বাড়ালেন প্রত্যক্ষ বিরোধিতার পথে।
ক্রমশ…