RSS

বেদ

22 জুলাই

মূল রচনা: ডব্লিউ. জে. উইলকিনস (হিন্দু মিথোলজি: বৈদিক অ্যান্ড পৌরাণিক থেকে)

অনুবাদ: অর্ণব দত্ত

বৈদিক দেবতাদের কথা বলার আগে বৈদিক দেবতা বিষয়ে আমাদের তথ্যের উৎস বেদ সম্পর্কে কিছু বলে নেওয়া প্রয়োজন। শব্দটির উৎস হল বিদ্, জানা; অর্থাৎ বেদ শব্দের অর্থ জ্ঞান। এই বইগুলি রচনার বহু বছর পরে লিপিবদ্ধ হয়েছিল। এর অর্থ, যে জ্ঞানের কথা বলা হচ্ছে, তা শুনে শুনে মনে রাখা হত বা মৌখিকভাবে প্রদত্ত হত। বেদসমূহ কোনো একক ব্যক্তির দ্বারা রচিত নয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, একাধিক ঋষির নিকট বেদসমূহ প্রদত্ত হয়েছিল। এই ঋষিগণ আবার তাঁদের শিষ্যদের কাছে বেদসমূহ হস্তান্তরিত করেন। মহর্ষি ব্যাস হলেন বেদসমূহের বিন্যাসক, বা আমাদের আজকের ভাষায় বললে, সম্পাদক।

এই রচনাসমূহে যে নির্দেশাবলি গ্রন্থিত রয়েছে, তা স্বয়ং ঈশ্বর কর্তৃক কথিত হয়েছে বলে লোকের ধারণা। অন্যান্য লেখকেরা বলে থাকেন, আগুন থেকে যেমন ধোঁয়া বের হয়, তেমনি ঈশ্বর থেকে বেদ উৎপন্ন হয়েছে। অপর মতে, বেদ পঞ্চভূত থেকে উৎসারিত। বেদের উৎস সম্পর্কে নানা মুনির নানা মত। কিন্তু একটি ব্যাপারে সবাই একমত। সেটি হল, বেদ মানুষের প্রতি ঈশ্বরের একটি প্রত্যক্ষ উপহার। এই জন্য বেদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধও সর্বোচ্চ স্তরের। বেদসমূহ ব্রাহ্মণদের বিশেষ সম্পত্তি। আইন রচয়িতা মনুর সময়কাল পর্যন্ত নিম্ন বর্ণের কোনো ব্যক্তির বেদের একটি শব্দও প্রকাশ করা মহা-অপরাধ বলে গণ্য করা হত। উল্লেখ্য, মনু বেদ রচনার দুই-তিন শতাব্দী পরের লোক। অবশ্য কেউ কেউ বলেন তিনি খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর মানুষ ছিলেন।

বেদ সংখ্যায় চারটি। এগুলির মধ্যে ঋগ্বেদ প্রাচীনতম। এরপরই রয়েছে যজুর্বেদ, তারপর সামবেদ ও সবশেষে অথর্ববেদ। প্রতিটি বেদ দু’টি প্রধান ভাগে বিভক্ত: একটি সংহিতা বা মন্ত্র ও স্তোত্রের সংকলন এবং একটি ব্রাহ্মণ, যেখানে আচার-অনুষ্ঠানগুলি বর্ণিত হয়েছে। টালমুড সাহিত্যের সঙ্গে আইনের যে সম্পর্ক, সংহিতার সঙ্গে ব্রাহ্মণেরও সেই সম্পর্ক। স্তোত্রে যে দেবতার বন্দনা করা হয়, পুরোহিত তাঁর পূজা কীভাবে করবেন, তা বর্ণিত হয়েছে ব্রাহ্মণে। প্রতিটি ব্রাহ্মণের সঙ্গে একটি উপনিষদ্ যুক্ত থাকে। উপনিষদ্ হল গোপন অতীন্দ্রীয়বাদী উপদেশমালা। মন্ত্র ও ব্রাহ্মণের তুলনায় এগুলি কম গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য হয়। মন্ত্র ও ব্রাহ্মণকে বলা হয় শ্রুতি, অর্থাৎ যা শোনা হয়। উপনিষদগুলিকে বলা হয় স্মৃতি, অর্থাৎ যা শিক্ষা করা হয়। উপনিষদ্ প্রাচীন রচনা অবলম্বনে রচিত হলেও, শ্রুতি ও স্মৃতির মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলে দ্বিতীয়টির মত পরিত্যক্ত হয়। সংহিতা ও ব্রাহ্মণ সাধারণভাবে ব্রাহ্মণদের জন্য; উপনিষদসমূহ দর্শন জিজ্ঞাসুদের জন্য। আশ্চর্যের কথা হল, আজ পর্যন্ত এই প্রাচীনতর অংশটি সম্পূর্ণই অবহেলিত হয়ে এসেছে। তবে উপনিষদের কয়েকটি অংশ সম্পর্কে বারাণসী ও অন্যান্য স্থানের পণ্ডিতগণ যথেষ্টই অবগত। আবার, ভারতের অনেক অঞ্চলে এক জন লোককেও পাওয়া যায় না, যিনি এগুলি পড়ে ব্যাখ্যা করতে পারেন। সংহিতাগুলির মধ্যে “ঋগ্বেদ সংহিতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সংহিতায় এক হাজার সতেরোটি স্তোত্র রয়েছে। তবে অথর্ববেদ সংহিতাটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। যদিও কারোর কারোর মতে, এটিই সাম্প্রতিকতম সংহিতা। সর্বোপরি, এই দু’টি বৈদিক স্তোত্র সংকলনকেই পৃথক মৌলিক সংকলন গ্রন্থের মর্যাদা দেওয়া যায়।” (“ইন্ডিয়ান উইশডম”, পৃ. ৯) অন্যান্য সংহিতাগুলি ঋগ্বেদের নির্বাচিত অংশের সংকলন। ঋগ্বেদ ও অথর্ববেদ রচনার মধ্যবর্তী সময়ে মানুষের আচরিত ধর্মবিশ্বাসে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছিল। আগেকার স্তোত্রগুলির শিশুসুলভ বিশ্বাস অবলুপ্ত হয়েছিল, দেবতারা অনেক বেশি নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছিলেন এবং দেবতাদের শান্ত করার জন্য যজ্ঞানুষ্ঠান অনেক বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছিল। সম্ভবত আর্যদের হাতে বিজিত জাতিগুলির পুরনো ধর্ম আর্যধর্মের উপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছিল।

তিনটি বেদের সংহিতার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে বলে মনে করা হয়। “মন্ত্র যদি ছন্দোবদ্ধ হয়, এবং তা যদি উচ্চকণ্ঠে পাঠের জন্য নির্দিষ্ট হয়, তাহলে তাকে বলে ঋক্। (ঋক্ বা প্রশংসা থেকে) এইসব মন্ত্র যে বেদে থাকে তাকেই ঋগ্বেদ বলে। মন্ত্র গদ্যে রচিত (এবং অনুচ্চ কণ্ঠে পাঠ্য হলে), তাকে বলে যজুস্ (যজ, বলিদান, অর্থাৎ যার সাহায্যে বলি দেওয়া হয়); যজুস্ নামক মন্ত্রগুলি যে বেদে সংকলিত হয়েছে তারই নাম যজুর্বেদ। মন্ত্র যদি ছন্দোবদ্ধ ও গেয় হয়, তাহলে তাকে বলে সামন [সমান]; সামন্ মন্ত্রগুলি যে বেদে সংকলিত হয়েছে সেই বেদ হল সামবেদ। মন্ত্রের রচয়িতা, বা হিন্দুদের মতে, যেসব দৈবজ্ঞেরা দেবতাদের কাছ থেকে মন্ত্রগুলি পেয়েছিলেন, তাঁদের বলা হয় ঋষি। মন্ত্রের বিষয় হল দেবতা। দেবতা বলতে সাধারণত দেবদেবীদের বোঝালেও, মন্ত্র-গুলির প্রেক্ষিতে এই শব্দটির অর্থ সব ক্ষেত্রে আক্ষরিকভাবে তা-ই নয়। কারণ, এমন অনেক স্তোত্র রয়েছে যেগুলি কোনো দেবদেবী বা দৈব সত্ত্বাকে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়নি। বরং বলিদানের মঞ্চ বা অস্ত্রশস্ত্রকেও দেবতা হিসেবে সম্ভাষণ করা হয়েছে।” (গোল্ডস্টিকার, নিবন্ধ “বেদ,” চেম্বারস’স সাইক্লোপিডিয়া) স্মর্তব্য, “বলিদানের বেদি” বা “অস্ত্রশস্ত্রের” মধ্যে দেবত্বারোপ সেযুগের লোকেদের মতো আজকের লোকেদের বহুঈশ্বরবাদের সঙ্গে সুসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই জড়বস্তুর মধ্যে দেবত্বারোপের ঘটনা এক্ষেত্রে অত্যাশ্চর্য কিছু নয়। কেউ কেউ মনে করেন, ব্রাহ্মণ সংহিতার তুলনায় কিঞ্চিৎ আধুনিককালে রচিত।

বেদসমূহের সুদীর্ঘ ইতিহাসে এগুলির নিয়ে বিতর্কও যথেষ্ট হয়েছে। বেদ শিক্ষা দেওয়া হত মৌখিকভাবে। স্বভাবতই, এক্ষেত্রে মতানৈক্য থাকা স্বাভাবিক। একটি বর্ণনায় ঋগ্বেদের একুশটি সংস্করণের (শাখা) উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার অন্য একটি বর্ণনা অনুযায়ী, ঋগ্বেদের পাঁচটি, যজুর্বেদের বিয়াল্লিশটি, সামবেদের এক হাজারের মধ্যে বারোটি এবং অথর্ববেদের বারোটি সংস্করণের উল্লেখ পাওয়া যায়। এবং যেহেতু প্রতিটি ঘরানাই মনে করত যে, তাদের কাছেই বেদের সঠিক সংস্করণটি রয়েছে, সেহেতু তারা অন্যান্য ঘরানার গুরু ও শিষ্যদের অভিসম্পাত দিত। ঋগ্বেদ সংহিতার যে সংস্করণটি আজ পাওয়া যায়, সেটি একটি মাত্র ঘরানার – সাকল ঘরানার; অন্যদিকে তিনটি ঘরানার যজুর্বেদ, সম্ভবত দু’টি ঘরানার সামবেদ ও একটিমাত্র ঘরানার অথর্ববেদ আজ অবধি টিকে আছে।

“যজুর্বেদের ইতিহাস অন্যান্য বেদের ইতিহাসের থেকে একটু আলাদা। অন্যান্য বেদের ঘরানাগুলির মধ্যে যে মতবিরোধ দেখা যায়, তার তুলনায় যজুর্বেদের ঘরানাগুলির মতভেদ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জানা যায়, যজুর্বেদ কৃষ্ণ [কালো] ও শুক্ল [সাদা] নামে দু’টি অংশে বিভক্ত। লোকশ্রুতি, এর পিছনে একটি গল্প রয়েছে। গল্পটি মূলত পাওয়া যায় পুরাণে। সেটি হল: ব্যাসের শিষ্য বৈশম্পায়ন ব্যাসের কাছ থেকে যর্জুবেদ প্রাপ্ত হন। তিনি একটি পাপকাজ করেছিলেন। তাই তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেন প্রায়শ্চিত্ত যজ্ঞে তাঁকে সাহায্য করতে। যাজ্ঞবল্ক্য নামে তাঁর এক শিষ্য বলেন, তিনি একাই সম্পূর্ণ যজ্ঞটি সম্পাদনা করতে পারবেন। বৈশম্পায়ন এটিকে শিষ্যের ঔদ্ধত্য মনে করে রেগে যান। তিনি শিষ্যকে অভিশাপ দেন। অভিশাপের প্রভাবে যাজ্ঞবল্ক্য গুরুর কাছ থেকে শেখা সম্পূর্ণ যজুর্বেদ মুখ দিয়ে উগরে দেন। এই সময় বৈশম্পায়নের অন্যান্য শিষ্যরা তিত্তির পাখির রূপ ধরে সেই ক্ষয়িত রচনাগুলি কুড়িয়ে নেন এবং নিজেদের কাছে রেখে দেন। এই কারণে এই রচনাগুলিকে বলা হয় তৈত্তিরীয়। কিন্তু যাজ্ঞবক্ল্য যর্জুবেদকে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি সূর্যদেবতার কাছে প্রার্থনা করেন। তাঁর ইচ্ছা মঞ্জুর হয়। তিনি এমন যজুর্বেদ প্রাপ্ত হন ‘যা তাঁর গুরুর অবগত ছিল না।’” (নিবন্ধ “বেদ,” চেম্বারস’স সাইক্লোপিডিয়া) এই কারণে বর্তমানে দুই প্রকার যর্জুবেদ পাওয়া যায়। কৃষ্ণ যজুর্বেদ তার মধ্যে প্রাচীনতর।

বেদের রচনাকাল সম্পর্কেও সঠিক কিছু জানা যায় না। সন্দেহ নেই, এগুলি বিশ্বের প্রাচীনতম সাহিত্যকীর্তিগুলির অন্যতম। কিন্তু এগুলির রচনাকাল অনুমানের বিষয় হয়েই থেকে গিয়েছে। একটি বৈদিক ক্যালেন্ডার অবলম্বনে কোলব্রুক বলেছেন, বেদসমূহের রচনাকাল সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতাব্দী। কেউ কেউ এগুলিকে আরও নবীন, আবার কেউ কেউ এগুলিকে আরও প্রাচীন মনে করেন। ড. হাউগ মনে করেন, বৈদিক যুগের সময়কাল ছিল ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। যদিও তাঁর মনে, কয়েকটি পুরনো স্তোত্র রচিত হয় ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ। ম্যাক্সমুলারের অনুমান অনুযায়ী, বেদের মন্ত্র বা স্তোত্র অংশের রচনাকাল ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ, ব্রাহ্মণ অংশের রচনাকাল ৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ এবং অবশিষ্টাংশের রচনাকাল ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।

বইগুলিতেও তাদের রচনাকালের কোনো উল্লেখ নেই। বেদ সম্পর্কে যে তথ্য বেদে পাওয়া যায়, তা হল, এগুলি মৌখিকভাবে প্রদত্ত হয়েছিল, মৌখিকভাবে শিক্ষা করা হয়েছিল এবং অন্যান্যরাও এগুলি মুখে মুখেই শিখতেন। সম্ভবত, ভারতে লিপিব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার কয়েক শতাব্দী পরেও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বেদ লিপিবদ্ধ করা হয়নি। কারণ, মহাভারতে বেদ লিপিবদ্ধ করার শাস্তি হিসেবে নরকবাসের ভয় দেখানো হয়েছে।

 
2 টি মন্তব্য

Posted by চালু করুন জুলাই 22, 2011 in পুরনো লেখা

 

ট্যাগ সমুহঃ

2 responses to “বেদ

  1. Shampa

    ফেব্রুয়ারি 26, 2017 at 1:09 অপরাহ্ন

    বাংলা‌দে‌শে হিন্দু মে‌য়েরা বড়ই অসহায়।‌কি ব‌লে হিন্দু আই‌নে নারীরা সম্পত্তি পায় না।তাই এখা‌নের অ‌ধিকাংশ মে‌য়েরা খুব ক‌ষ্টে আ‌ছে।য‌দি বে‌দে এর কোন উপায় থাক‌লে বলুন

     
    • অর্ণব দত্ত

      ডিসেম্বর 28, 2017 at 3:52 পুর্বাহ্ন

      দেখুন, ঋগ্বেদের যুগে মেয়েদের অবস্থা অনেক ভালো ছিল। বেদে নারী ঋষিরও উল্লেখ আছে। তাঁর নাম বাক্‌। ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ঋষি। সেই যুগে মেয়েদের উপনয়ন অর্থাৎ পৈতেও হত। তাঁরা বেদাধ্যায়ন করতেন। মধ্যযুগে তন্ত্রও মেয়েদের অনেক সম্মান দিয়েছিল। তন্ত্রে স্ত্রীগুরু স্বীকৃত। এমনকি পিতা পুত্রকে দীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনধিকারী হলেও মাতাই শ্রেষ্ঠ দীক্ষাগুরু বলে বর্ণিত হয়েছেন। শ্রীরামকৃষ্ণও স্ত্রীগুরুর (ভৈরবী ব্রাহ্মণী) শরণাগত হন। বৈদিক জ্ঞানের প্রসারে মেয়েরা অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। হিন্দু সমাজে যদি তাঁরা সেই সম্মানের জায়গায় ফিরে আসতে পারেন, তবে সর্বত্রই তাঁদের বিজয় সম্ভব।

       

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

 
%d bloggers like this: