প্যালিওলিথিক যুগ বা প্রাচীন প্রস্তর যুগ
ভারতে মানুষের অস্তিত্বের সবচেয়ে পুরনো যে নিদর্শনগুলি পাওয়া গিয়েছে তা ৪,০০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২,০০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ের। অর্থাৎ, পরিভাষায় যাকে বলে দ্বিতীয় আন্তঃহিমযুগ, সেই যুগের। অধুনা পাকিস্তানের সোয়ান উপত্যকা ও দক্ষিণ ভারতে (প্রধানত চেন্নাইয়ের আশেপাশে) এই সময়কার অনেক প্রাচীন পাথরের যন্ত্রপাতি ও জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীন প্রস্তর যুগীয় বা প্যালিওলিথিক আদিম মানুষের অস্তিত্ব ছিল ৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত। এই সময়কার মানুষ ঠুকরে ভাঙা পাথর দিয়ে তৈরি নানা জিনিস ব্যবহার করত। সিন্ধু, গঙ্গা ও যমুনা নদীর পলিগঠিত সমভূমি অঞ্চল ছাড়া ভারতের আর সব অঞ্চলেই এই সব জিনিস পাওয়া গিয়েছে। শক্তপোক্ত চকমকি পাথর দিয়ে সহজে ফলা তৈরি করা যেত। তাই এই পাথরের ব্যবহারই ছিল বেশি। পাথরের যন্ত্রপাতি নানা কাজে লাগত। যেমন, মৃত জন্তুর চামড়া ছাড়ানো, মাংস কাটা বা হাড় ছাড়ানো ইত্যাদি। এই সময়কার মানুষ মূলত ছিল খাদ্য-সংগ্রাহক। খাদ্যের জন্য মানুষ পুরোপুরি নির্ভর করত প্রকৃতির উপর। খেত শিকার করা পশুর মাংস আর ফলমূল। পরে আগুনের ব্যবহার শেখার পরে তাদের জীবনযাত্রার ধরন একেবারে আমূল বদলে যায়। তারা পশুর চামড়া, গাছের বাকল আর বড়ো বড়ো পাতা পোষাক হিসেবে ব্যবহার করত আর নারী, পুরুষ ও শিশু নিয়ে গঠিত ছোটো ছোটো দলে বিভক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াত।
প্যালিওলিথিক যুগের শেষ দিকে, ৩৬,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ আধুনিক মানব প্রজাতি হোমো সেপিয়েন্সের আবির্ভাব ঘটে।
মেসোলিথিক যুগ বা মধ্য প্রস্তর যুগ
৮০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে শুরু হয় মধ্য প্রস্তর যুগ বা মেসোলিথিক যুগ। ভারতে এই যুগ স্থায়ী হয়েছিল ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত।
এই মধ্যবর্তী যুগের প্রধান জিনিসগুলি ছিল মাইক্রোলিথ, অর্থাৎ কোণবিশিষ্ট বা অর্ধ-চন্দ্রাকার ফলা ইত্যাদি। এগুলির সাহায্যে দ্রুতগামী পশু মারা হত। মধ্যভারতের ছোটোনাগপুর মালভূমি ও দক্ষিণ ভারতের কৃষ্ণা নদীর উপত্যকায় অনেক মেসোলিথিক স্থান পাওয়া গিয়েছে।
এই সময় থেকে মানুষের মধ্যে বিশেষ বিশেষ ধরনের আর ভাল মানের খাদ্য সংগ্রহের প্রবণতা দেখা যায়। এই প্রবণতাই পরে চাষাবাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল।
নিওলিথিক বা নব্য প্রস্তর যুগ
খাদ্য উৎপাদনের যুগ। মানুষ এই সময় তাদের জীবনযাত্রা প্রণালী পুরোপুরি বদলে ফেলে। পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় নিওলিথিক যুগ শুরু হয় ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ। কিন্তু ভারতে এই যুগ শুরু হয়েছিল ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। নিওলিথিক মানুষের বাস ছিল উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দাক্ষিণাত্যে। বালুচিস্তানে পাওয়া নিওলিথিক বসতিটি সবচেয়ে পুরনো, প্রায় ৩,৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের।
পশুপালন ও চাষাবাদ এই সময় শুরু হয়। সম্ভবত প্রথম পোষ মানানো হয় কুকুর, ছাগল ও ভেড়া। গম আর যম সম্ভবত মানুষের চাষ করা প্রথম খাদ্যশস্য। পশুপালন ও চাষাবাদের ফলে নির্দিষ্ট জায়গায় বসতি স্থাপনের প্রবণতা দেখা দেয়। ফলে উদ্ভব হয় গ্রাম ও কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের।
ব্যবহার্য যন্ত্রপাতিগুলিও যায় বদলে। মাটি খোঁড়ার জন্য ভারি দণ্ড, কাটার জন্য কাস্তে, গাছ কাটার জন্য কুঠার, শস্য গুঁড়ো করার জন্য জাঁতা ও হামান, অতিরিক্ত শস্য ও তরল পদার্থ রাখার জন্য নানা ধরনের মাটির হাঁড়ি তৈরি করা হয়। লোকে গেরুয়া রঙের পাত্র ব্যবহার করত। চাকা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।
ক্যালকোলিথিক বসতি
নিওলিথিক যুগের শেষে ধাতুর ব্যবহার শুরু হয়। এটিই ছিল ক্যালকোলিথিক পর্ব (১,৮০০-১,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)। পর্বান্তরের এই পর্বে তামা-ব্রোঞ্জ ও পাথরের ব্যবহার মানুষের জীবনধারায় অনেক পরিবর্তন আসে। ছোটোনাগপুর মালভূমি থেকে উচ্চ গঙ্গা অববাহিকা পর্যন্ত ক্যালকোলিথিক বসতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ব্রহ্মগিরি (মহীশূরের কাছে) ও নবদা টোলিতেও (নর্মদার তীরে) কয়েকটি ক্যালকোলিথিক বসতি পাওয়া গিয়েছে। এই সময় ক্রিট, মিশর ও মেসোপটেমিয়ায় ব্রোঞ্জ সভ্যতার বিকাশের বিশেষ সহায়ক হয়েছিল। কিন্তু ভারতে ব্রোঞ্জের ব্যবহার দেখা যায় না। তাম্র-প্রস্তর যুগ হরপ্পা সভ্যতার থেকেও আধুনিক। কিন্তু সেই সভ্যতার উচ্চ প্রযুক্তিবিদ্যার আলো এই মানুষগুলির উপর পড়েনি।
pralaydutta
অগাষ্ট 23, 2016 at 3:53 অপরাহ্ন
I know that