তৃতীয় দৃশ্য
ডন জন ও কনরাডের প্রবেশ
কনরাড। সত্যি বলুন তো, প্রভু। আপনার কিসের এত দুঃখ?
ডন জন। আমার দুঃখের কারণ অগুনতি। তাই আমার দুঃখেরও কোনো সীমা-পরিসীমা নেই।
কনরাড। আপনি ব্যাপারটা যুক্তি দিয়ে বিচার করুন।
ডন জন। বেশ, না হয় তাই করলাম। কিন্তু করে পাবোটা কী?
কনরাড। তাতে যদি আপনার দুঃখ নাও ঘোচে, অন্তত দুঃখ সহ্য করার শক্তিটুকু পাবেন।
ডন জন। তুই নিজে জন্মেছিস শনির দশা নিয়ে, আর আমার অবস্থা নিয়ে আমাকেই লম্বাই-চওড়াই ঝাড়ছিস। আমি নিজেকে গোপন করতে পারি না। আমার মন খারাপ হলে আমি গোমড়া মুখে বসে থাকি; তখন কারোর হাসির কথাতেও হাসি না। খিদে পেলে খাই; দেখি না খাবার সময় হয়েছে কিনা। ঘুম পেলে ঘুমাই; অকারণে ঘুম নষ্ট করি না। আবার মন ভাল থাকলে হাসি; কাউকে তোষামোদ করে বা কারোর দিকে ভুরু কুঁচকে হাসি না।
কনরাড। বেশ, তবে তাই করুন। কিন্তু দেখবেন, তা করতে গিয়ে আবার নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। আপনি যে আপনার দাদার বিরুদ্ধাচারণ করেছিলেন, সেটা বেশিদিনের ঘটনা নয়। সম্প্রতি তিনি আমাকে ক্ষমা করেছেন। এমতাবস্থায় তাঁর নেকনজরে থাকতে গেলে আপনাকে একটু সতর্ক থাকতে হবে। কোপ মারতে হবে ঝোপ বুঝে।
ডন জন। দাদার বাগানের গোলাপ হওয়ার চেয়ে ঝোপের কাঁটা হওয়া ঢের ভাল। বরং সবাই আমাকে ঘৃণা করবে। আমাকে সঙের মেলায় ঠেলে দিয়ে ভালবাসার আদিখ্যেতা দেখাবে না। দ্যাখ, আমি বদমাশ, আর এ নিয়ে আমার মধ্যে কোনো ভড়ং নেই। দাদা নাকি এখন আমাকে বিশ্বাস করে? হ্যাঁ – যে রকম কুকুরের মালিক কুকুরের মুখে মুখসাজ পরিয়ে আর চাষার মালিক চাষার পায়ে বেড়ি পরিয়ে তাকে মুক্তি দেয়, সেই রকম। আমি মুখ খোলা থাকলেই আমি কামড়াব। আমার পায়ে শিকল না থাকলে আমি যা খুশি তাই করব। যতক্ষণ সেটা না পারছি, আমাকে আমার মতো থাকতে দে।
কনরাড। আপনার এই অসন্তোষ আপনি আপনার সুবিধের জন্য ব্যবহার করতে পারেন না?
ডন জন। সব রকম ভাবেই করি। কারণ, ওটা ছাড়া আমার আর কোনো অস্ত্র নেই। কে ওখানে?
বোরাশিওর প্রবেশ
কী খবর, বোরাশিও?
বোরাশিও। আপনার দাদার সম্মানে লিওন্যাটো যে ভোজসভার আয়োজন করেছেন, আমি সেখান থেকেই আসছি। বাতাসে একটা বিয়ের খবর ভাসছে।
ডন জন। এটা নিয়ে কোনো বদমায়েশি করার সুযোগ আছে? কোন বোকাচন্দরের বিয়ে?
বোরাশিও। আপনার দাদার ডান হাতটির।
ডন জন। কার? ওই ক্লডিও ছোঁড়াটার?
বোরাশিও। আজ্ঞে।
ডন জন। যেমন নাইট, তার তেমন স্কোয়ার! তার সঙ্গে কার? কোন দিকে তাকায় ছোঁড়া?
বোরাশিও। লিওন্যাটোর কন্যা তথা উত্তরাধিকারিণী হিরোর দিকে।
ডন জন। মেয়েটা মিষ্টি! কিন্তু তুই জানলি কী করে?
কনরাড। ওরা আমাকে লিওন্যাটোর প্রাসাদে সুগন্ধ ছড়ানোর জন্য ভাড়া করেছিল। একটা স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে গন্ধ ছড়াচ্ছি, এমন সময় সেখানে ঢুকলেন রাজকুমার ও ক্লডিও। ওরা গুরুতর কিছু নিয়ে আলোচনা করছিলেন। আমি চট করে ট্যাপিস্ট্রির পিছনে লুকিয়ে পড়লাম। শুনলাম, রাজকুমার বলছেন, তিনি আজ নৃত্যোৎসবে হিরোকে বিয়ের জন্য রাজি করাবেন। তারপর তাকে তুলে দেবেন ক্লডিওর হাতে।
ডন জন। চ’, নৃত্যোৎসবে যাই। মজা হবে! ওই ছোকরা হঠাৎ-নবাবটার জন্যই দাদাকে ক্ষমতাচ্যূত করতে পারিনি। ওর জীবনটা নষ্ট না করতে পারলে আমার সুখ নেই। তোরা দু’টো আমাকে সাহায্য করবি তো?
কনরাড। জীবন দিয়ে করব, প্রভু।
ডন জন। চ’, তবে ভোজসভায় যাই। সবাই নিশ্চয় মজা লুটছে সেখানে। আহা! ওই সভার রাঁধুনি হতে পারলে বেশ হতো। সবাইকে বিষ দিয়ে মারতাম। চ’ তো, দেখে আসি ব্যাপারখানা কী!
বোরাশিও। চলুন, প্রভু।
সকলের প্রস্থান।