ভাষান্তর: অর্ণব দত্ত
অনেক কাল আগে এক প্রতিবেশী গ্রহ থেকে এক পর্যটক পৃথিবীতে এসেছিলেন। যেখানে তিনি অবতরণ করলেন, সেখানে এক দার্শনিকের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হল। ঠিক হল, সেই দার্শনিক তাঁকে সব কিছু দেখাবেন।
প্রথমে তাঁরা এলেন এক বনে। অতিথি বনের গাছগুলির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “এরা কারা?”
দার্শনিক উত্তর দিলেন, “গাছগাছালি। এদের প্রাণ আছে বটে, তবে ততটা আগ্রহব্যঞ্জক কিছু নয়।”
অতিথি বললেন, “কই, আমার তো তা মনে হচ্ছে না। এদের দেখে তো বেশ সভ্যভব্যই লাগছে। এরা কি কখনই কথা বলে না?”
দার্শনিক বললেন, “না, সেই সৌভাগ্য এদের হয়নি।”
অপর জন বললেন, “আমার তো মনে হচ্ছে, যেন আমি এদের গান শুনতে পাচ্ছি।”
দার্শনিক বললেন, “ও তো পাতার ফাঁকে বাতাসের শব্দ। আমি বরং আপনাকে বায়ুতত্ত্ব ব্যাখ্যা করে শোনাবো। বেশ লাগবে শুনতে।”
অতিথি বললেন, “আহা, ওরা যা ভাবছে, তা যদি জানতে পারতুম।”
দার্শনিক বললেন, “ওরা ভাবতে পারে না।”
অতিথি উত্তর দিলেন, “সে যাই হোক।” তারপর একটা গাছের গুঁড়িতে হাত রেখে বললেন, “আমার এই লোকগুলিকে ভারি ভাল লেগেছে।”
দার্শনিক বললেন, “ওরা আদৌ লোকই নয়।”
এরপর তাঁরা এলেন এক চারণভূমিতে। সেখানে কতকগুলি গোরু চরছিল।
অতিথি বললেন, “এই লোকগুলো কি নোংরা!”
দার্শনিক বললেন, “এরা আদৌ লোকই নয়।” এই বলে তিনি বিজ্ঞানসম্মত ভাষায় গোরু কী, তা ব্যাখ্যা করলেন। আমি সেই কথাগুলি ভুলে গিয়েছি।
অতিথি বললেন, “আমার কাছে সবই এক। কিন্তু ওরা মুখ তুলছে না কেন?”
দার্শনিক বললেন, “কারণ ওরা তৃণভোজী। ওরা ঘাস খেয়ে থাকে। ঘাস অবশ্য খুব একটা পুষ্টিকর খাদ্য নয়। কিন্তু নিজের কাজে ওরা এতই ব্যস্ত থাকে যে, ভাবার, বা কথা বলার, বা দৃশ্যাবলি দেখার, অথবা নিজেদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার সময়টুকুও পায় না।”
অতিথি বললেন, “ও! তবে সন্দেহ নেই যে, এও বেঁচে থাকারই একটা পথ। তবে আমার ওই সবুজ-মাথাওয়ালা লোকগুলিকে বেশি ভাল লেগেছে।”
এরপর তাঁরা একটা শহরে এলেন। সেই শহরের পথে পথে গিজগিজ করছিল অসংখ্য নারীপুরুষ।
অতিথি বললেন, “কি অদ্ভুত সব লোকজন!”
দার্শনিক বললেন, “এঁরা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দেশের নাগরিক।”
অতিথি বললেন, “তাই নাকি? দেখে তো তা মনে হয় না!”