ছবির স্বত্ব সংরক্ষিত;আলোকচিত্রীর অনুমতি ও নাম-উল্লেখ ছাড়া অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি।
ছবি ও লেখা: অর্ণব দত্ত
‘অরূপবীণা রূপের আড়ালে লুকিয়ে বাজে’–বাড়ি ফিরতে ফিরতে আজ এই গানটাই মনের মধ্যে ফিরে ফিরে বাজছিল। সেই পঞ্চমী থেকে শুরু করেছি, আজ মহাষ্টমী–এখনও দু-একটা অঞ্চল বাকি রয়ে গেছে। কিন্তু যা দেখেছি, তাতে ওই গানটা ছাড়া আর কিছুই মনে আসছে না। সত্যি, এই কংক্রিটের শহরের হৃদয়ের কোন গহনে এত রূপ কোথায় লুকিয়ে থাকে!

সিংহী পার্ক সর্বজনীনের মণ্ডপের সিলিং, দীপ্তি ডেকরেটরের শিল্পীদের সৃষ্টি–এই ছবিটি সম্পর্কে আর কিছুই বলছি না।

কেওড়াতলা মহাশ্মশানের কাছে ৬৬ পল্লীর দুর্গাপুজো। থিম-কেন্দ্রিক পূজা–এবারের থিম পাটের দড়ি। এই যে ছবিটা দেখছেন, এতে রয়েছে সেপাই-পাইক-বাইনের দল। পুরোটাই তৈরি হয়েছে পাটের দড়ি দিয়ে। সামনে দাঁড়ালে প্রাচীন চীনে টেরাকোটা সেপাইদের কথা মনে পড়ে যায়। এই থিম-ভাবনা শিল্পী দীপক সরকারের।

৬৬ পল্লীর কাছেই রাসবিহারী মোড়ের কাছে বাদামতলা আষাঢ় সংঘের পূজা। শহরের নামকরা পুজো–প্রায়ই নানা শারদ সম্মান জিতে নেয়। এবার এরা গৃহস্থালীর তামা, পিতল, স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম বাসনকোসন দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছেন। হাঁড়ি, হাতা, খুন্তি, বাটি, মায় মগ আর চায়ের কেটলি দিয়েও যে কত সুন্দর শিল্প সৃষ্টি করা যায়, তা এদের মণ্ডপে না এলে বুঝতেই পারতাম না।

বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের পুজোয় এবার থিম বিষ্ণুপুর। মণ্ডপটি বাঁকুড়া জেলার এই টেরাকোটা মন্দির-শহরের মন্দিরশিল্পের অনুকরণে নির্মিত। যদিও বিষ্ণুপুরের কোনো বিশেষ মন্দিরের সঙ্গে এর সাদৃশ্য পেলাম না। তবে খুব বিশ্বস্ততার সঙ্গে বিষ্ণুপুরী টেরাকোটা শৈলীটিকে অনুসরণ করা হয়েছে।

বালিগঞ্জ কালচারালের কাছেই বালিগঞ্জ সমাজসেবী। পশ্চিমবঙ্গের লৌকিক হিন্দুধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ গাছকৌটো ও কুনকে এবং রঙিন পাট দিয়ে তৈরি মণ্ডপ। গোটা মণ্ডপটাই তৈরি হয়েছে গাছকৌটোর আদলে। খুদে খুদে গাছকৌটো পুজোপার্বণে ব্যবহার হতে দেখেছি, সমাজসেবীর মণ্ডপে ঢুকে গাছকৌটোয় প্রবেশ করার অভিজ্ঞতা হল! সমগ্র পরিকল্পনা মেদিনীপুরের শিল্পী তপন মাজির। পরিকল্পনা শিল্পী গৌতম বসুর।

কালীঘাটের বেঙ্গল বয়েজ ট্রেনিং অ্যাসোসিয়েশনের এবারের থিম কুমোর ও তার মৃৎশিল্প। গোটা মণ্ডপটিই সেজে উঠেছে মাটির হাঁড়ি, ঘট, কলসি ইত্যাদিতে।

বেঙ্গল বয়েজ ট্রেনিং অ্যাসোসিয়েশন কুমোরকে ভোলেনি। সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন এই পেশার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ যেন প্রবেশদ্বারের এই মডেলটি।

ভবানীপুর ৭৫ পল্লীর পূজাতেও উঠে এসেছে মৃৎশিল্প। এই ছবিটি প্রাচীন ভারতের একটি শিকারদৃশ্যের। মণ্ডপের অলংকরণ থেকে গৃহীত।

ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া সর্বজনীনের শৈল্পিক দুর্গাপ্রতিমা। প্রতিমাটি নির্মাণ করেছেন বিখ্যাত শিল্পী সনাতন দিন্দা। দক্ষিণ কলকাতায় এটিই তাঁর প্রথম কাজ। দেবীর স্নিগ্ধ আলোকিত রূপ–এঁদের থিম ‘মহিমা তব উদ্ভাবিত’। প্রতিমার উচ্চতা ২০-২২ ফুট।

চক্রবেড়িয়া সর্বজনীনের মণ্ডপ। শ্রী-র আকারের এই মণ্ডপটি শিবশঙ্কর দাসের পরিকল্পনা। গোটা মণ্ডপটি ফাইবার, মেটাল ও কাঠের নানা ফুলে সজ্জিত।

ভবানীপুরের চন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি লেন সর্বজনীনের পুজোটি ছোটো। এদের থিম ছিল পট ও মাটির পুতুল। তার মধ্যে দুটি পটের ছবি তুলে ধরছি। রামায়ণের দুটি ঘটনা–প্রথমটি সীতার অগ্নিপরীক্ষা।

চন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি লেন সর্বজনীনের মণ্ডপসজ্জা থেকে নেওয়া এই দ্বিতীয় ছবিটি জটায়ুর সঙ্গে রাবনের যুদ্ধের ছবি।

মনোহরপুকুর সর্বজনীনের এই ছবিটি কিসের? আসলে অসুরের কাঁধে চড়েছে শিশু কার্তিক, তার ময়ূর মহিষের পিঠে। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে, এক সাঁওতাল পিতা তার শিশুপুত্র ও পোষা মোষটিকে নিয়ে চলেছে।

কালীঘাট সহযাত্রীর দুর্গাপ্রতিমা–আকর্ণনয়না সাবেকি ধাঁচের দেবীমূর্তি। এ শিল্প পশ্চিমবঙ্গের সনাতন শিল্প।
পরিশেষে নতমস্তকে শ্রদ্ধা জানাব সেই সব বিশ্বকর্মা শিল্পীদের যাঁরা থাকেন অন্তরালে, যাঁদের নামের খোঁজ রাখেন হাতে গোনা কয়েকজন, সবার নাম জানাও যায় না–অথচ তাঁদেরই আঙুলের জাদুতে প্রতি বছর চার-পাঁচদিনের জন্য গোটা কলকাতা শহর পরিণত হয় এই মহা-শিল্পপ্রদর্শশালায়।
© অর্ণব দত্ত
সাজেদুল ওয়াহিদ নিটোল
অক্টোবর 5, 2011 at 1:05 পুর্বাহ্ন
দারূণ!
অর্ণব দত্ত
অক্টোবর 5, 2011 at 2:01 পুর্বাহ্ন
ধন্যবাদ। 😀
papai
অক্টোবর 8, 2011 at 9:29 পুর্বাহ্ন
Dadabhai , darun pic tulecho.
অর্ণব দত্ত
অক্টোবর 8, 2011 at 1:29 অপরাহ্ন
thanxalot sona!