RSS

মহালয়া ও পিতৃতর্পণ

27 সেপ্টে.

সতর্কীকরণ: এই লেখার যাবতীয় স্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। লেখকের বিনা অনুমতিতে এই লেখা যে কোনো উপায়ে অন্যত্র প্রকাশ বেআইনি। 

মহাভারতে আছে, মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হল শুধুই সোনা আর ধনরত্ন। ‘ব্যাপার কী?’ কর্ণ জিজ্ঞাসা করলেন ইন্দ্রকে (মতান্তরে যমকে)। ইন্দ্র বললেন, ‘তুমি, বাপু, সারাজীবন সোনাদানাই বিলিয়েছো, পিতৃপুরুষকে জল দাওনি; তাই তোমার জন্যে এই ব্যবস্থা।’ কর্ণ বললেন, ‘আমার কী দোষ? আমার পিতৃপুরুষের কথা তো আমি জানতে পারলাম এই সেদিন। যুদ্ধ শুরুর আগের রাতে মা কুন্তী আমাকে এসে বললেন, আমি নাকি তাঁর ছেলে। তারপর যুদ্ধে ভাইয়ের হাতেই মরতে হল। পিতৃতর্পণের সময় পেলুম কই?’ ইন্দ্র বুঝলেন, কর্ণের দোষ নেই। তাই তিনি কর্ণকে পনেরো দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দিলেন। ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করে পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন। তাঁর পাপস্খালন হল। এবং যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দিলেন সেই পক্ষটি পরিচিত হল পিতৃপক্ষ নামে।

সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষের সূচনা হয়। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, এই সময় আমাদের স্বর্গত পিতৃপুরুষগণ স্বর্গলোক ছেড়ে নেমে আসেন মর্ত্যলোকে। থাকেন যতদিন না সূর্য প্রবেশ করেন বৃশ্চিক রাশিতে, ততদিন। এই সময় প্রথম পক্ষেই হিন্দুদের পিতৃতর্পণ করতে হয়।

তর্পণ কী? ভারতকোষ অনুযায়ী, ‘জলের দ্বারা কৃত পিতৃপুরুষ ও দেবতাদের তৃপ্তিবিধায়ক অনুষ্ঠান’। এর অপর নাম পিতৃযজ্ঞ। এই অনুষ্ঠানে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-শিব প্রমুখ দেবতা, সনক-সনন্দ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সপ্তর্ষি, চতুর্দশ যম ও দ্বাদশ পূর্বপুরুষ (পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, মাতামহী, প্রমাতামহী ও বৃদ্ধপ্রমাতামহী ) এবং ত্রিভুবনের উদ্দেশ্যে জল দেওয়া হয়। পিতৃপক্ষের সময় তিলতর্পণ অনুষ্ঠিত হয়; অর্থাৎ তিল-মেশানো জলে তর্পণ হয়। তর্পণ, শাস্ত্রমতে, নিত্যকর্তব্য। তবে আজকের বাজারে রোজ বাপ-ঠাকুরদাদের স্মরণ করা সম্ভব হয় না বলে, লোকে পিতৃপক্ষে এবং, বিশেষ করে, সর্বপিতৃ অমাবস্যায় (যে দিনটিকে আমরা ‘মহালয়া’ বলে থাকি) তিলতর্পণ করেই পিতৃকৃত্য সেরে থাকে।

পিতৃতর্পণের সঙ্গে দুর্গাপূজার সরাসরি যোগ নেই। দুর্গাপূজার কল্পারম্ভ মহালয়ায় হয় না। মহালয়ার ঠিক আগের নবমীতে হয় কৃষ্ণানবম্যাদি কল্পারম্ভ এবং মহালয়ার পরদিন হয় প্রতিপদ্যাদি কল্পারম্ভ। মহালয়ার দিনটি নির্ধারিত শুধু পিতৃতর্পণের জন্যই। পিতৃকৃত্যের ক্ষেত্রে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। এই দিন তিথিনিয়মের বাইরে সকল পূর্বপুরুষের শ্রাদ্ধ করা যায়। যাঁদের সাংবাৎসরিক শ্রাদ্ধ সামর্থ্যে কুলায় না, তাঁরা সর্বপিতৃ অমাবস্যা পালন করেন। আবার প্রতিপদের দিন দৌহিত্র মাতামহের তর্পণ করে। পিণ্ডদান, গীতাপাঠ, চণ্ডীপাঠ, দানধ্যান–সবই হয় এদিন।

পিতৃতর্পণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লেখা এই উইকি-আর্টিকলটি পড়তে পারেন: http://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%83%E0%A6%AA%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7#cite_note-underhill-1

 
১ টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন সেপ্টেম্বর 27, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

One response to “মহালয়া ও পিতৃতর্পণ

  1. শুভাশিস

    সেপ্টেম্বর 17, 2012 at 2:47 পুর্বাহ্ন

    আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই। অতি দ্রুত। বিশেষ প্রয়োজন।আপনার মোবাইল নম্বর এবং ইমেল আই ডি পেলে কথা বলতে সুবিধে হয়। নমস্কার নেবেন

     

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

 
%d bloggers like this: